
বিবেকের তাড়না ও কষ্টের জায়গা থেকে সারজিস ভাইকে নিয়ে কিছু কথা বলি।পুরোটা পড়ে কারো খারাপ লাগলে কিছু করার নাই।স্যরি! মাফ করবেন।
Md Sarjis Alam ভাইকে বসুন্ধরায় আজকে প্রাইভেটের কিছু পোলাপান হয়রানি করেছে।প্রাইভেটের শিক্ষার্থী যারা হয়রানি করেছে,তাঁরা কোন দলের সেটার তথ্যও হয়তো দ্রুত বের হবে।যাইহোক,এইটা দেখে গণবিরোধী আওয়ামীলীগ ও নিষিদ্ধ গুজববাজ ছাত্রলীগের পাশাপাশি আমার ছাত্রদলের ভাই-ব্রাদাররাও বড্ড খুশি।ফেসবুকে এসে নির্লজ্জভাবে রীতিমতো উল্লাসে মেতে উঠেছেন।
এত খুশির কারণ কী?জানতে চাই।খুব করে জানতে চাই।এইভাবে আগামীতে স্মার্ট রাজনীতি করবেন?চালাইয়া যান।
এই সার্জিস ৫-ই জুন থেকে ফ্রন্টলাইনে থেকে কোটা আন্দোলন শুরু করেছে,যখন আপনাদের অনেকের খবরও ছিল না।এই কোটা আন্দোলনই পরবর্তীতে এক দফাতে রূপান্তরিত হয়েছে।এক দফার প্রেক্ষাপটই এই কোটা আন্দোলন।
এই সার্জিসকে ৫-ই জুলাই হল থেকে ছাত্রলীগ বের করে দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা গভীর রাতে অমর একুশে হল অবরুদ্ধ করে প্রতিবাদ করে।তাকে থ্রেট মনে না করলে ছাত্রলীগ হল থেকে বের করতো?সেদিন ঢাবির আমরা তাঁর উপর ভরসা রেখেছিলাম বলে তাকে সেভ করতে গভীর রাতে দৌড়ে গিয়েছিলাম।এই ঘটনাই মনে হয় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আমাদের প্রথম প্রতিরোধ।
এই সার্জিস আলম ❝ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদে❞ নিয়মিত ভিডিও আপলোড দিয়ে ঘুমিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আসতে অনুরোধ করতো।বাস্তবতা তুলে ধরতো।শিক্ষার্থীরা উৎসাহিত হতো।আজকে তাকে এক্স-লীগার বানাচ্ছেন।লজ্জা লাগে না?আপনাদের এমন নোংরা রাজনীতিকে আমি ঘৃণ্না করি।মন থেকে ঘৃণা করি।
এই সারজিসকে প্রতিদিন রাজপথে দেখেছি।ঢাবি সেন্ট্রাল লাইব্রেরি ও ঢাবি মেডিকেল খুলে দেওয়ার জন্য কী পরিমাণ চেষ্টা ও প্রেশার ক্রিয়েট করেছিল,তা আমরা স্বচক্ষে রাজপথে দেখেছি।বলে রাখি,লাইব্রেরি থেকেই আমরা সংগঠিত হতাম।শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ধর্মঘটের কারণে লাইব্রেরি বন্ধ রাখা হয়।এতে আমাদের সংগঠিত হতে কষ্ট হতো।এটাও ছিল একটা ষড়যন্ত্র।
সারজিসের বজ্র ও দীপ্ত কণ্ঠের স্লোগান দেখেছি।শাহবাগের তাঁর কণ্ঠের সাথে আমরা হাজারও শিক্ষার্থী কণ্ঠ মিলিয়েছি।আন্দোলনরত অবস্থায় শাহবাগ থেকে একদিন রাতে ৪ জন সমন্বয়ককে ডিসি নিয়ে যায়।নাহিদ-আসিফ-হাসনাত-সারজিস এই চারজনকে নিয়ে যায়।এটা শুনে আমরাও আরো তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলি।কই,তখনও তো সে আপোষ করেনি।
১৪ই জুলাই রাতে ❝রাজাকার,রাজাকার❞ স্লোগানের মিছিলের নেতৃত্ব দিয়ে মিছিলকে রাজুর সামনে এনেছিল।এই মিছিলগুলো তো আপনাদের কারো নেতৃত্বে হয়নি।আপনারা নেতৃত্ব দিলে বরং এসব মিছিল বের হতো না।আপনাদের এসব প্রতিহিংসার রাজনীতির মহাবিস্ফোরণ হবে।মিলায়া নিয়েন!
১৬ই জুলাই সারজিস-হাসনাতের নেতৃত্ব শহীদ মিনার থেকে ভিসি চত্বর লাঠি মিছিল করেছি।সে মিছিলের নেতৃত্বেও এই সারজিস ছিল।আমার স্পষ্ট মনে আছে।সেদিন ভাইকে মিছিল চলাকালীন সন্ধ্যার পর জগন্নাথ হলের সামনে আমি বলেছিলাম,'' ভাই! ভয় পাইয়েন না।আমরা আছি।" সারজিস ভাই বলেছিলেন,'' আরে বেটা!আমরা আছি।ভয়ের কিছু নাই।" এইটা বলে তিনি আমার হাতের লাঠি নিয়ে হাঁটা শুরু করেন।অনেক অনেক ক্যামেরা থাকায় আমি লাঠি ভাইয়ের হাত থেকে আবার ব্যাক নিয়ে নিই।আপনি ছাত্রদল করেন।আপনিও তখন এই সারজিসদের ডাকে রাস্তায় নেমেছেন।আর সেই নেতার সাথে ন্যাক্কারজনক আচরণ করলে আপনি মহাখুশি হন।আপনাকে আমার কিচ্ছু বলার নাই।আমারই বরং লজ্জা লাগতেসে!
১৭ই জুলাই ঢাবিতে কফিন মিছিলে পুলিশ হামলা করে।সে মিছিলে পুলিশের বাঁধার মুখে বসে পড়ে অগ্নিচক্ষু দিয়ে কীভাবে প্রতিবাদ করেছিল,সেটা আপনারা দেখেন নাই?প্রয়োজনে আমরা জীবন দেবো,তবুও হল ছাড়বো না।এই বক্তব্যও শুনেন নাই?আপনাদের এসব অকৃতজ্ঞ ও কৃতঘ্ন আচরণ দেখে আমার না ভীষণ লজ্জা লাগে।আমার এই কৃতজ্ঞ হৃদয় অত্যন্ত ব্যথিত হয়।
সারাদেশে এত এত নেতা থাকতে এই সারজিসকে(তথা আপনাদের মতে এই এক্স-লীগারকে)থ্রেট মনে করে ৬ জনের সাথে ডিবি পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যায়।আজ সেই সারজিসকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ট্যাগ দিচ্ছেন।আপনার বোধদয় কবে হবে?কবে আপনাদের ঘুম ভাঙবে?
৩ই আগস্ট এক দফার ঘোষণার দিন এই সারজিস শহীদ মিনারে নাহিদ ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়েছিল।উচ্চস্বরে স্লোগান দিয়েছিল।তারপরও ওরে স্পাই বানানোর জন্য স্ক্রিপ্ট বানাবেন?
৪ই আগস্ট এই সারজিসের ফেসবুক জাস্ট এক লাইনের একটি পোস্ট ❝ পরশু নয়,কালই লং মার্চ টু ঢাকা।❞ সারাদেশে কী পরিমাণ ইমফ্যাক্ট পড়েছিল,আপনারা দেখেন নাই? ৫০ হাজার+ মানুষ জাস্ট শেয়ার করে সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিল।আপনারা এখন অনেক বড় হনু হইছেন।তখন আপনারাও আন্দোলনের স্বার্থে তাঁর পোস্ট শেয়ার করেছিলেন।
৫ই আগস্টে সারজিসের অবদানের কথা আর না-ই বা বললাম।বলেও বা লাভ কী? আপনাদের চোখের সামনে-পিছনে অদৃশ্য পর্দা লাগানো।সুতরাং ওপেন-সিক্রেট জিনিসও আপনারা দেখবেন না।
[এরকম শত শত ইতিহাসের প্রত্যক্ষ সাক্ষী আমি।সব লিখার সময় হয়নি।আরেকদিন লিখবো।]
এই সারজিস নাকি আওয়ামীলীগের মন্ত্রীদের সাথে আঁতাত করেছে।হাস্যকর!আঁতাত করেও সে সারজিস ৪ তারিখে বলে,''পরশু নয়,কালই লং মার্চ টু ঢাকা।"হায়রে!
২৮শে অক্টোবরের পর আমান উল্লাহ আমান ভাইকে রাজপথে আহত করে হসপিটালে ফলমূলের ঝুঁড়ি নিয়ে শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী দেখতে যায়নি?বিজ্ঞ আমান সাহেব হাসিমুখে এসব গ্রহন করেননি?সমালোচনা হয়নি? তাই বলে আমান সাহেব হাসিনার বিশেষ সহকারীর সাথে ওপেন আঁতাত করেছিলেন? বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দাদাকে স্পেশাল বড় মাছ রান্না করিয়ে ডিবি হারুন তাঁর ভাতের হোটেলে খাওয়ায়নি?বাবু গয়েশ্বর রায় হাসিমুখে খাবার গ্রহন করেন নাই?করেছেন।তাই বলে তিনিও কী আঁতাত করেছেন?
ওহ হো!২৯ শে অক্টোবর ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে যুবদল সভাপতি সালাউদ্দিন টুকু সাহেব ❝আমরা সবাই জিয়ার সেনা,ভয় করিনা বুলেট বোমা❞স্লোগান দিচ্ছিলেন।অতঃপর দূর থেকে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নিজ কর্মীদের রেখে কীভাবে পালিয়েছেন,তা আমরা দেখি নাই? অথচ এই সার্জিসরা নিজ কর্মীদের রেখে মাঠ থেকে পালাইনি।বরং ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে হাসনাত-সারজিসরা বলেছিলেন,❝We are open to kill.❞
বলে রাখি-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক সকল শিক্ষার্থীকে বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগ করতে হতো।এইটা পুরো দেশবাসী জানে।আর এই বাধ্যগত ছাত্রলীগাররাই(যাদেরকে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার নিমিত্তে এক্স-লীগার বলে ট্যাগ দিচ্ছেন) ঢাবির হল থেকে ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করেছে।আপনারা করেন নাই।এখানে আপনাদের কোন অবদান নাই।আবাসিক শিক্ষার্থীরাই প্রতিটি হল থেকে ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করেছে।সুতরাং এসব ট্যাগিং,ট্যাগিং খেলা বন্ধ করুন।নাহয় অচিরেই প্রতিরোধের সম্মুখীন হবেন।
Du volunteers গ্রুপে সারজিস ভাইকে সবচেয়ে বেশি গালিগালাজ যারা করতো,তাদের মধ্যে আমিও একজন।এই বিপ্লবীকেও সম্মান করতে শিখুন।সম্মান করলে সম্মান পাওয়া যায়।অন্যথায় বাংলার মানুষের মনে আপনাদের বিরুদ্ধে চরমমাত্রায় বিষ জন্মাবে।এই বঙ্গে সুয়িং ভোটারের হারই সবচেয়ে বেশি।মনে রাইখেন!
তারপরও কী তাঁরা বুঝবে না?
যৌক্তিক সমালোচনা সহ্য করার দক্ষতা অর্জন করুন।অপবাদমূলক সমালোচনা পরিহার করুন।অতঃপর নিজেকে সংশোধন করুন।