
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপযোগী ও ক্ষতিকারক। এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা যদি আমাদের বাংলাদেশে বহাল থাকে তবে আমাদের সন্তানদের জন্য তা হুমকিস্বরূপ। এমতাবস্থায় সকল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে তারা নিজ নিজ জায়গা থেকে স্বৈরাচারী সরকার কর্তৃক প্রণীত বিগত শিক্ষার্থী ধ্বংসকারী জাতীয় শিক্ষাক্রম ও রুপরেখা-২০২১ বাতিলের দাবির পাশাপাশি নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতিও জোর দাবি জানাচ্ছি -
১. অবিলম্বে জীবন ও জীবিকা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি এই বইগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। বার্ষিক পরীক্ষায় এই বইগুলো থেকে কোনো ধরনের পরীক্ষা নেওয়া যাবে না।
২. স্কুলের শিক্ষক কোন ভাবেই তার নিজ স্কুলের শিক্ষার্থীদেরকে পড়াতে পারবেন না। নিজের কাছে পড়তে জোর করতে পারবেন না। তাদেরকে কোন ধরনের মানসিক চাপ প্রদান করা যাবে না। শিক্ষকদের এই প্রহসন মূলক আচরণ এবং তাদের ক্ষমতা প্রদর্শন অবিলম্বে আইন করে বন্ধ করতে হবে। একই সাথে শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টিও বাস্তবায়ন করতে হবে।
৩. মূল্যায়ন পদ্ধতি স্বচ্ছ হতে হবে। স্বচ্ছতা ধরে রাখার জন্য প্রতিটি স্কুল তার পার্শ্ববর্তী স্কুলের খাতার মূল্যায়ন করবে; যেখানে শিক্ষার্থীর কোন নাম থাকবে না। প্রতিটি শিক্ষার্থীর একটি ইউনিক কোড থাকবে যা ওই শিক্ষার্থীর পরিচয় বহন করবে। এ কোডটির মাধ্যমেই সে তার ফলাফল জানতে পারবে। এতে করে শিক্ষার্থীর খাতা মূল্যায়নের কোন ধরনের পক্ষপাতিত্বের ঘটনা ঘটবে না।
৪. অনতিবিলম্বে একটি পাঠ্য বই পরিমার্জন কমিটি গঠন করতে হবে। পাঠ্যবই পরিমার্জন কমিটির সদস্য কারা হবেন বা কারা হচ্ছেন সকলকে জানাতে হবে। কমিটিতে যারাই আসছেন তাদের পদবী এবং যোগ্যতা সংযুক্ত করে তাদের নাম প্রকাশ করতে হবে।
৫. প্রতিটি স্কুলে অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষা বোর্ড বা NCTB এর সমন্বয়ে একটা করে আদর্শ ও কার্যকরী কমিটি গঠন করা যার মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ২ বছর এবং একই ব্যক্তি একের অধিক বার কমিটিতে থাকতে পারবে না এবং জেলা শিক্ষা অফিসার কর্তৃক প্রতিটি জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রিত হবে। স্কুল ভিত্তিক কমিটিতে স্কুলের শিক্ষার্থী সংখ্যার উপর ভিত্তি করে কমিটি সংখ্যা নির্ধারণ করবে যথাযথ কর্তৃপক্ষ।
৬. জেলা শিক্ষা অফিসারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যক্রম স্বয়ং এনসিটিবি পর্যবেক্ষণ করবে।
৭. এসাইনমেন্ট, দলগত কাজ, বন্ধুখাতা তৈরি, প্রজেক্ট এর নামে শিক্ষার্থীদের যে হয়রানি করা হচ্ছে সেটা বন্ধ করতে হবে এবং বার্ষিক পরীক্ষার সিলেবাস শিক্ষার্থী উপযোগী হতে হবে। না পড়িয়ে অতিরিক্ত পড়া চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। বার্ষিক পরীক্ষা পূর্ণ ১০০ নাম্বারের পরীক্ষায় হবে, শিক্ষকদের হাতে কোন নাম্বার রাখা যাবে না। এজন্য ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও শিখনকালীন মূল্যায়ন বন্ধ করতে হবে। কারণ, শিক্ষকদের হাতে নাম্বার থাকলে তারা বিভিন্ন ভাবে শিক্ষার্থীদের মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি ভয় ভীতি প্রদর্শন করে যা শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য বাধা।
৮. আগামী বছর থেকে ৯ম শ্রেণীতে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক এই তিন বিভাগ পুনরায় বহাল রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই বর্তমান ভঙ্গুর শিক্ষাক্রম আগামী বছর আসতে দেয়া যাবে না। একই সাথে বাংলা ও ইংরেজি গ্রামারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে বাধ্যতামূলকভাবে ৫ম ও ৮ম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষা চালু করতে হবে এবং পূর্বের তুলনায় বেশি সংখ্যক বৃত্তি প্রদান করতে হবে। প্রয়োজনে সীমিত পরিসরে ফি নেওয়া যাবে। তবে সেটা কোন ভাবেই ২০০ এর বেশি হওয়া যাবে না।
৯. শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে নম্বর ও সিজিপিএ ভিত্তিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ফলাফল সিজিপিএ -৪ আকারে প্রকাশ করতে হবে। পরীক্ষায় পাশ মার্ক হবে ৪০ এ। এতে করে শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপুর্ন বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে শিখবে।
১০. কোনো অবস্থাতেই শিক্ষার্থীদেরকে অটোপাশ দেয়া যাবে না। কারণ, অটোপাশ শিক্ষার্থীদের প্রকৃত শিক্ষার অন্তরায়।
১১. প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মাউশি, NCTB মিলে সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য একই ধরণের সিলেবাস, একই সময়ে এবং একই রুটিনে সবার পরীক্ষার ব্যবস্থা করা। এতে সমগ্র দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য থাকবে না।
আমাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ আমাদেরই গড়তে হবে। তাই আসুন সকলে মিলে শিক্ষা নিয়ে যারা ব্যবসা করে, শিক্ষাঙ্গনকে যারা কলুষিত করে, শিক্ষাব্যবস্থাকে যারা ধ্বংস করে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।
💖
#বাংলাদেশ শিক্ষা সংস্কার
#সচেতন অভিভাবক সমাজ
#সচেতন শিক্ষক সমাজ
#সচেতন নাগরিক সমাজ
#বৈষম্য বিরোধী শিক্ষা আন্দোলন