Childhood of Novelist

'আনন্দ মঠ' উপন্যাস লিখে রাজরোষে পড়েছেন, চাকরিতে বারেবারে বদলি করা হয়েছে,তবু ব্রিটিশরা দমাতে পারেন নি সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কে৷ উনিশ শতকে বঙ্কিম 'আনন্দ মঠ' লিখে পেয়েছিলেন ঘনঘন বদলির আদেশ৷ ৬ বছরে তিনি বদলি হয়েছেন ১৩ বার৷ ভাবা যায়! নিশ্চিত ভাবে রাজরোষের শিকার হয়েছিলেন৷ একথা দ্বিধাহীন চিত্তে বলা যায় ১৭৭০-এর মন্বন্তর নিয়ে 'আনন্দমঠ'-এর মত উপন্যাস লেখার সাহস ব্রিটিশদের চাকরি করা একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের বুকের পাটা আর স্বদেশপ্রেমের অসাধারণ মেলবন্ধন.....পড়ুন বিশেষ নিবন্ধ ধ্রুবতারাদের খোঁজে ।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে একটি বিশেষ ভূমিকা আছে রাজনৈতিক উপন্যাস আনন্দমঠের।
সমাজ সচেতন লেখক,প্রশাসক হিসেবে বঙ্কিমচন্দ্র জেনেছেন বাংলার দুর্ভিক্ষে মরে গিয়েছিলেন তিন কোটির মধ্যে এক কোটি মানুষ৷ নিজের সন্তান যেমন বিক্রি করেছে মানুষ ঠিক তেমন মানুষ মানুষের মাংস খেয়েছে৷ সেই বিষয়ে সরকারি উচ্চ পদের কর্মচারী নিশ্চয় প্রবন্ধ লিখতে পারেন না,তাই আড়াল নিয়েছেন উপন্যাসের, ইতিহাস উঠে এসেছে কালজয়ী সেই উপন্যাসে৷ যাবতীয় দ্বিধাদ্বন্দ্ব সত্ত্বেও মননে ইংরেজিয়ানার প্রবল বিরোধী বঙ্কিমচন্দ্র, আমরা 'ইংরেজদের দ্বেষক নই' বলেও তিনি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শিকার রামা কৈবর্ত ও রহিম শেখের পক্ষ নিয়েছিলেন৷

'আনন্দ মঠ' পটভূমি দুর্ভিক্ষ,শুরুতে মন্বন্তর৷ ১৮৭৯ তে বর্ধমান ডিভিসনের কমিশনারের পার্সোন্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট থাকার সময় বঙ্কিম ছুটি নিয়ে 'আনন্দ মঠ 'লিখতে শুরু করেন, ফ্রেবুয়ারি ১৮৮১ উপন্যাস রচনা শেষ হয়৷ বাকল্যান্ড,মেকলে,ওয়েস্টম্যাকট,বেকার প্রভৃতি ওপরওয়ালা ইংরেজ জেলা শাসকদের সাথে বঙ্কিমের নিরবচ্ছিন্ন বিরোধ লেগে থাকত,বেশ কয়েকবার তাঁর মনে হয়েছিল চাকরি ছেড়ে দিতে হবে৷ আর শেষ পর্যন্ত তিনি শাস্তিটা পেয়েছিলেন 'আনন্দ মঠ ' লেখার জন্য৷

© ধ্রুবতারাদের খোঁজে

'বঙ্গদর্শনে' 'আনন্দ মঠ' উপন্যাসের অংশবিশেষ প্রকাশিত হওয়ার পর ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দের ২৩জানুয়ারি মাত্র এক ঘন্টার সময় দিয়ে তাকে কার্যভার হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল৷ এই শাস্তি তাঁকে 'আনন্দ মঠ' এর জন্য পেতে হয়েছিল বলে মনে করা হয়৷ এই শাস্তির মূলে নাকি আছে এক অনাচারী ব্রিটিশ সেনাপতি টমাসের বিদ্রোহীদের হাতে বিধ্বস্ত হওয়ার কাহিনি! অবশ্য গবেষক, সমালোচকদের অনেকে বলেন তিনি 'বঙ্গদর্শনে' 'আনন্দ মঠ' প্রকাশিত হবার পরবর্তী কালে পাঠান্তর ঘটিয়েছেন,তাতে আসল উদ্দেশ্য কক্ষচ্যুত হয়েছে,সেজন্য তিনি সমালোচক,গবেষকদের তাঁর ভাবনা-চিন্তা সম্পর্কে নতুন করে ভাবার রসদ জুগিয়েছেন৷
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে

অষ্টাদশ শতকের অন্তিম লগ্নে অর্থাৎ ১৭৯৩ সালের পয়লা মার্চ চালু হয়েছিল চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত৷ বাংলার প্রধান ব্যবসায়ী কেন্দ্র হল কলকাতা,উনিশ শতকে ইংরেজি শিক্ষা প্রসার হল,তবে শিক্ষিত বাঙালি কিন্তু ইংরেজের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে চায়নি,উনিশ শতকের পঞ্চাশ—ষাটের দশক থেকে কাব্য,নাটক,স্বাধীনতার আকাঙ্খা প্রকাশ,বিংশ শতকের গোড়ায় এসে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য বাঙালির অস্ত্রধারণ৷ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'আনন্দমঠ' স্বদেশের মানুষের স্বাধীনতার স্পৃহা,ভারতীয় জাতীয়তাবাদ উদ্বুদ্ধ করেছিল। 'আনন্দ মঠ' বাংলা সাহিত্য ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক মাইলফলক। আজ সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণ দিবস, আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সংকলনে - Arunava Sen
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে












গ্রন্থঋণ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার,উনিশের কথা সাহিত্যে বাঙালির বীরত্ব,ইমানুল হক

ইটের পরে ইট, মাঝে মানুষ-কীট।

#রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
শুভ সকাল 💕

Welcome to my page