09/08/2024
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সেশনজটমুক্ত, শিক্ষা ও গবেষণা সমৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করতে চবি শিক্ষার্থীদের ১০ দফার সাথে মিলিয়ে আমার প্রস্তাবনা
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন, ওশানোগ্রাফি বিভাগ, চবি।
১) কোনো বিভাগে সেশনজট থাকতে পারবেনা ★ প্রতি বছর নভেম্বর মাসের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে হবে। ★চূড়ান্ত পরীক্ষার ৩ সপ্তাহ পূর্বে টিউটোরিয়াল, প্রেজেন্টেশন শেষ করতে হবে এবং ৪ সপ্তাহ পূর্বে PL দিতে হবে। ★ মৌখিক (ভাইবা) পরীক্ষা শেষ হবার ৭৫ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করতে হবে। ★ শিক্ষকদের পরীক্ষার খাতা গ্রহন করার তিন সপ্তাহের মধ্যে মার্কসসহ জমা দিতে হবে। ★ পরীক্ষার একই খাতা দ্বিতীয় পরীক্ষণের নিয়ম বাতিল করে প্রশ্নের ৫০% মার্কস A ও ৫০% মার্কস B অংশ করে আলাদা দুইটা খাতায় A ও B এর উত্তর লেখার ব্যবস্থা করতে হবে। দুই অংশ ২ জন শিক্ষকের কাছে পাঠিয়ে ৩ সপ্তাহের মধ্যে সংগ্রহের ব্যবস্থা করলে রেজাল্ট তৈরি ও পাবলিশ করার সময়ক্ষেপণ কমে যাবে।
২) বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ভর্তি ফি,পরীক্ষা ফি সহ যাবতীয় আর্থিক লেনদেন অনলাইনে করার ব্যাবস্হা নিতে হবে। পরীক্ষার ফলাফল, ট্রান্সক্রিপ্ট ও মার্কসীট অনলাইনে অটোমেশন পদ্ধতিতে প্রণয়নের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩) আবাসিক হলগুলোতে Faculty Based Allotment দিতে হবে। কোনো প্রকার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চলবে না। ক্যাম্পাসে কোন রাজনৈতিক দলের কিংবা নেতার পোস্টার, ব্যানার, দেয়াল লিখন থাকতে পারবে না। ক্যাম্পাসে থাকবে বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও কবি সাহিত্যিকদের উৎসাহবেঞ্জক বানী, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ, স্কলারশিপ এর পোস্টার, ব্যানার ইত্যাদি।
৪) বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
৫) শাটলে পাওয়ার কার যুক্ত করতে হবে। আমাদের ডেম্যু ট্রেন ফিরিয়ে দিতে হবে/ ট্রেনের সিডিউল বৃদ্ধি করতে হবে। ছাত্রীদের জন্য ও শিক্ষকদের জন্য ২/১টা আলাদা বগি ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের ক্যাম্পাস ও শহরে যাতায়াতের জন্য সকালে শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে বিকেলে ক্যাম্পাস থেকে অফিস টাইম অনুযায়ী শুধুমাত্র একটা করে সিডিউল থাকবে।
৬) বিশ্ববিদ্যালয়কে "International Ranking" এ স্হান করে নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় Research, Publications করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ, বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। বিদেশী ছাত্রছাত্রী ভর্তি, দেশ বিদেশের বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ও গবেষক প্রয়োজনে চুক্তি ভিত্তিক/ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে করতে হবে। অনুষদ, লাইব্রেরী ও গবেষণা সেল এর মাধ্যমে নিয়মিত রুটিনমাফিক সেমিনার, ওয়ার্কশপ, কনফারেন্স ও ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের গবেষণা প্রজেক্টে ছাত্রছাত্রীদের গবেষণা সহকারী (পেইড) এবং সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে টিএ হিসেবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।
৭) "চাকসু" চালু করে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। রাজনৈতিক মতাদর্শে নির্বাচন করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে ক্লাস প্রতিনিধি নির্বাচন করবে ক্লাসের ছাত্রিছাত্রীরা, ক্লাস প্রতিনিধিরা বিভাগ/ইন্সটিটিউট প্রতিনিধি নির্বাচন করবে এবং বিভাগ/ইন্সটিটিউট প্রতিনিধিরা চাকসু ও হল প্রতিনিধি নির্বাচন করবে নির্বাচিতদের মধ্য হতে।
৮) বিভাগীয় একাডেমিক রুটিন অনুযায়ী ক্লাসে/পরীক্ষার হলে শিক্ষক যথাসময়ে ঢুকবেন, নির্ধারিত সময় পর্যন্ত উপস্থিত থেকে ক্লাস/পরিক্ষা শেষ করবেন। কারণবশত ক্লাস নিতে না পারলে রাতের মধ্যে CR দেরকে জানিয়ে দিবেন।
৯) ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ। জিরো পয়েন্ট ও ২ নং গেইটে নিরাপওা জোরদার করতে হবে। ক্যাম্পাসে অসামাজিক বেহায়াপনা ও অবাধে অসংলগ্ন মেলামেশা বন্ধ করতে হবে।
১০) সকল বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের জন্য একটা আলাদা কেন্দ্রিয় ল্যাব করার ব্যবস্থা করতে হবে যেখানে ন্যানোটেকনলজি থেকে শুরু করে রোবটিক্স, পরিবেশ, রসায়ন, সমুদ্র বিজ্ঞান ইত্যাদির সর্বাধুনিক ইনস্ট্রুমেন্টস, কেমিকেলস ও গবেষণার প্রয়োজনীয় ফেসিলিটিজ থাকবে। লাইব্রেরী ও ল্যাব ৭/২৪ ঘন্টা খোলা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
১১) এমফিল, পিএইচডি ও বিদেশী ছাত্রছাত্রী ও গবেষকদের জন্য আলাদা ডরমেটরী (পোস্টগ্রেড ডরমেটরী ও ইন্টারন্যাশনাল ডরমেটরী) করতে হবে।
১২) দেশে ও বিদেশে ছাত্রছাত্রীদের সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ ও ট্রেনিংয়ে অংশ গ্রহনের জন্য ট্রাভেল কস্ট এর বাজেট রাখতে হবে
১৪) গত ১২ বছরে রাজনৈতিক পরিচয়ে ও ডিও লেটারে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকদের যাদের ব্যাপারে ক্লাসে পারফরমেন্স, গবেষণা নিয়ে আপত্তি আছে এবং এখনও উচ্চতর ডিগ্রী নিতে পারেন নাই তাদের তদন্ত করে সত্যতা প্রমাণে অব্যহতি দিয়ে নতুন ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে
১৫) গত ১০ বছরে যেসকল শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন, বিশেষ করে চারিত্রিক, আচরণ, যৌন কেলেঙ্কারি ও রেজাল্ট টেম্পারিং এর অভিযোগ উঠেছিল, তাদের ব্যাপারে নতুন করে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি করে বিচারের আওতায় আনতে হবে
১৬) যেসকল কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়মিত অফিস না করে সমিতি, কমিটি ও রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং ছাত্রছাত্রীদের সাথে অসদাচরন করে, নিরধারিত অফিস টাইমে ডেস্কে থাকেনা তাদের আইডেন্টিফাই করে চাকুরী হতে অব্বহতি দিতে হবে।
১৭) শিক্ষকদের লাল/সাদা/হলুদ/নীল ইত্যাদি দলাদলিতে নির্বাচন বা ইলেকশনের ব্যবস্থা বাতিল করে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও পারফরমেন্স এক্সিলেন্স এর উপর ভিত্তি করে সকল পর্ষদে (ডিন, প্রভোস্ট, প্রক্টর, লাইব্রেরী, আইটি, রিসারস সেল, ষ্টেট, কলেজ পরিদর্শক ইত্যাদি) শিক্ষকদের দায়িত্ব দিতে হবে.
১৮) পিএইচডি, পিয়াররিভিউড জার্নালে নির্দিষ্ট সংখ্যক পাবলিকেশন্স এবং গবেষণা অভিজ্ঞতা ছাড়া ও রাজনৈতিক পরিচয়ে কিংবা ডিও লেটারে শিক্ষক নিয়োগ সম্পূর্ণ রুপে বন্ধ করতে হবে। শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ কমিটি সংশ্লিষ্ট নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ দিয়ে গঠন করতে হবে।
১৯) শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সমন্বয় ও মেলবন্ধনের সেতু হিসেবে শহরে "TSC" চালু করতে হবে। টিএসসি ফেসিলিটিজ তৈরি ও ব্যবস্থাপনা এলম্নাই এসোসিয়েশনের মাধ্যমে করার প্রস্তাব করছি।
২০) রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে করা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বা একাডেমিক বিল্ডিং এর নামকরণ পরিবর্তন করে বিশেষজ্ঞ, পন্ডিত, বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের নামে করতে হবে। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে বাংলা বসন্তে'র ২০২৪এর বৈষম্যমুক্তির যুদ্ধে যারা শহিদ হয়েছে তাদের সম্মানে বিশেষ করে চবির দুই বীর শহিদ এর নামে বর্তমানে/নিকট ভবিষ্যতে নির্মিত ভবনের নামকরণ ও তাদের জন্য সৃতি সৌধ করতে হবে ।
৯/৮/২০২৪