
❄️বিশ্বজননী জননী মনোমোহিনীদেবী'র জন্ম ইতিবৃত্ত
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
পাবনা জিলার হিমাইতপুর গ্রামের বিখ্যাত চৌধুরী পরিবারে বঙ্গাব্দ ১২৭৭ সালের ১৮ই জ্যৈষ্ঠ মনোমোহিনী দেবীর জন্ম হয়। পিতা রামেন্দ্র নারায়ণ মনোমোহিনীকে সর্বাধিক স্নেহ করিতেন। কন্যাকে বসন-ভূষণে সজ্জিত রাখিতে তিনি যেমনই ভালবাসিতেন, তাহাকে সর্বপ্রকারে সুশিক্ষিত করিয়া তুলিতে তেমনই অশেষ যত্ন লইতেন। যাহাতে বাল্যকাল হইতেই বালিকার তরুণ মনে শ্রদ্ধা, ভক্তি, দয়া, মমতা, ত্যাগ, নিষ্ঠা প্রভৃতি সদগুণ সহজেই বিকশিত হইয়া উঠে, সেজন্য তিনি সবিশেষ চেষ্টা করিতেন। তাঁহার সৎশিক্ষায় অতিবাল্য হইতেই উচ্চাদর্শের প্রতি বালিকার যে গভীর অনুরাগ জন্মিয়াছিল বহু ঘটনায় তাহার সুস্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়।
ছোটবেলায় মনোমোহিনী দেবী একদিন তাঁহার পিতাঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন,- 'বাবা, কি কি সদ্গুণ থাকলে মানুষ বড় হয়?' উত্তরে রামেন্দ্রনারায়ণ কন্যাকে বলিয়াছিলেন, 'যারা সত্য কথা বলে, পরের দ্রব্যে লোভ করে না, গুরুজনকে মান্য করে, দীনদুঃখীর সেবা করে এবং সর্বোপরি ঈশ্বরে বিশ্বাসভক্তি রেখে চলে, তাদেরই লোকে মহৎ ব'লে পূজা করে, ভগবানও তাদের উপর সন্তুষ্ট থাকেন।' পিতৃদেবের কথিত সদ্গুণরাজি মনোমোহিনী দেবীর চরিত্রে যথাকালে অঙ্কুরিত ও বিকশিত হইয়া উত্তর-জীবন তাঁহাকে মহীয়সী করিয়া তুলিয়াছিল। বালিকা মনোমোহিনীর চরিত্রগঠনে তাঁহার মাতামহী কৃপাময়ী
দেবীর জ্বলন্ত ইষ্টনিষ্ঠা সবিশেষ প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল। মনোমোহিনী দেবী তাঁহার আত্মজীবনীতে মাতামহী ও পিতৃদেব সম্বন্ধে উল্লেখ করিয়াছেন, "সবাই আমাকে ছোটকালে আদর করিয়া 'মনু' বলিয়া ডাকিত। আমি আমার দিদিমার সঙ্গে খাইতাম, তাঁহার কাছেই রাত্রে শুইতাম। দিদিমা হরিনাম জপ করিতেন, হরিনাম গাহিতেন, আমিও তাঁহার সঙ্গে গান করিতাম, তাঁহার মত হাসিতাম, কাঁদিতাম। দিদিমার কাছে হরিকথা শুনিয়া আমার মন শিশুকাল হইতেই উদাস হইয়া উঠিত। আমি দিদিমার পূজার জন্য ফুল তুলিয়া আনিতাম। আমার মনে হইত, মবাবাই আমাকে সর্বাধিক ভালবাসিতেন। সকালবেলা বাবার কাছে চলিয়া আসিতাম। তিনি আমাকে আপ্রাণ যত্ন করিয়া লেখাপড়া শিখাইতেন এবং যাহাতে আমার সৎশিক্ষা হয় তাহারই চেষ্টা করিতেন।" আদর্শ-শিক্ষায়
বালিকার স্বভাবটি সর্বাঙ্গসুন্দর করিয়া গড়িয়া তুলিতে মাতা কৃষ্ণসুন্দরীরও চেষ্টার অবধি ছিল না। ধর্মপ্রাণ বাবা, মা ও দিদিমার নিয়ত সস্নেহ সেবাযত্নের মধ্যে মনোমোহিনী দেবীর বাল্যজীবন অতিবাহিত হওয়ায়, জীবনারম্ভ হইতেই তিনি অতীব ধর্মানুরাগিণী হইয়া উঠিয়াছিলেন। ⚪
(গ্রন্থঃ- শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র, ব্রজগোপাল দত্ত)