*মুষ্ঠিবদ্ধ হাতের পাঁচ আঙুলের সদস্যের মতোই চাই নাগরিক ঐক্য*
একে অন্যের প্রতি সকল ভেদাভেদ, ঘৃণা, কুকথা, হিংসা, প্রতিহিংসা , ঈর্ষা, দ্বন্দ্ব ভুলে নিজ দাবিকে দীর্ঘ মেয়াদী রূপ দিতে শোষকের বিরূদ্ধে ঐক্য গড়ে তুলুন রেশন দোকান বা লঙ্গর খানায় খাদ্যের লাইনে, পানীয়ের লাইনে দাঁড়িয়ে, জ্বালানির খনিতে দাঁড়িয়ে, বিদ্যুৎ অফিসের সামনে লাইনে, বাজারে অন্য খরিদ্দার বন্ধুর সাথে লাইনে, ছেলে মেয়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাইনে, চাকরিতে আবেদনের লাইনে, চাষের জমিতে, নিশ্ছিদ্র কর্পোরেট অফিসের কামরায়, ট্রেনের কামরায়, বাসের ভেতরে, দুধের দোকানে, ওষুধের দোকানে, হাসপাতালে চিকিৎসার লাইনে, অর্থ প্রতিষ্ঠান কিম্বা ব্যাংকে, ডাক অফিসে, প্রশাসনের দপ্তরের লাইনে। লাইনে দাঁড়ানো সকলকে ভাবুন মুষ্ঠিবদ্ধ পাঁচ আঙুলের সদস্যের মতোই । জনতার মিলনস্থলকে করে তুলুন আপনার মন্দির, মসজিদ, গির্জা কিম্বা গুরুদোয়ারা । জনতার মিলনস্থলই হোক দেশের পার্লামেন্ট। জনতার মাঝেই গড়ুন জন আদালত। জনতার মাঝেই ব্যক্ত হোক আপনার সুখ দুঃখ যন্ত্রণার কথা। সকল অভাব ভুলে আসুক সম্মিলিত লড়াইয়ের বার্তা। দলতান্ত্রিক সকল শোষক শাসকের চোখ রাঙানির বিরুদ্ধে গড়ে উঠুক স্থায়ী প্রতিরোধ জঙ্গি শান্তি আন্দোলনের জনমত। ছড়িয়ে পড়ুক নুতন সকলের আহ্বান।
Rajib Sikdar
Research for Environment, Research for Society, Research for Human beings
Operating as usual
গণতন্ত্রের রামধনু
রাজীব সিকদার
গণতন্ত্রের কালো মেঘ ভেসে বেড়ায়
বসুন্ধরা আকাশ জুড়ে
কেউ পেঁজা তুলো, কেউ জটাজাল, কেউবা জমাটি ধোঁয়া
কে কখন কার সাথে মিলবে চলে তারই খেলা
স্বৈরাচারীর তপ্ত বায়ু অপেক্ষা করে
মেঘেদের মাঝে নিতে চাই ঠাঁই
জামাই আদরে ঠাঁই নেই গণতন্ত্র জুড়ে
ঝাপসা চোখে বধির জনতা
আস্বাদন করে গণতন্ত্রের সার্কাস।
ধরার ধুলিতে আজ কত বিপদ, ঝঞ্ঝা আছাড় খায়
মরে ভূত হয়ে যায় জনতার দল,
বছর ঘনায় স্বৈরাচারীর শুষ্ক তপ্ত বাতাসে
গণতন্ত্রের কালো ধোঁয়ার সাথে মিলে যায়
নব নব মুখোশের আড়ালে স্বৈরাচারী উঁকি দেয়,
রামধনু রঙের বহরে মিলে মিশে
গণতন্ত্র খবরের রঙিন পাতা দখল করে
পাল্লা দিয়ে জনপ্লাবন আর করতালি
আওয়াজে মশগুল জনতা
অপেক্ষা করে আগামী পাঁচ বছর
ভূখা পেট, বেকারির জ্বালা ভুলে
দর্শক আসনে বসে সার্কাস দেখে
গণতন্ত্রের রামধনু নব নব সাজে খেলা করে
করতালির নেশায় মশগুল হয় ছা পোষা মধ্যবিত্ত ।
সর্বহারা গুমরে গুমরে ওঠে খিদের জ্বালায়
ঠোক্কর খেতে খেতে আশ্রয় নেয়
হরেক রকম মেঘেদের দলে।

Traditional life in India— Women grinding wheat at the home grinding mills. 1902

বইটি পড়তে হলে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন
http://l.facebook.com/l.php?u=http%3A%2F%2Fganadabi.com%2Fwp-content%2Fuploads%2F2020%2F06%2FPGhosh_24April2020_Corrected.pdf&h=AT31xryB5ycb_-zshSljxQ3i_xpYhq8jpINE9TlItMsXsU8r4_k59bhQkMbntE18slsTjxLYs5JvDlq-XLhvmwaT4mAgQE61pPERSPFlgiyRv9vwfe_6EdlG6rvoSs8uktln2rYYrBuqhqPjZJ5OIuDNIQ
*স্বাধীনতার বিনিময়ে পরাধীন স্বর্গরাজ্যও দেশের যৌবনশক্তি কোনদিন প্রার্থনা করবে না*
কিন্তু স্বাধীনতা শুধু কেবল একটা নামমাত্রই ত নয়! দাতার দক্ষিণহস্তের দানেই ত একে ভিক্ষার মত পাওয়া যায় না,—এর মূল্য দিতে হয়। কিন্তু কোথায় মূল্য? কার কাছে আছে? আছে শুধু যৌবনের রক্তের মধ্যে সঞ্চিত। সে অর্গল যতদিন না মুক্ত হবে, কোথাও এর সন্ধান মিলবে না। সেই অর্গল মুক্ত করার দিন এসেছে। কোনক্রমেই আর বিলম্ব করা চলে না। কি মানুষের জীবনে, কি দেশের জীবনে, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ যখন শূন্য দিগন্ত থেকে ধীরে ধীরে নেমে আসতে থাকে, তখন কিছু না জেনেও যেন জানা যায় সর্বনাশ অত্যন্ত নিকটে এসে দাঁড়িয়েছে। ক্ষুদ্র পল্লীর অতিক্ষুদ্র নরনারীর মুখের পরেও আমি তার আভাস দেখতে পাই। চারিদিকে দুর্বিষহ অভাবের মধ্যে কেমন করে যেন তারা নিঃসংশয়ে বুঝে নিয়েছে—এদেশে এ থেকে আর নিষ্কৃতি নেই, দুর্নিবার মরণ তাদের গ্রাস করলে বলে।
এদের বাঁচাবার ভার তোমাদের। এ ভার কি তোমরা নেবে না? জগতের দিকে দিকে চেয়ে দেখ—এ বোঝা কে বয়েছে। তোমরাই ত! শুধু এদেশেই কি তার ব্যতিক্রম হবে? শান্তি-স্বস্তিহীন সম্মানবর্জিত প্রাণ কি একা ভারতের তরুণের পক্ষেই এতবড় লোভের বস্তু? দেশকে কি বাঁচায় বুড়োরা? ইতিহাস পড়ে দেখ। তরুণ-শক্তি নিজের মৃত্যু দিয়ে দেশে দেশে কালে কালে জন্মভূমিকে ধ্বংসের কবল থেকে রক্ষা করে গেছে। এ সত্ত্বেও যদি তোমরা ভোলো, তবে এ সমিতি গঠনের তোমাদের লেশমাত্র প্রয়োজন ছিল না।
তরুণের বিদ্রোহ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

"The 2024 Lok Sabha elections are on track to break past records and become the most expensive electoral event in the world, according to a poll expert.
The estimated expenditure is expected to reach a staggering Rs 1.35 lakh crore, more than double the Rs 60,000 crore spent in 2019, claimed N Bhaskara Rao, who chairs the Centre for Media Studies (CMS), a not-for-profit organisation, and has been tracking election spending for 35 years.......
..........The growing reliance on money power' over ideology in Indian politics"
2024 LS polls, costliest ever, expenditure may touch Rs 1.35 trn: Report The 2024 Lok Sabha elections are on track to break past records and become the most expensive electoral event in the world, according to a poll expert.

সন্তান পালনে আদর্শ স্বামী-স্ত্রী : রবীন্দ্র-'ভাইছুটি' জুটি--- এক নির্দশন
রবীন্দ্রনাথ-মৃণালিনী দেবীর আঠারো বছরের সংসার জীবন কেমন ছিল--- এ প্রসঙ্গ অবতারণার আগে আমাদের দেখতে হবে--- কতটা সুখে কেটেছে তাঁদের দাম্পত্য জীবন? রবীন্দ্র কৌতুহলী পাঠকদের তা জানার আগ্রহ থাকা স্বাভাবিক।
এপেন্ডিসাইটিস ফেটে গিয়ে ২৯ বছর বয়সে মৃণালিনী দেবী মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তাঁদের সংসার জীবনের একটি চিত্র মোটামুটি এরকম---- রবীন্দ্রনাথের ঘর সংসার কেমন ছিল, সংসারের মধ্যে থেকে সংসারী হয়ে কিভাবে তিনি দিন কাটাতেন, কবির সংসার চিত্রে যদি কেউ সুন্দর একটি সুবিন্যস্ত সাংসারিকতার রূপ দেখার আশা করেন তবে তাঁকে হয়ত নিরাশ হতে হবে।
জমিদার পরিবারের সাংসারিক পরিপাটি ও শ্রীবৃদ্ধি বলতে সাধারণত যা বোঝায়--- ঝাড় লণ্ঠন ঝোলানো বৈঠকখানা, বিলাতি আসবাবে সাজানো ড্রইংরুম, পত্নীর গা' ভরা গহনা, আলমারি ভরা বেনারসি, ঢাকাই জামদানি, রেশমি শাড়ি, বোনেয়াদি ঘরের উপযোগী রুপার বাসন, ব্যাংকে জমানো মোটা অঙ্কের টাকা, ঘরের দেওয়াল কেটে বসানো লোহার সিন্দুক, তাতে তাড়া বাঁধা কোম্পানির কাগজের স্তুপের কোনো কিছুই কবির ছিল না কোনোদিনই। তেতলায় নিজের শোবার ঘরের পাশে খোপের মতো ছোট্ট একটি ঘর বানিয়ে বসে কবি লিখতেন। পাশে সেই মাপেরই আর একটি ছোট ঘরে ছিল বসার ব্যবস্থা।
কৈশোরে কবি নিজের গায়ের আলোয়ান বেচে বই কিনেছেন বলে শোনা যায়। এ হেন কবি সংসারী হবার পর বৈভবের জীবন উপোভগের সকল বাহ্যিক উপকরণমুখী না হয়ে নিতান্ত আটপৌঢ়ে জীবনকেই বেছে নিয়েছিলেন নিজের সংসারটিকে এক নতুন আদর্শে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। কবি বা মৃণালিনীদেবী কন্যাদের তৎকালীন প্রচলিত ধারায় লোরেটো, বেথুনে পড়াননি, পুত্রদের সেন্ট জেভিয়ার্স বা প্রেসিডেন্সিতে ভর্তি করাননি। (লক্ষণীয়--- যাঁকে প্রগতিবাদী নারী উন্নয়েণের পথ প্রদর্শক বলে ঠাকুরবাড়ির মেজোবৌরাণী জ্ঞানদানন্দীদেবীকে বলা হয়--- তিনি কিন্তু বিদেশি শিক্ষায় তৎকালীন অভিজাত ইংরেজী স্কুল-কলেজে নিজের সন্তানদের শিক্ষা লাভে আগ্রাসী ছিলেন) নিজের আদর্শে কবি সন্তানদের মানুষ করতে চেষ্টা করেছেন গোড়া থেকেই। কবির সৃষ্ট ভবিষ্যৎ আদর্শ শিক্ষালয়ের গোড়াপত্তনে এদের নিয়ে গিয়ে বা বাড়িতে আদর্শ শিক্ষাব্রতী শিক্ষক রেখে।
আসলে সারস্বত বরপুত্রদের প্রতিভার প্রভাব ছড়ায় ঘরে বাইরে--- সর্বত্র। চলতি ভাবের সঙ্গে লড়াই বাঁধে তাঁদের পদে পদে। তাঁরা নতুন চোখে দেখেন, নতুন পথ সৃষ্টি করে চলেন, নতুন ভাবের কথাগুলো নতুন ছাঁদে বলেন বলে--- তাঁদের দৃষ্টিতে যেটি সহজ, সঙ্গত, স্বাভাবিক, সাধারণের দৃষ্টিতে সেটি অসহজ, অসঙ্গত, অস্বাভাবিক ঠেকে প্রথম প্রথম। রবীন্দ্রনাথের জীবনে এ দৃষ্টান্ত ভূরি ভূরি।
কবি ও মৃণালিনীদেবী---স্বামী-স্ত্রীর যৌথ সম্মিলনে তারা ভাবের দিকে আদর্শের দিকে দৃষ্টি রেখে সাধারণত আদর্শ-জীবনের দিকেই চল্লেন। আদর্শ সৃষ্টির অনুরাগে তাঁরা নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করে সন্তান পালন করে গেলেন। [বর্তমানের বাবামায়েরা যেন রবীন্দ্রসংগীত প্রেমী হয়েও কবি বা কবিপত্নীর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে উচ্চাভিলাষী "আপন ভোগে বিভোর থাকব"-- এই আত্মসর্বস্ববাদের মৃর্তপ্রতীক জ্ঞানদানন্দিনীর আদর্শকেই তারা সন্তান পালনে আঁকড়ে ধরেন] কিন্তু কবি-কবিপত্নী বৈভবের মধ্যে থেকেও তাঁদের ঘর-সংসার-পরিবার আদর্শ অনুরাগের গতিমুখে পড়ে রইলেন। তারা অনুভব করেছিলেন--- স্থিতিশীল সাংসারিকতা আদর্শবাদীর ধর্ম নয়।
অসংসারী কবি-চিত্তে সংসার ও কাব্য রচনা সহজে জোড় খায় না। রবীন্দ্রনাথও নিজের প্রেরণার তাগিদে গুছিয়ে সংসার করতে পারেননি কোনোদিন। নিজেকে ও নিজের পরিবার পরিজনকে সেই টানে নিয়ে ফিরেছেন এখান থেকে ওখানে, ওখান থেকে সেখানে। বাসা-ভাঙা কবি বাসা ভেঙেই এসেছেন চিরদিন। স্থায়ীভাবে একটি স্থানে বাসা বাঁধতে পারেননি কোনোদিনও। ফলে পরিবারবর্গও বাসা বেঁধে বসতে পারেননি। সঙ্গীতের সুরসাধনা ও কাব্যের ছন্দযোজনায় কবি যেমন বাঁধা-পথ অনুসরণ করে চলেননি, সংসার পরিচালনায়ও তেমনি সাধারণ সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের বাঁধা-পথ ধরে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে চলতে দিতে চাননি। মৃণালিনী কখনো কখনো মাতৃস্নেহে ছেলেকে দামি পোশাক পরাতে গেলে কবি বলেতেন--- দেখ ভাইছুটি, বড় মানুষীর আওতায় থাকলে ছেলে মানুষ হয় না, অভ্যাসে তার গলদ জমে ওঠে অনেক। তোমার সন্তানরা খুব ভালো করে যাতে মানুষ হয় [ বাবামায়েরা এখনকাল নয় সীকালেও প্রত্যেক বাবামাই সন্তানকে উন্নত শিক্ষিত করার দিকে লক্ষ্য রাখেন। তারা রবীন্দ্রনাথ বা মৃণালিনীরদেবীর মত "ভাল সন্তান" হয়ে উঠুক--- এই আদর্শে দৃষ্টি দেন না] তারই চেষ্টা করছি আমি, তুমি সহায় হও। শুনে কবিপত্নী হৃষ্ট মনে খুশি হতেন, স্বামীর মনোভাবে গৌরব অনুভব করতেন। (কেননা তিনিও তো ছিলেন দরিদ্রপিতার সংসারে) তবু মায়ের মন তো--- তাই মনে মনে ছেলে-মেয়েদের সুন্দর সুন্দর দামি পোশাকে সাজাবার সাধ হতো। কখনো কখনো আশপাশের মানুষদের কাছে সেটি প্রকাশও হয়ে পড়ত দুয়েকটি কথায়। তবে কার্যত তিনি স্বামীর আদর্শই অনুসরণ করে চলতেন।
সাধারণ লোকদের সাদাসিধা অভ্যাসের সঙ্গে নিজেকে মেলানোর জন্য কবি আগ্রহ প্রকাশ করতেন দেখে মৃণালিনীদেবী মনে কষ্ট পেতেন ও খেদ করতেন। নিজেকে ভেঙে গড়তে চাইতেন স্বামীর মতো অভ্যাসে নিজেকে অভ্যস্ত করতে। বিদ্যালয় স্থাপনের পরে ছাত্রদের মধ্যে থাকবেন বলে মৃণালিনীদেবী শান্তিনিকেতনের বর্তমান লাইব্রেরি বাড়ির এক পাশে একটি ঘরে কবির সাথে বাস করেছেন অনেকদিন। রান্নাবান্নার তদারকি করতেন সামনে থেকে। নিজের হাতে খেতে দিতেন ছাত্রদের সাথে ধ্যানতাপস স্বামীকে বসিয়ে।
মৃণালিনী দেবী স্বভাবত অতিরিক্ত সাজসজ্জার আদৌ অনুরাগী ছিলেন না, গহনা পরতেন নিতান্ত সামান্য। বড় ঘরের বউ, তার তুলনায় তিনি সাধারণ বেশেই থাকতে ভালোবাসতেন। উপরন্তু কবির উন্নত রুচির প্রভাবে তাঁকে আরো সাদাসিধা করে তুলেছিল।
বিলাস বর্জন, উপকরণ বর্জন একমাত্র বুলি ছিল সে সময় কবির মুখে-মুখে। মেয়েদের কৃত্রিম উপায় অবলম্বনে রূপসৃষ্টি, চোখ ধাঁধানো রং-বেরঙের প্রজাপতি প্যাটার্নের সাজসজ্জা ও অলঙ্কার বাহুল্যতার আড়ম্বরের প্রতি ধিক্কার দিতেন কবি তাঁর প্রতি কথায়। বলতেন অসভ্য দেশের মানুষরাই মুখ ‘চিত্তির’ করে। মুখে রং মেখে মেয়েরা কি অসভ্য দেশের মানুষ সাজতে চায়? [ কবির একথা শুনে--- ক্ষমা করবেন একালের "ফেসিয়াল-বিলাসী" নারীকুলের বিলাসীরা]
বন্ধুস্থানীয় আত্মীয়াদের পীড়াপীড়িতে কখনো-কখনো মৃণালিনীদেবী হয়ত দু'গাছি গয়না পড়েছেন, নারীপ্রগতিবাদী মেজো জা' জ্ঞানদানন্দিনীর চাপা-চাপিতে। একদিন কবিপত্নী কানে দু'টি দুল ঝোলানো বীরবৌলি পরেছিলেন। হঠাৎ সেখানে কবি এসে পড়লেন সেই সময় ঘরে। কবির প্রবেশমাত্র লজ্জা পেয়ে তিনি দুই কানে দুই হাত চাপা দিলেন। তিনি এত কম গহনা ব্যবহার করতেন যে দুটি বীরবৌলি কানে পরেই লজ্জা পেলেন খুব বেশি। সমবয়সী বউদের সাজতে বলতেন কিন্তু নিজে সাজবেন না। এই ছিল তাঁর ভাব। মুখে বলতেন--- বড়-বড় ভাসুরপো, ভাগ্নেরা চারিদিকে ঘুরছে আমি আবার সাজব কি।
কবি পিতার শেষ সন্তান, বয়োজ্যেষ্ঠ ভাগিনেয় ও সমবয়স্ক ভ্রাতুষ্পুত্র ছিল তাঁর কয়েকজন--- তাদের কথাই বলছেন।
মৃণালিনী দেবী একবার সাধ করে সোনার বোতাম গড়িয়েছিলেন কবির জন্মদিনে কবিকে পরাবেন বলে। কবি দেখে বলেন, ছি ছি ছি, পুরুষে কখনো সোনা পরে ? লজ্জার কথা। ব্যাঙ্গ করে বললেন-- যাই বলো ভাইছুটি তোমার চমৎকার রুচি দেখে আমার হাসি পাচ্ছে।
পরে অবশ্য তাঁর ভাইছুটির ইচ্ছা পূরণ করেছিলেন কবি, যখন কবিপত্নী সে-বোতাম ভেঙে ওপাল বসানো বোতাম গড়িয়ে দিলেন---দু’চারবার কবি সেটি ব্যবহার করেছিলেন যেন দায়ে পড়ে। কবির পছন্দ ছিল সাধারণ থেকে স্বতন্ত্র।
একথা ঠিক যে, স্বামীর আদর্শে চলতে গিয়ে মৃণালিনীদেবী সারাজীবন কষ্ট করেছেন--- তাই বলে কি স্বামীর আদর-যত্ন পাননি। না--- শুধু পান নি অঢেল পেয়েছিলেন।
খাওয়া হতো চমৎকার, কবিপত্নীর রান্না ও মিষ্টান্নাদি প্রস্তুতের বিরাম ছিল না--- করতেনও সোহাগ ঢেলে। মৃণালিনীকে উৎসাহিত করতে কবি থেকে থেকে ‘নিচে বসে লিখতে লিখতে' বলতেন--- রোজ শুনি চাই ঘি, চাই সুজি, চিনি, চিঁড়ে, ময়দা এনে দাও--- তোমার জন্যে মিষ্টি তৈরি হবে---মজা করে বলতেন--- যত চাচ্ছ তত তো পাচ্ছ, মজা হয়েছে খুব'--- কি বলো ভাইছুটি !
মৃণালিনীদেবী কবির জন্য প্রায়ই ঘরে যেসব মিষ্টি তৈরি করতেন-- তার একটু বিবরণ এখানে তুলে দিলাম--- চিঁড়ের পুলি, দইয়ের মালপো, পাকা আমের মিঠাই। এটি তাঁর হাতের একবার যাঁরা খেয়েছেন তাঁরা আর ভোলেননি। নাটোরের মহারাজা স্বর্গীয় জগদিন্দ্রনাথ রায় কবিপত্নীর হাতের তৈরি দইয়ের মালপোর ভূয়ষী প্রশংসা করতেন।
নতুন নতুন রান্না আবিষ্কারের শখ কম ছিল না কবিরও। বোধ হয় পত্নীর রন্ধনকুশলতাকে ও শখ বাড়িয়ে দিত কবি এসব করতেন । রন্ধনরতা পত্নীর পাশে মোড়া নিয়ে বসে নতুন রান্নার ফরমাশ করতেন কবি, শুধু ফরমাশ করেই ক্ষান্ত হতেন না, নূতন মালমশলা দিয়ে নতুন প্রণালীতে পত্নীকে নতুন রান্না শিখিয়ে কবি শখ মেটাতেন। শেষে তাঁকে রাগাবার জন্য গৌরব করে বলতেন, ‘দেখলে তোমাদের কাজ তোমাদেরই কেমন একটা শিখিয়ে দিলুম।’ শুনে স্বামীসোহাগিনী মৃণালিনী চটে গিয়ে বলতেন---তোমাদের সঙ্গে পারবে কে ? জিতেই আছ সকল বিষয়ে।
যখন--- এক উপদ্রব বাঁধাতেন কবি নিজের খাওয়ার ব্যাপার নিয়ে--থেকে থেকে খাওয়া এত কমিয়ে ফেলতেন যে কাছের লোক চিন্তিত না হয়ে থাকতে পারত না। … জন্ম হতে অটুট স্বাস্থ্য পাওয়ায় ও বয়সের জোর থাকায় শরীর তখন এই সব উপদ্রব সহ্য করেছে অনেকটা অনায়াসে। কিন্তু মৃণালিনীর ধারনা--- স্বামী খেয়ালের বশে স্বল্পাহারে শরীর নষ্ট করছেন। তখন মৃঢালিনীদেবীর দুশ্চিন্তার অন্ত থাকত না। মৃণালিনী দেবী অন্তরে-অন্তরে দুঃসহ যন্ত্রনা পাচ্ছেন দেখে কবি বুঝিয়ে তাঁকে নিরস্ত করে এসব কথা বলতেন যে, কবি তখন শরীরের উপযোগী খাদ্য না খুঁজে মনের উপযোগী খাদ্য খুঁজে নিচ্ছেন বলেই তাঁর এই খাদ্য-ঝোঁক কমে গেছে। কিন্তু মৃণালিনীর মন বোঝে না। মনেমনে ভাবতেন--- কবির তার উপর কোন কারণে অভিমান হয়েছে। স্বামী মিছে তাকে বললছেন। ঘরের মানুষ-- যাঁর লক্ষ্য শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতীক, এমনতরো ঝোঁকালো লোক নিয়ে মৃণালিনীদেবী বেগ পেতেন সর্বদা। স্বল্পাহারের বাড়াবাড়ি দেখে কেউ কবিপত্নীকে স্বাস্থ্যপ্রদ কিছু খাদ্য কবিকে খাওয়ানোর কথা বললে কবিপত্নী বলতেন, ‘তোমরা চেনো না--- বললে জেদ আরো বাড়বে ; না খেয়ে দুর্বল হয়ে সিঁঁড়ি উঠতে মাথা ঘুরে পড়ুন আগে, তারপর নিজেই শিখবেন---কারো শেখানো কথা শোনবার ধাতের মানুষ নন।’
কবি বহু বছর নিরামিষভোজী ছিলেন। পত্নী বিয়োগের পর ঘরে তখন কবি নিরামিষভোজী, এমনকি সময়ে সময়ে অন্ন ত্যাগ করে ছোলা ভিজানো, মুগডাল ভিজানো খেয়ে দিন কাটান, তখন তাঁকে কার্যসূত্রে মাঝে মাঝে পতিসরে যেতে হতো। কবির শাশুড়ি ঠাকুরানী তখন নিজ গ্রাম দক্ষিণডিহি ছেড়ে জামাতার কর্মস্থল পতিসরে বাস করতেন। তিনি স্বহস্তে মাছের ব্যঞ্জনাদি রান্না করে জামাতার পাতে দিলে কবি ‘না’ বলতেন না। কন্যা নেই, পাছে তিনি মনে কষ্ট পান ভেবে নিজের ইচ্ছা সেখানে কবি খর্ব করতেন। ভৃত্য উমাচরণ জোড়াসাঁক ফিরে এসে গল্প করত, ‘এখানে বাবুমশায় খাওয়া নিয়ে এত গোলমাল করেন, পতিসরে কিন্তু শাশুড়ি ঠাকরুণ যা দেন তাই খান ; একটি কথা বলেন না-- শাশুড়ি কিনা !’ ভৃত্যরা খুশি মনে সহজভাবে কবির সামনে কথা বললে কবি সেটা ভালোবাসতেন চিরদিন। ভয় পেয়ে ভৃত্য কাজ করবে, তিনি আদৌ পছন্দ করতেন না।
শান্তিনিকেতনে কুঠির দোতলায় একদিন বিকেলে চায়ের টেবিলে কবি চা খেতে বসেছেন। ঘরে ভালো মিষ্টি কবির জন্য তৈরি করা হোক--- জনৈক আত্মীয় এ কথা বলায় কবি হঠাৎ বলে ফেললেন, ‘ঘরের মিষ্টি আর আমার দরকার নেই।’ স্ত্রীর কথা মনে পড়ায় তাঁকে ব্যথা দিল। অন্তরের ব্যথা খুব চেপে রাখতেন কবি, কেমন করে সেদিন কথাটুকু মুখ ফসকে বেরিয়ে পড়েছিল।
উপকরণের বোঝা ব'য়ে চলা সম্বন্ধে কবির মনে গভীর বিরাগ ছিল গোড়া থেকে। মনের চেতনা যাঁদের উপকরণের ভার সইতে পারেন না, তাঁরা দুঃখ পান তাই নিয়ে। ঘরছাড়া কবি ঘর ছেড়ে অন্যত্র বাসা বাঁধতে গেছেন কয়েকবার। যাত্রাকালে কবি বিরক্ত হয়ে পত্নীকে বলেছেন-- উপকরণ-আবর্জনা ফেলে দাও, ওদের সঙ্গের সাথী কোরো না। ঘরসংসারের প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিস বঁটি, কাটারি, কুরুনি, বারকোষ, কড়া, খুন্তি হাতের বোঝাটি সঙ্গে যাচ্ছে দেখলেই কবি হুলুস্থূল বাধাতেন। চটে মটে বলতেন ‘এ সব জঞ্জাল জড়ো করো কেন’--- ভাবখানা এমন, যেন দুখানি বস্ত্র হাতে নিয়ে বেরোতে পারলেই ভালো হয় কবির মতে। [ কোন নারীই কি মানতে পারেন-- স্বামীর এহেন 'অত্যাচার ! মৃণালিনীদেবী মনে হয় অক্ষরে-অক্ষরে স্বামীর উপদেশ মাথায় করে নিতেন]
পথযাত্রায় গৃহস্থালি সরঞ্জাম দুয়েকটি বেশি সঙ্গে নেয়ার দিকে মেয়েদের জন্মগত ঝোঁক, পুরুষদের দৃষ্টিতে সেগুলো অনাবশ্যক ঠেকে। বোঝা বাড়াও কেন-- পুরুষদের কথা। সময়কালে অভাবে ঠেকতে না হয়, মেয়েদের ভাব। প্রায় সকল বাড়ির মেয়েই যাত্রাকালে বাবুদের লুকিয়ে ব্যবহার্য দুয়েকটি জিনিস সঙ্গে নিয়ে থাকেন। কবির সংসারেও তার ব্যতিক্রম হত না, কবিপত্নীও কতগুলো সরঞ্জাম সঙ্গে নিতেন লুকিয়ে। মৃণালিনী দেবী বলতেন, ‘দেখ তো বাপু, এমন লোক নিয়ে কি করে ঘর করা যায়। ফেলে তো যাব সব, ওদিকে গিয়েই কিন্তু ধুম পড়ে যাবে। অতিথির কারবার তো কবির কম নয়। তখন আনো মালপো, আনো মিঠাই, ভাজো সিঙ্গাড়া, ভাজো নিমকি, কচুরি, তাও আবার কম হলে চলবে না, পাত্র বোঝাই প্রচুর হওয়া চাই। সরঞ্জাম না হলে জিনিস আসবে কোথা থেকে সে কথা বলে কে।’
কবি আদর্শের টানে নানা সময়ে নানাভাবে নিজেকে বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলতে মনে কোনো দ্বিধা রাখতেন না মৃণালিনীদেবী। আদর্শপ্রবণতা তাঁকে কোথায় কখন যেন কোন সংকটে জড়িয়ে ফেলে এ ভাবনা কবিপত্নীর তা মনে থাকত। মৃণালিনীদেবী বিশ্বাস করতেন-- কবি ও কবির পরিবার অভিন্ন ; কবি বিপন্ন হলে পরিবারটিরও বিপন্ন হওয়া স্বাভাবিক। কবির মুখে--- ‘ফেলো ফেলো ছাড়ো ছাড়ো’ শুনে কবিপত্নী বলতেন, ‘ঘরকন্না ফেঁদে, সন্তান-সন্ততি নিয়ে সংসার করতে গেলে, এক কথায় ফকির সাজা চলে না।' কবিপত্নী বুঝতেন--- পতি-পত্নীর মধ্যে হৃদয়ের ব্যবধান থাকলে তা সম্ভব নয়। একের ভাবে অন্যের যুক্ত হওয়া স্বাভাবিক। তাই কবির ভাবে কবিপত্নী অনুপ্রাণিত না হয়ে কখনো পারেননি।
পত্নী বিয়োগের পর কবি পৈতৃক সম্পত্তির অধিকারী হন। সম্পত্তি অধিকারের অল্প কয়েক বছর পরেই সব সম্পত্তি দানপত্রে লেখাপড়া করে ছেলেদের নামে দেয়ার জন্য কবি অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। দলিলাদি তৈরির আদেশ পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। কবির জনৈক নিকটাত্মীয় ছেলেরা এখনো ছোট, এখনই এ কাজ করা সঙ্গত হবে না--- ইত্যাদি অনেক কারণ দেখিয়ে তখনকার মতো কবিকে সে কাজ হতে নিরস্ত্র করেন। বিষয়ের বোঝা নামানোর একান্ত আগ্রহ ছিল তাঁর। নিজের সব বাংলা পুস্তকের ‘কপিরাইট’ বিক্রয় করে শান্তিনিকেতন আশ্রমের একধারে নারী বিভাগ গড়ে তোলার জন্যও কবি সে সময় ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। সেই সময়কার আর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে কন্যা রাজবাড়ি যাবে, নিতান্ত সাধারণ বেশে কবি পাঠিয়েছেন তাকে সেখানে। আত্মীয়রা বলছেন, ‘এমন সাজে কবি রাজবাড়ি কন্যা পাঠান যে দেখে লজ্জা করে।’ কবির উত্তর, ‘এই বেশে কন্যা আমার স্নেহ যদি না পায় তবে তেমন সম্মানে কাজ নেই। বেশভুষা যে সম্মানের যোগ্যতা প্রমাণ করে সে সম্মান না পাওয়াই শ্রেয়।’
শিক্ষাব্রতী কবি আদর্শ শিক্ষালয় গঠনে যখন প্রবৃত্ত, কবির সহধর্মিণী তখন সহকর্মী হয়েছিলেন সেকথা আগেই উল্লেখ করেছি---ছাত্রদের জলখাবার তৈরির ভার নিয়েছিলেন নিজের হাতে, স্নেহ দিয়ে গড়তে চেয়েছিলেন ছাত্রগুলোকে। বিদ্যালয় আরম্ভের একটি বছর শেষ না হতেই বিদ্যালয়ের জননী কবিপত্নীর আয়ু হলো শেষ। কবির সংসার ভেঙে দিয়ে তিনি চলে গেলেন অকালে। মৃত্যুশয্যায় কবি নিজের হাতে তাঁর যে শুশ্রুষা করেছিলেন তা ঠাকুর পরিবারের কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছিল। প্রায় দুমাস মৃণালিনী দেবী শয্যাশায়ী ছিলেন, ভাড়া করা নার্সদের হাতে স্ত্রীর শুশ্রুষার ভার কবি একদিনের জন্যও তুলে দেননি।
নিজের হাতে সব তুলে নিয়েছিলেন। এই সময়কালে স্ত্রী তাঁর জীবনে কতখানি আদরের ছিলেন তা দেখলে বোঝা যায়।
পত্নীর প্রতি স্নেহ কবির প্রকাশ পেয়েছে তাঁর শেষ শয্যায় চূড়ান্তরূপে। তখন ইলেকট্রিক ফ্যানের সৃষ্টি হয়নি এ দেশে। হাতপাখা হাতে ধরে দিনের পর দিন রাতের পর রাত পত্নীকে কবি বাতাস দিতেন, এক মুহূর্ত হাতের পাখা না ফেলে। ভাড়াটে শুশ্রুষাকারিণীর প্রচলন তখন ঘরে ঘরে ; তার ব্যত্যয় ঘটালেন রবীন্দ্রনাথ।
প্রত্যেক ক্ষেত্রে স্ত্রীর প্রতি রবীন্দ্রনাথ যেমন সমব্যথী ছিলেন তেমনি সন্তান স্নেহ ছিল কবির অপরিমেয়। প্রথম সন্তান, কন্যাটিকে পিতা হয়েও তিনি মাতৃস্নেহে পালন করেছিলেন ধাত্রীরূপে। মৃণালিনীর বয়স কম ছিল বলে, কবি যেন ভরসা পেতেন না--- প্রথম সন্তান সম্যক যত্ন পাছে না মনে করে তিনি এভাবেই করতে এগিয়ে আসবেন। তাই শিশুকে দুধ খাওয়ানো, কাপড় পরানো, বিছানা বদলানো কবি সব করতেন নিজের হাতে। এই ঘটনা থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, জোড়াসাঁকোতে সন্তান পালনের জন্যে "দাসী নিয়োগ"-র যে বড়লোকী প্রথা ছিল--- তা কবিদম্পতি তাদের সরলজীবন যাপনে অবিচলে আস্থা রেখে দাসীপ্রথার চল থেকে সরে এসে নিজেদর সন্তান নিজেরাই লালন করার দৃষ্টান্ত রেখেছিলেন।
১৩০৯ বঙ্গাব্দের ৭ অগ্রহায়ণ : ২৩ নভেম্বর, ১৯০২, রবিবার, শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ঠিক ১১ মাস পরে মৃণালিনীদেবী পরলোকগমন করেন। সেদিন কবি একলা ছাদে চলে গেলেন, বারণ করেছিলেন কাউকে কাছে যেতে। প্রায় সাররাত কবি ছাদে পায়চারি করে কাটিয়েছেন। রবিকে পত্নী বিয়োগে এমন বিভ্রান্ত হতে শুনে পিতা মহর্ষিদেব বলেছিলেন--- ‘রবির জন্য আমি চিন্তা করি না। লেখাপড়া, নিজের রচনা নিয়ে সে দিন কাটাতে পারবে। ছোট ছেলে-মেয়েগুলোর জন্যই দুঃখ হয়।’
পিতার এই কথা অন্তরে-অন্তরে অনুভব করে গেছেন কবি। জীবনের শেষদিন অবধি তাঁর "জুটি"কে কবি অন্তরে-অন্তরে অনুভব করে গেছেন---
'প্রাণের সখা প্রাণের মাঝে আয়'... নিত্য মননে স্মরণ রেখেছি তোরে--- "ভাইছুটি"...

*আজ ২৪ মে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের ১২৫ তম জন্ম দিবসে শ্রদ্ধার্ঘ্য*
বিদ্রোহীর কৈফিয়ৎ
রাজীব সিকদার
আমাদের হয়ে দিয়েছিলে শত কৈফিয়ত তুমি
বধির ওরা, বিবেক ছাড়া নিষ্ঠুর ওদের অন্তর্যামী ।
তেত্রিশ কোটি ছাড়িয়ে ওরা কেড়েছে সবার গ্রাস
গরীব মারার ফাঁদ পেতে ওরা, এখনো চালায় ত্রাস।
শয়তান ওরা, রক্ত শোষক পার্লামেন্টে চলে ষড়যন্ত্র
হরেক বাহানায় ভোট চাই শুধু, রাষ্ট্রটায় শোষণ যন্ত্র
এই তো সেদিন সাতশ কৃষক শহীদ হলো পথে
কিছুই ওদের যায় আসে না গরীবের বাঁচা মরাতে।
বেকার যুবক খুঁজিছে কাজ, ক্ষুধার জ্বালা বুকে
হন্যে হয়ে খুঁজেই চলে, কেউ নেইকো সুখে।
স্ত্রী, সন্তান, পরিবার সব চেয়েছে তাঁদের দিকে
কপাল আজও হয়নি তাঁদের কাজ ভিক্ষে পেতে।
শিক্ষিত সব হিসাব খোঁজে, যদি পায় একটু সুযোগ
সুযোগ কেনো মেলেনা আজও, নাই কোনো অভিযোগ।
তোষামোদ, খোশামোদ, তৈল মর্দনের যত পথ
আত্মমর্যাদা ধুলায় মেশে, চুলোয় সব হিম্মত।
হয়না সহ্য ষড়যন্ত্র ওদের, ধনীকে করে ধনী
কোটি কৃষক কৃষি ছাড়া, ক্ষুধায় আজও দিনগুণী
তালা বন্দী কলের দোরে, বুভুক্ষু শ্রমিক ক্ষেপে
পিশাচ মালিক পুলিস, সেপাই লাভের বহর মাপে।
ক্ষেপলে কৃষক, ক্ষেপলে শ্রমিক লেলিয়ে সেপাই মুর্তি
মিথ্যা জালে আইন বুনতে ওরা বেশ পারদর্শী ।
জেলগুলো সব ভর্তি এখন বিনা বিচারে সাজা
লাখো গরীব, পরিযায়ী সব আইন জালে বাঁধা।
ক্ষুধার জ্বালা উঠছে দেশে, ধর্ম আফিম খাওয়ায়
কপালটাকে দোষী করে, জনতাকে পথে বসায়
অসহায় মানুষ তুললে আওয়াজ, বুজরুকি গল্প ফাঁদে
মাদুলি, তাবিজ, আংটি, কবচ তালিম দিয়ে বাঁধে ।
ওরা নিত্য নতুন অস্ত্র খোঁজে বিভাজনের নেশায়
ঠুনকো যত আবেগ নেড়ে জনগণকে ক্ষেপায়।
ধর্মাচরণ বুঝতে নিখুঁত, নারীদের খাঁড়া করে
শাঁখা সিঁদুর, মঙ্গল সুত, বোরখা আবেগ গড়ে।
ইমাম আর পুরোহিত সব হয়েছে মৌ-লোভী
একই জাল বুনে চলে, বিভেদের হরেক কারসাজি।
ভন্ড যত রাজনীতিক সব ওদের দলেই ভিড়ে
ক্ষমতার নেশায় মত্ত আজও, দিবারাত নরহত্যা করে।
ভারতবাসী ফুঁসছে বেজায়, চাই আজও স্বাধীণতা
ফুটছে উঠে যখন তখন কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা ।
আঁশবটি কেউ ধরছে হাতে, কারো হাতে লাঠি
আমজনতা বেজায় ক্ষেপে, জুটছে নারী রাজপথে।
নিষ্ঠুর ওরা, পাষাণ হৃদয়, তামাশার মেঘ চষে
বিষ জ্বালা আজও জ্বলছে বুকে, বিদ্রোহী মোরা পথে।
এসো হে কবি একটু দেখো, দাও তোমার তরবারি
তোমার আমার কৈফিয়ৎ একই, ছিঁড়বো শিকল বেড়ি।
২৪.০৫.২০২৪/কলকাতা

কার্যকরণ সম্পর্ক ও যুক্তিবাদ প্রসঙ্গে রাজা রামমোহন রায়
"সংসারিক ব্যাপারে এক বস্তুর সঙ্গে অন্য বস্তুর কোনো কার্যকারণ সম্বন্ধ না জানলে মানুষ একটাকে কারণ ও অন্যটাকে তার ফল বলে মেনে নিতে রাজী নয়, কিন্তু যখন ধর্মের বা ধর্ম বিশ্বাসের প্রভাব এসে পড়ে, তখন যেখানে কার্যকারণ সম্বন্ধ নাই, সেখানেও একটাকে কারণ এবং অন্যটাকে কার্য বলে স্বীকার করতে মানুষ দ্বিধাবোধ করে না। যেমন একটা দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে যে কোন সংগ্রাম না করে, অথবা কোনরকম প্রতিকারের চেষ্টা না করেই কেবল প্রার্থনা করে দুর্গতি দূর হয়েছে বা অসুখ সেরেছে - এসবের মধ্যে কোন কার্যকারণ সম্পর্ক নাই । এই সকল রহস্যজনক ব্যাপারের আপাতত কারণগুলো মানুষের যুক্তি মেনে নিতে ইতস্ততঃ করে , অথচ সে সব বিষয়ের রহস্য সম্বন্ধে অনুসন্ধান করতে গেলে ধর্মীয় নেতারা তাদের চেলাদের সন্তোষের জন্য এমন ব্যাখ্যা করেন, যেন ধর্ম ও বিশ্বাসের ব্যাপারে যুক্তি তর্কের কোন স্থান নাই, এবং ধর্মের ব্যাপারে শুধু বিশ্বাস ও ঈশ্বরের কৃপাই একমাত্র নির্ভর । যে বিষয়ের কোন প্রমাণ নাই যা যুক্তিবিরুদ্ধ তা একজন যুক্তিবাদী কি করে গ্রহণ বা স্বীকার করতে পারেন?"
তথ্য সুত্রঃ
রাজা রামমোহন রায়: 'একেশ্বরবাদীদের উপহার' ( পারসি ভাষায় লিখিত)
অনুবাদক: শ্রী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ দাস
ইতিহাসের কথা
রাজীব সিকদার
ইতিহাস কথা কয়, বলে তো সবাই
ঝুটমুট ইতিহাস দূরে রাখো ভাই
বিলাস ব্যাসন রাজার বচন ইতিহাস তো নয়
দুনিয়া গড়ার শিল্পীরা সব ইতিহাস যে বয়।
খুন, ধর্ষণ লুটপাট আর ধর্মের হানাহানি
ইতিহাসে তো সবই আছে, জানের রাহাজানি
কিবা হবে এসব খুঁড়ে, বল রে শয়তান
থামা তো দুন্দুভি সব, গা স্রষ্টার জয়গান।
হাত দুটো তার কেমন করে, ধরলো গাছের ডাল
পাথর ঠুকে পাথর ভেঙে আনলো নুতন কাল।
পেশীর টানে যুঝলো ওরা, নদী পাহাড় সাগর
পাথর মাটি মুষ্ঠি দিয়ে, গড়ল বাড়িঘর।
ভাঙলো পাথর, কাটলো মাটি, পাথরের রকমারি
পাথর ঠুকে পাথর দিয়ে আগুনের ঝলকানি।
তপ্ত পাথর আগুন গোলায়, তাম্র খনির বুকে
হাত হাতুড়ি সবাই মিলে, জগৎ গড়ল সুখে।
মাটি খুঁড়ে আনলো পানি, চষলো জমিন যত
ফসল ফলে মাটির বুকে, খাও ইচ্ছেমতো
হাতের পেশী, ধৈর্য্য অসীম রচিল ইমারত
মন্দির গায়ে উঠল ফুটে, শিল্পীর কসরত।
সঙ্গীত তো ভালোই শোনো, শোনো বাঁশির সুর
নাম গান আর কীর্ত্তন কেন ব্যথায় ভরপুর।
ব্যথাগুলো সব কেমনে আসে, কিবা তার মানে
দাসদের ঐ জীবন কথা, ইতিহাসের জয়গানে।
রাজার কাহন, ধনীর গহন নয়তো ইতিহাস
ওসব তো ভেলকি যত, ভুলায় দিবারাত
ধর্মটা যে চোখেরই জল, শাসক কি আর জানে
ইতিহাসটা খুঁজলে পাবি, যীশু - মহম্মদের মানে।
জগৎ টাকে দেখলে খুঁজে, মানুষই কারিগর
ভেলায় ভেসে দেশ খুঁজেছে, বুঝেছে আপন পর।
ইতিহাসটা খুঁজলে মোরা কেমনে যায় ভুলে
ওরাই যে সব বিশ্ব পিতা, আওয়াজ তোল রে গলে।
বিবেক ঘরে খুঁজলে তবে, পাবিরে বিবেকানন্দ
মুচি, মেথর ভাইরে সবার, মন্দিরে সব ভন্ড
লোহার কথা, পেশীর ব্যাথা ভোলাস না রে আর
মার্কস বুড়োটার নিন্দা থামা এবার পুজিস তাঁর।
১৯ মে, ২০২৪/ কলকাতা

অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক বিষয়। ভাবনায় নানান ভাবেই দীর্ঘদিন ধরে আসছিল । আজ সরাসরি পেয়ে গেলাম বুর্জোয়াদের ষড়যন্ত্র তত্ত্বের নানান দিক অধ্যাপক স্বাগতম দাসের লেখায়। প্রতিটি মানুষ, মানব সম্প্রদায়, দেশ সহ সারা বিশ্ব আজ ধনকুবের কূটনীতিবিদদের ভয়ঙ্কর ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে। ভাবতে হবে সকলকেই।
গভীর নিরাপত্তাহীনতা থেকেই মানুষ ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসী হন
‘আসল কথাটা কী, শুনুন’
স্বাগতম দাস
১৯ মে ২০২৪
একটা তোলপাড় করা ঘটনা ঘটে গিয়েছে বা ঘটছে, কিন্তু তা কেন ঘটছে? খবরের কাগজে সত্যি কথা লিখছে, না কি এমন কিছু আছে যার কথা প্রকাশ্যে লেখাও যায় না? সেই অনুসন্ধান করতে গিয়ে কিছু মানুষ এমন তত্ত্বের অবতারণা করেন, যেটা সাধারণ মানুষের ভাবনাচিন্তার থেকে অনেকটাই আলাদা একটা বাঁকা পথে চলে। যে-হেতু সামাজিক বাস্তবতা গণিতের যুক্তিবদ্ধ রাস্তায় হাঁটে না, যে-হেতু সেখানে পরম সত্যের থেকে অনেক বেশি সহজলভ্য হল কিছু দৃষ্টিকোণ, তাই আপাত-সত্যের আলোআঁধারিতে দাঁড়িয়ে এই ধরনের তত্ত্ব অনেক মানুষ বিশ্বাসও করতে শুরু করে দেন। এরই নাম কনস্পিরেসি থিয়োরি, বা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব— দেশকালের গণ্ডি পেরিয়ে যা মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক, এমনকি স্বাস্থ্যগত সচেতনতাকেও মূলত নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করে আসছে।
গত শতকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সবচেয়ে চমকপ্রদ উদাহরণটির সূত্রপাত হয় ১৯৮৭ সালে, যখন আমেরিকার প্রখ্যাত আণবিক জীববিজ্ঞানী পিটার ডিউসবার্গ একটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে কোনও ঠাসবুনট প্রমাণ ছাড়াই ঘোষণা করলেন যে, এডস নামক মারণরোগটির পিছনে এইচআইভি-র কোনও ভূমিকা নেই। এটা সেই সময়, যখন এইচআইভি এবং এডস মানবজাতির এক প্রতিকারহীন বিপদ হিসাবে উঠে আসছে; পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে শুরু হচ্ছে রোগটি নিয়ে জনসচেতনতা অভিযান; এবং বাজারে আসতে চলেছে অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপি— রক্তে এইচআইভি-র মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য।
ডিউসবার্গ-এর তত্ত্বটি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল, বিশেষ করে অ্যাফ্রো-আমেরিকান এবং সমকামীদের মধ্যে, এইচআইভি সংক্রমণ নিয়ে যাঁরা আগে থেকেই সামাজিক ভাবে কোণঠাসা ছিলেন। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিক সংস্থার হাতে এই তত্ত্বের বিরুদ্ধে বিস্তর প্রমাণ থাকলেও অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করলেন যে, এডস আসলেএক ধরনের ক্ষয়রোগ, যার কারণ অপুষ্টি এবং মাদকের ব্যবহার। এইচআইভি-র সঙ্গে এর যোগসূত্র খোঁজাটা আসলে আমেরিকান ওষুধ নির্মাতা সংস্থাগুলোর মানুষকে বোকা বানিয়ে মুনাফা লোটার একটা বিরাট ষড়যন্ত্র।
সেই শুরু। পরবর্তী দশকে থাবো এমবেকি-র শাসনাধীন দক্ষিণ আফ্রিকার জনস্বাস্থ্যে এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। আমেরিকা ছাড়াও তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লক্ষ লক্ষ এইচআইভি আক্রান্ত মানুষ এই তত্ত্বকে বিশ্বাস করে নিয়মিত অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল ওষুধ খেতে অস্বীকার করেন, এবং এডস-এর বলি হন। আজও এই তত্ত্বে আস্থাবান কিছু গোষ্ঠী আছে— বিশ্বাস না হলে নিকোলাই নাৎত্রাসের দি এডস কনস্পিরেসি: সায়েন্স ফাইটস ব্যাক বইটা পড়ে দেখতে পারেন। একই ভাবে টিকে আছেন নব্য-নাৎসিরা, যাঁদের অনেকের বক্তব্য, হিটলারের জার্মানিতে হলোকস্ট বা ইহুদি-নিধন যজ্ঞ বলে কিছুই ঘটেনি, পুরোটাই ছিল একটা সোভিয়েট ধাপ্পাবাজি। রয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল ফ্ল্যাট আর্থ সোসাইটি-র লোকজন, যাঁরা বিশ্বাস করেন এবং বাকিদের বিশ্বাস করাতে চান যে, পৃথিবীর আকার আসলে একটা সমতল চাকতির মতো, ওই সব অভিগত গোলক-টোলক হচ্ছে বিজ্ঞানীদের মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার ফিকির।
১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বরে টেক্সাসের ডালাসে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে হত্যা করার জন্য আটক করা হয় লি হারভি অসওয়াল্ডকে। সে দিনই স্থানীয় জেলে পাঠানোর সময় রাস্তায় অসওয়াল্ডকে গুলি করে হত্যা করেন টেক্সাসের একটি নাইটক্লাবের মালিক জ্যাক রুবি। এখান থেকেই শুরু হয় এক বড়সড় ষড়যন্ত্র তত্ত্বের— আজও আমেরিকার প্রবীণ নাগরিকদের একটা বড় অংশ মনে করেন যে, কেনেডির হত্যার পিছনে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র সক্রিয় ভূমিকা ছিল, কারণ ফিদেল কাস্ত্রোর বিরুদ্ধে সিআইএ-র পরিকল্পনায় কেনেডি যথেষ্ট সমর্থন জোগাননি। ১৯৯৭ সালে প্যারিসের এক টানেলে গাড়ি দুর্ঘটনায় যখন প্রাণ হারান ব্রিটেনের যুবরানি ডায়ানা, তাঁর মৃত্যুকেও হত্যা বলে প্রতিপন্ন করার জন্যে রাজপরিবারের কেচ্ছা, অবৈধ প্রেম এবং রাজনীতিকে মিশিয়ে অন্তত তিন রকম ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দাপিয়ে বেড়ায় সে দেশের গণমাধ্যমে।
দুনিয়া কাঁপানো ষড়যন্ত্র তত্ত্বের তালিকায় থাকবে চন্দ্রাভিযানও— অনেকেরই বিশ্বাস যে, ১৯৬৯-এর জুলাইতে নিল আর্মস্ট্রংয়ের চাঁদের মাটিতে পা রাখার ব্যাপারটা পুরো সাজানো, প্রকাশিত ভিডিয়োটি আসলে হলিউডের স্টুডিয়োতে শুট করা। তালিকায় স্থান পাবে ২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সেই ভয়ঙ্কর জঙ্গি হানা-র নেপথ্যে আমেরিকার সরকার এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের ভূমিকা নিয়ে জল্পনাও। বেশ কিছু সাংবাদিক এই তত্ত্বের স্বপক্ষে বিভিন্ন পরোক্ষ প্রমাণ পেশ করেছেন। এঁদের দাবি, টুইন টাওয়ার ধ্বংসের অজুহাতেই আমেরিকার প্রশাসন আফগানিস্তান আক্রমণ করার রাস্তা করে নিয়েছিল— মূলত পেট্রোডলারের লোভে। এই তালিকায় সর্বশেষ বড় সংযোজন কোভিড অতিমারির নেপথ্যে চিনের জীবাণু-অস্ত্র নিয়ে গবেষণা— সেই তত্ত্ব অনুসারে, পুরো অতিমারিটাই আসলে পৃথিবীর জনসংখ্যা একটু কমিয়ে দেওয়ার একটা কৌশল। যে-হেতু এ ধরনের তত্ত্ব সত্যি ও মিথ্যার মাঝের ধূসর অঞ্চলে দাঁড়িয়ে থাকে, ফলে সাধারণ মানুষও নিজেদের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনুসারে এগুলোকে বিশ্বাস করেন বা করেন না।
ভারতও পিছিয়ে নেই। নেতাজি বা লালবাহাদুর শাস্ত্রী-র রহস্যময় মৃত্যুর পিছনে একাধিক তত্ত্ব আছে— এই তত্ত্বগুলো নিয়ে তৈরি বাণিজ্যিক সিনেমাগুলোও অনেকেই দেখেছেন। ১৯৬৬-তে ভারতীয় পারমাণবিক গবেষণা কর্মসূচির জনক হোমি জাহাঙ্গির ভাবার ফ্রান্সে বিমান-দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পিছনে সিআইএ-র ভূমিকা রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। তাঁদের বিশ্বাস, সেই ঠান্ডা লড়াইয়ের জমানায় এটা ছিল সোভিয়েট রাশিয়ার এই বন্ধুরাষ্ট্রে পরমাণু বোমা সংক্রান্ত গবেষণাকে অঙ্কুরেই বিনাশ করার আমেরিকান ষড়যন্ত্র। একই ভাবে, কখনও ফিসফিসিয়ে তো কখনও উচ্চগ্রামে ভেসে বেড়ায় সঞ্জয় গান্ধীর বিমান-দুর্ঘটনায় মৃত্যুর নেপথ্যে ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকা নিয়ে জল্পনা, অথবা এই তত্ত্ব যে, ২০০৪-এর সুনামি আসলে ভারতের একটি পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণে কিছু ভুলত্রুটি ঘটে যাওয়ার ফল। নোটবন্দির পর চালু হওয়া ২০০০ টাকার নোটে নজরদারির জন্য ইলেক্ট্রনিক চিপ লাগানো থাকার তত্ত্ব তো এই সে দিনের কথা। বাদ থাকে না এমনকি চিন সীমান্তের কাছে, লাদাখের কংলা পাস-এ অনেকটা আমেরিকার এরিয়া ৫১-এর ধাঁচে ভারতের অন্তরিক্ষযান বা ইউএফও-র ভান্ডার গড়ে তোলার মতো তত্ত্বও।
ওয়াশিংটন ডিসি-র আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে সমাজতত্ত্বের অধ্যাপিকা সিনথিয়া মিলার-ইদ্রিস’এর মতে, ব্যাখ্যার অতীত মৃত্যু— তা অতিমারি পরিস্থিতিতে এক সঙ্গে বহু সাধারণ মানুষেরই হোক, অথবা প্রেসিডেন্ট কেনেডি লেডি ডায়ানার মতো প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বেরই হোক— জনমানসে তৈরি করে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতার বোধ। প্রতিকারহীন বিপর্যয়কে স্বীকার করতে না চাওয়াটাই মানুষকে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রতি আকর্ষিত করে। এ ছাড়াও এর পিছনে থাকে সরকারের তরফে ধারাবাহিক ভাবে রটানো মিথ্যাগুলোকে অন্তত কখনও কখনও মানুষের ধরে ফেলা।
কিন্তু আজকের এই তথ্যসন্ত্রাসের যুগে, ব্যাপারটা শুধু এখানেই থেমে নেই— ভোট-ভিত্তিক রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হয়ে উঠেছে অপপ্রচারের এক আবশ্যিক অস্ত্র। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিভাজনের রাজনীতিতে একেবারে সামনের সারিতে জায়গা করে নিয়েছে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের ‘লাভ জেহাদ’-এর ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। যদিও এই তত্ত্বের পক্ষে কোনও জোরালো প্রমাণ গৈরিক শিবিরের হাতে নেই, কিন্তু ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে এমন আইন প্রবর্তিত হয়েছে, যাতে মানুষ পুলিশকে কথিত ‘লাভ জেহাদ’-এর অভিযোগ জানাতে পারে এবং ফৌজদারি অভিযোগ দায়েরের অনুমতি দেওয়া হয়। ২০১৪-য় উত্তরপ্রদেশে বিজেপির রাজনৈতিক ভিত্তিকে পোক্ত করতে রীতিমতো অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে ‘লাভ জেহাদ’।
আমেরিকার বিদেশনীতি সংক্রান্ত বহু ষড়যন্ত্র তত্ত্বের একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ধনকুবের ও বিনিয়োগকারী জর্জ সোরোস-এর নামটি এ বার ছড়িয়ে গেল ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ময়দানেও। ভোটের হাওয়ায় হিন্দুত্ববাদীদের ভাসিয়ে দেওয়া অজস্র টুইটে দাবি করা হল, সোরোস-এর আর্থিক মদতে কেমন ভাবে সিএএ-র বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে তাতিয়ে মানুষকে খেপিয়ে তোলার ষড়যন্ত্র হয়েছে, রাহুল গান্ধী কী ভাবে সোরোস-এর অঙ্গুলিহেলনেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছেন, এবং ভারতীয় অর্থনীতির অপরিসীম ক্ষতি করতে সোরোস কী ভাবে বিভিন্ন বিরোধী দলকে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানি-র সমালোচনা করতে প্ররোচিত করছেন!
গণতন্ত্রে সাধারণ মানুষই শেষ পর্যন্ত ইতিহাস রচনা করেন। কিন্তু আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা যদি অশিক্ষার সঙ্গে মিশে মানুষকে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের দিকে টেনে নিয়ে যায়, টাকা ও সংগঠনের জোরে যে কোনও বিরুদ্ধস্বরকে যদি দেগে দেওয়া যায় অ্যান্টি-ন্যাশনাল ও বিদেশি শক্তির মদতে পুষ্ট বলে? তা হলে সেই ইতিহাসের অভিমুখও গণতন্ত্রের রাস্তা পাল্টে স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঘুরে যেতে পারে। ভারত যে সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেখানে এই কথাগুলো মাথায় রাখা অতি জরুরি।
ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিকাল ইনস্টিটিউট, কলকাতা
Conspiracy Theory | There is always a personal agenda behind every Conspiracy Theory and common people start believing in it out of insecurity - Anandabazar -
‘আসল কথাটা কী, শুনুন’ ডিউসবার্গ-এর তত্ত্বটি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল, বিশেষ করে অ্যাফ্রো-আমেরিকান এবং সমকামীদের মধ্যে, এইচআইভি সংক্রমণ ন...
Click here to claim your Sponsored Listing.
Videos (show all)
Location
Category
Contact the school
Telephone
Website
Address
30, Mother Teresa Sarani
Kolkata, 700016
Department Of Microbiology St.Xavier's College,Kolkata
Kolkata, 700074
Computer World Solution Centre(CWSC) is a educational institute for learning programming with online
AH Block, Action Area I, New Town
Kolkata, 700059
Let’s make our kids Junior Engineers and Doctors!
Baguiati, Joramandir, Sashtribagan
Kolkata, 700159
This Page is dedicated to various Educational Activities
Global
Kolkata, 700049
iEdstitute is a team of academic professionals working in different countries for a long time. offer
Baguiati, Near VIP Road
Kolkata, 700059
Level Up is an educational institution which grows the desire to acquire knowledge within a student
P S Cube, City Centre II Metro, New Town
Kolkata, 700156
We Have Guided Thousands of Aspiring Students Towards Achieving Their Goals...
Kolkata, 700120
WBCS, SSC, BANK, RAILWAY, BENGAL POLICE, DEFENCE, OTHER GOVT. JOB