্সপার্ট_মুজরা_স্যার_২৪
গতকাল স্বপ্ন আউটলেট থেকে বের হবার সময়ই মোবাইলে ম্যাসেজ-
❝কাল সকালের নাস্তা আমাদের সাথে, বাবা বলেছেন।
-ঝুনঝুনি!❞
সকাল সকাল হাজির হয়ে দেখি টেবিলে নাস্তা নিয়ে বসে আছেন মুজরা স্যার আর তার বা পাশে ঝুনঝুনি। আমাকে দেখেই-
: ইয়াং ম্যান! গুড মর্নিং!
: মর্নিং স্যার, কেমন আছেন?
: আমি ভালো আছি। কিন্তু তুমি যে ভালো নেই তা তো বুঝতেই পারছি!
: কি যে বলেন স্যার!
: দেখ, মানুষের সামনে নতুন অপরচুনিটি এলে মানুষ অস্থির হবে এটাই স্বাভাবিক। সেই অপরচুনিটি চাকরি হোক, প্রেম ভালোবাসা হোক কিংবা শেখার অপরচুনিটি হোক।
: অপরচুনিটি তো ভালো ব্যাপার, তাই না স্যার?
: তা তো অবশ্যই। তবে ডিসিশন নেবার ক্ষেত্রে ভালোভাবে বুঝে নেয়া দরকার। অনেক সময় আর্টিফিশিয়াল ব্যাপার দেখে আমাদের চোখে ধাঁধা লাগে। দারুন বেতন, দারুন অফিস, মর্ডান গেট আপের ছেলে-মেয়ে এমিন অনেক কিছু দেখে অস্থির লাগে। ডেস্কটপে দেখা দারুন ছবি দেখেই কম্পিউটারটা ভালো এটা ভাবার কারন নেই। ইংরেজি জানা মানুষের কাছে অনেক কিছু শেখার আছে কে বললো!
গতকাল টুনটুনি আর তার বাবার সাথে পুরো কথোপকথন পিছনে দাঁড়িয়ে ঝুনঝুনি আর মুজরা স্যার শুনেছে বোঝাই যাচ্ছে। আমি ঝুনঝুনির দিকে তাকালাম। সে নাস্তার শুন্য প্লেটের দিকে মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে। মুজরা স্যার আবার বললেন-
: জীবনে কিছু কিছু ব্যাপারের এক্সপেরিয়েন্স নিজেকেই গেদার করতে হয়। সব কিছু কেউ হাত ধরে শেখালে ডিপেনডেন্সি বাড়তে থাকে। বাজারটা তুমি করতে করতেই শিখে যাবে। এর জন্য উচ্চতর ট্রেনিং এর প্রয়োজন আছে? আর ইংলিশ? তা তুমি অনেক ভালো জানো বলেই আমি বিশ্বাস করি।
: না স্যার আসলে ইয়ে মানে....
: নাও, নাস্তা করো, আমি একটু উপর থেকে আসছি।
মুজরা স্যার চলে গেলেন দোতালায়। আমি আর দুজনেই চুপ করে আছি। এভাবে কিছুক্ষন বসে থেকে উঠে চলে এলাম। গলি থেকে বের হয়ে মেইন রোডে আসতেই মোবাইলে ম্যাসেজ-
❝অনেক মানুষ খুঁজে খুঁজে তাদের সারাজীবন পার করে দেয় যা আমি আপনার মধ্যে দেখেছি। শুধু এটুকু বলতে পারি, আপনার আর নতুন করে কিছু শেখার প্রয়োজন নেই।
-ঝুনঝুনি❞
ম্যাসেজটা পড়তেই বুকের ভেতর একটা চিলিক খেলে গেলো মনে হলো। ঠিক তখনি কে যেনো বললো-
: হেই.... য়ু! গুড টু সি ইয়ু এগেইন.... চলুন না কোথাও বসি।
অজান্তেই আমার মুখ দিয়ে বের হয়ে এলো-
: হাই... টুনটুনি!
ে_লয়_ব
Muzra Sir The HR Expert
Mr. Muzra Unoshottor
Ex-B.logist, Ex-MPO, Negotiator,
Admin Expert, Manobetor HR Consultant &
Fathe
Operating as usual
্সপার্ট_মুজরা_স্যার_২৩
বাজার করাটা আমার জন্য খুবই মুশকিল একটা কাজ। ঠেকায় পড়ে যেদিন বাজার করতে হয় সেদিন যেন আমার সতীনের সংসার! আজকেও বাজার করতে এসেছি। ভদ্রলোকের বাজার স্বপ্ন আউটিলেটে। লিস্ট ধরে ধরে জিনিসপত্র নিয়ে এখন টয়লেট এর জিনিসপত্রের জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছি। আসলে আমি নিজের জন্য গা মাজনি খুঁজছি। বাথরুমে যেহেতু এটা থাকে তাহলে নিশ্চয়ই হারপিক টাইপ জিনিসের কাছাকাছিই থাকবে। কাওকে জিজ্ঞাসা করতেও লজ্জা লাগছে। একটা পুরুষ গা মাজনি খুঁজছে ব্যাপারটি ঠিক যায় না। ইংরেজিতে এর নামটা কি হবে? বডি সোবা?
অনেক খুঁজে না পেয়ে নিচে নেমে এলাম। শুধু মুরগীটা বাকি। বেকারি দোকানে সাজানো কেকের মত এরা উলঙ্গ মুরগী সাজিয়ে রেখেছি। আমি আংগুল দিয়ে ইশারা করে বললাম-
: আমাকে হিজাব ছাড়া একটা দেশী মুরগী দিন তো।
সেলসম্যান টা আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। এমন সময় পাশ থেকে একটা কন্ঠ পেলাম-
: ওটা ড্রেসড চিকেন।
তাকিয়ে দেখি আধুনিকা এক মেয়ে। পরনে জিন্স, গায়ে কালো টি-শার্ট, কানে ছোট ঝুমকা, হাতে কচুরিপানার প্রসেসড চুড়ি পায়ে স্নিকার্স, কাঁধ ছাড়ানো চুল, লম্বা চিবুক, চিমটিকাটা গাল আর ফিগারটা... আচ্ছা, একটু দম নেই! বললাম-
: ওয়াও! ভালো নাম তো! ড্রেসড মানে পাস্ট টেন্স মানে আগে ড্রেস ছিল! আচ্ছা? ইংরেজিতে গা মাজনি কে কি বলে? ইয়ে মানে ব্যাপারটা জানা ছিলো না বলে কাওকে জিজ্ঞাসা করতে পারিনি!
: ওটা বাথ স্পঞ্জ।
আমি আরেকবার ভালো করে তাকালাম তার দিকে। দারুন দেখতে। হঠাৎ পিঠে হাত পরলো। এক ভদ্রলোক। বললেন-
: বাবাজী! সহসা বাজার করো না বলে মনে হচ্ছে?
: জ্বী ইয়ে মানে দরকারে তো করতেই হয়।
: সে তোমার ট্রলি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তেল নিয়েছো পাঁচ লিটার আর বাকি সব নিয়েছো মিনিপ্যাক! প্রতি সপ্তাহে বাজার করবে নাকি?
: আরে তাইতো! আসলে কতটুকু লাগবে তা বুঝতে পারিনি।
: হুম, শুধু বাজারে না তোমার তো দেখি ইংরেজিতেও সমস্যা!
: শেখার তো শেষ নেই আংকেল....
: বাসা কোথায় তোমার বাবাজী?
: এইতো পাশেই।
: আমার চার নাম্বার রোডের আঠারো নাম্বার বাসা। চলে এসো। আমার মেয়ে বাজার আর ইংলিশ দুটোতেই এক্সপার্ট!
: উনি আপনার মেয়ে?
: হ্যা, এ আমার একমাত্র মেয়ে টুনটুনি। বিকেলে চলে এসো!
: জ্বী জ্বী, অবশ্যই। আলতুফালতু জিনিস শেখার থেকে ইংলিশ শেখা অনেক ভালো। অবশ্যই আসবো আংকেল।
: ওকে বেটা, সি ইউ দেন। চল মা টুনটুনি...
উনারা চলে গেলেন। যাবার আগে টুনটুনি ডান হাতের তিন আংগুল নেড়ে বাই দিয়ে গেলো। আমিও হাত তুলে বাই দিলাম। কাউন্টার থেকে প্যাকেট নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঝুনঝুনি! তার পেছনে চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকা মুজরা স্যার! আমার হাতে তখন পিস পিস কাটা একটা দেশী হিজাব ছাড়া মুরগী!
ে_লয়_ব
্সপার্ট_মুজরা_স্যার_২২
ঝুনঝুনির সাথে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম। ওর লাল জামাটা আমার ভেতরের ষাড়টাকে বার বার নাড়া দিচ্ছিলো। না থাকতে পেরে বলেই ফেললাম-
: ঝুনু! এখন তো চাঁনরাত! চলুন না একটু ঘুরে আসি।
: না না, বাবা গরু আনতে গেছেন। এসে যদি দেখেন আমি নেই, নির্ঘাত আপনাকেই সন্দেহ করবে।
: আরে না, স্যার এত সহজে গরু পাবেন না। উনাকে কেউ গরু দিলে তো...
: কি বললেন?
: না ইয়ে মানে...
এমন সময় এক পাগলাটে গরু নিয়ে গেইটের ভেতরে ঢুকলেন মুজরা স্যার। আমাকে দেখেই মুজরা স্যার বললেন-
: ইয়াং ম্যান! দেখ কেমন তেজি গরু!
: তেজি কোথায় স্যার? ওর তো মেজাজ খারাপ।
: মেজাজ খারাপ মানে? তেজ আর মেজাজ খারাপ কি এক হলো?
: তেজ কথাটা তো অন্য ব্যাপার স্যার। এই গরু তো কাছে যেতেই দিচ্ছে না। কোন না কোন ভাবে তার মেজাজ খারাপ। ওকে মোটিভেশনাল স্পিচ দিতে হবে স্যার।
: গরুকে মোটিভেশনাল স্পিচ! আর ইয়ু ম্যাড?
: স্যার বোঝার চেষ্টা করুন।
: তুমি বলতে চাইছো আমি ভুল বুঝছি!
: না না না স্যার, আপনি যেহেতু বলছেন তেজ তাহলে তো অবশ্যই। গরু মানুষের সাথে তেজ দেখাবে কেনো! গরু তেজ দেখাবে গরুর সাথে। সজাতির সাথেই তো তেজ ব্যাপারটা আসে তাই না।
: হোয়াট! ইয়ু ব্লাডি গোট! আমাকে গরু বলছো? এই শিং দেখেছো? এদিয়ে গুতা দিয়ে তোমার মাথা নামিয়ে দেব। আমাকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা! এই ঘরে চাপাতি আছে?
: চা খাবেন স্যার? লিকার চা?
: শাট আপ ইয়ু ইডিয়েট। চাপাতি দিয়ে আজ তোকে....... ষ্টুপিড কোথাকার...... ওরেহ....
মুজরা স্যার বুকে হাত দিয়ে মাটিতে বসে পরেছেন। ঝুনঝুনি দৌড়ে এসে বললো একটা এম্বুলেন্স ডাকতে। এই চাঁনরাতে আমাদের ডেটটা বুঝি এম্বুলেন্স এর ভেতরেই হবে! আমি ছুট দিলাম এম্বুলেন্স খুঁজতে।
এম্বুলেন্স এর প্যা পু সাউন্ডটাকে সানাইয়ের সাউন্ড ভাবলে কি খুব মন্দ হবে!
ে_লয়_ব
্সপার্ট_মুজরা_স্যার_২১
এক সপ্তাহের জীবনে টানা ৯ দিন ঈদের বন্ধের আজ প্রথম দিন। কারাটে ক্লাসও নেই, ভাবলাম আজ সকাল সকাল ঝুনঝুনির সাথে দেখা হলে মন্দ হয় না! যেই ভাবা অম্নি উড়ে চলে এলাম। গেট দিয়ে ঢোকার সময় দেখি একতলার বারান্দায় দোলনায় অন্যমনস্ক। আমি বারান্দার রেলিং এর এপাশে দাঁড়িয়ে বললাম-
: মন খারাপ?
: আরে আপনি! কেমন আছেন? কখন এলেন!
: এইতো মাত্র, আপনার কথা মনে হলো সকাল সকাল। তা আপনার মুড অফ কেনো?
: বই পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু কোনটা পড়বো ডিসাইড করতে পারছি না।
: এতো কনফিউশান যেখানে সেটা না পড়ে অন্য কিছুতে মন ফেললেই হয়...
: মানে?
ঝুনঝুনি দোলনা থেকে উঠে রেলিং এর এপাশে এসে দাঁড়ালো। আমাদের মাঝে শুধুই একটা রেলিং.... আমি বললাম,
: বই পড়তে না চাইলে... প্রেমে পড়তে পারেন!
: শুনুন, পড়ে যাওয়ায় আমার খুব ভয়, পড়ে গেলে সব ভেঙে যায়।
: একবার পড়েই দেখুন না... হতে পারে আমরা নিচে না পড়ে দূরে উড়ে গেলাম!
হঠাৎ মুজরা স্যারের আওয়াজ পেলাম...
: কে উড়তে চাইছে রে!
: স্লামালিকুম স্যার!
: আরে ইয়াং ম্যান! তোমার মুখে সুন্নত রেখেছো দেখছি! নাকি ফ্যাশন?
: ইয়ে মানে স্যার নরসুন্দর এর কাছে যাওয়ার সময় পাচ্ছি না...
: সে সময় পাচ্ছো না কিন্তু সকাল সকাল আমার মেয়ের কাছে ঠিকই চলে এসেছো! এই হচ্ছে তোমাদের এইচআর দের সমস্যা! যেখানে ফোকাস করা দরকার তার উল্টো দিকে বসবাস।
: না মানে স্যার এইদিক দিয়েই....
: খুব বুঝেছি আমি। আচ্ছা বলো তো, নতুন কোন এম্পলয়ী জয়েন করে যদি জানতে চায় সে যদি আরো একটা মাস্টার্স করে তাহলে সে দ্রুত প্রমোশন পাবে কি না, এর জবাব কি হওয়া উচিত?
: জানি না স্যার!
: একজেক্টলি! তোমরা এইচ আর এর কিছুই জানো না। সব কিছু বসদের জিজ্ঞাসা করে নিয়ে বলো। আর জানবে শিখবেই বা কেমন করে? তোমাদের বসগুলোও তো কিচ্ছু জানে না। গত ৫ বছরেও একটা ট্রেনিংও করেনি, একটা আর্টিকেল ও পড়েনি। পড়ালেখার যে ভ্যালু আছে তাও জানে না। ইন্টারভিউ বোর্ডে দুইফোঁটা ইংলিশ ফোটালে যারা মনে করে এরা যোগ্য সেইসব বসের আন্ডারে থেকে কি শিখবে? ইদানিং তোমরা অনার্স পাস করাদের প্রমোশন দিয়ে দিয়ে এত উপরে তুলে ফেলেছো যে আর মাস্টার্স এর ওজন তোমরা জানো না! লজ্জা লাগে না নিজেকে এইচ আর প্রফেশনাল বলতে?
মুজরা স্যার বকবক করেই যাচ্ছেন। আমি ফুটপাত ধরে হাঁটছি। সকাল সকাল কি ভেবেছিলাম আর কি হয়ে গেলো। মুজরা স্যার আর একটু পরে এলে কি ক্ষতি হতো! আমাকে দেখলেই উনার কি হয়! হঠাৎ পকেটে টুং করে শব্দ হলো। ঝুনঝুনির ম্যাসেজ, "উড়ে যাবার ব্যাপারটা নিয়ে আলাপটা কিন্তু শেষ হয়নি আমাদের!"
ে_লয়_ব
্সপার্ট_মুজরা_স্যার_২০
বেশ কয়েকদিন হলো ঝুনঝুনির সাথে দেখা হয় না। মোবাইলে ম্যাসেজ লিখে কি আর সব পোষায়! এই বিকেলের রোদে একটু দেখা হলে মন্দ কি। চলে এলাম মুজরা স্যারের বাড়ির গলিতে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে দোতালার ছাদের সামনের দিকটায় লেবু গাছটার পাশ ঘেসে দাড়িয়ে আছে ঝুনঝুনি। আমাকে দেখেই হাত নাড়িয়ে ইশারা করে ছাদে উঠে আসতে বললো। আমি যেন উড়ে এলাম ছাদে! ছাদে উঠেই লেবু গাছটার দিকে যাচ্ছি, তখনি ঝুনঝুনি বললো-
: এই! আমিতো এখানে, ওদিকে কোথায় যাচ্ছেন?
: লেবু গাছটা দেখতে যাচ্ছি।
: কেনো বলুনতো?
: যেটুকু সময় গাছটার পাশে দাড়িয়েছেন তাতেই এই গাছের সব পাতা মিষ্টি হয়ে যাবার কথা! এই গাছে লেবু ধরার সম্ভাবনাই নেই। গোলাপি মালটা ধরবে সত্যি!
: একটু বেশি বেশি হয়ে গেলো না!
: এই হালকা গোলাপি জামায় আপনাকে খুব মিষ্টি লাগছে আজ। কালো টিপটা খুলে ফেলেছেন কেনো?
: ইম্প্রেসিভ! আপনার ডেভেলপমেন্ট দেখে ভালো লাগছে। টিপের ব্যাপারটা কিভাবে ধরলেন?
: ছাদের দরোজায় সেঁটে আছে দেখলাম। এই যে, বুক পকেটে নিয়ে রেখেছি!
: আমি অভিভূত! শুনুন, আজ বাবার মুড খুব ভালো। খেয়াল রাখবেন যেন আপনার কথায় রেগে না যায়।
: কেন বলুন তো?
: পাশাপাশি থেকে আপনার ডেভেলপমেন্ট গুলো জানতে ইচ্ছে করছে খুব।
হঠাৎ মনে হলো দু ইঞ্চি উপরে উঠে গেছি! ঝুনঝুনি আমাকে পাশে চায়! আহা! ঠিক তখনি মুজরা স্যারের কন্ঠ পেলাম-
: কার ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কথা বলছিস রে মা? এই! ইয়াং ম্যান! আসলেই তো তোমার ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে! সরাসরি ছাদে উঠে এসেছো!
: ইয়ে না মানে স্যার.... ডেভেলপমেন্ট খুব জরুরি। প্রপার ট্রেনিং ছাড়া ডেভেলপমেন্ট কি সম্ভব? আমি অফিসেও এসব নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি।
: তা ইয়াং ম্যান তুমি রিসেন্টলি কয়টা ট্রেনিং করেছো শুনি? মা, ওই চেয়ারটা দে তো..
: স্যার আমার কি আর ট্রেনিং করার বয়স আছে? ওসব করবে জুনিয়ররা। তাও আবার খরচের ব্যাপার। ট্রেনিং দিলেই তো ভালো চাকরি খুজবে, চলে যাবে। তার চেয়ে বরং বকাঝকা দিয়ে কাজ করালেই ডেভেলপমেন্ট হবে।
: বলে কি! এই ছেলে বলে কি! এ নাকি আবার এইচ আর! দেখেছিস ঝুনঝুনি? এদের জন্য আজকে এইচ আর এর এই অবস্থা।
মুজরা স্যার চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়েছেন। ঝুনঝুনি আমাকে ইশারা করে চুপ থাকতে বললো। ঠিক তখনি মুজরা স্যার বললেন-
: ডেভেলপমেন্ট নিয়ে একটা কথা মনে পরলো, মাস ছয়েক আগে তুমি তোমার ব্যাগ মনে করে আমার এক ব্যাগ আন্ডারওয়্যার নিয়ে দৌড় দিয়েছিলে। সেগুলো লন্ড্রিতে দেয়ার জন্য রাখা ছিল। কি করেছো সেগুলো? ডেভেলপমেন্ট কি?
: ডেভেলপমেন্ট? হ্যা ইয়ে অবশ্যই। সেগুলো দরজির দোকানে দিয়েছি স্যার। দরজি খুব মনোযোগ দিয়ে ডেভেলপমেন্ট করছে। কোনটার সামনে চেইনওলা পকেট, কোনটার পেছনে ব্যাকপকেট আবার কোন আন্ডারওয়্যার এর সামনে বুকপকেট দেয়া হচ্ছে স্যার। রেভ্যুলেশনারী ডেভেলপমেন্ট নিয়া আসা হচ্ছে স্যার৷ আপনি একদম চিন্তা.....
আমি উর্ধশ্বাসে ছুটছি এম্বুলেন্স আনতে। মুজরা স্যার রাগে জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলেছেন। জ্ঞ্যান হারাবার আগে যে শেষ কথাটা বলেছেন তা হলো, এই গর্ধভগুলোই এইচ আর এর মানসন্মানের ব্যাকপকেট-বুকপকেট করে দিচ্ছে!"
ে_লয়_ব
্সপার্ট_মুজরা_স্যার_১৯
ঘটনাটা মাস ছয়েক আগের। সেবার আমার প্রমোশন হলো। ভালো খবর প্রথমেই খুব প্রিয় কাউকে জানাতে হয়। এক্ষেত্রে ঝুনঝুনিকে না জানালে আর কাকে জানাবো! যদিও লেটার পেয়েই ম্যাসেজ লিখে করে জানিয়েছিলাম। সন্ধ্যায় ওর পছন্দের মিষ্টি আর লাড্ডু নিয়ে হাজির হলাম মুজরা স্যারের বাসায়। বসার ঘরে ঢুকতেই দেখি মুজরা স্যারের সামনে একটা ফিটবাবু বসে আছে। ঝুনঝুনি আমাকে দেখে এগিয়ে এসে কানে কানে বললো, "কংগ্রাচুলেশনস, বাবা কে কিন্তু কিছু বলিনি"! ঠিক তখনি মুজরা স্যার আমার দিকে তাকিয়ে হাক দিলেন-
: ইয়াং ম্যান! এসো এসো, পরিচয় করিয়ে দেই! এ হলো বাকুড় লস্কর। খুব ব্রিলিয়ান্ট এইচ আর পারসোনালিটি। আর বাকুড়, এ হলো আমার শিষ্য। ওর নামটা গোলমেলে তাই ইয়াং ম্যান বলে ডাকি। আর বাকুড় আজ প্রমোশন পেয়ে এইচ আর ম্যানেজার হয়েছে!
বেকুব ইয়ে মানে বাকুড় সাহেব খুব তাচ্ছিল্যের সাথে আমার দিকে তাকালো। আমিও ঠোঁট উলটে বললাম কংগ্রেস! মুজরা স্যার আমাকে পাশে বসিয়ে বাকুড়ের সাথে আলাপ জুড়ে দিলেন-
: তা বাকুড়, বলো দেখি এই যে প্রমোশন পেলে এতে তোমার ওয়ার্ক লাইফে কি কি চেঞ্জ আসলো?
: অনেক কিছু স্যার! নতুন ভিজিটিং কার্ড হবে, মোবাইল সিলিং বাড়বে, জুনিয়ররা সন্মান করবে, আমি ওদের ভুল ধরে ইচ্ছামত বকা দিতে পারবো। ওদের মোবাইলে কল আসলে আমি ডাক দিলেই লাইন কেটে আমার কাছে আসতে হবে, আমার সামনে দাঁড়ায় দাঁড়ায় কথা শুনবে, আমি না বলা পর্যন্ত বসবে না, আমি যত রাত পর্যন্ত অফিসে বসে থাকবো ওরা আমার জন্য বসে থাকবে!
: বাকুড় বাকুড়... এসব না, আমি জানতে চাচ্ছি এই যে তুমি একটা ডিপার্টমেন্ট এর হেড হলে, এখন তোমার কি কি নতুন অথরিটি আসলো?
: স্যার, আমি এখন থেকে ম্যানেজারদের বাথরুম ইউজ করতে পারবো। আগে তো জুনিয়রদের জন্য বানানো কমন বাথরুম ইউজ করতাম!
: মানে! ম্যানেজার হলে কি টয়লেটে গিয়ে উল্কাপিণ্ড বের হয়? ম্যানেজারদের জন্য আলাদা বাথরুম মানে?
: থাক স্যার, অন্য কিছু বলেন৷ আমি খুব এক্সসাইটেড এই প্রমোশন এ।
: স্বাভাবিক! তা তোমার কাজ কি কি বাড়লো?
: বাড়লো কই স্যার! এখনতো শুধু মেইল ফরোয়ার্ড করে কাজ করাবো৷ নিজে কাজ করলে অন্যদের ভুল ধরবো কখন? এখন তো মিটিং করেই সময় চলে যাবে৷ মিটিং এ অনেক নাকি ডিস্কাসন হয়। আগে দেখেছি, বসগুলো মিটিং করে সারাদিন। একটু পর পর দেয়াল কাঁপানো হাসি, তারা সন্ধ্যা হলেই অফিসের খরচে মিটিং এর নামে মজার মজার খাবার খায় আর অফিসে অন্য যারা বসে থাকে তারা জুনিয়র বলে কিছুই পায় না। এবার আমিও মিটিং করবো।
: এসব কি বলছো বাকুড়! প্রমোশন মানে নতুন কাজ হাতে পাওয়া, নতুন অথরিটি হাতে আসা, জবাবদিহিতা বেড়ে যাওয়া, অন্যদের শেখানোর দ্বায়িত্ব বেড়ে যাওয়া, নেক্সট পারসন কে রেডি করা যাতে সে এক সময় তোমার জায়গায় আসে আর তুমি আরো উপরে ওঠো! এই হলো প্রমোশন এর মানে। আর তুমি এসব কি বলছো?
: কি বলেন স্যার! ছয় ছয়টা প্রমোশন পেয়ে ম্যানেজার হয়েছি। প্রতিটা পজিশনেই একই কাজ করেছি। নতুন কাজ বলে তো কিছুই পাইনি! জুনিয়র থাকার সময় বস ফটোকপি করাতো, এখনো করায়। তখনও তার পারসোনাল কাজ করে দিতে হতো, এখনো করায়, তখনও তাকে জিজ্ঞেস না করে কিছুই করা যেতো না, এখনো তাই। অফিস মানে তো এমনই! আর জুনিয়ররা কিছু শিখে ফেললেই তো মুশকিল! জুনিয়রদের উপরে তুললে আজ যারা সামনে দাঁড়িয়ে কথা শুনতো, কাল তারা সোফার হ্যান্ডেলে বসে কথা বলবে। বেয়াদব হয়ে যাবে।
: তাহলে তুমি প্রমোশন পেলে কিভাবে?
: দুই বছর হলেই তো প্রমোশন। তা না হলে বলতাম অমুক প্রমোশন পেলে আমাকেও দিতে হবে। এইটাই তো সিস্টেম স্যার। কোন জগতে আছেন আপনি? এখন তো হাল্কা ইংরেজি আর কম্পিউটার জানলে আর বসের পারসোনাল কাজ করে দিলেই প্রমোশন। পড়াশোনা বিবিএ বা অনার্স হলেই চলে। ওসবের দাম নেই। খুঁজলেই দেখবেন দুটো মাস্টার্স নিয়ে একজন কম বেতন আর শুধু ডিগ্রিপাস একজনের ডাবল বেতন। আপনি যে কোন দুনিয়ায় আছেন! আজ আসি স্যার, ভালো থাকবেন!
বাকুড় বের হয়ে গেলো। ওর কথাগুলো আমার কেন যেনো খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। মুজরা স্যার চিৎকার করে গালাগাল করছেন। হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
: এই! তুমি কেনো এসেছো? মিষ্টি নিয়ে এসেছো দেখলাম মনে হয়?
আমি ভড়কে গিয়ে বললাম,
: না স্যার, আলু কিনতে মুদি দোকানে গিয়েছিলাম, ওরা ভুলে মিষ্টি দিয়ে দিয়েছে। আমি ফেরত দিয়ে আসি। আজকে আসি স্যার, স্লামালিকুম!
টেবিল থেকে ব্যাগটা টান দিয়ে নিয়ে দৌড় দিলাম। কিছুদূর আসার পর মোবাইলে ঝুনঝুনির ম্যাসেজ- "আপনি ভুল ব্যাগ নিয়ে গেছেন! ওখানে বাবার সব আন্ডারওয়্যার লন্ড্রিতে দেয়ার জন্য রাখা ছিল! যদি লন্ড্রিতে দিয়ে দিতেন প্লিজ!"
আমি সামনে তাকাতেই দেখলাম একটা ময়লার ভ্যান দাড়িয়ে আছে!
ে_লয়_ব
্সপার্ট_মুজরা_স্যার_১৮
সামনে এককাপ কালো কফি নিয়ে মুজরা স্যারের বাসার ডাইনিং এ বসে আছি। কফির রঙ এর মতই কালো আমার কপাল। সকাল সকাল মুজরা স্যারের ফোন। নিশ্চয়ই গতকাল ঝুনঝুনিকে ঘুষি মেরেছি তার বদলা নেবেন! আমি মাথা নিচু করে দুআঙ্গুলে পিরিচের উপর কাপ ঘোরাচ্ছি, মুজরা স্যার কমলার কোয়ার শরীর পরিস্কার করে করে টুপ করে মুখে পুরে দিচ্ছেন। তার ঠিক পেছনে চেয়ারে হাত রেখে ঝুনঝুনি দাঁড়িয়ে আছে। পরিস্থিতি গম্ভীর। হঠাৎ মুজরা স্যার বললেন-
: বিচি থেকে ডাইরেক্ট ফল হয়না কেনো জানো?
: কার বিচি স্যার.. আইমিন কোন ফলের?
: উফ! চুপ করো। বিচি থেকে ডাইরেক্ট কোন কিছুই হওয়া সম্ভব না। আগে চারা, তারপর পরিণত গাছ, ফুল তারপর ফল।
: জ্বী স্যার, স্কুলে পরেছি।
: স্কুলেও গিয়েছিলে নাকি! যাই হোক, যা বলছিলাম। একটা প্রতিষ্ঠান ভালো ম্যানেজমেন্টও এইভাবে তৈরি হয়। ধীরে ধীরে গোছানো উপায়ে। আর তারজন্য বড় পজিশনে যারা থাকে তাদের নিজেদের তৈরি হওয়াটাও জরুরি। "হাও টু বিকাম এ গুড সিনিয়র এক্সিকিউটিভ"। আমি ভাবছি এটা নিয়ে একটা ট্রেনিং পোগ্রাম শুরু করবো। তুমি আমাকে হেল্প করবে?
: স্যার, এটাতো খুব সহজ একটা ব্যাপার। নামটা স্যার হওয়া উচিত "হোয়াট গুনাবলীস এন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ খুব দরকার"!
: কি বললে!
: জ্বী স্যার। কোয়ালিটি আর গুনাবলীর ব্যাপারটা আলাদা করে দিতে হবে। গুনাবলী আসলেই কোয়ালিটি আসবে। আমাদের দেশের মানুষের চরিত্রে পরিবর্তন আসলে সব ইংরেজি কোয়ালিটি চলে আসবে স্যার।
: কেমন?
: একজন লোক যে সিনিয়র পজিশনে আছেন এইটা কেমন করে বোঝাবেন সেইটা শিখাতে পারলেই দেখবেন সে নিজের কোয়ালিটি বাড়াতে শুরু করবে। আসলে বসিং শুরু করা শেখাতে হবে।
: কেমন করে?
: সিনিয়র মানেই জুনিয়রদের মিটিং এর নামে নিজের বাহাদুরি শোনানো, ছোট্ট ইস্যুতে মিটিং ডেকে আধাদিন নষ্ট করা, জুনিয়রদের সামনে দাড়া করিয়ে নিজে অপ্রয়োজনীয় ফোনকলে ব্যাস্ত থাকা আর জুনিয়র কারো ইম্পর্টেন্ট ফোনকল এলে সেটা জেনেও ডাকাডাকি করা। বারবার বোঝানোর চেষ্টা করা যে জুনিয়ররা কাজ করে না আর তবুও কোম্পানি জুনিয়রদের বেতন দিচ্ছে, নিজ প্রয়োজনে ছুটি নেয়া আর জুনিয়ররা চাইলে কোম্পানি আর কাজের দোহাই দিয়ে তাকে আটকে রাখা। এইসব গুনাবলীর অধিকারী না হতে পারলে সিনিয়র হয়েও লাভ নেই স্যার।
: এসব কি বলছো তুমি! এইগুলোই শিখেছো?
: আমাদের কালচারে এই হয় স্যার। যারা বড় পদে বসে তারাই এইসব করে। শুধু তাই না, কোন সিনিয়র তার পারসোনাল কাজ জুনিয়রদের দিয়ে করায় না? অথচ জুনিয়রদের পারসোনাল কাজ অফিস টাইমে করার দরকার হলে অফিসের কাজের অযুহাতে তাকে সে সুযোগ দেয়া হয় না।
: ইয়াং ম্যান! তুমি খুব বাজে কথা বলছো!
: মোটেও বাজে কথা না স্যার। আপনি এসব না পারলে এখনো সময় আছে, শিখে নিন। এইদেশে কোন সিনিয়র তার জুনিয়রের ৫ টা গুনাবলী বলতে পারবে না অথচ নিজের গুন বলতে পারবে শখানেক। এইজন্যই এখানে কোয়ালিটিফুল সিনিয়র নাই। যারা প্রশংসা করতে জানে না তারা আবার সিনিয়র হয় কিভাবে? এরা তো ভয়ে পটিও করেনা রেগুলার। যদি বেশি বের হয়ে যায়!
: স্টুপিড! বেয়াদপ! সিনিয়রদের নিয়ে বাজে কথা! আমি তোমাকে... আমি তোমাকে....
আমি বের হয়ে এলাম। মুজরা স্যার বাংলা সিনেমার আনোয়ার হোসেনের মত নিজের বুকে খামচে ধরেছেন। ঝুনঝুনি বিস্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকিয়েছিল। আমি নির্লিপ্ত ভাবে বাইরে বের হয়ে এলাম। সব কিছু তো আর সবসময় ঢোক গিলে রাখা যায় না।
মোবাইলে ম্যাসেজের শব্দ। নাম উঠেছে- ঝুনটুনি।
ে_লয়_ব
্সপার্ট_মুজরা_স্যার_১৭
আজ নতুন কারাটে বেল্ট পেলাম। অরেঞ্জ বেল্ট। ভাবলাম ঝুনঝুনি কে একটু জানিয়ে আসি। খুব কাছের মানুষদের খুশির সময় পাশে পেলে ভালোই লাগে! গেট দিয়ে ঢোকার সময় ঝটকা দিয়ে সরে গেলাম। কারন মুজরা স্যার ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেলেন! দোতালার ছাদে দাঁড়ানো ঝুনঝুনি। এক দৌড়ে উঠে এলাম ছাদে। আমাকে দেখেই ঝুনঝুনি বললো-
: সেকি! নতুন বেল্ট!
: হ্যা... এই আর কি!
: বাহ! কংগ্রাচুলেশনস!
: হা হা হা হা, থ্যাঙ্কিউ।
: হুম! আপনার কনফিডেন্স দেখে ভালো লাগছে। যদি প্রয়োজন হয় আমাকে সেইভ করতে পারবেন তো?
: আরেহ, এটা কোন ব্যাপার! যে-ই আসুক, এই যে এক ঘুসিতেই......
আমি এখন বাসার দিকে হেঁটে যাচ্ছি। এমন বিচ্ছিরি একটা ঘটনা ঘটবে বুঝতেই পারিনি। অতি আত্মবিশ্বাসে ঘুসি দেখাতে গিয়ে ঝুনঝুনিকেই......... প্রচন্ড ব্যাথায় সে চিৎকার করে শুধু বললো, "গো টু হেল"! আমি দোজখের ঠিকানা জানলে সত্যিই চলে যেতাম আজকে। খুব মন খারাপ। ঠিক তখনি ম্যাসেজ এলো মোবাইলে, লেখা-
"যে কাওকেই গো টু হেল বলা সহজ। কিন্তু নিরাপদে পৌছুলো কিনা এই দুঃশ্চিন্তা শুধু কাছের মানুষের জন্যই হয়। আমি ঠিক আছি, সাবধানে বাসায় যান প্লিজ।"
ে_লয়_ব
্সপার্ট_মুজরা_স্যার_১৬
ঝুনঝুনির ম্যাসেজ। লেখা "বাবা বাসায়, ডাক্তার রেস্ট নিতে বলেছেন। খবরদার আসবেন না আপাতত।" ফলাফল- আমি এখন মুজরা স্যারের খাটের পাশে বসা। স্যারের জন্য বিছানার পাশে রাখা ভরা আঙ্গুরের বাটি টেনে কাছে এনে ফেলেছি। স্যার চোখ বন্ধ করে কি যেনো ভাবছেন। ঝুনঝুনি দরোজার পর্দা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আর আমি আঙ্গুরের টক পরীক্ষা করছি।
: বুঝলে ইয়াং ম্যান...
: জ্বি স্যার?
: এখন থেকে কম কথা বলবো ভাবছি।
: খুব ভালো কথা স্যার। এতো কথা বলে কি হবে? আজকাল তো দামী ভার্সিটির বিবিএ-এমবিএ করা ছেলেপেলে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। ২০ হাজার টাকা দিলেই রাজি হয়ে যাবে! এদের দিয়েই কথা বলাবো স্যার। আপনার কোন কথাই বলতে হবে না।
: আমি বলছি যে কোন সিচুয়েশনে অল্প কথায় কাজ শেষ করতে।
: এ আর এমন কি ব্যাপার! কোন ব্যাপারই না স্যার। কর্পোরেট ল্যাংগুয়েজ সব সময়ই স্মার্ট ল্যাংগুয়েজ স্যার। অল্প কথাতেই কাজ হবে। আপনি চাইলেই হবে। এখন তো অনেকেই এমন বলছে স্যার, "আরেহ একটা পিয়ন কে দিয়েও এই কাজ করানো যাবে আর তুমি হাইলি পেইড হয়েও এই কাজ পারবে না?" অল্প কথায় অনেক কিছু বোঝানো হয়ে গেলো স্যার, তাই না?
: উফ্! এত বকবক কেনো করছো? আমি বলছি কম কথা বলতে...
: প্লিজ স্যার শুয়ে থাকেন, উঠে বসার দরকার নেই... বাটিতে আর অল্প কয়টা আঙ্গুর.. ইয়ে মানে আপনি উত্তেজিত হবেন না প্লিজ। আমি এখন থেকে কম কথা বলবো।
: এটা তোমার দ্বারা অসম্ভব।
: ছি ছি... কি যে বলেন না স্যার! আপনি যেকোন সিচুয়েশন দিন আমি কম কথা বলে আপনাকে ডেফিনিটলি প্রমান করে প্রুভ দিবো যে আই ক্যান পসিবল মানে আই মিন আমি তো পারবোই!
: এই যদি হয় নমুনা...
: স্যার লেটস ট্রাই
: আচ্ছা। একটা কঠিন সিচুয়েশন দিচ্ছি। ধর বস ডেকে বললো, কাল অফিসে কেনো আসনি?
: স্যার কাল রাতে আমি বাবা হয়েছি।
: কংগ্রাচুলেশনস! তা ছেলে বাচ্চা নাকি মেয়ে বাচ্চা?
: আগামী নয় মাসের মধ্যেই জানিয়ে দেবো স্যার....
আমি এখন বাসায়। মাথায় বরফ ঘসছি। ভাগ্যিস বাটির আংঙ্গুরগুলো খেয়ে শেষ করে ফেলেছিলাম। ঝুনঝুনি ম্যাসেজ পাঠিয়েছে, "বাবা এখনো চিৎকার করছে। আগামী এক সপ্তাহ আসবেন না। আপনি কেনো এমন করেন? ভাগ্যিস ওটা মেলামাইনের বাটি ছিলো।"
আমিও মনে মনে কম কথায় রিপ্লাই দিলাম, ভাগ্যিস!
ে_লয়_ব
্সপার্ট_মুজরা_স্যার_১৫
ড্রইংরুমে মুজরা স্যারের সামনে বসে আছি। স্যার মুখ ঢেকে পেপার পড়ছেন। ঝুনঝুনি চানাচুর মুড়িমাখা আর চা দিয়ে গেছে। যাবার আগে ইশারায় বলে গেল কথা শেষ করে দোতালার ছাদে আসতে। আমি হেসে চামচে করে মুড়িমাখা মুখে তুলতে গিয়ে টার্গেট মিস হয়ে সোফাময় মুড়ি-চানাচুর।
: আচ্ছা ইয়াং ম্যান! তোমাদের অফিস আওয়ার কয়টা থেকে কয়টা? দশটা ছয়টা?
: স্যার অফিস শুরু হয় দশটায় আর শেষটা সাতটার পর অনুমতি সাপেক্ষে।
: মানে? দৈনিক আট ঘন্টার পর কর্পোরেট লেভেলে আর ভালো কিছু প্রডিউস হবার কথা তো নয়। তাহলে অনুমতির জন্য বসে থেকে কি কর?
: না স্যার, আমরা আসলে....
: ইদানীং এমন অনেক শোনা যাচ্ছে। এই যে পত্রিকায় ও এসেছে, জোর করে বা নানা ছুতায় করে কর্মীদের অফিসে বসিয়ে রাখা হচ্ছে। অথচ সন্ধ্যার পর কাজ থাকার কথা না। তোমরা নিজেদের কর্পোরেট বলো? নাকি গার্মেন্টস কর্মী। নাকি তোমাদের বসদের পারিবারিক সমস্যা আছে? যে কারনে তারা বাসায় যেতে চায় না? সেজন্য তোমরাও বসে থাকো? অন্তত নিজের বসকেও তো বোঝাতে পারো!
: স্যার, বস কি কখনো জুনিয়রের কথা শোনেন? এমনিতেই তো তারা ভাবেন আমরা কাজ করিনা!
: কেনো শুনবে না! তাদের সাইন বাদ দিলে বাকি সমস্ত কাজই তো তোমরাই করো।
: একটা গল্প বলি স্যার! একবার এক বস আর তার এক জুনিয়র আলাদা গাড়ি নিয়ে লং ড্রাইভে বের হলো। বস এগিয়ে ছিলেন নিজের গাড়ি নিয়ে। হঠাৎ জুনিয়র একটানে গাড়ি ছুটিয়ে বস কে পেছনে ফেলে সামনে চলে গেলো। একটু পর জানালা নামিয়ে মাথা বের করে চিৎকার করে বললো, গরু! শুনে বসের মাথা খারাপ হয়ে গেলো। এতো বড় সাহস! দাড়াও দেখাচ্ছি তোমাকে। এই বলে মোড় ঘোরাতেই বস গরুর পালের সামনে পড়ে গাড়ি-গরু সামলাতে সামলাতে ধান ক্ষেতে গিয়ে পড়লেন। জুনিয়ররা কিছু বললে বসেরা আমলেই নেন না।
: হা হা হা হা.... তোমার অনেক জমানো রাগ আছে দেখছি! শোন, রাগ পুষে রাখা ভালো না। আমি এমন সময়গুলোতে আমার প্রেমিকা নিয়ে রিক্সা করে ঘুরে বেড়াই। কাছাকাছি ঘেসে বসি! মন ভালো হয়। বুঝলে ইয়াং ম্যান?
আমি এখন মেইন রোড ধরে দৌড়ে পালাচ্ছি। দোতালার ছাদে ঝুনঝুনি কোমরে হাত দিয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। বাসার ভেতর থেকে মুজরা স্যারের চিৎকার শোনা যাচ্ছে- বেয়াদব, স্কাউন্ড্রেল! আমার বান্ধবীর নাম্বার চায় রিক্সা করে ঘোরার জন্য! স্টুপিড ফেলো! হারামজাদা.... বেত্তমিজ....
আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম। গালির সিকোয়েন্স শুনে মনে হচ্ছে হাইপ্রেসারের এই লোককে আবার হাসপাতালে নিতে হবে। ঝুনঝুনি তো আর একা পারবে না! আমি ওর পাশে না থাকলে...
ে_লয়_ব
: স্যার, কার সঙ্গ পরিত্যাজ্য?
: যে নিজেকে আইডল প্রমান করার জন্য উঠে পড়ে লাগে, যে অহরহ অন্যদের যেই ভুলগুলো সামনে তুলে ধরে সেই কাজ গুলো সে নিজেই করে, যে অল্প বয়স্কদের সামনে বয়স্কদের বদনাম করে, যে কথায় আর কাজে মিল রাখে না, যে কান কথায় বিশ্বাস করে, যে মনে করে সে নিজে ছাড়া বাকি সবাই অকর্মণ্য এবং সেই ব্যাক্তি, যে নিজেকে প্রতাপশালী মনে করে।
: জ্বী স্যার বুঝতে পেরেছি।
: তাতে লাভ কি? পরিত্যাজ্য তো আর করতে পারবে না। এই সমাজে এদের পরিত্যাজ্য করা এত সহজ না। এরা যে ভুল করছে তা বোঝার বোধ শক্তিও এদের নেই।
আর যাই করো, বিবেক বুদ্ধিতে লকডাউন করো না।
#মুজরা_স্যার
্সপার্ট_মুজরা_স্যার_১৩
রুটিন অনুযায়ী আজ শুক্রবার। মুজরা স্যারের বাসায় যাচ্ছি। এর মধ্যেই এক জুনিয়র কলিগ কল দিয়ে জানালো বৃহস্পতিবার একটা কাজ ভুলে কমপ্লিট করেনি। এটা কোন কথা! নিজের অতীত স্মৃতির জেদ থেকে আমি শুরু করলাম বকাবকি। বোঝালাম বসের দেয়া যে কোন কাজই আর্জেন্ট। কেনো এমন হলো এর ব্যাখ্যা চাইতে চাইতে পুরোটা রাস্তা শেষ করে মুজরা স্যারের বাড়ির গেটে এসে দাড়িয়ে লাস্ট ফিনিশিং দিয়ে মাথা ঘোরাতেই দেখি ঝুনঝুনি! দাঁড়িয়ে আমার কথা শুনছিলো। বললো-
: এমপ্লয়িদের এতো বকাঝকা কেনো করেন?
: দেখুন এটা বাংলাদেশের আদি সমস্যা। আমরা যখন ছোট ছিলাম, আমরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার নাহয় পাইলট হবো ভেবে আমাদের স্কুলে পাঠানো হয়েছিলো। কিন্তু ছোট থেকেই আমরা হয় কান ধরে বেঞ্চের উপরে নাহয় ক্লাসের বাইরে নীল ডাউন হয়ে থাকতাম টিচারদের কল্যানে। আবার দেখুন বাসায় তো বাবা-মার হাতে পিটুনি আছেই! যদিও একটা সময় বাবা-মা বুঝতেন যে নিজের কলিজার টুকরা সন্তানকে নিজেরা এভাবে পিটুনি দেয়া ঠিক না। কিন্তু টিচাররা কখনোই বুঝতেন না। তাদের কাছে আমরা ছিলাম পাঞ্চিং ব্যাগ!
: হি হি হি.... যাক! তাও তো বাসায় শান্তি পেতেন।
: শান্তি পেতাম কোথায়? তখন বাবা-মা নিজেরা পিটুনি বন্ধ করলেও মারার জন্য ভাড়াটে গুন্ডা নিয়ে আসতেন।
: সেকি! এটা মোটেও ঠিক না। বাবা-মা কখনোই এমন করবেন না। আপনি এমন মিথ্যে বলবেন এটা আশা করিনি....
: ইয়ে মানে.... আপনার সামনে আমার সত্যকথাই আটকে আসে... আবার মিথ্যে!
: ইশ! বাজে কথা! এইযে বললেন ভাড়াটে গুন্ডার কথা?
: হ্যা! এটা তো ঠিকই। এই ভাড়াটে গুন্ডার নাম প্রাইভেট স্যার! কেনো আপনি পাননি?
: হিহিহিহি.... আপনি না... খুব ফানি।
: না না, ব্যাপারটা ফানি না, মাঝে মাঝে এক গুন্ডায় কাজ হতো না। বিভিন্ন সাবজেক্টের নামে আলাদা আলাদা গুন্ডা ভাড়া করা হতো। অংকের গুন্ডা, ইংলিশ গুন্ডা আবার ইয়া হাবিবী গুন্ডাও ছিলো!
: হুম, সেই থেকে রাগ?
: কেনো না! যে যত খেয়েছে সে তত উসল তুলছে জুনিয়র এমপ্লয়িদের উপর! এভাবেই চলে আসছে! নাহলে প্রতিষ্ঠানে খারাপ ব্যাবহার কেনো করবে সিনিয়ররা? জুনিয়র মানেই কি খারাপ ব্যাবহার পেতে হবে?
: এই! শুনুন না..... কফি খাবেন?
: এই যে খাওয়ার কথা বলে ভালো কথা মনে করিয়েছেন! তখন হোম ওয়ার্ক না করলে গুন্ডারা বলতো- খেতে তো কখনো ভুলে যাও না, হোম ওয়ার্ক কেনো ভুলে গেলে! আবার এখন অফিসে কাজ করতে ভুল হলে বলে, লাঞ্চ পিরিয়ডের কাজটা তো ভুল যাওনি.... তাহলে এটা কিভাবে ভুলে গেলে!
: আচ্ছা, বুঝেছি। মাথা ঠান্ডা করুন। আপনার সাথে একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে। মেন্যু নিয়ে।
: ঠিক বলেছেন! মেন্যু! সিনিয়রদের কাছে কত রকমের যে খারাপ ব্যাবহার এর মেন্যু আছে আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না! এই ১৪ বছর ধরে চাকরি করে শিখেছি। এখন আমিও শুরু করেছি।
: শুনুন.... একটু ঠান্ডা হয়ে আমার কথাটা শুনুন। আমি বলছি মেন্যু....
: আরে আমি তো সেটাই বলছি। যারা এমন ব্যবহার করে.... তাদের ছেলে মেয়েও তো একদিন আমাদের কারো আন্ডারেই চাকরি করতে আসবে! সেদিন বোঝাবো!
ঝুনঝুনি আমার দিকে কড়া চোখে তাকালো। হঠাৎ এমন দৃষ্টিতে আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এলো। ঝুনঝুনি রাগে মাটিতে পা ঠুকে এক ঝটকায় ঘুরে দাড়ালো। তারপর গটগট করে ভেতরে চলে গেলো। আমি দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম কি এমন করেছি! ঠিক তখনি মোবাইলে ঝুনঝুনির ম্যাসেজ। সেখানে লেখা-
It was not about Menu.
It was about Me-n-U!
STUPID!!!
ে_লয়_ব
্সপার্ট_মুজরা_স্যার_১২
: হ্যালো ইয়াং ম্যান! ঘুম ভেঙ্গেছে?
: আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন স্যার!
: আজ সকাল সকাল সকাল তোমার কথা মনে পড়লো।
: কি সৌভাগ্য আমার! কি ব্যাপার স্যার?
: এই যে এখনকার অনেক অফিসে গুটি কয়েক কর্মকর্তা আছেন যারা ইংরেজিতে দুইলাইন লিখে পুরো অফিস মাতিয়ে রেখেছেন। একটা সাধারণ অফিস নোট যা কিনা দুইলাইন লিখলেই চলে তা নিয়ে নিজের ইংরেজি ফোটানোর জন্য তিন চারদিন একটা নোট নিয়ে কাজ করান.... যারা কথায় কথায় কারেকশন এর নামে সমার্থক শব্দ ব্যবহার করে আত্মতুষ্টিতে ভোগেন! যদি কখনো এই দেশে সর্বত্র বাংলা ভাষা চালু হয় তখন তারা চাকরি করবেন কেমন করে?
: হা হা হা হা! ভালো বলেছেন স্যার। তারা তখনো সমার্থক শব্দ ব্যাবহার করে চাকুরি টিকাবেন। ড্রাফট সর্বস্ব জ্ঞ্যান নিয়ে এই জাতি এগিয়ে যাচ্ছে স্যার! দুই লাইনেই যেখানে প্রয়োজন বোঝানো যায় সেখানে নাম ফোটাতে দেড় পৃষ্ঠা তো একটা স্বাভাবিক ঘটনা! এতে যে কি পরিমান সময় নষ্ট হচ্ছে তা কে দেখবে! যেসব অফিসে কোনদিন ফরেইনারদের সাথে যোগাযোগ নেই, সেসব অফিসেও দু একজনের কল্যানে এইভাবেই সময় নষ্ট হয়। মাঝে মাঝে এই নোট বা মেমো কারেকশন ও হয়ে যায় খুব ইম্পর্টেন্ট কাজ! এসব নিয়ে কথা বললেই বলে, দুকলম ইংরেজি পারেন না আবার কাজ পারবেন কি!
: যাক! একটা ব্যাপারে তোমার চিন্তাও যে এক তা জেনে ভালো লাগলো। আচ্ছা, তোমাদের বাসার ওদিকে তো একটা শহীদ মিনার আছে। ভাবলাম ফুল দিয়ে আসি।
: তাই নাকি স্যার! কখন আসছেন?
: ঝুনঝুনি শাড়ি পরছে। তারপর বের হচ্ছি। অবশ্য তুমি চাইলে ঘুমাতে পারো। এইচ আর এ কাজ করে নিশ্চয়ই খুব টায়ার্ড থাকো!! থাক তুমি ঘুমাও।
সাদা কালো শাড়িতে ঝুনঝুনি! আর আমার চোখে ঘুম!! এটাও কি সম্ভব?
ে_লয়_ব
্সপার্ট_মুজরা_স্যার_১১
: হাই ইয়াং ম্যান! এই সকালে কার জন্য সিগারেট কিনছো?
: আসসালামু আলাইকুম স্যার!
: ওয়ালাইকুম সালাম!
: ইয়ে না স্যার আমি মানে টাকা ভাঙ্গাতে এসেছিলাম!
কথা বলে শেষও করতে পারিনি দোকানদার সাথে সাথে তিনটা পুরানো দশটাকার নোটের মধ্যে একটা পাঁচ টাকার কয়েন মুড়িয়ে আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো। আমি টাকাটা নিয়ে মুজরা স্যারের দিকে একটু এগিয়ে গেলাম যাতে সিগারেট মামা বোঝে যে আমি মুরুব্বির সাথে আছি। কিন্তু সে পেছন থেকে ডেকে উঠলো, এই যে! আপনের সদাই লইয়া যান, বেঞ্চন লাইস!
মুজরা স্যার আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচালেন। আমি বললাম,
: না স্যার, আমি রেগুলার না। এই হাল্কা চাপ সৃষ্টি করার জন্য আরকি!
: হা হা হা হা, ভালোই বলেছো। তা এই সপ্তাহের রেজুলেশন কি?
: এমপ্লয়িদের থেকে কাজ বের করা স্যার। ফাঁকিবাজ গুলো এমনিতেই কাজ করে না। এদের পুশ করতে হবে। কারো জন্য হাল্কা কারো জন্য বেশি। আজকার পুশ না করলে এমপ্লয়িরা কাজ করে না।
: হা হা হা হা.... তুমি এসব কোথা থেকে শিখেছো বলোতো!
: কেনো স্যার? গত ১৪ বছরের চাকুরি জীবনে এইতো দেখে আসছি! সবাই পুশ করে। কাজেও করে, অযথাও পুশ করে। পুশ করে কাজ করায়। এরপর তারা টেবিলে নিয়ে ফেলে রাখে। যেনো পুশ করাটাই ইমপর্টেন্ট ছিলো, কাজটা না।
: যাদের থেকে এসব শিখেছো তাদের নিজেদের অনেক ডেভেলপমেন্ট দরকার। খুজে দেখো তারা গত পাঁচ ছয় বছরেও একটা সেমিনার কিংবা ট্রেনিংয়েও পার্টিসিপেট করেনি। এখন এইচ আর অনেক এগিয়ে গেছে। শুধু এইচ আর এ চাকরির বয়সের অভিজ্ঞতা শুনিয়ে কোন লাভ নেই।
: কিন্তু স্যার পুশ না করলে কিভাবে হবে? কোম্পানির উন্নতি হবে কিভাবে?
: ইয়াং ম্যান! পুশ তো পাড়ার ফার্মেসীর দোকানের লোকটাও করতে পারে। কিন্তু এসেট কে পুশ করতে হয় না, ইন্সপায়ার করতে হয়। পুশ আর ইন্সপায়ারের মধ্যে অনেক পার্থক্য এবং কিন্তু ইন্সপায়ার এর ইম্পপ্যাট অনেক বেশি!
: জানি স্যার! পুশ মানে হলো পুশ মানে চাপ দেয়া আর ইন্সপায়ার মানে...
: থাক থামো! সাবালক এর মানে জানা আর সাবালক হওয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য। তুমি আর তোমাকে যারা শেখাচ্ছে তাদের অর্থ জেনেই অনেক বাহাদুরি! বয়সে না, জ্ঞ্যানে বড় হও।
: জ্বী স্যার!
: যাও দূরে গিয়ে সিগ্রেট ফুকে বাথরুমের প্রেসার বাড়াও, আমি আসি।
মুজরা স্যার চলে গেলেন। আমি দাঁড়িয়ে আছি। এসব শোনার পর পেটের প্রেসার ঢোক গিলে ফেলেছে। পুরো প্যাকেটেও কাজ হবে না!
ে_লয়_ব
্সপার্ট_মুজরা_স্যার_১০
মুজরা স্যারের কথায় পাত্তা না দিয়ে একপ্রকার দৌড়েই যাচ্ছিলাম। ঝুনঝুনি পাউরুটি বেক করছে! দুই হাতে মাখানো ময়ান, গালে হালকা ময়দা লেগে থাকবে, একটা এপ্রন নিশ্চয়ই পড়েছে... হাতের উলটো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে গিয়ে নিশ্চয়ই কপালেও কিছু ময়ান.... এসব ভাবতে ভাবতে বাসার সামনে পৌছে দেখি ঝুনঝুনি দাঁড়িয়ে! আমি তো অবাক! এতোটা আশা করিনি.... বললাম-
: সেকি! আপনি এখানে দাঁড়িয়ে!
: বাবা কল দিয়ে বললেন আপনি আসছেন! তাই ভাবলাম আপনাকে অভ্যর্থনা জানাই।
: কি যে বলি..... সত্যি খুব ভালো লাগছে এই সকাল সকাল আপনাকে দেখে। আপনাকে মানে আসলে এই সুন্দর সকালে... ইয়ে এজন্যই হয়তো আপনাকে আরো বেশি..
: সুন্দর লাগছে?
: ইনডিড!
: ওরে সর্বোনাশ! ইংলিশ! তা শুনলাম আপনি নাকি বাবাকে বলেছেন, ডিসিপ্লিন ইস দা পিলার..... এমন কিছু একটা?
: ও, হ্যা! আমি বলতে চেয়েছিলাম নিয়মতান্ত্রিক ভাবে যে কোন কিছুতেই সাফল্য আসে। ডেভেলপমেন্ট ভুল কথা। একজন এমপ্লয়িকে ডেভেলপ করে কি হবে? অযথা টাকা খরচ। কারন এমপ্লয়ি ফাঁকিবাজি করবেই।
: তাই?
: আরে বাদ দিন এসব..... চলুননা... এককাপ না... না.... মানে দুজনে দুইকাপ কফি হয়ে যাক!
: সকাল সকাল ডেট? উন্নতি ভালোই হচ্ছে দেখি আপনার! আচ্ছা আসুন তার আগে একটা খেলা খেলি!
: রাজি রাজি.... আমি আপনার সাথে খেলতেও রাজি.... ঝুনঝুনি!
: খেলাটা কিন্তু আপনার কথা অনুযায়ী নিয়মতান্ত্রিক হবে। আইমিন ডিসিপ্লিন্ড ওয়ে তে!
: হ্যা হ্যা কোন অসুবিধে নেই... বলুন বলুন কি খেলা..
: আমি আপনাকে নাম বলবো। নামটা দেশ হলে আপনি দৌড়ে ওই কফি শপে যাবেন। আর নামটা যদি পাখির হয় তাহলে দৌড়ে আমার কাছে আসবেন। উত্তর অনুযায়ী ঠিক জায়গায় পৌছুলে আজ আমাদের ডেট। ভুল হলে বুঝতে হবে আপনার নিজের ডেভেলপমেন্ট প্রয়োজন আছে, ডিসিপ্লিন না। রাজি?
: আরেহ হ্যা! এটা কোন ব্যাপার! ছোট বেলায় কত নাম, দেশ, ফুল, ফল খেলেছি!! বলুন বলুন! হয় দেশ নাহয় পাখি তাইতো? বলুন.....
: Turkey!
আমি এখনো ঠিক সেখানটায় দাঁড়িয়ে আছি যেখানে ছিলাম। আধা ঘন্টা হয়ে গেছে। দেশ বলবো নাকি পাখি এখনো বুঝতে পারছি না! ঝুনঝুনি বাসার ভেতরে চলে গেছে। যাবার আগে আমার চোখ থেকে চশমাটা খুলে তার ওড়না দিয়ে মুছে আবার পরিয়ে দিয়েছে। যাবার আগে বলে গেছে, চশমার ধুলোগুলো মুছে যাওয়াতে আপনার দৃষ্টির ডেভেলপমেন্ট হয়েছে কিনা দেখুন তো!
ে_লয়_ব
Click here to claim your Sponsored Listing.
Location
Category
Contact the school
Website
Address
Haileybury Bhaluka Admission Office: 49, BSL House, Kazi Benzir Sarani, Nikunja-2, Khilkhet
Dhaka, 1229
160 years of British heritage in premium boys' boarding education, now in Bangladesh.
707/1 Kawlar ( Namapara , West Of Water Pamp ), Dakshinkhan, . Riajul Quran Model Madrasa, 01873-049090, Https://maps. App. Goo. Gl/r39wsxE7mByxnEwW 7
Dhaka, 1229
আধুনিক ও কুরআন শিক্ষার এক অনন্য প্রতিষ্ঠান خيركم من تعلم القرآن وعلمه
House-11/13, Road-5, Block-C, Banasree
Dhaka, 1219
একাডেমি ও প্রফেশনাল এডুকেশন সেন্টার
Plot 13 Embassy Road Baridhara
Dhaka, 1212
L'école française internationale de Dacca homologuée et conventionnée par l'AEFE accueille environ 120 élèves de la toute petite section de la maternelle et à la terminale. Elle propose un enseignement respectant les programmes du MEN.
South Nalla Pulla
Dhaka, 1345
Well-Come Nalla Pulla Rohima Model High School
Savar
Dhaka
Jawad Teaching Home is a Tutoring Platform.Specially designed for Class 1 to 12 for Academic Tuition!
65 Central Road, Dhanmondi
Dhaka, 1205
Ideal College is one of the oldest private college that offers higher secondary education for both b
বসুন্ধরা রিভারভিউ, আইন্তা বাজার রোড, (জালিবাড়ী)দক্ষিন কেরাণীগন্জ
Dhaka, 1310
An Islamic ideal Hifz institute. may Allah bless us. we teach children the Holy Quran with Tarbiah.
137/10, South Bishil, Mirpur/1
Dhaka, 1216
Core Demand ICT is a Computer Training Institute. Here we teach about different program of computer literacy such as Microsoft Office Program, Photoshop,Graphics & Design and outsourcing etc.
58/1, East Hazipara
Dhaka, 1219
58/1, East Hazipara, Rampura, Dhaka-1219. Mobile : 01911900103 ESTD - 1997
Dhaka, 1230
Tomorrow is an educational technology(EdTech) based in Bangladesh. We started our journey in 2021. We are here to shape your target of English language learning in the way you are meant to learn.