প্রশ্নঃ - আসসালামুআলাইকুম। ওযুর সময় ঘাড় মাসেহ করার বিধান কি? আমাদের অনেক আহলে হাদীস ভাইরা বলে থাকেন যে,হাদীসে নাকি ঘাড় মাসেহ করার কথা নেই। এই সর্ম্পকে জানতে চাই।
দয়াকরে একটু তাড়াতাড়ি বল্লে খুবই ভালো হয় ।
জাযাকাল্লাহু খাইর ।
মাহবুব লস্কর , গড়িজেলা , দক্ষিণ 24 পরগনা , পঃবঃ
উত্তর :
*وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته*
*بسم الله الرحمن الرحيم*
এটা উক্ত ভাইরা না জানার কারণে বলে থাকেন। হাদীসে এ সংক্রান্ত বিধান এসেছে। বাকি এটি কোন জরুরী বিষয় নয়। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা মোটেও উচিত নয়।
গর্দান মাসাহ করা মুস্তাহাব।
১ .
*"عَنْ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: “مَنْ تَوَضَّأَ وَمَسَحَ بِيَدَيْهِ عَلَى عُنُقِهِ وُقِيَ الْغُلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ”*
হযরত ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি অজু করে এবং উভয় হাত দিয়ে গর্দান মাসাহ করে, তাহলে তাকে কিয়ামতের দিন [আযাবের] বেড়ি থেকে বাঁচানো হবে।
ইমাম আবুল হাসান ফারেছ রহঃ বলেছেনঃ
وَقَالَ هَذَا إنْ شَاءَ اللَّهُ حَدِيثٌ صَحِيحٌ
ইনশাআল্লাহ হাদীসটি সহীহ। [তালখীসুল হাবীর-১/৯৩, দারুল কুতুব প্রকাশনী-১/২৮৮,মুআসসা কুরতুবিয়্যাহ প্রকাশনী-১/১৬৩]
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন-বর্ণনাটি সম্পর্কে একথা বলা যায় যে, যদিও তা একজন তাবেয়ীর কথা হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে তা রাসূলুল্লাহ সাঃ এর হাদীস গণ্য হবে। কেননা, তিনি ছাড়া অন্য কারো পক্ষে এমন সংবাদ দেওয়া সম্ভব নয়। {আত তালখীসুল হাবীর-১/৯২, হাদীস নং-৯৭}
২ .
*"عَنِ ابْنِ عُمَرَ ” أَنَّهُ كَانَ إِذَا مَسَحَ رَأْسَهُ مَسَحَ قَفَاهُ مَعَ رَأْسِهِ “*
হযরত ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি যখনি মাথা মাসাহ করতেন, তখন মাথা মাসাহের সাথে গর্দানও মাসাহ করতেন। [সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২৭৯]
৩ .
*"عَنْ طَلْحَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ: «رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَوَضَّأَ فَمَسَحَ رَأْسَهُ هَكَذَا، وَأَمَرَّ حَفْصٌ بِيَدَيْهِ عَلَى رَأْسِهِ حَتَّى مَسَحَ قَفَاهُ"*
হযরত তালহা তিনি তার পিতা, তিনি তার দাদারসূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, আমি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি অজু করছেন। তখন তিনি এভাবে মাথা মাসাহ করেছেন। উভয় হাতকে জমা করে পাস কাটিয়ে তা দিয়ে গর্দান মাসাহ করতেন। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৫০]
এছাড়া আল্লামা বাগাভী রহঃ, ইবনে সাইয়িদুন্নাস রহঃ,লা-মাযহাবী, আহলে হাদীস ভাইদের কাছে মান্যবর ইমাম শাওকানী রহঃ প্রমূখও অযুতে গর্দান মাসাহ করার কথা বলেছেন। {নাইলুল আওতার-১/২০৪}
কথিত আহলে হাদীসদের বড় ইমাম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান এ মতকে প্রাধান্য দিয়ে বলেন-গর্দান মাসাহ করাকে বিদআত বলা ভুল। আত তালখীসুল হাবীর গ্রন্থের উপরোক্ত বর্ণনা ও অন্যান্য বর্ণনা এ বিষয়ের দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য। তাছাড়া এর বিপরীত বক্তব্য হাদীসে আসেনি। {বুদূরুল আহিল্যাহ-২৮}
সুতরাং গর্দান মাসাহকে প্রমাণহীন, ভিত্তিহীন বলার কোন সুযোগ নেই ।
বিস্তারিত দেখুন হাদীসের কিতাবে , *"ই'লাউস সুনান" , খ. 1 পৃষ্ঠা . 120 .*
*فقط : والله اعلم بالصواب*
✍️ ইতি :
মুফতী মোঃ রবিউল ইসলাম কাজী কাসেমী সাহেব সংগ্রামপুরী
২ , মার্চ , ২০২১
Islamic Reception
Islamic Reception (ইসলামিক রিসিপশন)
"বাংলা ভাষায় দ্বীন শিক্ষা "
www.facebook.com/IslamicReception Please like our to keep update yourself.
Islamic Reception (ইসলামিক রিসিপশন) is a Islamic channel in Bangla language. Here you can find Bangla waz, Lecture, Documentary, Tutorial and more. "যারা দ্বীন কে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত করে বহু দলে বিভক্ত হয় (হে নবী) তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই।" সূরা আনআম 159
Operating as usual
৯ জিলহজ্জ ফজর--১৩ জিলহজ্জ আছর পর্যন্ত
প্রতি ফরয নামাযের পর একবার তাকবীরে তাশরীক পড়া ওয়াজিব।
ঈদের জামাতে মহিলাদের উপস্থিতি মাসআলা
ঈদের নামায প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন পুরুষের উপর ওয়াজিব। মেয়েদের উপর ঈদের নামায ওয়াজিব নয়। এবং মেয়েরা ঈদের নামাযের জন্য ঈদগাহে যাবে না। সাহাবায়ে কেরাম অনেকেই মেয়েদের ঈদগাহে যেতে নিরুৎসাহিত করেছেন।
عَنْ نَافِعْ عَنْ ابْنِ عُمَرَ أنَّهُ كَانَ لَا يُخْرِجُ نِسَائَهُ فِي الْعِيْدَيْنِ.
অর্থাৎ নাফে রাহ. আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি তাঁর পরিবারের নারীদেরকে দুই ঈদে ঈদগাহে যেতে দিতেন না। -আলআওসাত ৪/৩০১
অন্য বর্ণনায় এসেছে-
عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنّهُ كَانَ لَا يَدَعُ امْرَأَةً مِنْ أَهْلِهِ تَخْرُجُ إِلَى فِطْرٍ، وَلَا إِلَى أَضْحَى.
উরওয়া তাঁর পিতা (যুবাইর রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি নিজ পরিবারের নারীদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযাহাতে যেতে দিতেন না। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস ৫৮৪৬
ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আলআনসারী রাহ. বলেন-
لَا نَعْرِفُ خُرُوْجَ الْمَرْأةِ الشَّابَّةِ عِنْدَنَا فِي الْعِيْديْنِ.
আমাদের সময়ে দুই ঈদের জন্য যুবতী নারীদের বের হওয়ার প্রচলন ছিল না। -আলআওসাত ৪/৩০২; উমদাতুল কারী ৩/৩০৫
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন-
يُكْرَهُ خُرُوجُ النِّسَاءِ فِي الْعِيدَيْن.
উভয় ঈদে মহিলাদের (নামাযের জন্য) বাইরে যাওয়া মাকরূহ। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস ৫৮৪৬
[ মসিক আলকাউসার || যিলহজ্ব ১৪৪৩ || জুলাই ২০২২ ]
াসিক_আলকাউসার
#রমাযানুল_মুবারক_মাসিক_আলকাউসার
ঈদের নামায : জরুরি মাসায়েল
✍ মাওলানা তাহের বিন মাহমুদ
আল্লাহ তাআলা মুসলিমদের দুটি ঈদ দান করেছেন; ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। মুসলিমদের ঈদ ও উৎসব অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর উৎসব থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম এবং অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। আল্লাহর যিকির ও তাঁর বড়ত্বের ঘোষণার মাধ্যমে শুরু হয় মুসলিমদের ঈদ। ঈদের দিনে মুসলিমদের প্রথম ও প্রধান আমল হল ঈদের নামায। ঈদুল আযহার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنّ أَوّلَ مَا نَبْدَأُ بِهِ فِي يَوْمِنَا هَذَا أَنْ نُصَلِّيَ، ثُمّ نَرْجِعَ، فَنَنْحَرَ...
আজকের দিনে আমরা সর্বপ্রথম ঈদের নামায আদায় করব। এরপর কুরবানী করব...। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৬৮
আজকের নিবন্ধে ঈদের দিনের প্রধান আমল ঈদের নামায-এর কিছু জরুরি মাসআলা আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
ঈদের নামায কাদের উপর ওয়াজিব
==========================
মাসআলা : যাদের উপর জুমার নামায ফরয, তাদের উপর ঈদের নামায ওয়াজিব। অর্থাৎ, প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন, যেসকল মুসলিম পুরুষ, জামাতে উপস্থিত হয়ে ঈদের নামায আদায়ের সক্ষমতা রাখে তাদেরকে ঈদের নামায পড়তে হবে। -আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৭৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৭; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫৬৫
মাসআলা : মহিলাদের উপর ঈদের নামায ওয়াজিব নয়। অনুরূপ এমন অসুস্থ পুরুষ, যে ঈদগাহে উপস্থিত হয়ে ঈদের নামায আদায়ের সক্ষমতা রাখে না, তার উপরও ঈদের নামায ওয়াজিব নয়। -কিতাবুল আছল ১/৩২৩; মাবসূত, সারাখসী ২/৪০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৮৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৭
মাসআলা : মুসাফির তথা যে ৪৮ মাইল বা ৭৮ কি. মি. দূরত্বে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে- এমন ব্যক্তির উপর ঈদের নামায ওয়াজিব নয়। তবে সে যদি ঈদের নামায পড়ে তাহলে তা সহীহ হবে এবং এর সওয়াবও পাবে। -আততাজরীদ, কুদুরী ২/৯৮১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৭; আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ২/৩৯৬
মাসআলা : হজ্বের সফরে থাকা লোকদের জন্য ঈদুল আযহার নামাযের বিধান নেই। -আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ২/৩৯৪
ঈদের নামাযের ওয়াক্ত
=================
মাসআলা : ঈদের নামাযের ওয়াক্ত হচ্ছে- সূর্য উদিত হয়ে (নামাযের) নিষিদ্ধ সময় শেষ হওয়ার পর থেকে শুরু করে যাওয়াল তথা সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার আগ পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যেই ঈদের নামায পড়তে হবে। যাওয়ালের পর আর ঈদের নামায সহীহ হবে না। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১১৩৫; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া, পৃ. ৬৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৭৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৯
মাসআলা : ঈদুল আযহার নামায ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর দেরি না করে একটু তাড়াতাড়ি পড়া মুস্তাহাব। যাতে কুরবানীর কাজ দ্রুত শুরু করা যায়। আর ঈদুল ফিতরের নামাযও ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি আদায় করে নেবে। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, বর্ণনা ৫৬৫১; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া, পৃ. ৬৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া; ১/১৫০
ঈদের নামাযের স্থান
===============
মাসআলা : ঈদের নামায ঈদগাহে ও খোলা মাঠে পড়া সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং খোলাফায়ে রাশেদীন সকলেই ঈদের নামায ঈদগাহে পড়তেন। হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন-
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَخْرُجُ يَوْمَ الفِطْرِ وَالأَضْحَى إِلَى المُصَلّى.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন (ঈদের নামাযের জন্য) ঈদগাহে যেতেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৬৫
হযরত আলী রা. বলেন-
الْخُرُوجُ إِلَى الْجَبّانِ فِي الْعِيدَيْنِ مِنَ السّنّةِ.
দুই ঈদে (ঈদের নামাযের জন্য) খোলা মাঠে যাওয়া সুন্নত। -আলমুজামুল আওসাত, তবারানী, হাদীস ৪০৪০
মাসআলা : মাঠে ঈদের নামায পড়ার ব্যবস্থা থাকলে বিনা ওযরে মসজিদে ঈদের জামাত করবে না। তবে কোথাও বিনা জরুরতে এমনটি করা হলে ঈদের নামায আদায় হয়ে যাবে।
প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানে শহরে ঈদগাহ কম, বিধায় অধিকাংশ মসজিদে ঈদের জামাত হয়। জায়গা সংকুলান না হওয়া বা বৃষ্টি ইত্যাদির কারণে মসজিদে ঈদের নামায পড়লে সুন্নতের খেলাফ হবে না। ওযরের সময় মসজিদে পড়া হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
أَصَابَهُمْ مَطَرٌ فِي يَوْمِ عِيدٍ، فَصَلّى بِهِمُ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ صَلَاةَ الْعِيدِ فِي الْمَسْجِدِ.
কোনো এক ঈদের দিন বৃষ্টি তাঁদেরকে পেয়ে বসে। ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের নিয়ে মসজিদে ঈদের নামায আদায় করেন। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১১৫৩
ঈদের নামাযে তায়াম্মুম
=================
মাসআলা : নামাযে শরীক হওয়ার আগ মুহূর্তে কারো ওযু না থাকলে এবং ওযু করতে গেলে জামাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হলে তায়াম্মুম করে ঈদের নামায আদায় করা যাবে।
হযরত আব্দুর রহমান ইবনুল কাসিম রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
يَتَيَمّمُ وَيُصَلِّي إِذَا خَافَ.
(ঈদের নামায) ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হলে তায়াম্মুম করে নামায পড়ে নেবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, বর্ণনা ৫৮৬৯)
হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন-
يَتَيَمّمُ لِلْعِيدَيْنِ وَالْجِنَازَةِ.
ঈদ ও জানাযার ক্ষেত্রে (ছুটে যাওয়ার আশঙ্কায়) তায়াম্মুম করা যাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, বর্ণনা ৫৮৬৮) -কিতাবুল আছল ১/৩২০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫০২
তবে জুমা ও ওয়াক্তিয়া নামাযে জামাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কায় তায়াম্মুমের উক্ত বিধান প্রযোজ্য নয়।
ঈদের নামাযে আযান-ইকামত নেই
=========================
মাসআলা : ঈদের নামাযে আযান-ইকামতের বিধান নেই। হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
صَلّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ الْعِيدَيْنِ، غَيْرَ مَرّةٍ وَلَا مَرّتَيْنِ، بِغَيْرِ أَذَانٍ وَلَا إِقَامَةٍ.
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে একাধিকবার ঈদের নামায পড়েছি এবং আযান-ইকামত ছাড়া পড়েছি। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৭৮
তবে কেউ অজ্ঞতাবশত ইকামত দিয়ে দিলে এর কারণে নামায মাকরূহ হবে না। -কিতাবুল আছল ১/৩১৯; আলহাবীল কুদসী ১/২৪২; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫৬৭
নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা
==================
মাসআলা : ঈদ বা যে কোনো নামায, রোযা বা অন্যান্য আমলের ক্ষেত্রে অন্তরের সংকল্পই নিয়ত হিসাবে যথেষ্ট। মুখে উচ্চারণ করে বলা জরুরি নয় এবং এর প্রয়োজনও নেই। তবে অন্তরের নিয়তের সাথে মুখে উচ্চারণ করা নিষেধও নয়। কেউ ইচ্ছার দৃঢ়তার জন্য মুখেও উচ্চারণ করে নিলে তা দূষণীয় হবে না। মুখে নিয়ত উচ্চারণ করলে নিজের মাতৃভাষায়ই করবে। প্রচলিত আরবী নিয়তের পেছনে পড়ার দরকার নেই। -উমদাতুল কারী ১/৩৩; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ২৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪১৫
ঈদের নামাযের নিয়ম
================
মাসআলা : ঈদের নামায দুই রাকাত। নিয়ত করে তাকবীরে তাহরীমা বলে নামায শুরু করে ছানা পড়বে। ছানা পড়ার পর ‘আল্লাহু আকবার’ ‘আল্লাহু আকবার’ ‘আল্লাহু আকবার’ বলে আরো তিনটি তাকবীর বলবে। প্রথম দুই তাকবীর বলার সময় উভয় হাত কানের লতি পর্যন্ত উঠিয়ে হাত না বেঁধে ছেড়ে দেবে। তৃতীয় তাকবীর বলার সময় কানের লতি পর্যন্ত হাত উঠিয়ে বেঁধে নেবে। অতঃপর সূরা-কেরাত পড়ে রুকুতে যাবে। দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়িয়ে সূরা-কেরাত পড়ে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে আগের নিয়মে তিনটি তাকবীর বলবে। তবে দ্বিতীয় রাকাতে তৃতীয় তাকবীর বলার সময়ও হাত না বেঁধে ছেড়ে দেবে। অতঃপর চতুর্থ তাকবীর বলে রুকু করবে। এরপর অন্যান্য নামাযের ন্যায় যথারীতি নামায শেষ করবে। -কিতাবুল আছল ১/৩১৯; আলহাবীল কুদসী ১/২৪৩
ঈদের নামাযের কেরাত
=================
মাসআলা : ঈদের নামাযে প্রথম রাকাতে ‘সূরা আ‘লা’ এবং দ্বিতীয় রাকাতে ‘সূরা গাশিয়াহ’ বা প্রথম রাকাতে ‘সূরা কফ’ এবং দ্বিতীয় রাকাতে ‘সূরা কমার’ পড়া সুন্নত। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের নামাযে এ সূরাগুলো পড়তেন। তবে অন্য যে কোনো সূরাও পড়া যেতে পারে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৭৮; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ১৫৬৭; কিতাবুল আছল ১/৩২১; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫০০
মাসআলা : জুমার নামাযের ন্যায় ঈদের নামাযের কেরাতও উচ্চৈঃস্বরে পড়া ওয়াজিব। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَجْهَرُ بِالْقِرَاءَةِ فِي الْعِيدَيْنِ وَفِي الِاسْتِسْقَاءِ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদ ও ইস্তেসকার নামাযে কেরাত উচ্চৈঃস্বরে পড়তেন। (সুনানে দারাকুতনী, হাদীস ১৮০৩) -জামে সগীর, পৃ. ১১৪
তাই ইমাম সাহেব উভয় রাকাতেই কেরাত উচ্চৈঃস্বরে পড়বেন।
ঈদের দ্বিতীয় রাকাতের রুকুর তাকবীর
============================
মাসআলা : ঈদের দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর তাকবীরও অন্যান্য নামাযের রুকুর তাকবীরের মতো সুন্নত।
এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা দেখার জন্য মাসিক আলকাউসার জানুয়ারি ২০১১ সংখ্যায় প্রকাশিত ‘দৃষ্টি আকর্ষণ’ শিরোনামের লেখাটি পড়া যেতে পারে।
ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তাকবীর সংক্রান্ত মাসায়েল
======================================
তাকবীরের সংখ্যা
মাসআলা : অন্যান্য নামাযের চেয়ে ঈদের নামাযে আরো কিছু বেশি তাকবীর রয়েছে। এ তাকবীরগুলোর সংখ্যা কতটি- এ ব্যাপারে হাদীস-আছারে একাধিক সংখ্যার কথা এসেছে। কোনো কোনো বর্ণনায় যেমন দুই রাকাতে মোট বারো তাকবীরের কথা এসেছে, অন্য বর্ণনায় দুই রাকাতে মোট ছয় তাকবীরের কথা এসেছে। এ দুটি ছাড়াও আরো দু-একটি সংখ্যার কথা কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে। হাদীসে বর্ণিত এসব সংখ্যার সবগুলোই সঠিক ও আমলযোগ্য। বারো তাকবীরের নিয়ম যেভাবে হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, তেমনি ছয় তাকবীরের নিয়মও হাদীস ও আছার দ্বারা প্রমাণিত। একাধিক জলিলুল কদর সাহাবী এই পদ্ধতির উপর আমল করছেন। ইমাম আহমাদ রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
اخْتَلَفَ أَصْحَابُ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي التّكْبِيرِ وَكُلّهُ جَائِزٌ.
তাকবীরের সংখ্যা নিয়ে সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। (সাহাবীদের থেকে প্রমাণিত এ) সবগুলো সংখ্যাই জায়েয ও আমলযোগ্য। -আলফুরুউ, মাকদিসী ৩/২০১
সুতরাং আমাদের দেশে ফিকহে হানাফীর অনুসরণে যে ছয় তাকবীরে ঈদের নামায পড়া হয় সেটাকে কোনো কোনো গায়রে মুকাল্লিদ ভাই কর্তৃক খেলাফে সুন্নত ও ভিত্তিহীন আখ্যা দেয়া হাদীস ও আছারের স্বল্প পড়াশোনাকেই প্রমাণ করে। এ সম্পর্কে দলীলভিত্তিক বিস্তারিত জানার জন্য মাসিক আলকাউসার অক্টোবর-নভেম্বর ২০০৫ সংখ্যা অথবা মাকতাবাতুল আশরাফ কর্তৃক প্রকাশিত ‘সহীহ হাদীসের আলোকে তারাবীর রাকাত সংখ্যা ও সহীহ হাদীসের আলোকে ঈদের নামায’ পুস্তিকাটি পড়া যেতে পারে।
মাসআলা : ঈদের অতিরিক্ত তাকবীরের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে কম সংখ্যা ধরে বাকি তাকবীর আদায় করবে। যেমন, তিন তাকবীর হয়েছে, নাকি দুই তাকবীর- এ নিয়ে সন্দেহ হলে দুই তাকবীর ধরে অবশিষ্ট একটি তাকবীর বলে নেবে।
মাসআলা : ইমাম যদি প্রথম রাকাতে ভুলে অতিরিক্ত তাকবীর না বলে কেরাত শুরু করে দেয় তাহলে কেরাত অবস্থায় তাকবীরের কথা স্মরণ হলে কেরাত ছেড়ে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলে নেবে। অতঃপর পুনরায় কেরাত পড়ে নেবে। কেরাত শেষ হওয়ার পর তাকবীরের কথা স্মরণ হলে তাকবীর বলে রুকুতে চলে যাবে। -আততাজরীদ, কুদুরী ২/৯৮৪; আলমুহীতুর রেযাবী ১/৪১৭; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫৭২
মাসআলা : ইমাম ঈদের অতিরিক্ত তাকবীর ভুলে রুকুতে চলে গেলে (চাই প্রথম রাকাতের তাকবীর হোক বা দ্বিতীয় রাকাতের) তাকবীর বলার জন্য আর রুকু থেকে ফিরে আসবে না। এবং বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী রুকুতেও তাকবীর বলবে না। এক্ষেত্রে নামায শেষে সিজদায়ে সাহু করে নেবে। (যদি জামাত ছোট হয়) -আততাজরীদ, কুদুরী ২/৯৮৬; আলমুহীতুর রেযাবী ১/৪১৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬১; মিনহাতুল খালিক ২/১৪৭; রদ্দুল মুহতার ২/১৭৪
মাসআলা : ঈদের অতিরিক্ত তাকবীর ভুলে রুকুতে চলে যাওয়ার পর তাকবীর আদায়ের জন্য রুকু থেকে ফিরে আসলে যদিও কোনো কোনো ফকীহ নামায ফাসেদ হয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন তবুও বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী কাজটি ভুল হলেও এ কারণে নামায নষ্ট হবে না। -রদ্দুল মুহতার ২/১৭৪
মাসআলা : হানাফী মাযহাবের কেউ অন্য মাযহাবের ইমামের পেছনে নামায পড়লে (এবং ইমাম সাহেব বারো তাকবীর বা অন্য কোনো সংখ্যা অনুযায়ী নামায পড়ালে) ইমামের অনুসরণে সেও অতিরিক্ত তাকবীর ইমামের মতোই বলবে। -কিতাবুল আছল ১/৩২৪; মাবসূত, সারাখসী ২/৪২; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫৭২
ঈদের নামাযে মাসবুক হওয়া সংক্রান্ত মাসায়েল
=================================
মাসআলা : কেউ প্রথম রাকাতে ঈদের অতিরিক্ত তাকবীর বলার পর ইমামের সাথে শরীক হলে সে তাকবীরে তাহরীমা বলে নামাযে শরীক হওয়ার পর নিজে নিজে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলে নেবে; চাই এক্ষেত্রে ইমাম সাহেব কেরাত পড়া অবস্থায় থাকুন না কেন। সুফিয়ান ছাওরী রাহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-
وَلَوْ وَجَدَ الْإِمَامَ يَقْرَأُ كَبّرَ كَمَا يُكَبِّرُ الْإِمَامُ.
ইমামকে কেরাত অবস্থায় পেলে সে (নিজে নিজে) ইমামের ন্যায় তাকবীর বলে নেবে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, বর্ণনা ৫৭১৪)
কিন্তু এক্ষেত্রে নামাযে শরীক হওয়ার পর দাঁড়ানো অবস্থায় (রুকুর আগে আগে) তাকবীর আদায়ের সুযোগ থাকা সত্তে¡ও যদি আদায় না করে তাহলে পরে আর রুকুতে তাকবীর বলবে না। -আলবাহরুর রায়েক ২/১৬১; রদ্দুল মুহতার ২/১৭৪
মাসআলা : ইমামকে রুকুতে পেলে সেক্ষেত্রে যদি প্রবল ধারণা হয়, দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বললেও ইমামের সাথে রুকুতে শরীক হতে পারবে তাহলে দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলে ইমামের সাথে রুকুতে শরীক হবে।
আর যদি প্রবল ধারণা হয়, দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত তাকবীর বলতে গেলে ইমামকে রুকুতে পাওয়া যাবে না, তাহলে তাকবীরে তাহরীমা বলে রুকুতে চলে যাবে। রুকুতে গিয়ে ছুটে যাওয়া অতিরিক্ত তাকবীরগুলো হাত উঠানো ছাড়া বলে নেবে। এরপর যদি সময় থাকে তাহলে রুকুর তাসবীহ আদায় করবে। -আততাজরীদ, কুদুরী ২/৯৮৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৮৮-৮; আলহাবীল কুদসী ১/২৪৩; আলবাহরুর রায়েক ১/১৬১; আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ২/৪০০; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫৭২
মাসআলা : ইমামের সাথে রুকুতে শরীক হওয়ার পর অতিরিক্ত তাকবীর বলার মত সময় না পেলে আর তাকবীর বলতে হবে না। ইমামের সাথে রুকু পাওয়ার কারণে সে ঐ রাকাত পেয়েছে এবং সাথে সাথে তাকবীরও পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। -ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৬১৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫১
মাসআলা : কেউ দ্বিতীয় রাকাতে ইমামের সাথে শরীক হলে ইমামের সালাম ফেরানোর পর ছুটে যাওয়া রাকাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে প্রথমে সূরা-কেরাত পড়ে তারপর রুকুর আগে অতিরিক্ত তাকবীর বলবে। অর্থাৎ ছুটে যাওয়া রাকাতেও দ্বিতীয় রাকাতের ন্যায় রুকুর আগে অতিরিক্ত তাকবীর বলবে। হাসান বসরী রাহ. বলেন-
يكَبِّرُ فِيهَا مِثْلَ تَكْبِيرِ الْإِمَامِ فِي الرّكْعَةِ الثّانِيَةِ.
ঈদের নামাযে মাসবুক ব্যক্তি ছুটে যাওয়া রাকাত আদায়ের সময় ইমামের দ্বিতীয় রাকাতের ন্যায় তাকবীর বলবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, বর্ণনা ৫৮১৩
অবশ্য যদি কেউ এক্ষেত্রে সূরা-কেরাতের আগে অতিরিক্ত তাকবীর বলে নেয় তাহলেও তার নামায আদায় হয়ে যাবে। -কিতাবুল আছল ১/৩২২; আলহাবীল কুদসী ১/২৪৪
মাসআলা : দ্বিতীয় রাকাতের রুকুর পর এমনকি শেষ বৈঠকের তাশাহহুদের পরও কেউ জামাতে শরীক হলে সে ঈদের জামাত পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। এক্ষেত্রে ইমামের সালাম ফেরানোর পর দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক নিয়মেই উভয় রাকাত আদায় করবে। অর্থাৎ প্রথম রাকাতের পর দাঁড়িয়ে কেরাতের পূর্বে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলবে। আর দ্বিতীয় রাকাতে কেরাতের পর অতিরিক্ত তাকবীর বলবে। -কিতাবুল আছল ১/৩২২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫০০
ঈদের নামাযে সাহু সিজদা
===================
মাসআলা : অন্যান্য নামাযের ন্যায় ঈদের নামাযেও জামাত ছোট হলে এবং বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা না থাকলে ওয়াজিব ছুটে গেলে সিজদায়ে সাহু দিতে হয়। তবে যেহেতু ঈদের জামাতে সাধারণত অনেক বড় জমায়েত হয়ে থাকে, অনেক মানুষ সিজদায়ে সাহুর নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জ্ঞাত থাকে না, তাই সিজদায়ে সাহু আদায় করতে গেলে অনেক সময় বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। এজন্য কোনো কোনো ফকীহের মতে ঈদ, জুমা বা এরকম বড় কোনো জামাতের ক্ষেত্রে ইমাম সাহেব সিজদায়ে সাহু করতে গেলে যদি মুসল্লীদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে সিজদায়ে সাহু মাফ হয়ে যাবে। ইমাম স্বাভাবিক নিয়মে নামায শেষ করবে। -কিতাবুল আছল ১/৩২৪ ; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫০১
ঈদের নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক
============================
মাসআলা : ঈদুল আযহার নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক বলা যেতে পারে। তবে ফরয নামাযের মত ঈদের নামাযের পর তাকবীর বলা ওয়াজিব বা আবশ্যকীয় নয়। -আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; রদ্দুল মুহতার ২/১৮০
ঈদের খুতবা সংক্রান্ত মাসায়েল
======================
মাসআলা : ঈদের নামাযের পর খুতবা দেয়া সুন্নত। আর উপস্থিত মুসল্লীগণের জন্য তা শ্রবণ করা ওয়াজিব। মুসল্লীগণ মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনবেন। -কিতাবুল আছল ১/৩১৮; আলহাবীল কুদসী ১/২৪২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৮; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫৬৬
মাসআলা : জুমার নামাযের ন্যায় ঈদের নামাযেও দুই খুতবা। এবং দুই খুতবার মাঝে বসাও সুন্নত। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উবায়দুল্লাহ ইবনে উতবা রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
السّنّةُ أَنْ يَخْطُبَ الْإِمَامُ فِي الْعِيدَيْنِ خُطْبَتَيْنِ يَفْصِلُ بَيْنَهُمَا بِجلُوسٍ.
সুন্নত হচ্ছে, ইমাম ঈদে দুটি খুতবা দেবে। দুই খুতবার মাঝখানে বসার দ্বারা একটিকে আরেকটি থেকে আলাদা করবে। (সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ৬২১৩) -মাবসূত, সারাখসী ২/২৬২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৯
কোনো কোনো গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা যে বলে থাকেন- ‘দুই ঈদে একটি করে খুতবা হবে’ তাদের এ কথা সহীহ হাদীস ও মুসলিম উম্মাহর যুগ পরম্পরায় চলে আসা আমলের পরিপন্থী।
মাসআলা : ঈদের খুতবার আগে আযানের কোনো বিধান নেই।
মাসআলা : খুতবার সময় ইমাম তাকবীর বললে মুসল্লীগণ চুপ থেকে খুতবা শুনবেন। নিজেরা তাকবীর বলবেন না। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
وَجَبَ الْإِنْصَاتُ فِي أَرْبَعَةِ مَوَاطِنَ: الْجُمُعَةِ، وَالْفِطْرِ، وَالْأَضْحَى، وَالِاسْتِسْقَاءِ.
চারটি স্থানে চুপ থাকা ওয়াজিব। জুমা, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা এবং ইসতিসকার খুতবার সময়। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, বর্ণনা ৫৬৪২
ঈদের নামায ছুটে গেলে
=================
মাসআলা : ঈদের নামাযে কাযার বিধান নেই। তাই কারো ঈদের নামায ছুটে গেলে সে আশপাশের অন্য কোনো ঈদের জামাতে শরীক হওয়ার চেষ্টা করবে। এমনটি সম্ভব না হলে তওবা-ইস্তেগফার করবে। -শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/১৬১; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৯৮; আলহাবীল কুদসী ১/২৪৪
ঈদের নামাযের আগে-পরে নফল পড়া
===========================
মাসআলা : হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন-
أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ صَلّى يَوْمَ الفِطْرِ رَكْعَتَيْنِ لَمْ يُصَلِّ قَبْلَهَا وَلاَ بَعْدَهَا.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন দুই রাকাত ঈদের নামায পড়ছেন। ঈদের নামাযের আগে বা পরে কোনো নামায পড়েননি। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৬৪)
এজাতীয় হাদীসের আলোকে ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন, ঈদের নামাযের আগে বাড়িতে বা ঈদগাহে/মসজিদে পুরুষ মহিলা সকলের জন্যই নফল নামায পড়া মাকরূহ। তাই এসময় কেউ ইশরাক বা অন্য কোনো নফল নামায পড়বে না। -কিতাবুল আছল ১/৩২৮; আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ২/৩৮১-৩৮২; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫৬৭
বিবিধ মাসায়েল
============
ঈদ ও জুমা একই দিনে হলে
====================
মাসআলা : জুমার দিন ঈদ হলে ঈদ ও জুমা উভয়টিই পড়তে হবে। ঈদের নামায পড়লে জুমা পড়তে হবে না- এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কেননা ঈদের নামায ও জুমার নামায দুটি পৃথক পৃথক আমল। অন্যদিকে ঈদের নামায ওয়াজিব আর জুমার নামায ফরয। সুতরাং একটি আদায় করে আরেকটি বাদ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এর স্বপক্ষে হাদীসের অনেক সুস্পষ্ট প্রমাণও রয়েছে। জুমার দিন ঈদ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় নামাযই পড়তেন। সহীহ হাদীস দ্বারা এটিই প্রমাণিত। এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে জুমার নামায না পড়ার কোনো প্রমাণ নেই। (দেখুন : সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৫৭২; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৭৮; মুসনাদুশ শাফেয়ী, হাদীস ৫০০; শরহু মুশকিলিল আছার ৩/১৮৭; আততামহীদ ১৪/২৭৪)
এ সম্পর্কে মাসিক আলকাউসার মে ২০২২ (প্রশ্ন নং ৫৬৭৯)-এ একটি বিস্তারিত ফতোয়া প্রকাশিত হয়েছে। আগ্রহী পাঠকগণ চাইলে তা দেখে নিতে পারেন ।
ঈদের জামাতে মহিলাদের উপস্থিতি মাসআলা
=================================
ঈদের নামায প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন পুরুষের উপর ওয়াজিব। মেয়েদের উপর ঈদের নামায ওয়াজিব নয়। এবং মেয়েরা ঈদের নামাযের জন্য ঈদগাহে যাবে না। সাহাবায়ে কেরাম অনেকেই মেয়েদের ঈদগাহে যেতে নিরুৎসাহিত করেছেন।
عَنْ نَافِعْ عَنْ ابْنِ عُمَرَ أنَّهُ كَانَ لَا يُخْرِجُ نِسَائَهُ فِي الْعِيْدَيْنِ.
অর্থাৎ নাফে রাহ. আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি তাঁর পরিবারের নারীদেরকে দুই ঈদে ঈদগাহে যেতে দিতেন না। -আলআওসাত ৪/৩০১
অন্য বর্ণনায় এসেছে-
عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنّهُ كَانَ لَا يَدَعُ امْرَأَةً مِنْ أَهْلِهِ تَخْرُجُ إِلَى فِطْرٍ، وَلَا إِلَى أَضْحَى.
উরওয়া তাঁর পিতা (যুবাইর রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি নিজ পরিবারের নারীদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযাহাতে যেতে দিতেন না। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস ৫৮৪৬
ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আলআনসারী রাহ. বলেন-
لَا نَعْرِفُ خُرُوْجَ الْمَرْأةِ الشَّابَّةِ عِنْدَنَا فِي الْعِيْديْنِ.
আমাদের সময়ে দুই ঈদের জন্য যুবতী নারীদের বের হওয়ার প্রচলন ছিল না। -আলআওসাত ৪/৩০২; উমদাতুল কারী ৩/৩০৫
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন-
يُكْرَهُ خُرُوجُ النِّسَاءِ فِي الْعِيدَيْن.
উভয় ঈদে মহিলাদের (নামাযের জন্য) বাইরে যাওয়া মাকরূহ। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস ৫৮৪৬
সৌদি আরবে ঈদ করে ঐ দিনই দেশে চলে এসে দেশে ঈদের জামাত পেলে
মাসআলা : কেউ যদি এক দেশে ঈদের নামায পড়ার পর পূর্ব দিকের কোনো দেশে গিয়ে পরের দিন ঈদের জামাত হতে দেখে যেমন, কেউ সৌদি আরবে ঈদ করে ঐ দিনই বাংলাদেশে চলে আসে এবং এখানে পরের দিন ঈদ হয় তাহলে ঐ ব্যক্তির জন্য দ্বিতীয়বার দেশের ঈদের জামাতে শরীক হওয়া আবশ্যক নয়। -ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ১৮
[ মসিক আলকাউসার || যিলহজ্ব ১৪৪৩ || জুলাই ২০২২ ]
াসিক_আলকাউসার
#রমাযানুল_মুবারক_মাসিক_আলকাউসার
হিজাবি ও নিকাবি বোনদের উদ্দেশ্যে কিছু জরুরি কথা এবং আন্তরিক পরামর্শ:
প্রথমে হিজাবি বোনদের জন্য কিছু নাসিহাহ:
একথা সঠিক যে, নন-মাহরামের সামনে নারীদের মুখমণ্ডল ঢেকে রাখা জরুরি কি না, সে বিষয়ে আলিমদের মাঝে মতানৈক্য আছে। অধিকাংশ আলিমের মতে, নারীদের সর্বাঙ্গই পর্দায় আবৃত থাকবে (চোখ বাদে)। তবে, আলিমদের একটি অংশের মতে, মুখমণ্ডল ও করতল উন্মুক্ত রাখতে পারবে। আমরা অধিকাংশ আলিমের মত (সর্বাঙ্গ আবৃত রাখা)-কেই অগ্রাধিকার দিই। কোনো বোন যদি এটি না করেন, তবে তিনি যেন অন্তত সঠিকভাবে হিজাবটা পালন করেন।
(১) মুখে কোনো ধরণের প্রসাধনী ব্যবহার করে বাইরে বের হবেন না। তাহলে এটা সৌন্দর্যপ্রদর্শন বলে গণ্য হবে, যা হারাম। যে আলিমগণ মুখ খোলা রাখা বৈধ বলেন, তাঁরাও এ বিষয়ে একমত। হিজাবি বোনদের বড় একটি অংশই এটি মেনে চলেন না। আল্লাহ মুমিন নারীদের ব্যাপারে বলেন, ‘‘তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।’’ [সুরা আন-নুর, আয়াত: ৩১]
(২) নারীদের চুল পর্দার অন্তর্ভূক্ত। এ ব্যাপারেও অনেকের মাঝে অবহেলা লক্ষ করা যায়।
(৩) আলিমদের একাংশের মতে, হাতের আঙুল এবং করতল (হাতের তালু) উন্মুক্ত রাখা বৈধ, কিন্তু এর উপরের অংশ দেখানো সকলের মতেই নাজায়েয ও হারাম। যে বোনেরা হাতমোজা পরেন না, তাদের অধিকাংশেরই কব্জি এবং উপরের কিছু অংশ (প্রায় কনুই পর্যন্ত) উন্মুক্ত হয়ে যায় মাঝেমধ্যেই। এ বিষয়ে তাঁদের অনেকের মাঝে কোনো ভ্রুক্ষেপই লক্ষ করা যায় না।
(৪) পায়ের পাতা উন্মুক্ত রাখা প্রায় সকল আলেমের মতেই নাজায়েয। এ ব্যাপারে অবহেলা করার সুযোগ নেই। নববি যুগে পা ঢেকে চলার কারণে নারীদের কাপড়ে ময়লা লেগে যেতো। এ ব্যাপারে উম্মে সালামাহ (রা.) নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘‘পরে (পাক মাটি) যা আছে, তা এই ময়লাকে পবিত্র করে দেবে।’’ [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ৩৮৩; হাদিসটি সহিহ]
(৫) বর্তমানে রঙ-বেরঙয়ের গাউন পরে মাথায় হিজাব পরার একটা ট্রেন্ড চলছে। নিঃসন্দেহে এটি ‘‘শালীন’’ পোশাক, তবে পর্দা বলতে যেটা বুঝায় (সৌন্দর্য গোপন রাখা), সেটা এই পোশাকে পুরোপুরি হয় না।
যারা হিজাবের পাশাপাশি নিকাব করেন (মুখ ঢেকে রাখেন), তাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা:
(১) পর্দার বিধানের মূল উদ্দেশ্যই হলো, নারীদের সৌন্দর্য আড়াল করে রাখা। তাই, পোশাক খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ ও কারুকার্যখচিত হওয়া যাবে না। তবে, কালো রঙয়ের হওয়া জরুরি নয়। আল্লাহ মুমিন নারীদের ব্যাপারে বলেন, ‘‘তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।’’ [সুরা আন-নুর, আয়াত: ৩১]
(২) ইদানিং অনেক নিকাবি বোন হেলে-দুলে কিংবা স্টাইল করে এমনভাবে হাঁটেন, যেটা অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এটি পর্দার চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। আল্লাহ বলেন, ‘‘তারা যেন তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদচারণা না করে।’’ [সুরা আন-নুর, আয়াত: ৩১]
(৩) অনেক বোন নিকাব করেন, কিন্তু চোখ এবং এর আশ-পাশে কাজল বা আইলাইনার দিয়ে বাইরে বের হন। অনেকে আরও বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার করে চোখ দুটোকে সুন্দর করে তুলেন। এটিও জায়েয নয়, যেহেতু চোখ দুটো উন্মুক্ত থাকে। এগুলো কেবল মাহরামদের সামনে ব্যবহার করা যাবে।
(৪) বর্তমানে আঙুলহীন ফ্যাশনেবল হাতমোজা পরিধান করার ট্রেন্ড চলছে। এ ধরনের মোজা দিয়ে হাত ঢেকে রাখার বিধান পালিত হয় না।
আরও দুটো ব্যাপারে বোনদের সতর্ক হতে হবে।
(১) বোরকা ঢিলেঢালা পরতে হবে। শরীরের অবয়ব বুঝা গেলে, সেটি আর সঠিক পর্দা হয় না। বিশেষ করে, অনেকে বোরকার পেছনে কোমরের উপর ফিতা বাঁধেন, ফলে শরীরের গঠন আরও দৃষ্টিকটূভাবে ফুটে ওঠে। উমর (রা.) বলেন, ‘‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের (মিশরীয়) কুবত্বী পোশাক পরাবে না। যদিও সেটার উপর থেকে ভেতর প্রকাশ পায় না, কিন্তু তা দেহের আকৃতি প্রকাশ করে।’’ [ইমাম ইবনু আবি শাইবাহ, আল-মুসান্নাফ: ২৫২৮৯; বর্ণনাটির সনদ সহিহ]
(২) অনেকে ওড়না বা হিজাব দিয়ে ভালোভাবে বুক ঢেকে চলেন না। এ ব্যাপারে শিথিলতা দেখানো অপরাধ। আল্লাহ বলেন, ‘‘তারা যেন তাদের মাথার কাপড় তাদের বক্ষদেশে ফেলে রাখে।’’ [সুরা আন-নুর, আয়াত: ৩১]
সর্বশেষ বোনদের প্রতি নাসিহাহ থাকবে, আপনারা বিলাসিতায় ডুবে থাকবেন না। বর্তমানে অনলাইনের বিভিন্ন শপে নতুন নতুন বাহারি রঙয়ের বিচিত্র সব নামের চিত্তাকর্ষক বোরকা, খিমার, আবায়া ইত্যাদি বিক্রি হচ্ছে। অনেকেই প্রচুর কেনাকাটা করেন এগুলো থেকে। নতুন ডিজাইন, নতুন স্টক দেখলেই ফিদা হয়ে যান। এ ব্যাপারে নিজের মধ্যে সংযম আনা দরকার। সম্পদশালী হলে প্রয়োজনে আগেরগুলোর বেশিরভাগ অন্যকে দান বা গিফট করে নতুন পোশাক কিনুন। নিজের সংগ্রহে এত এত পোশাক রাখা বিলাসিতা; অনেক ক্ষেত্রে অপচয়ও বটে।
ড. উম্মে বুসরা সুমনার টাইমলাইন থেকে নেওয়া।
একটি ভিত্তিহীন ধারণা : রমযান মাসে কি কবরের আযাব মাফ থাকে?
অনেক মানুষকেই বলতে শোনা যায়, ‘রমযান মাসে কবরের আযাব মাফ থাকে’। তাদের এ ধারণা ঠিক নয়; কুরআন-হাদীসে এ বিষয়ে কিছু বর্ণিত হয়নি।
তেমনিভাবে কিছু মানুষকে একথাও বলতে শোনা যায় যে, ‘দাফনের পর জুমা বা রমযান এলে কিয়ামত পর্যন্ত কবরের আযাব মাফ হয়ে যায়!’ এ কথারও কোনো ভিত্তি নেই। এ বিষয়ে ইতিপূর্বে (এপ্রিল ২০১২ ঈ.) আমরা এ বিভাগেই লিখেছি।
আল্লাহ সকলকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করুন! আসলে কবরের আযাব হওয়া না-হওয়ার সাথে রমযানের কোনো সম্পর্ক নেই; ব্যক্তির ঈমান ও নেক আমলের সাথে এর সম্পর্ক। ব্যক্তির উচিত ঐসকল আমল থেকে বিরত থাকা, যার কারণে কবরের আযাব হয় এবং সাথে সাথে ঐসকল আমলের প্রতি যত্নবান হওয়া, যার মাধ্যমে কবরের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে বলে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে।
তবে হাঁ, রোযাদার অবস্থায় ইন্তেকাল করলে তার বিশেষ ফযীলত রয়েছে। হুযায়ফা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
.. وَمَنْ صَامَ يَوْمًا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللهِ خُتِمَ لَهُ بِهَا دَخَلَ الْجَنّةَ.
قال الهيثمي : رَوَاهُ أَحْمَدُ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصّحِيحِ غَيْرَ عُثْمَانَ بْنِ مُسْلِمٍ الْبَتِّيِّ وَهُوَ ثِقَةٌ.
যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক দিন রোযা রাখে এবং এ রোযা হয় তার জীবনের শেষ আমল (অর্থাৎ রোযাদার অবস্থায় তার ইন্তেকাল হয়) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩৩২৪; আলআসমা ওয়াস সিফাত, বায়হাকী, হাদীস ৬৫১; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ১১৯৩৫
অর্থাৎ রোযাদার অবস্থায় ইন্তেকাল করলে, আশা করা যায়, আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন। কিন্তু রমযান মাসে কবরের আযাব মাফ- এমন কোনো কথা পাওয়া যায় না।
সম্ভবত একটি বিষয় থেকে মানুষের মাঝে এ ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। হাদীস শরীফে এসেছে-
إِذَا كَانَتْ أَوّلُ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ، صُفِّدَتِ الشّيَاطِينُ، وَمَرَدَةُ الْجِنِّ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النّارِ، فَلَمْ يُفْتَحْ مِنْهَا بَابٌ، وَفُتِحَتْ أَبْوَابُ الْجَنّةِ، فَلَمْ يُغْلَقْ مِنْهَا بَابٌ، وَنَادَى مُنَادٍ: يَا بَاغِيَ الْخَيْرِ أَقْبِلْ، وَيَا بَاغِيَ الشّرِّ أَقْصِرْ، وَلِلهِ عُتَقَاءُ مِنَ النّارِ، وَذَلِكَ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ.
যখন রমযানের প্রথম রাতের আগমন ঘটে, তখন দুষ্ট জিন ও শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়, (সারা মাস) একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, (সারা মাস) একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে- হে কল্যাণের প্রত্যাশী! আরো অগ্রসর হও। হে অকল্যাণের যাত্রী! ক্ষান্ত হও। আর আল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৬৪২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ১৮৮৩; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১৫৩২
এ বর্ণনার ‘জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়’- এখান থেকে হয়ত কারো মাঝে এ ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে, তাহলে রমযানে কবরের আযাবও বন্ধ থাকে।
যাইহোক, রমযানে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ থাকে, প্রতি রাতে আল্লাহ বহু মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং রোযাদার অবস্থায় ইন্তেকাল করলে আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা মাফ করে দেবেন এবং জান্নাতে দাখেল করবেন- এগুলো সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু রমযানে কবরের আযাব মাফ থাকে- এমন কোনো কথা পাওয়া যায় না।
[ মাসিক আলকাউসার || শাওয়াল ১৪৪৩ || মে ২০২২ ]
#রমাযানুল_মুবারক_মাসিক_আলকাউসার
#প্রচলিত_ভুল_মাসিক_আলকাউসার
একটি ভুল মাসআলা : রোযা অবস্থায় মুখ ভরে বমি হলে কি রোযা ভেঙে যায়?
কিছু মানুষের ধারণা, রোযা অবস্থায় মুখ ভরে বমি হলে রোযা ভেঙে যাবে এবং তার কাযা করতে হবে। তাদের এ ধারণা ঠিক নয়। অনিচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি হলেও রোযা ভাঙবে না, কাযাও আদায় করতে হবে না। তবে হাঁ, কেউ যদি রোযা অবস্থায় ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করে তার রোযা ভেঙে যাবে এবং কাযা আদায় করতে হবে।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَنْ ذَرَعَهُ القَيْءُ، فَلَيْسَ عَلَيْهِ قَضَاءٌ، وَمَنْ اسْتَقَاءَ عَمْدًا فَلْيَقْضِ.
যার অনিচ্ছাকৃত বমি হয়ে যায় তাকে কাযা আদায় করতে হবে না (অর্থাৎ তার রোযা ভাঙবে না)। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত বমি করে সে যেন কাযা আদায় করে (অর্থাৎ তার রোযা ভেঙে যাবে)। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৭২০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৬৭৬; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১৫৫৭
[ মাসিক আলকাউসার || যিলকদ ১৪৪৩ || জুন ২০২২ ]
#রমাযানুল_মুবারক_মাসিক_আলকাউসার
#প্রচলিত_ভুল_মাসিক_আলকাউসার
হাদীস ও সুন্নাহর আলোকে তারাবীর নামায
-- শায়েখ মুহাম্মাদ আলী আসসাবুনী
[বক্ষমাণ প্রবন্ধটি সৌদি আরবের খ্যাতিমান আলেম, জামেয়া উম্মুল কুরা’র উস্তায, মসজিদে হারামের মুদাররিস, প্রসিদ্ধ তাফসীরগ্রন্থ ‘সাফওয়াতুত তাফাসীর’-এর লেখক শায়েখ মুহাম্মাদ আলী আসসাবুনী হাফিযাহুল্লাহু ওয়া রাআহু-এর
الهدي النبوي الصحيح في صلاة التراويح -এর বঙ্গানুবাদ।
প্রবন্ধটিতে তিনি হাদীস ও সুন্নাহ্র আলোকে তারাবী রাকাত সংখ্যা বিষয়ে উম্মাহ্র সঠিক কর্মপন্থা সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।
জ্ঞাতব্য : পুস্তিকাটির অনুবাদ করার সময় অতিরিক্ত কিছু কাজ করা হয়েছে-
১. শায়েখ সাবুনী সাধারণত হাদীস ও আসারের মান সম্পর্কে কিছু বলেননি। টীকায় সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনাসমূহের মান বলে দেওয়া হয়েছে।
২. উদ্ধৃতির ক্ষেত্রে পুস্তিকাটিতে হাদীস নম্বর উল্লেখ করা হয়নি, কখনো কিতাবের নামও উল্লেখ করা হয়নি, শুধু ‘হাদীস’ শিরোনামে পেশ করা হয়েছে। অনুবাদকের পক্ষ থেকে হাদীসগ্রন্থ ও হাদীস নম্বর যোগ করা হয়েছে।
৩. পুস্তিকায় হাদীসগ্রন্থ ব্যতীত যেসব গ্রন্থের বরাত দেওয়া হয়েছে সাধারণত সেগুলোর খণ্ড ও পৃষ্ঠা উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে কোনো রদবদল করা হয়নি। কিছু ক্ষেত্র আছে, যেখানে বরাত উল্লেখ করা হয়নি বা খণ্ড ও পৃষ্ঠা উল্লেখ করা হয়নি, সেগুলো যোগ করা হয়েছে।
৪. মনে হচ্ছে, সম্মানিত লেখক কোনো কোনো বর্ণনা হাদীসের মূল গ্রন্থ থেকে না নিয়ে পরবর্তী কোনো কিতাব থেকে উল্লেখ করেছেন। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে দু-একটি শব্দের হেরফের হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে হাদীসের উৎসগ্রন্থ থেকে মূল শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে।]
بسم الله الرحمن الرحيم
نحمد الله تبارك وتعالى، ونصلي على صفوة خلقه سيدنا محمد صلى الله عليه وسلم، الداعي إلى الله بالحكمة والموعظة الحسنة، وعلى آله وأصحابه، والتابعين لهم بإحسان إلى يوم الدين وبعد:
আপনার হাতে আছে তারাবীর নামায সম্পর্কে রচিত একটি পুস্তিকা। পুস্তিকাটি কলেবরে ছোট। তবে ইনশাআল্লাহ এর দ্বারা যথেষ্ট উপকার হবে। পুস্তিকাটি তারাবীর রাকাত-সংখ্যার বিষয়ে সঠিক বিষয়টি প্রকাশ করবে এবং দলীল-প্রমাণের মাধ্যমে ঐসকল লোকদের সন্দেহ-সংশয় বিদূরিত করবে, যারা সুন্নত যিন্দা করার নামে একথা বলে বেড়ায় যে, তারাবীর নামায হল আট রাকাত এবং বিশ রাকাত তারাবী পড়া বিদআত। অথচ তাদের খবর নেই যে, এহেন কর্মের কারণে তারা ন্যায়ের পথ থেকে সরে যাচ্ছে এবং সুন্নাহ্র বিরুদ্ধাচরণ করছে।
তারা বুঝতেই পারছে না যে, বিশ রাকাত তারাবীকে বিদআত বলার পরিণতি খুব ভয়াবহ। এর দ্বারা তো এটা প্রতিয়মান হয় যে, সালাফ ও খালাফ তথা আমাদের পূর্বসূরী ও উত্তরসূরী ইমামগণ অজ্ঞ ও ভ্রষ্ট ছিলেন। এখানেই শেষ নয়; বরং তাদের উক্ত বক্তব্য অনুযায়ী তো স্বয়ং সাহাবাদের চাদরেই অজ্ঞতা ও ভ্রষ্টতার দাগ লেগে যায়। কেননা, উমর রা. বিশ রাকাত তারাবীর নির্দেশ দিলে নবীজীর সকল সাহাবী তাঁর সমর্থন করেছেন। কেউ কোনো আপত্তি করেননি; বরং সকলে ইজমা করে নিয়েছেন।
সুতরাং আট রাকাতকে সুন্নাত বলে বিশ রাকাতকে বিদআত আখ্যা দেওয়া অত্যন্ত ভয়াবহ বিষয়। কিন্তু তারা এটাই বলছে। এসব বলে মানুষকে পেরেশানিতে ফেলছে, মুসলমানদের একতা বিনষ্ট করছে এবং মুসলমানদের ঐক্যকে টুকরো টুকরো করে ফেলছে। পরিতাপের বিষয় হল, তারা এসব করছে আর ভাবছে, খুব মহৎ কর্ম আঞ্জাম দিচ্ছে।
এ কারণে মনে হয়েছে, তারাবী বিষয়ে কলম ধরা জরুরি। যাতে এ বিষয়ে ভুল ধারণার অপনোদন হয়, সহীহ সুন্নাহ এবং উম্মাহ্র সঠিক অবস্থান পরিষ্কার হয়। আলোচনার সুবিধার্থে পুস্তিকাটিকে আমি নিম্নোক্ত শিরোনামে সাজিয়েছি :
১. প্রাথমিক কিছু কথা।
২. তারাবী নামাযের হুকুম ও ফযীলত।
৩. সর্বপ্রথম তারাবীর নামায পড়েছেন কে?
৪. এ নামাযকে তারাবীর নামায বলার কারণ।
৫. তারাবী নামাযের রাকাত-সংখ্যা এবং এব্যাপারে উলামায়ে কেরামের বক্তব্য।
৬. ‘বিশ রাকাত তারাবীই সুন্নাহ’-এ বিষয়ক দলীল।
৭. হারামাইন শরীফাইনের আমল।
৮. শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. -এর মীমাংসাকারী ফতোয়া।
৯. উমর রা.-এর সুন্নাহ নবীজীরই সুন্নাহ।
১০. যুবকদের কাছে কিছু নিবেদন ও উপসংহার।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সবধরনের কঠিন ফিতনা থেকে বাঁচিয়ে রাখুন, প্রবৃত্তির পূজা থেকে রক্ষা করুন, ইখলাস ও একনিষ্ঠতা দান করুন এবং যশ-খ্যাতির আসক্তি থেকে মুক্ত রাখুন। নিঃসন্দেহে আপনি সব শোনেন এবং বান্দার সব দুআ কবুল করেন।
প্রাথমিক কিছু কথা
বহু যুগ মুসলমানেরা কল্যাণের মাঝে বসবাস করেছেন। তারা ভাই ভাই হয়ে থেকেছেন। পরস্পর প্রীতি-ভালবাসা ও সাহায্য-সহযোগিতার আচরণ করতেন এবং প্রীতি, হৃদ্যতা ও একাত্মতার সাথে রমযান মাসে তারাবীর নামায আদায় করতেন। মোটকথা, ইসলামের অনুপম শিক্ষাদীক্ষা ও সমুন্নত জীবনব্যবস্থার কল্যাণে মুসলমানগণ মিল-মহব্বতের চাদরে আচ্ছাদিত ছিলেন।
এভাবে যুগ যুগ ধরে মুসলিমসমাজে মহব্বত ও অন্তরঙ্গতার আবহ বিরাজ করছিল। কোনো কিছুই তাদের নির্মলতাকে পঙ্কিল করতে পারেনি, তাদের ঐক্যকে বিনষ্ট করতে পারেনি; না রমযানে, না রমযানের বাইরে। কারণ, কুরআনে কারীম এবং ইবাদত-বন্দেগিই ছিল তাঁদের মূল ব্যস্ততা। অন্যদিকে মন দেওয়ার তাঁদের সুযোগ ছিল কোথায়?
এরপর এসেছে বর্তমান যুগ; চিন্তার স্থবিরতা ও জ্ঞানের দৈন্যের যুগ। এখন মুসলমানগণ চিন্তা ও মগ্নতার পুরো অংশই নিবদ্ধ করেছে শাখাগত বিষয়াদির দিকে। যেন দ্বীনের জরুরি ও মৌলিক বিষয়গুলোর দিকে দৃষ্টি দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। অথচ গুরুত্ব ও ব্যস্ততার বড় অংশ এর জন্যই ব্যয় করা উচিত ছিল।
এভাবে গৌণ ও শাখাগত মাসআলাগুলো নিয়ে এমন ব্যস্ততার কারণে আমাদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে বিবাদ-বিসংবাদ ও ঝগড়া-ফাসাদ। আর এই কলহ-বিবাদের কারণেই আমরা পিছিয়ে পড়েছি, অন্যদের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারছি না। অথচ একসময় আমরাই ছিলাম অগ্রগামী, বিশ্বের নেতৃত্ব দানকারী।
আশ্চর্যের বিষয় হল, ইসলামের সরল রেখা থেকে বিচ্যুত বিবাদ সৃষ্টিকারী এসব লোক আম জনসাধারণ নয়; বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, যারা উম্মাহ্র নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত। তারা নিজেদেরকে কুরআন-সুন্নাহ্র পণ্ডিত হিসাবে প্রকাশ করেন, সালাফে সালেহীনের অনুসারী বলে দাবি করেন এবং ভাবেন, মেধা-প্রতিভা ও জ্ঞান-গরিমায় তারা এতটা উৎকর্ষ লাভ করেছেন যে, বর্তমানের খুব কম আলেমই এই পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছেন।
বরং তাদের কেউ কেউ তো আত্মম্ভরিতার শিকার হয়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, নিজেকে মুজতাহিদ ইমামগণের কাতারে দাঁড় করাতে শুরু করে দিয়েছেন। এরপর এমন আজিব আজিব ইজতিহাদ নিয়ে উপস্থিত হন, যা পূর্বসূরী ও উত্তরসূরী জুমহুর উলামায়ে কেরামের সাথে সাংঘর্ষিক। ফলে মুসলমানদের একতা বিনষ্ট হয়, উম্মাহ্র ঐক্যে ভাঙন সৃষ্টি হয়। কবি কতই না সুন্দর বলেছেন-
يا علماء العصر، يا ملح البلد + ما يصلح الملح إذا الملح فسد
দ্বীন পরস্পরের মাঝে হৃদ্যতা ও ঐক্যের প্রাসাদ তৈরি করে, ইসলামী ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করে। আর আজ মূর্খতা ও প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে দ্বীনকেই ব্যবহার করা হচ্ছে বিভেদ-বিভক্তি ও হানাহানির হাতিয়ার হিসাবে এবং ধর্মের নামেই ছিন্ন করা হচ্ছে ঈমানী ভ্রাতৃত্বের সকল বাঁধন। অথচ দ্বীনের সূত্রেই আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের ঐক্যের আহ্বান করেছেন। তিনি বলেছেন-
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ اِخْوَةٌ فَاَصْلِحُوْا بَیْنَ اَخَوَیْكُمْ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ.
প্রকৃতপক্ষে সমস্ত মুসলিম ভাই-ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও।... -সূরা হুজুরাত (৪৯) : ১০
হায়! এ যুগের শায়েখদের নিজস্ব রায় ও ইজতিহাদ মুসলমানদের মাঝে কী কঠিন বিপর্যয় নিয়ে এসেছে! তাদের মত ও পথের অন্ধ পক্ষপাত আমাদের উপর কী ভয়ানক বিপদ ডেকে এনেছে! এই শায়েখরা (উম্মাহ-বিচ্ছিন্ন মত প্রকাশ করে) প্রসিদ্ধি লাভ করতে চান। এজন্য মুসলমানদের এ দুঃসময়ে তারা মুজতাহিদ হওয়ার দাবি করে বসেছেন।
তারা সাধারণ মুসলমানদের মাঝে বিদ্বেষ ও বিবাদ-বিচ্ছেদের ধোঁয়া ছড়িয়ে দেন এবং ছোটখাট বিষয় নিয়ে দাঙ্গা ও গোলযোগের আগুন জ্বালিয়ে দেন। তাসবীহ হাতে যিকির করা যাবে কি না, নামাযে হাত কোথায় রাখবে, তারাবীর নামায কীভাবে পড়বে, শ্রদ্ধা করে আলেমের হাতে চুমু দেওয়া যাবে কি না, মেহমানের সম্মানার্থে দাঁড়ানো যাবে কি না, ইজতিমায়ী যিকির জায়েয হবে কি না, কুরআন তিলাওয়াতের পর ‘সাদাকাল্লাহুল আযীম ...’ বলা যাবে কি না ইত্যাদি গৌণ বিষয়াদি নিয়ে তারা ফেতনা-ফাসাদ শুরু করে দেন। অথচ এখানে হালাল-হারামের ইখতিলাফ না। বেশি থেকে বেশি এক পদ্ধতি উত্তম হলে অন্য পদ্ধতিটাও জায়েয।
এসব হল শরীয়তের আনুষঙ্গিক বিষয়। এগুলোকে নিয়েই তারা সমাজের মধ্যে ফেতনা উসকিয়ে দেন এবং এমন গুরুত্বের সাথে প্রচার করেন যে, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, এসবই হল শরীয়তের মৌলিক বিষয়। এগুলোর প্রতি এমন গুরুত্বই দেওয়া দরকার, যেমন গুরুত্বারোপ করা হয় আকীদা-বিশ্বাস ও উম্মাহ্র ঐক্যের প্রতি এবং এগুলো নিয়ে এতই ব্যস্ত হওয়া প্রয়োজন, যেমন প্রয়োজন খ্রিস্টান মিশনারী ও অন্যান্য ঈমানবিধ্বংসী আহ্বানের প্রতিরোধে সম্মিলিত চেষ্টা ব্যয় করার এবং নাস্তিকতা, ধর্মদ্রোহিতা ও যুবসমাজের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া চারিত্রিক অবক্ষয়ের গতি রোধে সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তোলার। ভাবখানা এমন যে, ঔপনিবেশিক শত্রুদের দ্বারা মুসলমানদের শতধাবিভক্ত হওয়ার পর তাদেরই মধ্য হতে এমন এক শ্রেণির প্রয়োজন, যারা উম্মাহ্র সেই বিভক্তিকে ষোলকলায় পূর্ণ করবে।
দুঃখের ব্যাপার হল, এই শায়েখরা এধরনের হীন কর্মকাণ্ড নিয়েই ব্যস্ত ও তৃপ্ত। আল্লাহ তাআলা তো বলেই দিয়েছেন-
كُلُّ حِزْبٍۭ بِمَا لَدَیْهِمْ فَرِحُوْنَ.
প্রতিটি দল নিজেদের ভাবনা মতে যে পন্থা অবলম্বন করেছে তা নিয়েই উৎফুল্ল। -সূরা মুমিনুন (২৩) : ৫৩
সবচেয়ে বেদনাদায়ক বিষয় হল, মুসলমানদের এই বিভক্তি, বৈরিতা ও হানাহানিকে বলা হচ্ছে, দ্বীনের প্রতি গায়রত ও অবিচলতা। এসবেরই নাম দেওয়া হচ্ছে ইহইয়াউস্ সুন্নাহ (সুন্নত যিন্দাকরণ)। আবার কখনো বলা হচ্ছে, এটাই সালাফে সালেহীন তথা মহান পূর্বসূরীদের আদর্শ। অথচ তাঁদের সাথে এসবের দূরতম সম্পর্কও নেই।
এই শায়েখরা একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারতেন যে, এটা দুশমনদের পাতানো গভীর ষড়যন্ত্র। এদের উদ্দেশ্য হল, মুসলমানদেরকে এসবের পিছনে লাগিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখা এবং নিজেদের মধ্যে কঠিন দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করা, যাতে মুসলমানদের ঐক্য টুকরো টুকরো হয়ে যায় এবং তাদের শক্তি খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যায়। অথচ আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের ঐক্য ও সংহতির জোর তাকিদ দিয়েছেন এবং বিদ্বেষ ও বিভক্তির উপর কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে-
وَ اعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللهِ جَمِیْعًا وَّ لَا تَفَرَّقُوْا وَ اذْكُرُوْا نِعْمَتَ اللهِ عَلَیْكُمْ اِذْ كُنْتُمْ اَعْدَآءً فَاَلَّفَ بَیْنَ قُلُوْبِكُمْ فَاَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهٖۤ اِخْوَانًا.
আল্লাহ্র রশিকে (অর্থাৎ তাঁর দ্বীন ও কিতাবকে) দৃঢ়ভাবে ধরে রাখ এবং পরস্পরে বিভেদ করো না। আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন তা স্মরণ রাখ। একটা সময় ছিল, যখন তোমরা একে অন্যের শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরসমূহকে জুড়ে দিলেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেলে। -সূরা আলে-ইমরান (৩) : ১০৩
আরো ইরশাদ হয়েছে-
وَ لَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِیْنَ تَفَرَّقُوْا وَ اخْتَلَفُوْا مِنْۢ بَعْدِ مَا جَآءَهُمُ الْبَیِّنٰتُ وَ اُولٰٓىِٕكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِیْمٌ.
এবং তোমরা সেইসকল লোকের (অর্থাৎ ইহুদী ও নাসারার) মত হয়ো না, যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী আসার পরও পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল ও আপসে মতভেদ সৃষ্টি করেছিল। এরূপ লোকদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১০৫
সালাফের অনুসারী হওয়ার দাবিদার এই ভাইদের যদি ইসলামের খেদমত করারই ইচ্ছা হয়, তাহলে কী ক্ষতি হত তারা যদি তারাবীর নামায আট রাকাত না বিশ রাকাত, তাসবীহ পড়ার সময় গণনা করবে আঙ্গুলে না তাসবীহ-দানায়, যিকির-আযকার এককভাবে করবে, না ইজতিমায়ীভাবে-এসব বিষয় নিয়ে মুসলমানদের পেরেশান না করতেন?
তাদের কী সমস্যা হত, যদি মুসল্লীদের ইবাদত-বন্দেগির বিরোধিতায় চিন্তা-ফিকির খরচ না করে নিজেদের চেষ্টা ও মনোযোগকে উৎসর্গ করতেন নাস্তিকতা ও কমিউনিজমের প্রতিরোধে?
তারা কি স্মরণ করেন না সত্যের দিশারী নবী মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী-
إِنّ الدِّينَ يُسْرٌ، وَلَنْ يُشَادّ الدِّينَ أَحَدٌ إِلّا غَلَبَهُ.
নিঃসন্দেহে দ্বীন সহজ। যে-ই দ্বীনের ব্যাপারে কঠোরতা করবে সে-ই পরাজিত হবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৯
তাদের কানে কি পৌঁছয়নি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই হাদীস-
بَشِّرُوا وَلَا تُنَفِّرُوا، وَيَسِّرُوا وَلَا تُعَسِّرُوا.
তোমরা সুসংবাদ দান কর, (দ্বীনের প্রতি) ঘৃণা সৃষ্টি কোরো না। সহজ কর, কঠিন কোরো না। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩০৩৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৭৩২
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের হেদায়েত দান করুন। প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে হেফাযত করুন। হে রাব্বুল আলামীন! সবধরনে কঠিন ফেতনা-ফাসাদ থেকে আমাদের রক্ষা করুন।
এখন মূল আলোচনা অর্থাৎ তারাবীর নামাযের বিষয়ে নববী নির্দেশনার বিবরণ শুরু করছি। আল্লাহ তাআলাই সাহায্যকারী ও তাওফীকদাতা।
তারাবীর নামাযের হুকুম ও ফযীলত
রমযান মাসে ইশার পর বিতরের আগে যে নামায পড়া হয় তা হল তারাবীর নামায। এই নামায নারী পুরুষ সকলের জন্য সুন্নত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত তারাবীর নামায পড়েছেন এবং অন্যদেরকে উৎসাহ দিয়েছেন। তাঁর ইনতিকালের পর সাহাবা-তাবেয়ীনও গুরুত্বের সাথে তারাবীর নামায আদায় করেছেন।
তারাবীর নামায রমযানুল মুবারকের অন্যতম শিআর বা প্রতীক। মুসলিমদের হৃদয়ে রয়েছে তারাবীর অনেক মর্যাদা ও মহত্ত্ব এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকটও আছে এর বিশেষ সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্ব। হাদীস শরীফে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমযানের রাতে ইবাদত করবে তার অতীতের গোনাহ-খাতা মাফ করে দেওয়া হবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৭
হাদীসটির উদ্দেশ্য হচ্ছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্র প্রতি ঈমান রেখে এবং আল্লাহ্র দরবারে আজর ও সাওয়াবের আশা পোষণ করে রমযানের রাতে নামায, যিকির, তিলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদতের মধ্যে মশগুল থাকবে, আল্লাহ তার পিছনের যাবতীয় সগীরা গুনাহ মাফ করে দেবেন। বাকি কবীরা! তো সেজন্য খালেস নিয়তে তাওবা করতে হবে। অনেক আলেম এ বিষয়ে স্পষ্ট মতামত ব্যক্ত করেছেন।১
সর্বপ্রথম তারাবীর নামায পড়েছেন কে?
ইবনে কুদামা রাহ. তাঁর বৃহৎ ও বিস্তৃত গ্রন্থ ‘আলমুগনী’তে বলেন-
তারাবীর নামায সুন্নতে মুআক্কাদা। সর্বপ্রথম যিনি এই নামায চালু করেছেন তিন হলেন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। বিষয়টি একাধিক হাদীসে বিবৃত হয়েছে। যেমন :
১. আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের কিয়াম তথা রাতের বেলা ইবাদত-বন্দেগীর উৎসাহ দিতেন। কিন্তু দৃঢ়তার সাথে নির্দেশ দিতেন না। তিনি বলতেন-
مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রমযানের রাতে ইবাদত করবে তার অতীতের গোনাহ-খাতা মাফ করে দেওয়া হবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৫৯
২. আয়েশা রা. বর্ণনা করেন-
إِنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ صَلّى فِي الْمَسْجِدِ ذَاتَ لَيْلَةٍ، فَصَلّى بِصَلَاتِهِ نَاسٌ، ثُمَّ صَلّى مِنَ الْقَابِلَةِ، فَكَثُرَ النّاسُ، ثُمّ اجْتَمَعُوا مِنَ اللّيْلَةِ الثّالِثَةِ، أَوِ الرّابِعَةِ فَلَمْ يَخْرُجْ إِلَيْهِمْ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، فَلَمّا أَصْبَحَ، قَالَ: قَدْ رَأَيْتُ الّذِي صَنَعْتُمْ، فَلَمْ يَمْنَعْنِي مِنَ الْخُرُوجِ إِلَيْكُمْ إِلّا أَنِّي خَشِيتُ أَنْ تُفْرَضَ عَلَيْكُمْ. وَذَلِكَ فِي رَمَضَانَ.
রমযানের এক রাতে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে গিয়ে নামাযে দাঁড়িয়েছেন। কিছুসংখ্যক সাহাবী তাঁর পিছনে ইক্তিদা করেছেন। দ্বিতীয় রাতেও তিনি নামায পড়েছেন। এ রাতে প্রচুর মুসল্লী হয়েছে। এরপর তৃতীয় বা (রাবী বলেছেন) চতুর্থ রাতে সাহাবায়ে কেরাম মসজিদে জড়ো হয়েছেন; কিন্তু ঐ রাতে তিনি কামরা থেকে বের হননি।
সকাল হলে তিনি সাহাবাদের লক্ষ করে বললেন, তোমরা যে এসেছো তা আমি দেখেছি। তবে, আমি তোমাদের কাছে আসিনি এ আশঙ্কায় যে, না জানি এই নামায তোমাদের উপর ফরয করে দেওয়া হয়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৬১
৩. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত-
خَرَجَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، فَإِذَا أُنَاسٌ فِي رَمَضَانَ يُصَلّونَ فِي نَاحِيَةِ الْمَسْجِدِ، فَقَالَ: مَا هَؤُلَاءِ؟، فَقِيلَ: هَؤُلَاءِ نَاسٌ لَيْسَ مَعَهُمْ قُرْآنٌ، وَأُبَيّ بْنُ كَعْبٍ يُصَلِّي، وَهُمْ يُصَلُّونَ بِصَلَاتِهِ، فَقَالَ النّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: أَصَابُوا، وَنِعْمَ مَا صَنَعُوا.
একদা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কামরা থেকে বের হয়ে মসজিদে আসলেন। দেখেন, কিছু লোক মসজিদের এককোণে নামায পড়ছে। জিজ্ঞেস করলেন, এরা কী করছে? বলা হল, তারা নিজেরা কুরআনের হাফেয নয়, তাই উবাই ইবনে কা‘বের পিছনে নামায পড়ছে। তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা ঠিক করেছে। কাজটা খুব ভালো হয়েছে।২
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবীর নামায প্রথম পড়েছেন। এরপরও বলা হয়, উমর রা. তারাবীর নামায চালু করেছেন। এর কারণ হল, তিনিই সর্বপ্রথম উবাই ইবনে কা‘ব রা.-এর পিছনে জামাতের ব্যবস্থা করেছেন। তার নির্দেশে উবাই ইবনে কা‘ব রা. লোকদের নিয়ে তারাবীর জামাত শুরু করেছেন। আবদুর রহমান ইবনে আবদুল কারী রাহ. বলেন-
خَرَجْتُ مَعَ عُمَرَ بْنِ الخَطّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ لَيْلَةً فِي رَمَضَانَ إِلَى المَسْجِدِ، فَإِذَا النّاسُ أَوْزَاعٌ _أَيْ يُصَلُّوْنَ جَمَاعَاتٍ جَمَاعَاتٍ_ مُتَفَرِّقُونَ، يُصَلِّي الرّجُلُ لِنَفْسِهِ، وَيُصَلِّي الرَّجُلُ فَيُصَلِّي بِصَلاَتِهِ الرّهْطُ، فَقَالَ عُمَرُ: إِنِّي أَرَى لَوْ جَمَعْتُ هَؤُلاَءِ عَلَى قَارِئٍ وَاحِدٍ، لَكَانَ أَمْثَلَ _أَيْ أَفْضَلَ وَأَقْرَبَ إِلَى الْخَيْرِ_ ثُمَّ عَزَمَ، فَجَمَعَهُمْ عَلَى أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ، ثُمّ خَرَجْتُ مَعَهُ لَيْلَةً أُخْرَى، وَالنَّاسُ يُصَلّونَ بِصَلاَةِ قَارِئِهِمْ، قَالَ عُمَرُ: نِعْمَ البِدْعَةُ هَذِهِ، وَالّتِي يَنَامُونَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنَ الّتِي يَقُومُونَ. يُرِيدُ آخِرَ اللّيْلِ وَكَانَ النّاسُ يَقُومُونَ أَوّلَهُ.
রমযানের এক রাতে উমর রা.-এর সাথে বের হলাম। দেখি, লোকজন বিক্ষিপ্তভাবে ছোট ছোট জামাত করে নামায পড়ছে। কেউ একা একা পড়ছে আর কেউ ইমামতি করছে, কিছু লোক তার ইক্তিদা করছে। উমর রা. বললেন, মনে হচ্ছে, সবাইকে যদি এক ইমামের পিছনে জমা করিয়ে দিই তাহলে ভালো হবে। এরপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন এবং সবাইকে উবাই ইবনে কা‘ব রা.-এর পিছনে দাঁড় করিয়ে দেন।
আরেক রাতে তাঁর সাথে বের হলাম। লোকজন উবাই ইবনে কা‘ব রা.-এর পিছনে জামাতের সাথে নামায পড়ছেন। উমর রা. তখন বললেন, এটা উত্তম বিদআত।
সাহাবায়ে কেরাম রাতের প্রথমাংশে (তারাবীর) নামায পড়তেন। উমর রা. বললেন, এই নামায থেকে ঐ নামায উত্তম, যার সময় তারা ঘুমিয়ে থাকে। অর্থাৎ শেষ রাতের নামায। (সহীহ বুখারী, হাদীস ২০১০) -আলমুগনী, ইবনে কুদামা ২/১৬৬
এসব হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝে আসে যে, সর্বপ্রথম যিনি তারাবীর নামায পড়েছেন তিনি হলেন সায়্যিদুনা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি সাহাবীদের নিয়ে তিন বা চার রাত্রে তারাবীর জামাত করেছেন। এরপর তাঁদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে আর জামাত করেননি। কেননা, তিনি আশঙ্কা করেছেন, তিনি নিয়মিত জামাতের সাথে তারাবীর নামায পড়লে তারাবীর নামায ফরয হয়ে যেতে পারে। ফলে নিয়মিত আদায় করতে না পারলে কবীরা গুনাহ হবে। বিষয়টিকে আরো পরিষ্কার করে নিম্নোক্ত রেওয়ায়েতটি-
إِنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، خَرَجَ مِنْ جَوْفِ اللّيْلِ فَصَلّى فِي الْمَسْجِدِ، فَصَلّى رِجَالٌ بِصَلَاتِهِ، فَأَصْبَحَ النّاسُ يَتَحَدّثُونَ بِذَلِكَ، فَاجْتَمَعَ أَكْثَرُ مِنْهُمْ، فَخَرَجَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فِي اللّيْلَةِ الثّانِيَةِ، فَصَلّوْا بِصَلَاتِهِ، فَأَصْبَحَ النّاسُ يَذْكُرُونَ ذَلِكَ، فَكَثُرَ أَهْلُ الْمَسْجِدِ مِنَ اللّيْلَةِ الثّالِثَةِ، فَخَرَجَ فَصَلّوْا بِصَلَاتِهِ، فَلَمّا كَانَتِ اللّيْلَةُ الرّابِعَةُ عَجَزَ الْمَسْجِدُ عَنْ أَهْلِهِ، فَلَمْ يَخْرُجْ إِلَيْهِمْ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، فَطَفِقَ رِجَالٌ مِنْهُمْ يَقُولُونَ: الصّلَاةَ، فَلَمْ يَخْرُجْ إِلَيْهِمْ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ حَتّى خَرَجَ لِصَلَاةِ الْفَجْرِ، فَلَمّا قَضَى الْفَجْرَ أَقْبَلَ عَلَى النّاسِ، ثُمّ تَشَهّدَ، فَقَالَ: أَمّا بَعْدُ، فَإِنّهُ لَمْ يَخْفَ عَلَيّ شَأْنُكُمُ اللّيْلَةَ، وَلَكِنِّي خَشِيتُ أَنْ تُفْرَضَ عَلَيْكُمْ صَلَاةُ اللّيْلِ فَتَعْجِزُوا عَنْهَا.
রমযান মাসে একবার রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্যরাতে বের হলেন এবং মসজিদে গিয়ে নামায পড়লেন। কিছু লোক তাঁর পিছনে ইক্তিদা করল। ভোর হলে লোকজন বিষয়টা নিয়ে পরস্পরে আলোচনা করল। পরের রাতে আরো বেশি মানুষ জমা হল। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে গিয়েছেন, তারা তাঁর পেছনে নামায পড়েছে। সকাল হলে লোকেরা তা নিয়ে আরো বেশি আলোচনা করল। তাই তৃতীয় রাতে মুসল্লীদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেল। নবীজী মসজিদে গিয়ে নামায পড়েছেন, লোকেরা তাঁর ইক্তিদা করেছে। চতুর্থ রাতে এত বেশি মুসল্লী হয়েছে যে, মসজিদে সংকুলান হচ্ছে না। কিন্তু রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ রাতে নামাযের জন্য বের হলেন না। তা দেখে কিছু লোক আস্সালাত, আস্সালাত বলে আওয়ায দিতে লাগল। কিন্তু না, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন না। একেবারে ফজরের সময় মসজিদে গিয়েছেন। ফজরের নামায শেষ হলে তিনি মুসল্লীদের দিকে ফিরলেন এবং খুতবা পড়ে বললেন, শোন! আজ রাতে তোমাদের অবস্থা আমার অজানা নয়। কিন্তু আমি আশঙ্কা করেছি, (নিয়মিত জামাত করলে) না জানি, তারাবীর নামায তোমাদের উপর ফরয হয়ে যায় আর তখন তা আদায় করতে তোমরা অক্ষম হয়ে যাও। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৯২৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৬১
অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে-
فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ وَالأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ.
এ অবস্থায়ই রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইনতিকাল হয়ে যায়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২০১২
এ নামাযকে তারাবীর নামায বলার কারণ
রমযান মাসের রাতের সুন্নত নামাযকে তারাবী বলা হয়। কারণ, তারাবীর নামায অনেক রাকাতবিশিষ্ট দীর্ঘ নামায। মুসল্লীগণ প্রত্যেক চার রাকাত পর পর ‘তারবীহ’ তথা আরাম ও রাহাত গ্রহণ করে। এরপর ধারাবাহিকভাবে আবার নামায শুরু করে। এজন্য এ নামাযকে সালাতুত তারাবীহ তথা রাহাত ও আরামবিশিষ্ট নামায বলা হয়।
আরবী ভাষাবিৎ ইবনে মানযূর রাহ. বলেন, تَرَاوِيْحُ (তারাবীহ) শব্দটি تَرْوِيْحَةٌ -এর বহুবচন। تَرْوِيْحَةٌ -এর অর্থ একবার রাহাত (আরাম) নেওয়া। যেমন تَسْلِيْمَةٌ -এর অর্থ একবার সালাম দেওয়া। রমযানের রাতের সুন্নত নামাযকে তারাবীহ (রাহাত)-এর নামায এজন্য বলা হয় যে, মুসল্লীরা প্রত্যেক চার রাকাত পর পর রাহাত গ্রহণ করে।
ইবনে মানযূর রাহ. বলেন, আর রাহাতের অর্থ হল ক্লান্তি-ক্লেশ না থাকা। যেমন হাদীস শরীফে এসেছে-
أَرِحْنَا بِهَا يَا بِلَالُ.
হে বেলাল! নামাযের মাধ্যমে আমাদেরকে আরাম দাও। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩০৮৮; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯৮৫; মুজামে কাবীর, তবারানী, হাদীস ৬২১৫
অর্থাৎ তুমি আযান দাও, তাহলে নামায আদায়ের মাধ্যমে রাহাত লাভ হবে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের মধ্যে রাহাত পেতেন। কারণ, নামাযে আল্লাহ্র সাথে নিভৃত আলাপ হয়। এজন্য তিনি বলেছেন-
جُعِلَتْ قُرّةُ عَيْنِي فِي الصّلَاةِ.
আমার চোখের শীতলতা রাখা হয়েছে নামাযের মধ্যে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২২৯৩; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৩৯৩৯) -লিসানুল আরব, খণ্ড : ১, মাদ্দাহ : روح
সুতরাং উল্লিখিত সহীহ হাদীসসমূহে যে কিয়ামে রমযান (রমযানের রাতের নামায)-এর বিবরণ এসেছে সে কিয়ামে রমযানই হল তারাবীর নামায।
তারাবীর নামাযের রাকাত-সংখ্যা
পূর্বের হাদীসগুলো থেকে প্রমাণিত যে, তারাবীর নামায সুন্নতে মুআক্কাদা। এর রাকাত সংখ্যা বিশ এবং বিতিরসহ তেইশ। উম্মাহ্র আমল এভাবেই চলে আসছে। খলীফায়ে রাশেদ উমর ইবনে খাত্তাব রা.-এর যুগ থেকে পূর্বসূরী ও উত্তরসূরী সকল মুসলিম এ বিষয়ে একমত। চার মাযহাবের কোনো ইমাম এতে দ্বিমত পোষণ করেননি। হাঁ, মদীনার মুজতাহিদ ইমাম মালেক রাহ. থেকে এক বর্ণনা আছে যে, তারাবীর নামায ছত্রিশ রাকাত। এ মতের পক্ষে তাঁর দলীল হল, তখনকার মদীনাবাসীর আমল। নাফে রাহ. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন, আমি মদীনার লোকদের দেখেছি, তারা রমযানে (ছত্রিশ রাকাত তারাবী ও তিন রাকাত বিতর মিলে মোট) উনচল্লিশ রাকাত নামায পড়েন। (-মুখতাসারু কিয়ামিল লাইল, পৃ. ২০১; ফতহুল বারী ৫/৩৫২ باب: فضل من قام رمضان)
তবে, ইমাম মালেক রাহ. থেকে প্রসিদ্ধ বর্ণনা শাফেয়ী, হাম্বলী ও হানাফী মাযহাবের মতই। অর্থাৎ তারাবীর নামায বিশ রাকাত। সুতরাং বিশ রাকাতের উপর চার মাযহাবের ইমামগণ একমত এবং এর উপর ইজমা প্রতিষ্ঠিত। আর এভাবে আল্লাহ তাআলা বিবাদ-বিসংবাদের অনিষ্ট থেকে মুমিনদের হেফাযত করেছেন।
মুজতাহিদ ইমামগণের দলীল
বায়হাকী রাহ. ও অন্যান্য মুহাদ্দিস সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন যে, প্রসিদ্ধ সাহাবী সাইব ইবনে ইয়াযীদ রাহ. বলেছেন-
كَانُوا يَقُومُونَ عَلَى عَهْدِ عُمَرَ بْنِ الْخَطّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ بِعِشْرِينَ رَكْعَةً.
উমর ইবনে খাত্তাব রা.-এর যামানায় রমযান মাসে সাহাবায়ে কেরাম বিশ রাকাত তারাবী পড়তেন।৩ -সুনানে কুবরা, বায়হাকী ২/৪৯৬
২. তাবেয়ী ইয়াযীদ ইবনে রুমান রাহ. বলেন-
كَانَ النّاسُ يَقُومُونَ فِي زَمَانِ عُمَرَ بْنِ الْخَطّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فِي رَمَضَانَ بِثَلَاثٍ وَعِشْرِينَ رَكْعَةً.
উমর ইবনে খাত্তাব রা.-এর যুগে সাহাবায়ে কেরাম তেইশ রাকাত নামায পড়তেন। -মুয়াত্তা মালেক, আসার ৩৮০; সুনানে কুবরা, বায়হাকী ২/৪৯৬
অর্থাৎ তারা বিশ রাকাত তারাবী ও তিন রাকাত বিতির পড়তেন।
৩. আবুল আলিয়া রাহ. থেকে বর্ণিত-
عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ أَنّ عُمَرَ أَمَرَ أُبَيّا أَنْ يُصَلِّيَ بِالنّاسِ فِي رَمَضَانَ فَقَالَ إِنّ النّاسَ يَصُومُونَ النّهَار وَلَا يحسنون أَن يقرؤا فَلَوْ قَرَأْتَ الْقُرْآنَ عَلَيْهِمْ بِاللّيْلِ! فَقَالَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ! هَذَا شَيْءٌ لَمْ يَكُنْ، فَقَالَ قَدْ عَلِمْتُ، وَلَكِنّهُ أَحْسَنُ، فَصَلّى بِهِمْ عِشْرِينَ رَكْعَة.
উবাই ইবনে কা‘ব রা. বলেন, উমর রা. তাকে বললেন, মানুষেরা দিনের বেলা রোযা রাখে। (কিন্তু অনেকেই) সুন্দর করে কুরআন পড়তে পারে না। আপনি যদি তারাবীর নামাযের জামাত করতেন এবং তাদেরকে কুরআন পাঠ করে শোনাতেন (তাহলে ভালো হত)! তখন উবাই ইবনে কা‘ব রা. বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! এই আমল তো নবীজীর যুগে ছিল না! উমর রা. বললেন, আমি তা জানি। তবে, জামাত করলে ভালো হবে। তখন উবাই ইবনে কা‘ব রা. সাহাবীদের নিয়ে বিশ রাকাত তারাবী পড়লেন।৪ -আলআহাদীসুল মুখতারাহ, হাদীস ১১৬১; মুসনাদে আহমাদ ইবনে মানী‘-কানযুল উম্মাল (হাদীস ২৩৪৭১)
আইম্মায়ে কেরামের বক্তব্যের আলোকে তারাবী বিশ রাকাত
ইবনে কুদামা রাহ. বিশ রাকাত তারাবীর ব্যাপারে ইজমা নকল করেছেন এবং ইমাম মালেক রাহ.-এর দ্বিতীয় মতের খণ্ডন করেছেন, যাতে বলা হয়েছে যে, তারাবীর নামায ছত্রিশ রাকাত। ইবনে কুদামা রাহ. বলেন-
কিয়ামে রমযান তথা তারাবীর নামায বিশ রাকাত। এই নামায সুন্নতে মুআক্কাদা। তারাবীর নামায চালু করেছেন স্বয়ং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। কিন্তু বলা হয়, তারাবীর নামায চালু করেছেন উমর রা.। এর কারণ হল, তিনিই সর্বপ্রথম উবাই ইবনে কা‘ব রা.-এর পিছনে জামাতের ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর নির্দেশেই উবাই ইবনে কা‘ব রা. লোকদের নিয়ে তারাবীর জামাত শুরু করেছেন।
এক বর্ণনায় এসেছে, রমযানের এক রাতে উমর রা বের হলেন। দেখেন, লোকজন বিক্ষিপ্তভাবে ছোট ছোট জামাত করে নামায পড়ছে। উমর রা. বললেন, সবাইকে যদি এক ইমামের পিছনে জমা করে দিই (তাহলে ভালো হবে)। এরপর সবাইকে উবাই ইবনে কা‘ব রা.-এর পিছনে এক জামাতে দাঁড় করিয়ে দিলেন।
এরপর আরেক রাতে বের হয়ে দেখেন, লোকজন ইমামের পিছনে জামাতের সাথে নামায পড়ছে। উমর রা. তখন বললেন, এটা উত্তম বিদআত। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২০১০
এরপর ইবনে কুদামা রাহ. বলেন, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহ.-এর মতে তারাবীর নামায বিশ রাকাত। এটাই সুফিয়ান ছাউরী রাহ., আবু হানীফা রাহ. ও শাফেয়ী রাহ.-এর মত। ইমাম মালেক রাহ. বলেছেন, তারাবীর নামায ছত্রিশ রাকাত। তিনি তখনকার মদীনাবাসীর আমল গ্রহণ করেছেন।
বিশ রাকাত তারাবীর দলীল হল উমর রা. যখন সাহাবীদেরকে উবাই ইবনে কা‘ব রা.-এর পিছনে দাঁড় করিয়েছিলেন তখন তিনি তাদের নিয়ে বিশ রাকাত তারাবী পড়েছিলেন। ইয়াযীদ ইবনে রুমান রাহ. থেকে ইমাম মালেক রাহ. বর্ণনা করেছেন যে, উমর ইবনে খাত্তাব রা.-এর যুগে সাহাবায়ে কেরাম (তিন রাকাত বিতরসহ) তেইশ রাকাত নামায পড়তেন।
আলী রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি সাহাবী ও তাবেয়ীদের নিয়ে বিশ রাকাত তারাবী পড়ার জন্য একজন ইমাম নিযুক্ত করেছেন।
অন্যান্য সাহাবীর সামনে উমর রা. ও আলী রা.-এর নির্দেশ এবং সাহাবায়ে কেরামের এই আমল ইজমার পর্যায়ের।
ইবনে কুদামা রাহ. আরো বলেন-
যদি প্রমাণিত হয় যে, (ইমাম মালেক রাহ.-এর যমানায়) মদীনাবাসী সকলেই ছত্রিশ রাকাত তারাবী পড়েছেন, তাহলেও উমর রা. যা করেছেন এবং তাঁর যুগে সাহাবায়ে কেরাম যে বিষয়ে ইজমা করেছেন তারই অনুসরণ করা উত্তম। কোনো কোনো আলেম বলেছেন, মক্কাবাসীরা চার রাকাত অন্তরন্তর তাওয়াফ করতেন। মদীনাবাসীরা সে সওয়াব অর্জনের জন্য তাওয়াফের বদলে চার রাকাত নামায পড়তেন। কিন্তু বলাই বাহুল্য যে, সাহাবায়ে কেরাম যে রাকাত-সংখ্যার উপর ছিলেন সে অনুযায়ী আমল করাই শ্রেয়।
আলী রা. সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি এক রমযানে বিভিন্ন মসজিদ ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। সেগুলোতে বাতি জ্বালিয়ে লোকজন নামায পড়ছে। তখন আলী রা. বললেন, আল্লাহ তাআলা উমরের কবরকে আলোকিত করুন, যেমন তিনি আমাদের মসজিদগুলোকে আলোকিত করেছেন।
ইমাম আহমাদ রাহ. বলেছেন, তারাবীর নামায এ পরিমাণ দীর্ঘ করবে, যতটুকু মুসল্লীদের জন্য সহনীয় হয়, তাদের কষ্ট না হয়। কেরাতের বিষয়টি মুসল্লীদের সহনক্ষমতার উপর নির্ভর করে। কাযী রাহ. বলেছেন, পুরো রমযানে তারাবীতে এক খতমের কম হওয়া উচিত নয় এবং এক খতম থেকে বেশি পড়াও ঠিক না; যাতে মুসল্লীদের কষ্ট না হয়। -আলমুগনী, ইবনে কুদামা ২/১৬৭
(লেখক বলেন,) ইমাম মালেক রাহ.-এর প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী তারাবীর নামায বিশ রাকাত। সুতরাং বিশ রাকাত উত্তম হওয়ার ব্যাপারে মুজতাহিদ ইমামগণের ইজমা সাব্যস্ত হচ্ছে। শায়েখ দারদীর মালেকী রাহ. বলেছেন, রমযানে তারাবীর নামায বিশ রাকাত। তা আদায় করবে ইশার নামাযের পর। বিতিরের তিন রাকাত ছাড়া বাকি প্রত্যেক দুই রাকাত পর পর সালাম ফেরাবে। মুস্তাহাব হল প্রত্যেক রাতে বিশ রাকাতে এক পারা পড়া। এভাবে পুরো তারাবীতে একবার কুরআনে কারীম খতম করা।
যদি মসজিদ জামাত থেকে খালি হওয়ার আশঙ্কা না থাতে তাহলে উত্তম হল ঘরে একা একা তারাবীর নামায পড়া। আর মসজিদ খালি হওয়ার আশঙ্কা হলে মসজিদে জামাতে পড়া উত্তম। -আকরাবুল মাসালিক আলা মাযহাবিল ইমাম মালিক ১/৫৫২; আশ্শারহুস সাগীর আলা আকরাবিল মাসালিক ১/৫৫২
তদ্রƒপ ইমাম শাফেয়ী রাহ. ও ইমাম আবু হানীফা রা.-এর মাযহাবও বিশ রাকাত তারাবী পড়া। কেননা, উমর ফারুক রা.-এর খেলাফতকালে এর উপর সাহাবায়ে কেরামের ইজমা হয়ে গেছে। ইমাম ইবনে আবদুল বার রাহ. বলেন-
وَهُوَ الصّحِيحُ عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ مِنْ غَيْرِ خِلَافٍ مِنَ الصّحَابَةِ.
উবাই ইবনে কা‘ব রা. থেকে এটাই সঠিক যে, তিনি সাহাবীদের নিয়ে বিশ রাকাত তারাবী পড়েছেন। এতে সাহাবীদের মধ্যে কারো দ্বিমত নেই। (আলইসতিযকার ৫/১৫৭)
মুখতাসারুল মুযানী কিতাবে (পৃ. ২১) আছে, ইমাম শাফেয়ী রাহ. বলেছেন-
وَرَأَيْتهمْ بِالْمَدِينَةِ يَقُومُونَ بِتِسْعٍ وَثَلَاثِينَ وَأَحَبُّ إلَيَّ عِشْرُونَ؛ لِأَنّهُ رُوِيَ عَنْ عُمَرَ، وَكَذَلِكَ يَقُومُونَ بِمَكَّةَ وَيُوتِرُونَ بِثَلَاثٍ.
আমি মদীনাবাসীদের দেখেছি, তারা (তিন রাকাত বিতিরসহ) উনচল্লিশ রাকাত নামায পড়েন। তবে আমার নিকট বিশ রাকাত পড়া উত্ত
Click here to claim your Sponsored Listing.
Videos (show all)
Location
Category
Contact the school
Address
Road 2, Shyamoli
Dhaka
1207
Opening Hours
Monday | 09:00 - 20:00 |
Tuesday | 09:00 - 20:00 |
Wednesday | 09:00 - 20:00 |
Thursday | 09:00 - 20:00 |
Friday | 09:00 - 11:50 |
14:30 - 20:00 | |
Saturday | 08:00 - 21:00 |
Sunday | 09:00 - 20:00 |
House #122 (Near Flyover ), Atish Deepankar Road, South Basabo
Dhaka, 1214
আমাদের পেজে আপনাকে সু-স্বাগতম 私たちのページへようこそ
Dhaka
BCS-সহ সকল সরকারি চাকরি প্রত্যাশীদের পড়াশুনা মূলক একটি পেইজ। আশা করি, লাইক/Follow দিয়ে সাথে থাকবেন।
House-272, Road-09, East Goran, Khilgaon (Near Madina Masjid) Dhaka
Dhaka, 1219
মারকাযু তাহযীবিল উম্মাহ ঢাকা একটি উ?
Hazi Md Dider Hossain Road, Nazargonj, Zinzira
Dhaka, 1210
First complete science academy in zinzira For creative education and pleasure, you can rely on.
Dhaka
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, "পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন" (সূরা আলাক্ব:-১)
Bangladesh
Dhaka
"আসসালামুয়ালাইকুম,, আশা করি সবাই ভালো আছেন।আমাদের ফেসবুক পেইজে নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত সুনতে পারবেন।।
House No: 266/3-C, Ishakah Road, Ahmednagar Mirpur-1
Dhaka, 1216
Best Academy for Learning Building Information Modeling.
Dhaka
একুশ শতকের দক্ষতার বিকাশের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে নিয়োজিত বাংলাদেশী শিক্ষকদের প্লাটফর্ম।