04/02/2025
বৃহস্পতির রেড স্পট: এক অবিশ্বাস্য ঝড়ের রহস্য
বৃহস্পতি গ্রহ তার বিশাল আকৃতির জন্য পরিচিত, তবে এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো গ্রেট রেড স্পট (Great Red Spot)। এটি পৃথিবীর চেয়ে বড় একটি মহাজাগতিক ঝড়, যা শত শত বছর ধরে বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলে সক্রিয় রয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটি সৌরজগতের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এবং বিশালতর ঝড়গুলোর মধ্যে একটি।
কীভাবে তৈরি হলো এই ঝড়?
গ্রেট রেড স্পট মূলত এক বিশাল উচ্চচাপযুক্ত ঘূর্ণিঝড় (anticyclone), যা বৃহস্পতির ঘন বায়ুমণ্ডলের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতির গ্যাসীয় পৃষ্ঠের নিচে শক্ত মাটির অভাব এবং গ্রহটির দ্রুত ঘূর্ণন এই ঝড়কে দীর্ঘস্থায়ী করেছে। পৃথিবীতে হারিকেন বা টাইফুন কয়েকদিন বা সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যায়, কিন্তু বৃহস্পতির এই ঝড় কমপক্ষে ৩৫০ বছর ধরে টিকে আছে!
ঝড়ের আকৃতি এবং বৈশিষ্ট্য
এই রেড স্পটটির ব্যাস প্রায় ১৬,৩৫০ কিলোমিটার, যা আমাদের পুরো পৃথিবীর চেয়েও বড়। এটি এতই বিশাল যে এর ভেতরে দুই থেকে তিনটি পৃথিবী সহজেই ফিট হয়ে যেতে পারে। ঝড়ের বাতাসের গতি প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৪৩০-৬৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা পৃথিবীর যেকোনো হারিকেনের তুলনায় বহুগুণ বেশি শক্তিশালী।
রহস্যময় লাল রঙের কারণ
বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন কেন এই ঝড়টি লাল রঙের। একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হলো, বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলে থাকা আমোনিয়া, সালফার, এবং ফসফরাস যৌগ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির (UV rays) প্রভাবে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে এই লালচে রঙ তৈরি করে। তবে এর রঙ সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে দেখা গেছে, যা এটিকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে।
ঝড় কি ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে?
বিগত কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করেছেন যে গ্রেট রেড স্পট ছোট হয়ে আসছে। ১৮০০ সালের দিকে এটি প্রায় ৪০,০০০ কিলোমিটার প্রশস্ত ছিল, কিন্তু বর্তমানে এটি মাত্র ১৬,০০০ কিলোমিটার। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, এই ঝড় একসময় সম্পূর্ণ মিলিয়ে যেতে পারে। তবে এটি ঠিক কখন এবং কেন শেষ হবে, তা বিজ্ঞানীদের কাছে এখনও অজানা।
ভবিষ্যতে কী হতে পারে?
বৃহস্পতির রেড স্পট তার আকৃতি ও শক্তি পরিবর্তন করলেও এটি এখনও সৌরজগতের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়গুলোর মধ্যে একটি। এটি যদি মিলিয়েও যায়, তবে বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলে নতুন ঝড় তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাবে।
গ্রেট রেড স্পট আমাদের সৌরজগতের গ্যাসীয় দৈত্যদের বায়ুমণ্ডলের গতিবিদ্যা বোঝার একটি গুরুত্বপূর্ণ জানালা। এটি শুধু একটি মহাজাগতিক ঝড়ই নয়, বরং মহাবিশ্বের বৈচিত্র্য এবং সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শন।
06/12/2024
অন্য গ্রহে উদ্ভিদের সম্ভাবনা: বিজ্ঞান কী বলে?
পৃথিবীর বাইরে কোনো গ্রহে উদ্ভিদের অস্তিত্ব এখনো প্রমাণিত হয়নি। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, উদ্ভিদ বা প্রাণের মতো জটিল জীবনের বিকাশের জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ হতে হবে। উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য তরল পানি, শক্তির উৎস, এবং একটি স্থিতিশীল পরিবেশ অপরিহার্য। এই শর্তগুলো পূরণ করতে সক্ষম গ্রহ বা উপগ্রহকেই জীবনের সম্ভাব্য উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
উদ্ভিদের জন্য তরল পানির উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, মঙ্গল গ্রহ এবং বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপায় বরফের নিচে তরল পানির সম্ভাবনা রয়েছে। উদ্ভিদের আরেকটি প্রয়োজনীয় উপাদান হলো আলো। পৃথিবীর উদ্ভিদগুলো সূর্যের আলো ব্যবহার করে ফটোসিন্থেসিস প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে। তবে পৃথিবীতে পানির নিচে কিছু উদ্ভিদ আলো ছাড়াও বিকশিত হয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, অন্য কোনো গ্রহে বিকল্প শক্তির উৎস থাকলে তেমন উদ্ভিদের অস্তিত্ব সম্ভব হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গ্রহ এবং উপগ্রহের বায়ুমণ্ডল এবং পৃষ্ঠে জীবনের সম্ভাব্য চিহ্ন খুঁজছেন। উদাহরণস্বরূপ, অক্সিজেন, মিথেন, বা ক্লোরোফিলের মতো রাসায়নিক উপাদান উদ্ভিদের উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে। ভবিষ্যতের বিভিন্ন মহাকাশ মিশন, যেমন মঙ্গলে প্রেরিত রোভার এবং বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপা পর্যবেক্ষণ, এই বিষয়ে নতুন তথ্য দিতে পারে।
অন্য গ্রহে উদ্ভিদের সন্ধান এখনো রহস্যের অন্তরালে। তবে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী, একদিন আমরা সৌরজগতে বা অন্য কোনো জায়গায় উদ্ভিদের মতো জীবনের সন্ধান পাব। এটি মহাবিশ্বের প্রতি আমাদের বোঝাপড়াকে এক নতুন দিগন্তে পৌঁছে দেবে।
04/12/2024
ইউরোপা: সৌরজগতের লুকানো সমুদ্রের সম্ভাব্য আবাসস্থল
বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপা সৌরজগতের অন্যতম রহস্যময় উপগ্রহ। এর পৃষ্ঠ বরফে আবৃত, যা গ্লাসের মতো মসৃণ এবং উজ্জ্বল। বিজ্ঞানীদের মতে, এই বরফের নিচে লুকিয়ে আছে একটি বিশাল তরল পানির সমুদ্র। এই সমুদ্রের গভীরতা পৃথিবীর সমস্ত মহাসাগরের মিলিত গভীরতার চেয়েও বেশি হতে পারে।
ইউরোপার পৃষ্ঠে বরফের স্তর প্রায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার পুরু। এর নিচে একটি তরল সমুদ্র থাকতে পারে, যার গভীরতা ৬০-১৫০ কিলোমিটার। এই তরল সমুদ্রের প্রধান কারণ হলো বৃহস্পতির তীব্র মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, যা ইউরোপার ভেতরে জোয়ারের মতো টান সৃষ্টি করে। এই প্রক্রিয়ায় প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়, যা বরফের নিচে পানি তরল রাখে।
এই সমুদ্রের পানিতে হাইড্রোথার্মাল ভেন্টস বা রাসায়নিক শক্তির উৎস থাকতে পারে, যা পৃথিবীর গভীর সমুদ্রে মাইক্রোবিয়াল জীবনকে টিকিয়ে রাখার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। যদিও নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না, ইউরোপা প্রাণের সন্ধানের জন্য বিজ্ঞানীদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গা।
নাসার ইউরোপা ক্লিপার মিশন আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ইউরোপায় পাঠানো হবে। এই মিশন ইউরোপার পৃষ্ঠ এবং বরফের নিচের সমুদ্র সম্পর্কে আরও বিশদ তথ্য দেবে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই মিশন আমাদের সৌরজগতে প্রাণের সন্ধানের পথে একটি বড় পদক্ষেপ হবে।
02/12/2024
চাঁদে শব্দের অনুপস্থিতি: একটি নিঃশব্দ পৃথিবীর উপগ্রহ
চাঁদে কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। বায়ুমণ্ডল না থাকার অর্থ হলো, শব্দের তরঙ্গগুলো ছড়িয়ে পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় মাধ্যমের অভাব। পৃথিবীতে শব্দ বায়ুর মাধ্যমে ছড়ায়, কিন্তু চাঁদে সেই বায়ু নেই। ফলে, আপনি যদি চাঁদে দাঁড়িয়ে কথা বলেন বা চিৎকার করেন, সেটি শোনা সম্ভব নয়।
এছাড়াও, বায়ুমণ্ডল না থাকার কারণে চাঁদে কোনো বায়ু প্রবাহ, ঝড়, কিংবা আকাশে মেঘ দেখা যায় না। চাঁদের আকাশ সর্বদা কালো থাকে, এমনকি দিনের বেলাতেও। কারণ, আলো বিচ্ছুরিত হওয়ার জন্য কোনো বায়ু কণা নেই।
তবে, চাঁদে শব্দ শোনা একেবারে অসম্ভব নয়। যদি কোনো কম্পন বা ধাক্কা সরাসরি চাঁদের পৃষ্ঠে ঘটে এবং আপনি সেই পৃষ্ঠের সঙ্গে সংযুক্ত থাকেন, তবে সেই কম্পন আপনি অনুভব করতে পারবেন। এটি যান্ত্রিক তরঙ্গের মাধ্যমে সম্ভব হয়, কিন্তু শব্দের মতো বায়ুতে ছড়ানো তরঙ্গ সম্ভব নয়।
30/11/2024
ব্ল্যাক হোল মহাবিশ্বের এমন এক বস্তু, যার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এতটাই প্রবল যে, সেখানে কোনো কিছুই—এমনকি আলোও—পালাতে পারে না। এটি এমন এক অঞ্চল তৈরি করে, যাকে ইভেন্ট হরাইজন বলা হয়। একবার কোনো বস্তু ইভেন্ট হরাইজন অতিক্রম করলে সেটি আর কখনোই বের হতে পারে না। এজন্য ব্ল্যাক হোল সম্পূর্ণ কালো এবং সরাসরি দৃশ্যমান নয়। তবে এর প্রভাব আশেপাশের বস্তু এবং বিকিরণের মাধ্যমে ধরা পড়ে।
ব্ল্যাক হোল সাধারণত বড় তারার সুপারনোভা বিস্ফোরণের পরে তার কেন্দ্রের সংকোচনের মাধ্যমে তৈরি হয়। এটি একটি অতি ক্ষুদ্র এবং অত্যন্ত ঘন বস্তু, যার কেন্দ্রস্থলকে সিঙ্গুলারিটি বলা হয়। এখানে ঘনত্ব অসীম এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এতটাই শক্তিশালী যে, স্থান ও সময় বিকৃত হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, এই কেন্দ্রে পদার্থবিজ্ঞানের প্রচলিত তত্ত্ব আর প্রযোজ্য নয়।
ব্ল্যাক হোল বিভিন্ন আকারের হতে পারে, যেমন স্টেলার ব্ল্যাক হোল, সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল এবং মধ্যম ভরের ব্ল্যাক হোল। সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল সাধারণত গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকে। আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে 'স্যাজিটারিয়াস এ' নামে একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল রয়েছে।
ব্ল্যাক হোলের মাধ্যাকর্ষণ সময়ের গতিকেও প্রভাবিত করে। ইভেন্ট হরাইজনের কাছাকাছি সময় ধীর গতিতে চলে, যা আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ব্ল্যাক হোল আমাদের মহাবিশ্বের গঠন, উৎপত্তি এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি একদিকে ভয়ংকর, অন্যদিকে মহাকাশ বিজ্ঞানের অন্যতম বিস্ময়কর অধ্যায়।
28/11/2024
নিউট্রন স্টার: এক চামচে এক বিলিয়ন টনের রহস্য
নিউট্রন স্টার হলো মহাবিশ্বের অন্যতম অদ্ভুত এবং চরম ঘন বস্তু। এটি তখন গঠিত হয় যখন একটি বিশাল তারার জীবনের শেষ পর্যায়ে সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে এর বাইরের স্তর ছিটকে যায় এবং তার কেন্দ্র সংকুচিত হয়ে পড়ে। এই সংকোচনের ফলে তার ভরের প্রায় সমস্ত অংশ একটি ছোট এবং অত্যন্ত ঘন কেন্দ্রে কেন্দ্রীভূত হয়। নিউট্রন স্টারের এই প্রক্রিয়া পদার্থবিজ্ঞানের সাধারণ নিয়মকেও চ্যালেঞ্জ করে।
নিউট্রন স্টারের ঘনত্ব এতটাই বেশি যে এটি কল্পনারও বাইরে। এটি এত সংকুচিত পদার্থ নিয়ে গঠিত যে তার এক চামচ পরিমাণ বস্তু পৃথিবীতে আনলে তার ওজন হবে প্রায় ১ বিলিয়ন টন, যা প্রায় ১০০ কোটি টনের সমান! তুলনা করলে দেখা যাবে, এটি একসঙ্গে হাজার হাজার মাউন্ট এভারেস্টের সমান ভারী। এমন চরম ঘনত্বের কারণ হলো তার ভরের সম্পূর্ণ অংশ নিউট্রনে রূপান্তরিত হওয়া, যা তারার কেন্দ্রে প্রচণ্ড মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ঘটে।
নিউট্রন স্টারের ব্যাস সাধারণত ১০ থেকে ২০ কিলোমিটারের মধ্যে হয়, তবে এত ছোট আকৃতির মধ্যেও এর ভর সূর্যের থেকেও বেশি হতে পারে। এটি মূলত নিউট্রন দিয়ে তৈরি, যা একটি সাধারণ পরমাণুর নিউক্লিয়াসের গঠনের অন্যতম উপাদান। নিউট্রন স্টারের মাধ্যাকর্ষণ বল এত শক্তিশালী যে এটি আশেপাশের স্থান-কালকে (space-time) বাঁকিয়ে দিতে পারে। এর দ্রুত ঘূর্ণনও বিস্ময়কর। কিছু নিউট্রন স্টার প্রতি সেকেন্ডে কয়েক হাজারবার ঘূর্ণায়মান হয়। এমন দ্রুত ঘূর্ণায়মান নিউট্রন স্টারগুলোকে পলসার (Pulsar) বলা হয়।
নিউট্রন স্টার শুধু মহাবিশ্বের বিস্ময়কর এক সৃষ্টি নয়, এটি আমাদের পদার্থবিজ্ঞানের মূল ধারণাগুলোকে নতুন করে বোঝার সুযোগ করে দেয়। মহাবিশ্বের এমন একটি ভারী এবং রহস্যময় বস্তু আমাদের মহাজাগতিক জ্ঞানের গভীরতর সীমাকে অন্বেষণ করার জানালা খুলে দেয়।
20/11/2024
ভেনাস: একটি বিষাক্ত বৃষ্টির রাজ্য
ভেনাস সৌরজগতের দ্বিতীয় গ্রহ এবং পৃথিবীর "যমজ" হিসেবে পরিচিত, কারণ এর আকার ও ভরের সঙ্গে পৃথিবীর অনেকটাই মিল রয়েছে। কিন্তু এই গ্রহের পরিবেশ এতটাই কঠোর এবং বিপর্যয়কর যে, পৃথিবীর সাথে এর কোনো তুলনা চলে না।
ভেনাসের বায়ুমণ্ডল মূলত কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO₂) দিয়ে গঠিত, যা গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রচণ্ডভাবে বৃদ্ধি করে। এর সঙ্গে মিশ্রিত রয়েছে গন্ধক ডাইঅক্সাইড (SO₂), যা বায়ুমণ্ডলের ওপরে উপস্থিত সূর্যের আলোর প্রভাবে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে। এই বিক্রিয়ার ফলে গন্ধক ডাইঅক্সাইড এবং পানি মিলে তৈরি করে সালফিউরিক এসিড।
এই সালফিউরিক এসিড বায়ুমণ্ডলে মেঘ আকারে জমা হয় এবং বৃষ্টি হিসেবে পড়তে শুরু করে। তবে ভেনাসের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা এবং চাপ এত বেশি (৪৬৪°C তাপমাত্রা এবং ৯২ গুণ বেশি চাপ) যে, এই অ্যাসিড বৃষ্টি ভূপৃষ্ঠে পৌঁছানোর আগেই বাষ্পে পরিণত হয়।
ভেনাসের মাটিতে পৌঁছানোর আগে এমনকি সবচেয়ে উন্নত যন্ত্রপাতিও ধ্বংস হয়ে যায়। ভূপৃষ্ঠ এতটাই গরম এবং বিষাক্ত যে সেখানে কোনো রোবট বা যানবাহন বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পাঠানো ভেনেরা মিশন এর রোবটগুলো মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
ভেনাসে গ্রিনহাউস প্রভাব এত শক্তিশালী যে এটি সৌরজগতের সবচেয়ে উষ্ণ গ্রহ। যদিও এটি সূর্যের চেয়ে বুধের (Mercury) থেকে দূরে, তবু এর ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বুধের চেয়েও বেশি। অ্যাসিড বৃষ্টি এই প্রতিকূল পরিবেশকে আরও ভয়ংকর করে তোলে।
ভেনাসে মানুষের বসবাস বা স্থায়ী স্টেশন স্থাপন করার স্বপ্ন এখনও বিজ্ঞানীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে ভেনাসের বায়ুমণ্ডল অধ্যয়ন করা আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন এবং গ্রিনহাউস প্রভাবের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বুঝতে সাহায্য করতে পারে।
ভেনাসের এমন পরিবেশ একদিকে ভয়ংকর হলেও, অন্যদিকে এটি আমাদের সৌরজগতের বিস্ময়কর বৈচিত্র্যের এক চমৎকার উদাহরণ।
10/11/2024
ঢাকার বাসিন্দা জুবায়ের কাওলিন, একজন অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার। বাংলাদেশের অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে এক অনন্য মাইলফলক অর্জন করলেন জুবায়ের কাওলিন। সম্প্রতি নিজের হাতে তৈরি ৯০০ মিলিমিটার f8.8 ফোকাল রেশিওর টেলিস্কোপ ব্যবহার করে ঢাকার ছাদ থেকে অরিয়ন নেবুলার অসাধারণ একটি ছবি তুলেছেন।
ছবিটি তুলতে লেগেছে প্রায় ৪.৫ ঘন্টা, যেখানে আলোকদূষণের প্রভাব কমাতে তিনি ব্যবহার করেছেন একটি ডুয়েল ন্যারোব্যান্ড ফিল্টার। ছবি তোলার সময় আকাশে তার সঠিক গতি নিশ্চিত করতে তিনি ব্যবহার করেছেন iOptron CEM40G মাউন্ট এবং QHY268C কুলড অ্যাস্ট্রোনমি ক্যামেরা।
এই অসাধারণ ছবিটি বাংলাদেশি আকাশপ্রেমীদের জন্য যেমন গর্বের, তেমনি দেশীয় বিজ্ঞানচর্চার নতুন দিগন্তও উন্মোচন করে। জুবায়ের কাওলিনের এই উদ্যোগ বাংলাদেশে অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফির গুরুত্বকে আরও একধাপ এগিয়ে দিল। জুবায়েরের এই অনন্য প্রচেষ্টা বাংলাদেশে অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহীদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
09/11/2024
সূর্যের কেন্দ্রের তাপমাত্রা প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস!
এই উচ্চ তাপমাত্রার কারণে সূর্যের কেন্দ্রে প্রতিনিয়ত হাইড্রোজেন পরমাণু গলিত হয়ে হিলিয়াম তৈরি করছে, একটি প্রক্রিয়া যাকে বলা হয় পারমাণবিক সংযোজন (nuclear fusion)। এর ফলে বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়, যা সূর্যের আলো এবং তাপের মূল উৎস। মজার বিষয় হলো, সূর্যের কেন্দ্র থেকে আলোকে এর পৃষ্ঠে পৌঁছাতে প্রায় ১ লাখ বছর লেগে যায়! এরপর এই আলোর রশ্মি পৃথিবীতে পৌঁছতে মাত্র ৮ মিনিট লাগে।
24/10/2024
নাসার চার সদস্যের ‘লা টেক বায়োমাস’ দল মহাকাশে উদ্ভিদ জন্মানোর অনন্য উপায় নিয়ে গবেষণা করছে। সেই দলে জায়গা পেয়েছেন লুইসিয়ানা টেক ইউনিভার্সিটির কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্সের পিএইচডির ছাত্র মোহাম্মদ তারিকুজ্জামান।
তারিকুজ্জামানের জন্ম নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোনা ইউনিয়নের পেড়ি গ্রামে। তিনি বেড়ে উঠেছেন নিজ উপজেলা কেন্দুয়া এবং ময়মনসিংহ শহরে।
বর্তমানে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ‘লা টেক বায়োমাস’ দল মহাকাশে উদ্ভিদ জন্মানোর অনন্য উপায় নিয়ে গবেষণা করছে। তারা মানুষের মূত্র ব্যবহার করে মাটি ছাড়া মহাকাশে কৃষি চাষের সম্ভাবনা দেখছে। এই প্রকল্প ছাড়াও এই গবেষক দলটি আরও নতুন নতুন প্রকল্প নিয়ে নতুন কিছু আবিষ্কারের কথা ভাবছে।
23/10/2024
চাঁদ ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে!
প্রতি বছর চাঁদ পৃথিবী থেকে প্রায় ৩.৮ সেন্টিমিটার দূরে চলে যাচ্ছে। এর কারণ হলো পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে জোয়ার-ভাটার মিথস্ক্রিয়া। চাঁদ আমাদের মহাসাগরগুলোতে জোয়ার তৈরি করে এবং এর বিপরীতে পৃথিবীর ঘূর্ণন শক্তি ক্রমশ চাঁদকে ধাক্কা দিয়ে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।
তাহলে অনেক অনেক বছর পরে কী হবে?
প্রায় ৫০০ কোটি বছর পরে চাঁদ এত দূরে চলে যাবে যে, তখন আর পৃথিবীতে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ (Total Solar Eclipse) দেখা যাবে না!