হযরত শাহ্ মখদুম রুপোশ (রঃ)- এর স্মৃতি বিজড়িত পূণ্যভূমিতে বৈচিত্রময় বৃক্ষরাজিশোভিত সুশীতল ছায়ানিবিড় পরিবেশে অবস্থিত রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ রাজশাহী জেলার মেয়েদের জন্য একমাত্র সরকারী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান । ঔপনিবেশিক আমল থেকেই রাজশাহী শিক্ষা নগরী হিসেবে পরিচিত হলেও এখানে স্বতন্ত্র কোনো মহিলা কলেজ ছিল না। তাই নারীদের আত্মপ্রতিষ্ঠা ও নারীশিক্ষা প্রসারের জন্য রাজশাহীর কয়েকজন বিদ্যোvসাহী ব্যক্তির উদ্যোগে ও জনসাধারণের আর্থিক সহায়তায় ১৯৬২ সালের ২৪ এপ্রিল নগরীর কাদিরগঞ্জ মহল্লার অন্তর্গত তারিনী বাবুর বাগান নামে পরিচিত বৃক্ষশোভিত প্রায় দশ একরের একটি মনোরম ভূন্ডখন্ডে রাজশাহী মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন বদলি সনদের মাধ্যমে ভর্তিকৃত পঁচিশ জন ছাত্রী নিয়ে এই কলেজের যাত্রা শুরু হয়। প্রথম থেকেই শিক্ষা, সাহিত্যন্ডসংস্কৃতি, ক্রীড়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে ছাত্রীদের অসাধারণ সাফল্যের ফলে এই কলেজের প্রতি ছাত্রী ও অভিভাবকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। ষাটের দশকের মাঝামাঝি তvকালীন সরকার প্রতিটি জেলায় একটি করে মহিলা কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলে ১৯৬৮ সালের ২৫ এপ্রিল সেই পরিকল্পনার আওতায় এই কলেজটির সরকারিকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। কলেজটিতে বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসালামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স, ইতিহাস, ভূগোল ও পরিবেশ, দর্শন, পদার্থ, রসায়ন, গণিত, প্রাণিবিজ্ঞান এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স কোর্স; বিএ, বিএসএস, বিএসসি ডিগ্রি (পাস) এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা চালু রয়েছে।
কলেজে সর্বমোট ২১টি বিভাগ রয়েছে। এখানে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও কর্মঠ শিক্ষকমন্ডলী রয়েছেন যাঁদের মধ্যে কয়েকজন এম.ফিল. ও পিএইচ.ডি. ডিগ্রিধারী। এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্রীদের মধ্যে অনেকেই শিক্ষাবিভাগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত ছিলেন ও বর্তমানেও আছেন। ভৌত
অবকাঠামো : কলেজের একটি তিনতলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন রয়েছে। H আকৃতির সংযুক্ত দুটি তিনতলা ভবনে একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। ছাত্রীদের জন্য কমনরুম, ক্রীড়াকক্ষ, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট রুম, নামাজঘর, মিলনায়তন, ক্যান্টিন এবং বই ও জার্নালে সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিও রয়েছে। এছাড়া দূর হতে আগত মেধাবী ছাত্রীদের আবাসনের জন্য রয়েছে দুটি ভবনবিশিষ্ট একটি ছাত্রী হোস্টেল। ।
কলেজ সংক্রান্ত তথ্যাবলি
প্রতিষ্ঠাকাল : ২৪/০৪/১৯৬২ খ্রি:
সরকারিকরণ : ২৫/০৪/১৯৬৮ খ্রি:
বর্তমান অধ্যক্ষ : প্রফেসর সাবরীনা শাহনাজ চৌধুরী (ভারপ্রাপ্ত)
উপাধ্যক্ষ : প্রফেসর সাবরীনা শাহনাজ চৌধুরী
পদ সংখ্যা : অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও অধ্যাপকসহ প্রফেসর ০৪টি
সহযোগী অধ্যাপক ১৩টি
সহকারী অধ্যাপক ১৭টি
প্রভাষক ৩৩টি
প্রদর্শক ০৬টি
গ্রন্থাগারিক ০১টি
সহকারী গ্রন্থাগারিক ০১টি
শরীরচর্চা শিক্ষক ০১টি
শিক্ষকদের উচ্চতর ডিগ্রি ও গবেষণা সংক্রান্ত তথ্যাবলি : বর্তমান অধ্যক্ষ মহোদয় সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে এম.ফিল. ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এম.ফিল. ও পিএইচ.ডি. ডিগ্রিধারী শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন: বাংলা বিভাগে প্রফেসর ড. মোহা: মোকবুল হোসেন, প্রণিবিদ্যা বিভাগে ড. মোছা: মাকসুদা খানম। এছাড়াও গণিত বিভাগের শিক্ষক জনাব মোঃ ছাইফুল ইসলাম খন্ডকালীন এম.ফিল. ডিগ্রির জন্য গবেষণারত রয়েছেন।
বিভাগসমূহ : বাংলা, ইংরেজি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, অর্থনীতি, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ভূগোল ও পরিবেশ, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা, উvপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন, শরীরচর্চা এবং গ্রন্থাগার বিভাগ।
যে সকল পর্যায়ে পাঠদান করা হয়:
উচ্চ মাধ্যমিক : মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা
স্নাতক (পাস) : কলা, সামাজিক বিজ্ঞান ও বি.এসসি.
স্নাতক (সম্মান) : বাংলা : ১৯৯২-৯৩ শিক্ষাবর্ষ হতে শুরু
ইংরেজি : ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষ হতে শুরু
অর্থনীতি : ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষ হতে শুরু
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি : ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষ হতে শুরু
রাষ্ট্রবিজ্ঞান : ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষ হতে শুরু
দর্শন : ২০০৬-২০০৭ শিক্ষাবর্ষ হতে শুরু
ইতিহাস : ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষ হতে শুরু
ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা : ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষ হতে শুরু
২০১৫-২০১৬ শিক্ষা বর্ষ হতে শুরু : পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিদ্যা, গণিত, প্রাণিবিজ্ঞান ও উদ্ভিদবিজ্ঞান।
মাস্টার্স বিষয়সমূহ : বাংলা, ইংরেজী, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি।
প্রশাসনিক ভবন : এটি ৩১-০৮-১৯৯৮ সালে নির্মিত হয়। কলেজ গেট থেকে প্রবেশ করে ডান দিকের তিনতলা ভবনটি প্রশাসনিক ভবন। এর নীচতলাতে পরীক্ষা কন্ট্রোল রুম ও শিক্ষক মিলনায়তন রয়েছে। ২য় তলাতে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ মহোদয়ের ৩১৮ নং কক্ষ এবং পশ্চিম দিকে কলেজের অফিস রয়েছে। ৩য় তলাতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শ্রেণী কক্ষ ও ৩১৭ নং কক্ষটি গণিত ও আইসিটি বিভাগের কম্পিউটার ল্যাব।
একাডেমিক ভবন : কলেজ চত্বরের দক্ষিণ দিকে অর্থাৎ গেট থেকে সোজা পশ্চিমে গিয়ে বাম দিকে একাডেমিক ভবন অবস্থিত। এর উত্তর ব্লকের নীচতলায় অর্থনীতি, ইংরেজি, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ; পশ্চিম দিকে ১০৫ নং মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বিভাগ, ১০৬ নং আইসিটি সেল, ১০৮ নং শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। দ্বিতীয় তলায় ২০১ নং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ২০২ নং প্রাণিবিজ্ঞান, ২০৩ নং প্রাণিবিজ্ঞান ল্যাব, ২০৪, ২০৫ নং শ্রেণিকক্ষ এবং ২০৬ নং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ ২০৭ নং পরিসংখ্যান, ২০৮ নং গণিত ও আইসিটি বিভাগ এবং একটি সুবিশাল লাইব্রেরি রয়েছে। তৃতীয় তলায় ৩০১ নং, ৩০২ নং শ্রেণিকক্ষ, ৩০৪ নং, ৩০৫ নং শ্রেণিকক্ষ ৩০৬ নং ও ৩০৭ নং মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ, ৩০৮ নং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ ৩০৯ নং ও ৩১০ নং শ্রেণিকক্ষ এবং ৩১১ নং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ল্যাব রয়েছে। একাডেমিক ভবনের দক্ষিণ ব্লকের নীচতলায় বাংলা বিভাগ ও দর্শন বিভাগ এবং ১১১ নং ও ১১২ নং মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ। ২য় তলায় ইতিহাস বিভাগ, ২১৩ নং ইংরেজি বিভাগের শ্রেণিকক্ষ এবং পশ্চিম দিকে ২১৪ নং কক্ষটি মাল্টিমিডিয়া অডিটোরিয়াম রয়েছে। ৩য় তলায় ৩১২ নং, ৩১৩ নং শ্রেণিকক্ষ ৩১৪ নং কক্ষ ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ এবং ৩১৫ নং, ৩১৬ নং মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ।
সহশিক্ষা কার্যক্রম ভবন : এই ভবনটি কলেজের নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নির্মিত হয়। ভবনটি কলেজের বাগানের দক্ষিণে এবং ক্যান্টিন সংলগ্ন। ভবনটিতে বিএনসিসি, রোভার ডেন, রেঞ্জার ইউনিট, ক্রীড়া কক্ষ নামাজঘর এবং ছাত্রী কমনরুম রয়েছে। ছাত্রীনিবাস : রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে আবাসিক ছাত্রীদের জন্য দুটি ভবনবিশিষ্ট একটি ছাত্রীনিবাস রয়েছে। একটি তিনতলা এবং অন্যটি চারতলাবিশিষ্ট ভবনে সর্বমোট ৩৬০ জন ছাত্রী থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি আর্থিক বছরে এককালীন ফি দিয়ে ছাত্রীনিবাসে ছাত্রী ভর্তি করা হয়। এখানে বিনোদনের জন্য টেলিভিশন দেখার এবং ব্যডমিন্টন, ক্যারাম, লুডু, দাবা ইত্যাদি খেলার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া প্রতি বছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রীনিবাসের অভ্যন্তরে যথাযথ পড়াশুনা ও সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার্থে ছাত্রীদেরকে এখানকার সকল আইন-কানুন ও নিয়মন্ডশৃঙ্খলা কঠোরভাবে মেনে চলতে হয়। হোস্টেল সুপার ও সহকারী হোস্টেল সুপার এর সার্বিক দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়াও অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ মহোদয়ের নেতৃত্বে অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলীসহ হোস্টেল উপদেষ্টা কমিটি আছে। তাঁরা ছাত্রীনিবাস পরিচালনার জন্য নিয়মিত মিটিং এর মাধ্যমে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন।
লাইব্রেরি : একাডেমিক ভবনের পশ্চিম পার্শ্বে ২য় তলায় (তিন কক্ষবিশিষ্ট) নিরিবিলি ও মনোরম পরিবেশে সুবিশাল লাইব্রেরি অবস্থিত। এর পুন্তক সংখ্যা ১৬,০০০ (প্রায়), ম্যাগাজিন ৪৭০টি, দৈনিক খবরা-খবর জানার জন্য রয়েছে বিভিন্ন সংবাদপত্র। একসাথে প্রায় ১০০ জন ছাত্রী লাইব্রেরিতে বসে পড়াশুনা করতে পারে।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা : ডা. শাহীন সুলতানা বর্তমানে রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে সপ্তাহে একদিন প্রতি সোমবার ছাত্রীদের বিকাল ৫.০০ টা হতে ৭.০০ টা পর্যন্ত হোস্টেল টিভি রুমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন।
পুকুর : কলেজে দুটি পুকুর আছে। একটি প্রশাসনিক ভবনের পশ্চিমে, আয়তন প্রায় এক বিঘা। দুই পার্শ্বে দুটি বাঁধানো ঘাট আছে। এছাড়াও অন্য পুকুরটি একেবারে পশ্চিমে শহীদ মিনারের পেছনে প্রাচীর সংলগ্ন অবস্থায় আছে। এর আয়তন প্রায় দুই বিঘা। এই পুকুরের উত্তর দিকে একটি বাঁধানো ঘাট আছে। দুটি পুকুরেই প্রাকৃতিক পরিবেশ জীববিজ্ঞান বিষয়ের পাঠ দানের নিমিত্তে মূল্যবান জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা হয়। উল্লেখ্য যে, এ দুটি পুকুরে দেশীয় প্রজাতির হুমকিগ্রস্থ বিভিন্ন মাছ যেমন- সরপুঁটি, তিতপুঁটি, কৈ, শিং, মাগুর ইত্যাদি সংরক্ষণ ও চাষ করা হয়ে থাকে।
কলেজের রেঞ্জার ইউনিট : সবুজ ছায়াঘেরা সুন্দর পরিবেশে অত্র কলেজের ছাত্রীদের শিক্ষাগ্রহণের পাশাপাশি দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় স্বনির্ভর, আত্মবিশ্বাস, মমত্ববোধ বৃদ্ধি প্রভৃতি কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সচেতন ও কর্তব্যপরায়ন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে কলেজে একটি রেঞ্জার ইউনিট চালু আছে। স্বাধীনতা উত্তর ১৯৭৪ সালে অত্র কলেজে রেঞ্জার ইউনিট চালুর পর হতে অদ্যাবধি কলেজের শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে খ্যাতি অর্জন করেছে। ২০০৮ সালে হংকং এ অনুষ্ঠিত ফেন্ডশীপ ক্যারাভার এবং ২০১৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত সাংগাম ওয়ার্ল্ড সেন্টার প্রোগ্রাম, আর্টস ফর চেঞ্জ ইভেন্ট কর্মকান্ডে অত্র কলেজের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী আফছানা আক্তার এবং ইসলামী ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী আফসানা খাতুন যোগদানের সুযোগ পেয়ে অত্র কলেজের সুনাম বৃদ্ধি করেছে। দেশের অভ্যন্তরে বৃক্ষরোপণ, টিকাদান কর্মসূচি, দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র প্রদান, ঔষধ বিতরণ এবং শিক্ষা সাংস্কৃতিক ও সেবামূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এ ইউনিট জাতীয়ভাবে শ্রেষ্ঠত্বের গৌরব অর্জন করেছে। সাধারণ ছাত্রীদের দায়িত্বশীল ও স্নেহময়ী হিসেবে গড়ে তুলতে কলেজের রেঞ্জার ইউনিট নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
রোভার স্কাউট ইউনিট : রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে পড়াশুনার পাশাপাশি স্টাউটিং চর্চা করা হয়। স্কাউটিং এ কলেজে শুরু হয় ২০১৩ সালে। এরই প্রেক্ষিতে এ কলেজে গার্লন্-ইন-রোভার ইউনিট চালু আছে। রোভাররা বিভিন্ন কোর্স এবং ক্যাম্প করে এ কলেজের সুনাম এবং গৌরব বৃদ্ধি করেছে। সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় রোভারদের কৃতিত্ব অনন্য। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরে বৃক্ষরোপন, টিকাদান কর্মসূচী, দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র প্রদান, ঔষধ বিতরণ এবং সেবামূলক কাজে তাদের ভূমিকা অপরিসীম। ছাত্রীদের দায়িত্ববান সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে কলেজের গার্লন্-ইন-রোভার ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে।
বিএনসিসি ইউনিট : রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে বিএনসিসি এর একটি ইউনিট আছে। যেটি মহাস্থান রেজিমেন্টের ১ মহাস্থান ব্যাটালিয়ানের ডি কোম্পানীর ২নং প্লাটুন। প্রতিটি প্লাটুন ১জন প্লাটুন কমান্ডার, ১জন সিইউও, ১জন সার্জেন্ট, ৩জন ক্যাডেট কর্পোরাল, ৩জন ল্যান্স কর্পোরাল ও ২৪ জন ক্যাডেটের সমন্বয়ে গঠিত হয়। ক্যাডেটগণ প্রতিবছর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডসহ, সামাজিক, ঐচ্ছিক এবং বিএনসিসি এর আয়োজিত বিভিন্ন ক্যাম্প ও প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিক্ষেত্রে সাফল্যের চিহ্ন আঁকছে ও প্রশংসিত হচ্ছে। এছাড়াও মেধাবী ক্যাডেটদের জন্য শিক্ষা বৃত্তি ও বিদেশ সফরের সুযোগ করে দেয় বিএনসিসি। সামপ্রতিক সময়ে বিএনসিসি এর কার্যক্রম বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। অতি মানবতার সেবায় রক্তদান, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মকান্ডে নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তা প্রদান, বৃক্ষরোপন অভিযান প্রভৃতি কর্মকান্ডের মাধ্যমে বিএনসিসির ক্যাডেটবৃন্দ প্রতিনিয়ত নিজেদের নিয়োজিত রাখছে।
খেলাধূলা ও শরীরচর্চা : ছাত্রীদের খেলাধুলা ও শরীরচর্চার জন্যে কলেজের একাডেমিক ভবনের পেছনে দক্ষিণ দিকে একটি বিস্তৃত মাঠ রয়েছে। এখানে ছাত্রীরা সারা বছর শরীরচর্চা ও খেলাধুলা করে থাকে। এছাড়াও এ মাঠে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। উল্লেখ্য যে, জাতীয় পর্যায়ে এই কলেজের ছাত্রীরা গৌরবোজ্জ্বল অবদান রেখে চলেছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ গেমস্ন্- এ দ্বাদশ শ্রেণির দুজন শিক্ষার্থী ক্যারাতে এবং বক্সিং প্রতিযোগিতায় যাথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করার গৌরব অর্জন করে।
সংস্কৃতি চর্চা : এই কলেজে ছাত্রীরা নিয়মিত সহ-শিক্ষাক্রম হিসেবে কবিতা আবৃত্তি, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, গান, নাচ, অভিনয় ইত্যাদি চর্চা করে থাকে। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে, নববর্ষে এবং বার্ষিক সাহিত্য-সংস্কৃতি প্রতিযোগিতায় ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করে প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়। ২০১৪ সালে এই কলেজের একটি সঙ্গীত দল সত্যেন সেন গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতায় জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান লাভ করে এবং জাতীয় পর্যায়ে দলটি তৃতীয় স্থান অর্জন করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে।
বিতর্ক ক্লাব : এ কলেজে বিতর্ক ক্লাব নামে একটি সংগঠন আছে। যার মাধ্যমে অত্র কলেজের ছাত্রীরা জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার অর্জন করার মাধ্যমে কলেজকে একটি সম্মানজনক স্থানে পৌঁছে দিয়েছে।
বাঁধন : এ কলেজে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচীর সংগঠন বাঁধন রয়েছে। এর মাধ্যমে কলেজে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী পালন করা হয়।
ক্যান্টিন : কলেজের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একতলাবিশিষ্ট একটি ক্যান্টিন রয়েছে। কলেজের একাডেমিক ভবনের পূর্বদিকে বাগানের পাশ দিয়ে ক্যান্টিনে যাওয়া যায়। নামাজ ঘর: সহশিক্ষা ভবনের দক্ষিণ পার্শ্বে ক্যান্টিন সংলগ্ন ছাত্রীদের নামাজ পড়ার জন্য নামাজ ঘর রয়েছে।
ছাত্রী কমন রুম : সহশিক্ষা কার্যক্রম ভবনে একটি ছাত্রী কমন রুম অবস্থিত। সেখানে ক্যারাম, দাবা, টেবিল টেনিস, বাগাডুলি, লুডু খেলার ব্যবস্থা রয়েছে।
শহীদ মিনার : এটি ১৯৯৮ সালে নির্মিত হয়। কলেজ গেট থেকে সোজা পশ্চিম দিকে পুকুরের ধারে মনোরম পরিবেশে এই শহীদ মিনার অবস্থিত। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণসহ নানা অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। শহীদ মিনারটি তিন স্তরবিশিষ্ট, মাঝের স্তরের সাথে গোলাকার সূর্যের প্রতীক বিদ্যমান।