সাঁকরাইল সেন্ট্রাল শ্রীরামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সঙ্ঘ সাঁকরাইল, হাওড়া - 711313
Operating as usual
সাঁকরাইল সেন্ট্রাল শ্রীরামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সংঘে শ্রীরামকৃষ্ণ পার্ষৎ পরম পূজনীয় শ্রীমৎ স্বামী তুরীয়ানন্দজী মহারাজের শুভ আবির্ভাব তিথি উৎসবের কিছু মুহূর্তের আলোকচিত্র । জয় ঠাকুর, জয় মা, জয় স্বামীজি ।
পয়লা জানুয়ারি ২০২০, সাঁকরাইল সেন্ট্রাল শ্রীরামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সংঘে শ্রীরামকৃষ্ণ পার্ষৎ পরম পূজনীয় শ্রীমৎ স্বামী সারদানন্দজী মহারাজের শুভ আবির্ভাব তিথি উৎসবের কিছু মুহূর্তের আলোকচিত্র । জয় ঠাকুর, জয় মা, জয় স্বামীজি ।
আশ্রমে অনুষ্ঠিত যিশু খ্রিস্টের তিথি পূজার কিছু আলোকচিত্র ।
পীর-দরবেশরূপী মা
----------------------------------
"মা মানুষ নন, বড় পীর-দরবেশ হবেন। আমি একবার লাউ নিয়ে মায়ের বাড়ি গেছি। গিয়ে দেখি, নতুন বাড়িতে মা পুজোয় বসেছেন। আমি মায়ের বাড়িতে হামেশাই যাতায়াত করতাম বলে আমার কোন আড়ষ্টতা ছিল না। আমি গিয়ে ডাক দিলাম, 'মা! লাউ এনেছি।' আমার ডাক শুনে একজন মেয়েলোক এসে বলল, 'একটু বস, মা পুজোয় বসেছেন।' আমি দূর থেকে দেখতে পেলাম যে, মা পুজোর আসনে বসে আছেন। আমি উঠোনের এককোণে লাউ ও লাউশাক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
হঠাৎ মায়ের পুজোর আসনের দিকে তাকিয়ে দেখি, মা সে-আসনে নেই, আর মায়ের বসে থাকা দেহটা যেন আসন থেকে দুহাত ওপরে। মা ঠিক সেইভাবেই বসে আছেন, আসনটা নিচে পড়ে রয়েছে। মা শূন্যে বসে জপ করছেন ! আমি মনে মনে ভাবছি, ভুল দেখছি না তো ! চোখ মুছে আবার তাকিয়ে দেখি সেই দৃশ্য ! বোকার মত তাড়াতাড়ি মহারাজদের যেই ডাকতে যাচ্ছি, দেখি আর কিছু নেই। তারপর মা আসন থেকে উঠে আসতে তাঁকে প্রণাম করলাম। কিন্তু প্রণাম করতে ভয় হচ্ছিল খুব। মা আমাকে মুড়ি-গুড়, মাথার তেল দিতে বললেন একজন মহিলাকে। সেসব নিয়ে চলে এলাম, কিন্তু মাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে সাহস হলো না।"
--- শিরোমণিপুরের মফেতি শেখ।
আমেরিকার বিখ্যাত লেখক ও প্রাচ্যবিদ জোসেফ ক্যাম্পবেল শ্রী রামকৃষ্ণ জীবনের মূল্যায়ন করতে গিয়ে
জানিয়েছেন,শ্রী রামকৃষ্ণ স্বর্গের অর্গলিত দ্বার উন্মুক্ত করে
দিব্বানন্দের প্রস্রবণ ধারাকে বইয়ে দিয়েছেন।শ্রী রামকৃষ্ণ
তাঁর সাধনার দ্বারা দেবলোকের সঙ্গে মর্তলোকের সেতু বন্ধন
করেছেন। স্বর্গকে তিনি পৃথিবীতে নামিয়ে এনেছেন।
শ্রী রামকৃষ্ণ যে ভাবভূমিতে বিচরণ করতেন,
তাতে জগন্মাতার সঙ্গে তাঁর ভাব বিনিময় হতো,কথোপকথন
হতো।ভগবান লাভ বহু সাধকের জীবনে ঘটেছে ,তার বর্ণনা
বিভিন্ন শাস্ত্র গ্রন্থে আমরা পাই।কিন্তু শ্রী রামকৃষ্ণ জীবনে
জগদম্বার সঙ্গে তাঁর ভাবের আদান প্রদান সত্যিই অকল্পনীয়।এমনটা আর কোনো সাধকের জীবনে ঘটেছে
বলে জানা নেই।
জয় প্রভু রামকৃষ্ণ,অখিলের স্বামী। কৃপা করো প্রভু।।
শিবজ্ঞানে জীবসেবা...............
“যখন তোমরা শুধু তাঁহাকে শিবলিঙ্গ নয়, সর্বত্র দেখিবে তখনই তোমাদের শিব ভক্তি এবং তোমাদের শিবদর্শন সম্পূর্ণ হইবে। তিনিই যথার্থ সাধু তিনিই যথার্থ হরিভক্ত, যিনি সেই হরিকে সর্বজীবে ও সর্বভুতে দেখিয়া থাকেন। যদি তুমি শিবের যথার্থ ভক্ত হও, তবে তুমি তাঁহাকে সর্বজীবে ও সর্বভূতে দেখিবে। যে নামে, যে রূপে তাঁহাকে উপাসনা করা হউক না কেন, তোমাকে বুঝিতে হইবে যে, সব তাঁহারই উপাসনা।“
- স্বামী বিবেকানন্দ
১২ই জানুয়ারী ২০১৯ এ প্রভাতফেরী
জাতীয় যুব দিবসের শুভেচ্ছা.................
".......আমি চাই, আমার ছেলেরা, আমি যত বড় হতে পারতাম, তার চেয়ে শতগুণ বড় হোক।''
- স্বামী বিবেকানন্দ
তুমি আমার পিতা,মাতা,স্বামী ,দয়িত,প্রভু, ঈশ্বর–আমি তোমা ছাড়া আর কিছু চাই না, আর কিছুই চাই না , আর কিছুই না ।তুমি আমাতে , আমি তোমাতে , আমি তুমি তুমি আমি।
ধন চলে যায় , সৌন্দর্য বিলীন হয়ে যায় , জীবন দ্রুত গতিতে চলে যায় , শক্তি লোপ পেয়ে যায় , কিন্তু প্রভু চিরদিনই থাকেন প্রেম চিরদিনই থাকে।
– স্বামী বিবেকানন্দ
আগামী ১২ই জানুয়ারী ২০১৯ (শনিবার) যুগনায়ক স্বামী বিবেকানন্দ -এর ১৫৬তম জন্ম দিবস উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এই বছরও "সাঁকরাইল সেন্ট্রাল শ্রীরামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সংঘ" সারাদিন ব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করবে "জাতীয় যুব দিবস" |
এছাড়াও স্বামী বিবেকানন্দর ভাবাদর্শ যুব মানসে সঞ্চারিত করে তাদের জীবন ও গঠনের উদ্দেশ্যে আগামী ২০শে জানুয়ারী ২০১৯, রবিবার "রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, গোলপার্ক, এর সহযোগিতায় এবং সাঁকরাইল সেন্ট্রাল শ্রীরামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সংঘ-এর ব্যবস্থাপনায় আশ্রম ভবনে আয়োজিত হতে চলেছে একবিংশতম "স্বামী বিবেকানন্দ ভাবানুরাগী যুব সম্মেলন" |
দুদিন ব্যাপী উক্ত অনুষ্ঠান দ্বয়ের সম্পুর্ন অনুষ্ঠান সূচী নিম্নে সংযুক্ত করা হল |
(অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের এই পেজে মেসেজ করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে |)
"দাদা, না হয় রামকৃষ্ণ পরমহংস একটা মিছে বস্তুই ছিল, না হয় তাঁর আশ্রিত হওয়া একটা বড় ভূল কর্মই হয়েছে, কিন্তু এখন উপায় কী ? একটা জন্ম না হয় বাজেই গেল; মরদের বাত কি ফেরে? দশ স্বামী কি হয় ? তোমরা যে যার দলে যাও, আমার কোন আপত্তি নাই, বিন্দুমাত্রও নাই,তবে এ দুনিয়া ঘুরে দেখেছি যে, তাঁর ঘর ছাড়া সকল ঘরেই ' ভাবের ঘরে চুরি ' । তাঁর উপর আমার একান্ত ভালোবাসা, একান্ত বিশ্বাস । কি করিব ? একঘেয়ে বলো বলবে, কিন্তু ঐটি আমার আসল কথা । যে তাঁকে আত্মসমর্পণ করেছে, তার পায়ে কাঁটা বিঁধলে আমার হাড়ে লাগে, অন্য সকলকে আমি ভালোবাসি । আমার মতো অসাম্প্রদায়িক জগতে বিরল, কিন্তু ঐটুকু আমার গোঁড়ামি মাপ করবে । তাঁর দোহাই ছাড়া কার দোহাই দেবো ? আসছে জন্মে না হয় বড় গুরু দেখা যাবে, এ জন্ম এ শরীর সেই মূর্খ বামুন কিনে নিয়েছে।"
- স্বামীজী
''জগতে দুঃখবিরহিত সুখ, অশুভবিরহিত শুভ- কখনও পাবার সম্ভাবনা নাই; কারণ জীবনের অর্থই হচ্ছে বিনষ্ট সাম্যভাব। আমাদের চাই মুক্তি ; জীবন সুখ বা শুভ- এসবের কোনটাই নয়।''
- স্বামীজী
আজ থেকে ঠিক ১২৫ বছর আগে ১৮৯৩ খ্রীষ্টাব্দের ১১ই সেপ্টেম্বর অর্থাৎ আজকের দিনে সুদুর আমেরিকার শিকাগো শহরে, বিদেশীদের চোখে অজ্ঞ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন , পরাধীন ভারতবর্ষের ততোধিক অখ্যাত বৃটিশ শাসনাধীন কোলকাতার দক্ষিণেশ্বরের তথাকথিত অশিক্ষিত পূজারী ব্রাহ্মণ শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্য এবং শ্রীশ্রীঠাকুর ও শ্রীশ্রীমা সারদা রূপিণী জগন্মাতার মানসপুত্র স্বামী বিবেকানন্দ সমগ্র বিশ্বের ধর্মজগতে এক মহা শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ছিলেন । খ্রীষ্ট ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের উদ্দেশ্যে ( যদিও তা ছিল অপ্রকাশিত ) আমেরিকার শিকাগো শহরের আর্ট ইনস্টিটিউটের কলম্বাস হলে যে বিশ্বধর্মমহাসভার আয়োজন করা হয়েছিল সেই বিশ্বধর্মমহাসভার মঞ্চে সমগ্র বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সকল ধর্ম এবং সর্বাপেক্ষা বিত্ত ও প্রভাবশালী খ্রীষ্ট ধর্মের সম্মানীয় প্রতিনিধিগণের উপস্থিতিতে তাঁর নিজ ধর্মের ( সনাতন হিন্দু ধর্ম ) উদারতা ও সহনশীলতার ইতিহাস প্রচারের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত করে, খ্রীষ্ট ধর্মের গোঁড়া প্রতিনিধিদের কূপমণ্ডূকে আখ্যায়িত করে বলদর্পীর দেশে নিজ জন্মভূমি ভারতবর্ষকে মহিমান্বিত করে নিজেকে বীরের আসনে চিরপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন । তাই এই দিনটি সমগ্র ভারতবাসীর মহা গৌরবের দিন। তিনি শুরু করলেন পতিপত্তি হীন সনাতন হিন্দু ধর্মের অখ্যাত, সহায়-সম্বল হীন সন্ন্যাসী প্রতিনিধি হিসাবে, [ যদিও অধ্যাপক জন হেনরী রাইটের ভাষ্যে, স্বামীজীর পরিচয় পত্রে লেখা ছিল আমেরিকার সমস্ত পণ্ডিতগণের জ্ঞানের সমষ্টিও তাঁর (বিবেকানন্দের) জ্ঞানের সমতুল নয় ] যখন শেষ করলেন তখন তিনিই বিশ্বধর্মমহাসভার সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী প্রতিনিধি (এটা কোনো ভারতবাসীর বক্তব্যে নয় ধর্মমহাসভার বিজ্ঞান-বিভাগের সভাপতি মারউইন-মেরী স্মেল-এর ভাষ্যে ) ও বিশ্ব ধর্মজগতের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র " বিশ্ব বিবেকানন্দ " এবং তাঁর স্বীয় ধর্ম ( হিন্দু )বিশ্বের সর্বাপেক্ষা মহান ধর্মের আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত । মহাসভায় উপস্থিত শ্রোতারা যখন অন্যান্য ধর্মের প্রতিনিধিদের নীরস বক্তব্য শুনে ধৈর্য হারিয়ে সভাকক্ষ ত্যাগ করতেন তখন তাঁদের সেখানে ধরে রাখার জন্য স্বামীজীর নামই ছিল যথেষ্ট, ঘোষণা করা হত সেদিনের সভায় শেষ সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেবেন স্বামী বিবেকানন্দ । অমনি তাঁরা স্বামীজীর পনেরো মিনিটের ভাষন শোনার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতেন । যদিও উক্ত সভায় উপস্থিত বিশ্বের বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের ৭ হাজার সম্ভ্রান্ত নরনারীর কারও মনে হয়নি তিনি তাঁর স্বীয় ধর্মের (হিন্দু)প্রতিনিধি হিসাবে কথা বলছেন । প্রত্যেকের মনে হয়েছিল তিনি তাঁদের (শ্রোতাদের) নিজ নিজ ধর্মের কথাই বলছেন । ঠিক এই ভাষণ-বিশেষত্বের মধ্যেই নিহিত ছিল তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের চাবি । যদিও তিনি মনে করতেন এই বিশ্বধর্মমহাসভার মঞ্চ তাঁর জন্যই রচিত । ৩১শে মে ১৮৯৩ পেনিনসুলার জাহাজে অধুনা মুম্বাই বন্দর থেকে আমেরিকা যাত্রার মাত্র কয়েকদিন আগে তাঁর গুরুভ্রাতা স্বামী তুরীয়ানন্দজীকে ( হরি মহারাজ ) কথাপ্রসঙ্গে বলেছিলেন : " হরিভাই, এই ধর্মমহাসভা-টভা যা হচ্ছে, এসব এর (নিজের দিকে দেখিয়ে) জন্য । তাঁর বোধ ও অনুমান যে কতখানি সত্য ছিল পরবর্তী কালের ইতিহাস রচনায় তা প্রমাণিত । একজন ইহুদি ভদ্রলোক যিনি যুবাবস্থায় উক্ত বিশ্বধর্মমহাসভায় উপস্থিত ছিলেন, স্বামীজীর ভাষণ শোনার পরেই তাঁর মনে হয়েছিল তাঁর ধর্মটা ( ইহুদি ) সত্য । পরবর্তীকালে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসী স্বামী নিখিলানন্দজীর নিকট তিনি তাঁর এই অভিজ্ঞতার কথা বলেন । স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্বধর্মমহাসভায় কতখানি সফল এবং সমাদৃত হয়েছিলেন তা ১২ই অক্টোবর ১৮৯৩ আমেরিকার একটি পত্রিকায় প্রকাশিত নিম্নলিখিত কোনো এক অজ্ঞাত পরিচয় কবির কবিতা থেকেই বোঝা যায় । কবিতাটির নাম
" ধর্মসভায় আণ্ট হানা "
তারপর আমি শুনলাম সেই হিন্দু সন্ন্যাসীর বক্তৃতা,
পরনে যাঁর কমলা পোশাক,
যিনি বললেন : সমস্ত মানুষ ভগবানের অংশ--
কম নয় এতটুকু
আর বললেন : আমরা পাপী নই, পাপী নই মোটে ।
কাজেই আবার স্বস্তি পেলাম আমি,
আর ধর্মসভা কম্পিত হল সমর্থনের গর্জনে ।
(সমাপ্ত)
ওঁ নমঃ শ্রীজতিরাজায় বিবেকানন্দ সূরয়ে ।
সচ্চিৎ সুখস্বরূপায় স্বামিনে তাপহারিণে ।।
শ্রী মা সারদাদেবী বাস্তবিক কাউকে ফেলতে পারেন নি, সকলকে আপনার করে নেওয়ার মন্ত্র দিয়ে ছেন । তাঁর জীবন ই হয়ে উঠেছে সেই মন্ত্রের জীবন্ত ব্যাখ্যা । তাই অত্যধিক ক্লেশদায়ক ভক্ত সেবার কাজ থেকে যখন তাঁর কোন অনুগামী তাঁকে নিরস্ত করতে চেষ্টা করে ছেন, তখন তিনি মিষ্ট রসিকতা করে তার প্রত্যুত্তর দিয়ে বলেছেন :"কেন গো, ঠাকুর কি খালি রসগোল্লা খেতেই এসে ছিলেন ?"
শ্রী মায়ের করুণাঘণ গভীর আশ্বাস সবার প্রাণের দ্বারে আছড়ে পড়ত :
"মনে ভাববে আর কেউ না থাক , আমার একজন মা আছে।",
"বহুজনের আধ্যাত্মিক কল্যাণের জন্য শ্রী মা অতি নীরবে নিত্য যে অনাড়ম্বর যজ্ঞে আত্মাহুতির সেবা বিস্তার জগতে প্রবহমান করে রেখেছেন তা অনুপম।"
জয় মা জয় মা জয় ।।
"যদি তুমি কাউকে সিংহ হতে না দাও, তা হ'লে সে ধূর্ত শৃগাল হয়ে দাঁড়াবে।"
- স্বামী বিবেকানন্দ
"মন্দের কেবল আকার বদলায়। কিন্তু তার গুণগত কোনো পরিবর্তন হয় না। প্রাচীনকালে যার শক্তি ছিল, সেই শাসন করতো। এখন ধূর্ততা শক্তির স্হান অধিকার হয়েছে। দুঃখকষ্ট আমেরিকায় যত তীব্র,ভারতে তত নয়,কারণ এখানে(আমেরিকায়) গরিব লোক নিজেদের দূরবস্হার সঙ্গে অপরের অবস্হার খুব বেশি প্রভেদ দেখতে পায়।
ভালোমন্দ - এই দুটো অচ্ছেদ্যভাবে জড়িত ,একটাকে নিতে গেলে অপরটাকে নিতেই হবে। এই জগতের শক্তিসমষ্টি যেন একটা হ্রদের মতো, ওতে যেমন তরঙ্গের উখান আছে, ঠিক তদনুযায়ী একটা পতনও আছে।সমষ্টিটা সম্পূর্ণ এক, সুতরাং একজনকে সুখী করা মানেই আর একজনে অসুখী করা। বাইরের সুখ জড়সুখ মাত্র, আর পরিমাণ নিদিষ্ট। সুতরাং এককণা সুখও পেতে গেলে তা অপরের কাছ থেকে কেড়ে না নিয়ে পাওয়া যায় না। কেবল যা জড়জগতের অতীত সুখ, তা কারও কিছু হানি না করে পাওয়া যেতে পারে। জড়সুখ কেবল জড়দুঃখের রূপান্তর মাত্র।"
- স্বামী বিবেকানন্দ
" হিন্দুর ধর্ম বেদে নাই, পুরাণে নাই, ভক্তিতে নাই, মুক্তিতে নাই—ধর্ম ঢুকেছেন ভাতের হাঁড়িতে। হিঁদুর ধর্ম বিচারমার্গেও নয়, জ্ঞানমার্গেও নয়—ছুঁৎমার্গে; আমায় ছুঁয়ো না, আমায় ছুঁয়ো না, ব্যস্। এই ঘোর বামাচার ছুঁৎমার্গে পড়ে প্রাণ খুইও না। ‘আত্মবৎ সর্বভূতেষু’, কি কেবল পুঁথিতে থাকবে না কি? যারা এক টুকরো রুটি গরীবের মুখে দিতে পারে না, তারা আবার মুক্তি কি দেবে! যারা অপরের নিঃশ্বাসে অপবিত্র হয়ে যায়, তারা আবার অপরকে কি পবিত্র করবে?"
-স্বামী বিবেকানন্দ
শ্রী রামকৃষ্ণদেব বলছেন," বিশ্বাস হলেই সব হয়ে গেল। শুদ্র একলব্য মাটির দ্রোণাচার্য তৈয়ার করে বনেতে বাণ শিক্ষা করেছিল। মাটির দ্রোণকে পূজা করত, সাক্ষাৎ দ্রোণাচার্য জ্ঞানে; তাইতেই বাণ শিক্ষায় সিদ্ধ হল।" শ্রী শ্রী ঠাকুর বলতেন," রামচন্দ্র যিনি সাক্ষাৎ নারায়ন, তাঁর লঙ্কায় যেতে সেতু বাঁধতে হল, কিন্তু হনুমান রামনামে বিশ্বাস করে লাফ দিয়ে সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে পড়ল ।" সরল বিশ্বাসে কি না হয় । বর্তমান যুগে নরেন্দ্রনাথের শ্রী রামকৃষ্ণ চরণে সম্পূর্ণ আত্মনিবেদনে আচার্য বিবেকানন্দ রূপে জগতের কল্যানকামী পথপ্রদর্শকে পরিণতি, নিরক্ষর লাটুর ব্রহ্মজ্ঞানী অদ্ভূতানন্দে পরিনতি, মদ্যপ গিরিশের ভক্তভৈরব গিরিশচন্দ্র রূপে আবির্ভাব গুরুশক্তি ও গুরুভক্তির যথার্থ পরিচায়ক।---- জয় ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ
Ramakrishna Mission Ashrama, Baranagore
শ্রীগুরুপ্রণাম মন্ত্র
ওঁ অজ্ঞানতিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া ।
চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ ।
ওঁ অখন্ড মন্ডলাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম্ ।
তৎপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ ।
গুরু পূর্ণিমা উপলক্ষে জয়রামবাটীতে শ্রীমায়ের বাড়ির একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল।
জগদ্ধাত্রী পূজোর দিন। পূজো শেষ হয়েছে। মা, যার যা প্রাপ্য নৈবেদ্য দিতে বললেন। পূজোমণ্ডপ থেকে ভোগ নামিয়ে আনা হচ্ছে। যিনি পূর্বাশ্রমে জাতিতে ব্রাহ্মণ ছিলেন এমন একজন সাধুকে মা সুজির পায়েস আনতে বললেন। সাধু সেই সুজির পায়েস নামিয়ে আনলে তন্ত্রধারক তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন। কারণ হল ঐ সাধুটি পূর্বে ব্রাহ্মণ ছিলেন বটে কিন্তু বর্তমানে উপবীত ত্যাগ করেছেন। এই কথা শুনে মা বললেন," ওদের হাতে খাবে কেন? তাহলে তো চোদ্দপুরুষ উদ্ধার হয়ে যাবে।" বলাই বাহুল্য যে ঐ তন্ত্রধারক ছিলেন মায়ের পিতৃবংশের গুরুদেব। সঙ্গে সঙ্গে কালীমামা বললেন," দিদি, চুপ কর। তিনি যে গুরুদেব।" মা সপ্রতিভ হয়ে বললেন," হলেনই বা গুরুদেব।"
প্রকৃতপক্ষে মা কোনদিনই 'অন্ধ গুরুবাদের' প্রশ্রয় দেন নি। এই প্রসঙ্গে ওলি বুল মাকে একদিন প্রশ্ন করেছিলেন," গুরুর প্রতি আনুগত্য বলতে কি বোঝায়?"
উত্তরে মা খুব সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করলেন," কাউকে গুরু নির্বাচন করলে আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য তাঁর সব কথা শুনতে ও মানতে হবে। কিন্তু ঐহিক বিষয়ে নিজের সদবুদ্ধি প্রণোদিত ভাবে কোন কাজ করলেই------সেই কাজ যদি কোন কোন ক্ষেত্রে গুরুদেবের অননুমোদিত হয়-----তবুও গুরুদেবকে শ্রেষ্ঠ সেবাই করা হবে।"
শ্রীমায়ের এই অসাধারণ উক্তি সম্বন্ধে ঐতিহাসিক অমিতাভ মুখোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন," আধ্যাত্মিক গুরুর নির্দেশ লৌকিক কাজকর্মের জন্য অলঙ্ঘণীয় নয়, এই রকম কথা সারদাদেবীর মতো একজন সচ্ছচিন্তাশীলা এবং চরিত্র-শক্তি যুক্তা মহিলাই অম্লানবদনে বলতে পারেন, তা সর্বার্থে যথার্থ।"
সেটা ছিল ১৮৯৬ সাল। শ্রীমা তখন কলকাতায় সরকারবাড়ি লেনের গুদামবাড়িতে ছিলেন। গিরিশবাবু প্রায়শই সেই বাড়িতে গিয়ে মাকে প্রণাম করে আসতেন। মা যেদিন সেবাড়ি থেকে জয়রামবাটীতে ফিরে যাবেন, গিরিশবাবুর মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠল। সেদিন তিনি এলেন এবং স্বামী যোগানন্দজীকে নিয়ে উপরে মায়ের কাছে গেলেন। মাকে ভক্তিভরে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলেন। তারপর যুক্ত-করে বলতে লাগলেন,
" মা, তোমার কাছে যখন আসি, তখন আমার মনে হয়, আমি যেন ছোট্ট শিশু, নিজের মায়ের কাছে যাচ্ছি। আমি বয়স্ক ছেলে, মায়ের সেবা করতে পারতুম। কিন্তু সবই উল্টো ব্যাপার, তুমিই আমাদের সেবা কর, আমরা তো করি না মা। এই তো জয়রামবাটী যাচ্ছ, সেখানে পাড়াগেঁয়ে উনুনের পাশে বসে দেশের লোকের জন্য রাঁধবে আর তাদের সেবা করবে। আমি কেমন করে তোমার সেবা করব? আর মহামায়ীর সেবার কিই বা জানি আমি?" বলতে বলতে তাঁর গলা রুদ্ধ হয়ে এল। সজল নয়নে উপস্থিত সকলের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,
" ভগবান ঠিক আমাদের মতো মানুষ হয়ে জন্মান------এটা বিশ্বাস করা মানুষের পক্ষে খুবই শক্ত। তোমরা কি ভাবতে পার যে, তোমাদের সামনে পল্লীবালার বেশে জগদম্বা দাঁড়িয়ে আছেন? তোমরা কি কল্পনা করতে পার যে, মহামায়ী সাধারণ স্ত্রীলোকের মত ঘরকন্না ও আর সব রকম কাজকর্ম করছেন?
অথচ তিনিই জগজ্জননী, মহামায়া, মহাশক্তি-----সর্বজীবের মুক্তির জন্য এবং মাতৃত্বের আদর্শ স্থাপনের জন্য আবির্ভূত হয়েছেন।" মা তখন ভাবাবিষ্ট।
জগজ্জননী তুমি, কৃপা কর মাগো। তোমার শ্রীচরণে ঠাঁই দাও মা। জয় ঠাকুর জয় মা জয় স্বামিজী জয় গুরুদেব।
মায়ের এক চোখে বিশ্ব বীক্ষা--যেখানে ব্রহ্মান্ডে সবাই সন্তান, অন্য চোখে করুণা আর বরাভয় । শুধু বিশ্ব জননীর তিনি নন , তিনি বিশ্ব ধাত্রীও। মা-পাখি যেমন তার আক্রান্ত শাবককে বুক দিয়ে রক্ষা করে, ঠিক তেমনি মা বার বার আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন যে, তিনি তাঁর সন্তানদের সর্বদা রক্ষা করবেন। একটি অল্প বয়সী ছেলে বিদায় নেওয়ার আগে মায়ের পায়ে মাথা রেখে প্রণাম করছে। মা তাঁর ডান হাত খানি ছেলেটির মাথায় রেখে ছেন। ধীরে ধীরে স্পষ্ট স্বরে তিনি বললেন :
"যখন দুঃখ পাবে, আঘাত পাবে, বিফলতা আসবে তখন নিশ্চিত জেনো আমি তোমার সঙ্গে রয়েছি।ভয়পেয়ো না,হতাশ হয়ো না বাবা। আমি থাকতে তোমাদের ভয় কি? আমি তোমাদের মা --সত্যিকারের মা আমি মা থাকতে কে তোমাদের কী করবে ?......"
ছেলে টি পরবর্তী কালের পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডঃ প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ । ডঃ ঘোষ বলেছেন:"মাকে সেই আমার শেষ দর্শন। আজ আমার জীবনের প্রান্তসীমায় এসে বুঝতে পারছি, মায়ের সেই আশীর্বাদ ই আমার জীবনের রক্ষা কবচ । জীবনের সকল সঙ্কট, সকল সমস্যা আমি অনায়াসে পার হয়ে এসেছি । মায়ের কৃপায়, মায়ের আশীর্বাদের শক্তি তে ।"
জয় মা সঙ্গে থেকো মা ।।
শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন :"এক উপায়ে জাতিভেদ উঠে যেতে পারে। সে-উপায় ----ভক্তি।ভক্তের জাতি নাই।" ভক্ত বলরাম বসুর ভবনে অন্নপ্রসাদ প্রাপ্তিতে তিনি তৃপ্তিবোধ করেছেন বহুবার। বলরাম বসু ভিন্ন অনেক অব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি আহার করেছেন যা তৎকালীন সমাজে নিষিদ্ধ ছিল।তিনি কেশব সেনের বাড়িতে আহার করে মাস্টারমশাই কে সেকথা কাউকে বলতে নিষেধ করেছেন ,পাছে দক্ষিণেশ্বরে হাঙ্গামা হয়।আশ্চর্যের বিষয়,তিনি নিজেই পরদিন সেকথা দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের খাজাঞ্চিকে বলে দিলেন। জগন্মাতার বালকের সবই অদ্ভুত।সতন্ত্র পুরুষ তিনি। তিনি কেন সমাজের বেড়াজালে আবদ্ধ হতে যাবেন? তিনি মথুরবাবুর জানবাজারের বাড়িতে বহুদিন বাস করে নিশ্চয়ই আহার করেছেন।তেমনি সুবর্ণবণিক অধরলাল সেনের বাড়িতেও আহার করেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ সমদৃষ্টিতে মানুষের প্রতি প্রেম অর্পণ করেছিলেন। তাঁর দৃষ্টিতে যথার্থ মানবপ্রেম ঈশ্বরপ্রেমে পর্যবসিত।তিনি 'প্রেমার্পণ সমদরশন'।তাঁর প্রেমপ্রবাহে ব্রাহ্মণ -অব্রাহ্মণ,উঁচু-নীচু-----কোনো ভেদই ছেদ ঘটাতে পারতনা।
রামকৃষ্ণ শরণম্।কৃপা হি কেবলম্।
ভালবাসা
---------------------
বেলুড় মঠে স্বামীজির নির্দেশে রাত চারটের সময় ঘণ্টা বাজিয়ে সবাইকে জাগিয়ে দেওয়া হত। সাধু ব্রহ্মচারীরা সবাই ঘুম থেকে উঠে প্রস্তুত হয়ে এসে ঠাকুর ঘরে ধ্যান-জপ করতেন। স্বামীজির প্রখর শাসনে এই নিয়মের কোনও নড়চড় হওয়ার উপায় ছিলনা। স্বামীজি কঠোর নিয়ম করেছিলেন যে, যে সাধু বা ব্রহ্মচারী নির্দিষ্ট সময়ে ঠাকুর ঘরে আসতে পারবেনা তাকে সেদিন বাইরে থেকে ভিক্ষা করে এনে খেতে হবে, মঠে সে সেদিন খেতে পাবেনা। একদিন মহাপুরুষ মহারাজ স্বামী শিবানন্দ কোনও কারণে নির্দিষ্ট সময়ে ঠাকুর ঘরে আসতে পারলেননা। স্বামীজি তাঁর কাছে গিয়ে বললেন , '' তারকদা, (স্বামী শিবানন্দের পূর্বাশ্রমের নাম ছিল তারক) আমরা একটি নিয়ম করেছি যে, নির্দিষ্ট সময়ে ঠাকুর ঘরে এসে সাধন-ভজন না করতে পারলে তাকে সেদিন বাইরে ভিক্ষা করে খেতে হবে। শিবানন্দজী ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। স্বামীজি নীরবে সেই চলে যাওয়া দেখলেন। তারপর খাওয়ার সময়ে দেখা গেল স্বামীজি খাওয়ার ঘরে আসেননি। অনেক সাধ্য-সাধনা করেও তাঁকে খাওয়ানো গেলনা। সারাদিন তিনি অভুক্ত রইলেন। দিনের শেষে ভিক্ষা করে ফিরে এলেন স্বামী শিবানন্দজী। স্বামীজি ছুটে এসে তাঁকে ধরলেন। সাগ্রহে বললেন, '' দেখি তারকদা, ভিক্ষা করে কী কী এনেছেন। আসুন আমরা দুই ভাই একসাথে এই ভিক্ষান্ন খাই। কতদিন মাধুকরীর অন্ন খাইনি!'' স্বামী শিবানন্দ ও স্বামী বিবেকানন্দ একসাথে সেদিন ভিক্ষান্ন গ্রহণ করলেন।
আরেকদিন স্বামীজি নতুন সন্ন্যাসী ব্রহ্মচারীদের নিয়ে বেদান্ত পাঠ ও ব্যাখ্যা করছেন। বেদান্তের আলোচনায় স্বামীজি মগ্ন হয়ে গেছেন। এরমধ্যে স্বামী প্রেমানন্দ হৈ হৈ করে এসে বললেন, '' সবাই চল ঠাকুরের আরতি করতে হবে।'' বেদান্তের আলোচনায় এভাবে ব্যাঘাত ঘটায় স্বামীজির বিশাল নয়ন-প্রান্তে যেন অগ্নি-স্ফুলিঙ্গ জ্বলে উঠল। তিনি তীব্রভাবে স্বামী প্রেমানন্দজীকে বললেন, '' তুই কী ভেবেছিস? একটি ছবির সামনে সলতে পোড়া নাড়লেই শুধু তাঁর পুজো হয়? আর এখানে যেটা হচ্ছে সেটা তাঁর পুজো নয়? স্বামীজি এরপর আরও কঠোর ভাষায় প্রেমানন্দজীকে তিরস্কার করতে লাগলেন। অবশেষে সান্ধ্য-পূজার পর প্রেমানন্দজীকে কোথাও দেখা গেলনা। যে স্বামীজি এতক্ষণ প্রেমানন্দজীকে তীব্র ভাষায় তিরস্কার করেছিলেন, তিনিই শিশুর মতো ব্যাকুল হয়ে উঠলেন প্রেমানন্দজীকে দেখার জন্য। ব্যাকুল হয়ে অবুঝের মত বিলাপ করতে লাগলেন, ''ওরে বাবুরাম (স্বামী প্রেমানন্দের পূর্বাশ্রমের নাম ছিল বাবুরাম) কোথায় গেল? সে কি আমার গালাগাল খেয়ে গঙ্গায় ডুবে আত্মহত্যা করল?'' একদিকে বাবুরাম মহারাজকে পাওয়া যাচ্ছেনা, তার উপর স্বামীজি তাঁকে দেখার জন্য এরকম ছটফট করছেন। মঠের সাধু-ব্রহ্মচারীদের দিশাহারা অবস্থা। অবশেষে একজন দেখেন বাবুরাম মহারাজ ছাদের উপরে অন্ধকারের মধ্যে একা একা বসে আছেন। তাঁকে ধরে আনা হল স্বামীজির কাছে। স্বামীজি বাবুরাম মহারাজকে দেখতে পেয়েই ব্যাকুল হয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন। বাবুরাম মহারাজ এভাবে স্বামীজির আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে কেঁদে ফেললেন। স্বামীজিরও চোখে জল। দুই গুরুভাই পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে লাগলেন।
একদিন লাটু মহারাজ (স্বামী অদ্ভুতানন্দজী) স্বামীজিকে বললেন, ''তুমি এখন বিলেত থেকে এসেছ, মঠে কতরকম নতুন নতুন নিয়ম করেছ, আমি ওসব মানতে পারবনা। আমার মন এখনও ওরকম ঘড়ি-ধরা হয়নি যে তুমি ঘণ্টা বাজালেই আমি ধ্যানে বসে পড়ব। সুতরাং আমি এখানে আর থাকবনা, আমি চললাম।'' স্বামীজি তখন তাঁর চলে যাবার ব্যাপারে সম্মতি দিলেন। কিন্তু লাটু মহারাজ সত্যিই চলে যাচ্ছেন দেখে স্বামীজি ছুটে এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরে বললেন, '' দেখ লাটু, কত নতুন ছেলেরা এখন মঠে যোগ দিচ্ছে, একটা নিয়মের মধ্যে না রাখলে এরা সব বিগড়ে যাবে। এসব নিয়ম কানুন তোর জন্যে নয়।'' লাটু মহারাজ নিশ্চিন্ত হয়ে মঠে থেকে গেলেন।
বাঘা নামে একটি নেড়ি কুকুর মঠে থাকত। স্বামীজির সাথে তার ছিল ভালবাসার সম্পর্ক। একদিন কুকুরটি ঠাকুরের ভোগে মুখ দিয়ে ফেলায় মঠের সন্ন্যাসীরা তাকে নির্বাসন দিয়েছিলেন। স্বামীজি তখন মঠে ছিলেননা। স্বামীজি সন্ধ্যায় মঠে ফিরে শুনলেন সবাই মিলে বাঘাকে বেঁধে নিয়ে গিয়ে গঙ্গার ওপারে ছেড়ে দিয়ে এসেছে। এদিকে মঠ বাঘাকে ছাড়লেও বাঘা কিন্তু মঠকে ছাড়বার পাত্র নয়। সাধুরা তাকে গঙ্গা পার করে দিয়ে ফিরে গেলে বাঘাও কিছুক্ষণ বাদে আরেকটি ফিরতি নৌকায় উঠে বসল। মাঝিরা তাকে নামাতে গেলে সে দাঁত খিঁচিয়ে তেড়ে আসে। অবশেষে নৌকার অন্য যাত্রীরা মাঝিদেরকে বলল,'' কুকুরটা যখন কোনও ক্ষতি করছেনা, চুপ করেই বসে আছে; তখন নিয়েই চল ওকে।'' বাঘা এভাবে ফিরে এসে সারারাত বেলুড় মঠের আশেপাশেই লুকিয়ে রইল। বাঘা জানত স্বামীজি ভোর হবার আগেই স্নান-ঘরে আসেন। বাঘা সেখানে লুকিয়ে স্বামীজির জন্যে অপেক্ষা করতে লাগল। স্বামীজি এলে বাঘা তাঁর পায়ে মুখ ঘষতে ঘষতে কুঁই কুঁই করে কাঁদতে লাগল। স্বামীজি বাঘাকে নিয়ে বেরিয়ে এসে মঠের সকলকে ডেকে বললেন, '' বাঘাকে আর এভাবে যেন কেউ তাড়িয়ে না দেয়। ও চিরদিন মঠেই থাকবে।'' তখন বাঘার আনন্দ দেখে কে! লেজ নাড়তে নাড়তে গর্বের সঙ্গে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বাঘা ভৌ ভৌ করে আনন্দ করতে লাগল। বাঘার মৃত্যুর পর তার মৃতদেহটাকে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেওয়া হল। পরেরদিন দেখা গেল ভাঁটার টানে বাঘার নশ্বর দেহটি আবার মঠ-ভূমিতে ফিরে এসেছে। তখন বাঘার দেহ সসম্মানে মঠের জমিতেই সমাহিত করা হয়েছিল।
রামকৃষ্ণ সংঘ নামক যে সংগঠনটি স্বামীজি তৈরি করেছিলেন সেই সংগঠনের ভিত্তি ছিল এই অকৃত্রিম ভালবাসা, পরস্পরের প্রতি নিখাদ টান। আর এই ভালবাসার কারণ হলেন ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণ। মঠের সবাই, সবকিছুই ঠাকুরের -- এই বোধের সঞ্চার ঘটিয়ে স্বামীজি সকলকে দুর্নিবার ভালবাসায় আবদ্ধ রেখেছিলেন। মঠের সাধুদেরকে তিনি বলতেন, '' ঠাকুর যেমন আমাকে ভালবাসতেন, আমি যেমন তোদেরকে ভালবাসি; তোরাও তেমনি জগৎটাকে ভালবাস দেখি।'' স্বামীজি যেন ছিলেন এই ভালবাসার মূর্তিমান বিগ্রহ। তিনি ভালবাসা দিয়ে সংগঠন তৈরি করেছিলেন, ভালবাসা দিয়ে সংগঠনকে শাসন করতেন, ভালবাসা দিয়ে সংগঠনকে বেঁধে রেখেছিলেন।
Multi Activity Center Our Activities :- Dance,Aerobics,Skating,Karate,Yoga,Abacus,Acting & Modeling, etc.
Ramakrishna Mission Vidyamandira is an autonomous degree college affiliated with the CU.
Al-ameen Mission, A socio-academic institution with a difference. This page is maintained by The Alumni Association of Al-ameen Mission.
We impart quality education to students from ICSE, ISC & CBSE Board & enable a holistic development of children.
Indian Research Institute for Integrated Medicine (IRIIM)
We are a dedicated center for continuing the education of people every where. We are here to help and want to make sure that you succeed.
CORPORATE ADVISOR Researches in 1. Vaastu Energy Balancing System 2. Holistic Science 3. Divine Yoga 4. Corporate Vaastu
* Classes for 11 and 12 ( commerce stream) * Classes for B.com. (part 1,2,3) * Foundation CMA,CS,CA
ALOHA LEARNING CENTRE
Have a story that you want to share, but can't or probably shouldn't? Submit it here at http://besuconfessions.co.nr !!! :) Keep it Coming :)