Maizbhandari Academy

Maizbhandari Academy

Share

Managing Trustee, SZHM Trust. irrespective of caste, creed, gender and religion. Phil./PhD. levels to the competent candidates. will be organized.

Maizbhandari Academy is a non-political, non-communal, benevolent, altruistic, humane and Maizbhandari Philosophy-based research, publication, social service and development-oriented organization. A Brief Background of the Establishment of Maizbhandari Academy: The Maizbhandari Philosophy is introduced in light of the inherent implications and essence of Islam for the welfare and the emancipation

Operating as usual

17/02/2025
14/02/2025

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
বরকতময় রাত ‘শবেবরাত’
পবিত্র শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘শবেবারাত’ বলা হয়। শবেবারাত কথাটি ফারসি। শব মানে রাত, বরাত মানে মুক্তি; শবেবারাত অর্থ মুক্তির রজনী। ‘শবেবারাত’-এর আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাত’। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্য রজনী বলা হয়েছে। তবে বিশ্ব মুসলমানের কাছে এ রাত ‘শবেবারাত’ নামেই বেশি পরিচিত। শবেবরাত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হা-মিম! শপথ! উজ্জ্বল কিতাবের। নিশ্চয়ই আমি তা নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয় আমি ছিলাম সতর্ককারী। (সূরা দুখান, আয়াত : ১-৩)। এ আয়াতের তাফসির সম্পর্কে বরেণ্য মুফাসসির আল্লামা শেখ আহমদ ছাভী (রহ.) বলেন, ওই বরকতময় রজনী হচ্ছে অর্ধ শাবানের রাত। বিশিষ্ট তাবেয়ি হযরত ইকরামা (রা.) এবং অন্য তাফসিরকারকদের মতও এটাই যে, সেই বরকতময় রাত হলো মধ্য শাবান তথা শবেবারাত।’ (তাফসিরে ছাভী, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৪০)।
আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) এ আয়াতের তাফসিরে বলেন, ‘আর বরকতময় রাত হলো লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান বা শাবানের মধ্য রাত তথা শবেবারাত। কেননা এ রাতে উম্মুল কিতাব কোরআন শরিফ সপ্তম আসমান থেকে দুনিয়ার আসমানে তথা প্রথম আসমানে নাযিল হয়েছে।’ (তাফসিরে জালালাইন, পৃষ্ঠা ৪১০)।
ইমাম আবু জাফর আত-তাবারি (রহ.) বলেন, ‘তাবেয়ি হযরত ইকরামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মধ্য শাবানের রাতে বছরের সব ব্যাপার চূড়ান্ত করা হয়, জীবিত ও মৃতদের তালিকা লেখা হয় এবং হাজীদের তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকা থেকে পরবর্তীতে একজনও কমবেশি হয় না।’ (তাফসিরে তাবারি, খন্ড ১০, পৃষ্ঠা ২২)। ইমাম কুরতুবি (রা.) বলেন, ‘এ রাতের চারটি নাম আছে- লাইলাতুম মুবারাকা, লাইলাতুল বারাআত, লাইলাতুছ্ ছাক, লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান।’ (তাফসিরে কুরতুবি, খন্ড ১৬, পৃষ্ঠা ১২৬)। ইমাম বাগাভি (রহ.) লিখেন, ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ শবেবারাতের রাতে সব বিষয়ের চূড়ান্ত ফয়সালা করেন এবং শবেকদরের রাতে তা সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববান ফেরেশতাদের কাছে ন্যস্ত করেন।’ (তাফসিরে বাগাভি, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ২২৮)। শবেবরাতের ফযিলত ও আমল সম্পর্কে সহিহ হাদিস শরিফেও অনেক বর্ণনা এসেছে। উম্মুল মু’মিনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একবার রসুলুল্লাহ (সা.) নামাযে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো, তিনি ওফাত পেয়েছেন। আমি তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করে আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা! তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে? আমি উত্তরে বললাম, ইয়া রসুলুল্লাহ (সা.)! আপনার দীর্ঘ সেজদা দেখে আমার আশঙ্কা হয়েছিল, না জানি আপনি ওফাত পেয়েছেন? নবীজি (সা.) বললেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রসুলই ভালো জানেন। তখন নবীজি (সা.) বললেন, এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত; এ রাতে আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন; ক্ষমাপ্রার্থীদের ক্ষমা করেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন। (শুআবুল ইমান, তৃতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৮২)। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে আরও বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করতেন। প্রিয়নবী (সা.) তাঁকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া-বকরির পশমের সংখ্যার পরিমাণের চেয়েও বেশিসংখ্যক গুনাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস নম্বর : ৭৩৯)।
একদিন প্রিয়নবী (সা.) মা আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আয়েশা! শাবান মাসের মধ্য রাতের মর্যাদা ও ফযিলত সম্পর্কে তুমি কী জান? তিনি আরজ করলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ (সা.) শাবান মাসের মধ্য রাতের মর্যাদা কী? আল্লাহর হাবিব (সা.) উত্তরে বললেন, আগামী এক বছরে কতজন আদম সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে এবং কতজন আদম সন্তান মৃত্যুবরণ করবে তা এ রাতে লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ রাতে তাদের আমল মহান আল্লাহর দরবারে উপস্থাপন করা হয় এবং তাদের রিযিক অবতীর্ণ কিংবা নির্ধারণ করা হয়। (ফাজায়েলুল আওকাত, হাদিস নম্বর ২৬)। হযরত আবু মূসা আশয়ারী (রা.) রসুলে কারীম (সা.) থেকে বর্ণনা করেন। রসুলেপাক (সা.) ইরশাদ করেন- মধ্য শাবানের রাতে আল্লাহপাক রহমত নিয়ে আবির্ভূত হন এবং তার সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রুতাপোষণকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর ১৩৮৯)। হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখ; কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহতায়ালা দুনিয়ার আসমানে রহমত নিয়ে অবতরণ করেন এবং আহ্বান করেন; কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছ কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিকপ্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দেব; আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব। এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৮৪)। তবে, মুশরিক, হিংসা পোষণকারী, সর্বদা ব্যভিচারকারী, পিতা-মাতার অবাধ্য, মদ্যপানকারী, হারাম মাল ভক্ষণকারী, এতিমের সম্পদ আত্মসাৎকারী ক্ষমা পাবে না। তাদের তওবা করতে হবে।
মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- অর্ধ শাবানের রাতে [শবে বারাতে] আল্লাহ তাআলা তাঁর সমস্ত মাখলুকের প্রতি মনোযোগ আরোপ করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন। (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬৬৫, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২৭৫৪, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহওয়াই, হাদীস নং-১৭০২, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৬৭৭৬, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-২১৫, সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং-১৩৯০, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-২০৩, মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩০৪৭৯, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬২০৪)
(সম্পাদিত)

Photos from Maizbhandari Academy's post 12/02/2025

“ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্যে শা’বান মাস”
সোনালী অতীতের কুশলী নির্মাতা:
১২ শা’বান ১৪৪৬ হিজরি:
সুলতানুল আরেফিন হযরত আবু ইয়াযীদ ঈসা তাইফুর বায়েজিদ বোস্তামী [হযরত বায়েজিদ বোস্তামী] (রহ.)’র ওফাত দিবস। (তাঁর ওফাতের তারিখ মতান্তরে ১১ শা’বান/১৪ শা’বান/১৫ রমযান)
বোস্তামী নামের অর্থ - যিনি বোস্তাম শহরের বাসিন্দা। হযরত বায়েজিদের দাদা একজন পার্সী ধর্মাবলম্বী ছিলেন, যিনি পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁর দাদার তিন ছেলে ছিল, তাঁরা হলেন - আদম, তাইফুর এবং আলী। তাঁরা সকলেই কঠোর তপস্বী ছিলেন। তাইফুর এর ছেলে হলেন বায়েজিদ। সুফিবাদের আলোচনা করার জন্য তিনি লোকজনকে নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ করতেন। বায়েজিদ কঠোর তপস্যা করতেন এবং সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভের আশায় দুনিয়ার সকল আনন্দ-ফুর্তি থেকে নিজেকে দূরে রাখতেন।
হযরত শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার (রহ.) রচিত বিশ্ববিখ্যাত ‘তাজকেরাতুল আওলিয়া’গ্রন্থ (প্রথম খণ্ড) হতে:
(ক) সুলতানুল আরেফিন হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহ.) দরবেশগণের মাথার মণিস্বরূপ ছিলেন। তিনি অতিশয় খোদা-প্রেমিক ছিলেন। তাঁর অসাধারণ কারামত ও ইবাদত-শক্তি ছিল। মারেফাতেও তাঁর অসাধারণ জ্ঞান ছিল। তিনি অত্যন্ত কষ্ট সহ্য করতে পারতেন এবং আল্লাহর প্রেমের আগুনে দগ্ধ ছিলেন। হাদিস শাস্ত্রেও তাঁর অসাধারণ দখল ছিল।
ইবাদতে তাঁর তুল্য সেকালে আর কেউ ছিলেন না। হযরত জুনায়েদ (র.) বলেন, “তিনি ওলিগণের মধ্যে এতদূর উন্নত ও সম্মানী ছিলেন, যতটা ফেরেশতাগণের মধ্যে হযরত জিবরাঈল।”
হযরত বায়েজিদ মধ্য-এশিয়ার অন্তর্গত বোস্তাম প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতামহ একজন বুৎ-পরস্ত (মূর্তিপূজক) ও তাঁর পিতা একজন নেক্কার মুসলমান ছিলেন। বাল্যকালেই তিনি পিতৃহীন হন। তাঁর মাতা অতিশয় নেককার ছিলেন। মায়ের উদরে থাকার সময় হতেই তাঁর বহু কারামত প্রকাশিত হয়েছিল। মায়ের উদরে থাকাকালীন তাঁর মাতা কোন সন্দেহজনক দ্রব্য আহার করলে তা মায়ের উদরে থাকা পর্যন্ত সন্তান কাঁপতে থাকত। ভক্ষিত দ্রব্য বের হয়ে গেলে উদর শান্ত হত। বাল্যকালে যখন তাঁর মাতা তাঁকে মাদরাসায় পাঠান এবং যখন তিনি সূরা লোকমানের ‘আমার নিকট ও পিতামাতার নিকট শোকরগুজারী কর’এই আয়াতটি পাঠ করলেন, তখন ওস্তাদের নিকট এর অর্থ জিজ্ঞাসা করলেন। ওস্তাদ এর অর্থ বুঝিয়ে দিলে তাঁর মনে তোলপাড় আরম্ভ হয়। তখনই তিনি ওস্তাদের হুকুম নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। মা তাঁর বাড়ি আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলে বায়েজিদ বললেন, “আম্মা, আজ কুরআন শরিফে পাঠ করলাম, আল্লাহ্ পাক বলেন, ‘আমার ও পিতা-মাতার শোকর কর’। কিন্তু আমি দুই ঘরের শৃঙ্খলা রক্ষা করতে অক্ষম। হয় আল্লাহ্ পাক হতে তুমি আমাকে চেয়ে নাও, আমি চিরকাল তোমার খেদমত করব, না-হয় আল্লাহর খেদমতে আমাকে ছেড়ে দাও, আমি সম্পূর্ণভাবে তাঁরই গোলাম হব।”মা বললেন, “ফরযন্দ, আমি তোমাকে আল্লাহ’র খেদমতে ছেড়ে দিলাম এবং তোমার উপর আমার হক মাফ করে দিলাম। যাও, তুমি সেই প্রভুর ইবাদতেই মশগুল থাক।”তারপর বায়েজিদ মায়ের নিকট হতে বিদায় নিয়ে চলে যান এবং জঙ্গলে অনিদ্রায়, অনাহারে, কঠোর ইবাদতে মশগুল হন। তিনি ১১৩ জন ওলিআল্লাহর সংসর্গে থেকে তাঁদের খেদমত ও ফয়েজ হাসিল করেন। সেই ওলিআল্লাহগণের মধ্যেই একজন হযরত ইমাম জাফর সাদেক (র.)।
(খ) বায়েজিদ একদিন হযরত জাফর সাদেকের (র.) নিকট তা'যীমের সাথে বসে আছেন, এমন সময় হযরত জা'ফর বললেন, “বায়েজিদ, তাক্ হতে অমুক কেতাবটি নাও।” বায়েজিদ জিজ্ঞাসা করলেন, “কোন, তাক হতে হুযুর?” হযরত জা'ফর বললেন, “বহুকাল যাবৎ তুমি আমার নিকট আছ, অথচ কেতাবের তাকটাও দেখ নাই? কি আশ্চর্য!” বায়েজিদ বললেন, “হুযুর, আমার কি প্রয়োজন যে, আপনার সাক্ষাতে আমি মাথা উঁচু করব? এখানে আমি কিছু দেখে, বেড়াবার জন্য আসি নাই।”হযরত জা'ফর বললেন, “বাবা, যদি ব্যাপার এই হয়, তবে তুমি বোস্তামে চলে যাও, তোমার ইবাদত ও মনের আশা পূর্ণ হয়েছে।'
(গ) লোকে জিজ্ঞাসা করল, “আপনার মোর্শেদ কে?” হযরত বায়েজিদ বললেন, “একজন বৃদ্ধা স্ত্রীলোক। একবার আমি তৌহিদের (একত্ববাদের ) প্রেমরসে বেহুঁশ হয়ে মরুভূমিতে উপস্থিত হই। এমন সময় এক বৃদ্ধা একটি আটার ভাণ্ড নিয়ে আমার সম্মুখে এসে বলল, “আমার এই পাত্রটি অমুক স্থানে দিয়ে আস।” আমি তখন এমন অবস্থায় ছিলাম যে, নিজেকেই সামলাতে পারছিলাম না। কাজেই বৃদ্ধার বোঝাটি বহন করবার জন্য মরুভূমিতে এক বাঘকে ইঙ্গিত করলাম এবং বাঘের পিঠের উপর বোঝাটি উঠিয়ে দিলাম। তারপর বৃদ্ধাকে বললাম, “তুমি শহরে পৌঁছলে লোককে কি বলবে?” বৃদ্ধা ক্রোধে অধীর হয়ে বলল, “আমি বলব যে, মাঠে এক যালেমকে দেখেছি।” তারপর বৃদ্ধা বলল, “এই বাঘটা কি তোমার বোঝা বহন করতে ন্যায়তঃ বাধ্য?” আমি বললাম, “না।” বৃদ্ধা বলল, “তবে যাকে খোদা তাআলা ন্যায়তঃ বাধ্য করেন নাই, তুমি যে তাকে বাধ্য করলে, এটা কি যুলুম নয়। তা ছাড়া সম্ভবতঃ এটাও তোমার ইচ্ছা যে, নগরবাসীরা জানুক যে, বন্য বাঘও তোমার বাধ্য এবং তুমি একজন কারামত দেখাবার লোক বটে। এটা নিজের অহঙ্কার ছাড়া আর কি হতে পারে?”
আমি বললাম, “তুমি ঠিক বলেছ। আমি আজ হতে মাথা নত করে তওবা করছি, আর কখনও এরূপ করব না। বৃদ্ধার এই বাণীই আমার মোর্শেদ বা পীর।”
(ঘ) আমি যখন আওলিয়া শ্রেণির শেষ সীমায় উপস্থিত হলাম, তখন নিজেকে নবিগণের প্রথম শ্রেণির সারিতে দেখতে পেলাম। তারপর আমি আল্লাহ্ তাআলার এত নিকটবর্তী হলাম যে, আমার মনে হল, আর কেউই এত নিকটে পৌঁছতে সক্ষম হয় নাই। তারপর গভীরভাবে চিন্তা করে দেখলাম, আমার শির একজন নবির পায়ের নিচে। তখন বুঝতে পারলাম যে, আওলিয়ার শিরের শেষ সীমানায়ই আম্বিয়ার পায়ের শুরু বটে, আর নবিগণের (আ.) উন্নতির শেষ সীমা নাই। তারপর আমার অন্তরকে ফেরেশতার রাজ্য, বেহেশত ও দোযখ দেখান হল। আমি প্রত্যেক পয়গম্বরের রূহকে সালাম করলাম। তারপর যখন হযরত মোহাম্মদ মোস্তফার (দ.) পাক রূহ পর্যন্ত পৌঁছি, তখন সেখানে শত সহস্র আগুনের দরিয়া এবং অসংখ্য নূরের স্রোত বইছে দেখলাম। যদি উক্ত দরিয়ায় পা ফেলতাম, তবে জ্বলে যেতাম ও নিজেকে বিনাশ করতাম। অবশেষে ভয়ে কাতর ও বেহুঁশ হয়ে পড়ে রইলাম। আল্লাহর দিদার লাভ করলাম বটে, কিন্তু হযরত মোস্তফার (দ.) তাঁবুর ও বিশেষ দরবারের নিকটেও পৌঁছাতে পারলাম না। এইরূপে আল্লাহর দিদার লাভ করলাম বটে, কিন্তু “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুর”ময়দান পার হয়ে হযরতের (দ.) খাস দরবারে পৌঁছা গেল না (যদিও উভয় ময়দান একই)। তারপর বায়েজিদ বললেন “হে খোদা, আমি যা কিছু দেখলাম বটে, কিন্তু বায়েজিদের তাও দেখবার ক্ষমতা ছিল না এবং এও বুঝলাম, আমি আমার ‘আমিত্ব’কে নিয়ে তোমার নিকট পর্যন্ত পৌঁছাতে অক্ষম। এখন কি করি?” উত্তর আসল, “তোমার মুক্তি তোমার ‘আমিত্ব’কে কুরবান করায় এবং আমার প্রিয় বন্ধু হযরতের (দ.) পায়রবীতে। যাও, স্বীয় চোখে তাঁর পাক পায়ের ধূলা লও। এতেই তোমার মুক্তি।”
(ঙ) লোকে জিজ্ঞাসা করল, “অহঙ্কারী কে?” উত্তর করলেন, “যে আঠার হাজার আলমের (সৃষ্টির) মধ্যে নিজেকে অন্য কোন প্রাণী অপেক্ষা বেশী পাক বলে মনে করে।"
লোকে বলল, “পানির উপর দিয়ে আপনার যাতায়াত একটা বড় কারামতই বটে।”তিনি উত্তর করলেন, “এটা কিছুই না। কেননা, সামান্য কাঠের টুকরাও পানির উপর ভাসে।”লোকে বলল, “তবে বাতাসে উড়লে তা বড় কারামত হত।”উত্তর করলেন, “এটাও বড় কথা নয়। কেননা একজন সামান্য যাদুকর ভারত হতে এক রাতে দেমান্দু পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।”
(চ) লোকে জিজ্ঞাসা করল, “আপনি এই উচ্চ মর্যাদা কিরূপে প্রাপ্ত হলেন?” তিনি বললেন, “বাল্যকালে আমি একদিন রাতে বোস্তাম শহর হতে বের হয়ে চাঁদনী রাতে নীরবে ভ্রমণ করছিলাম। তখন লোকজন নিদ্রিত ছিল। যেতে যেতে এমন একস্থানে উপস্থিত হলাম যে, সারা দুনিয়া সামান্য একটি বিন্দুর মত নযরে আসল। আমার সমস্ত শরীরে যেন আগুন লেগে গেল। আমি তা’আজ্জব হয়ে বললাম, হে খোদা, তোমার দরগাহ্ অতি মহান, অথচ জন-মানবশূন্য ও অতি আশ্চর্য এবং অতি গূঢ় মারেফাতে পূর্ণ। গায়েব হতে আওয়ায হল, “এজন্য এটা খালি নয় যে, কাউকেও এই দরবারে ডাকা হয় না। বরং এটা এজন্য খালি যে, কেউ এখানে আসে না। তবে আমি এটাও পছন্দ করি না যে, অনুপযুক্ত পাত্র অবাধে এ মহান দরবারে আসুক।”এটা শুনে সব লোক যাতে এই দরবারে পৌঁছাতে পারে তজ্জন্য সুপারিশ করতে মনস্থ করলাম। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হল, এ-দরবারে সুপারিশের উপযুক্ত একমাত্র হযরত মোহাম্মদ (দ.)। আমি হযরতের প্রতি এই তাজিম দেখিয়ে চুপ করে রইলাম। গায়েব হতে আওয়ায হল, “হে বায়েজিদ, তুমি হযরতের (দ.) প্রতি তাজিম দেখিয়েছ বলে আমি তোমার ইযযত বৃদ্ধি করলাম ও দুনিয়ায় তোমার নাম সুলতানুল আরেফিন (তাপসদের সুলতান) বলে মশহুর করলাম।”
(ছ) আমি বিশ্বাসের চোখে হক তায়ালার প্রতি নযর করলাম। তিনি দুনিয়ার সকল বস্তু হতে আমাকে অভাবমুক্ত করলেন এবং নিজ নূর দ্বারা আলোকিত করলেন। তারপর নানাপ্রকার বাতেনী বিষয় আমার নিকট যাহির করলেন। তিনি নিজ শান ও শওকত (প্রতাপ ও মহিমা) আমাকে দেখালেন। আমি এর সাহায্যে নিজের প্রতি নযর করলাম; নিজের গুণাবলী খোঁজ করলাম। আমার নূরকে তাঁর নূরের তুলনায় অন্ধকার পেলাম। আমার গৌরবকে তাঁর গৌরবের নিকট সম্পূর্ণ তুচ্ছ পেলাম। দেখলাম আমার ইযযত তাঁর ইযযতের নিকট ঢাকা পড়ে গেল। সেখানে পূর্ণ নির্মলতা, আর এখানে অত্যন্ত মলিনতা বিদ্যমান। পরে নযর করে দেখি যে, আমার নূর তাঁর নূরের দ্বারাই এবং আমার ইযযত তাঁর ইযযত দ্বারাই। আমি যা করি, তাঁর শক্তিতেই করি। সত্য বিচারের চোখে দেখলাম যে, সমুদয় ইবাদত ও বন্দেগী তাঁর দ্বারাই বটে, আমার দ্বারা নয়। আরয করলাম, “হে মালিক, এ কি ব্যাপার?” বললেন, “এ সবই আমি। আমি ছাড়া কিছুই নয়। কাজটি মাত্র তোমার দ্বারা যাহির হয়। কিন্তু করার শক্তি ও কাজে কামিয়াবী (সফলতা) আমার দ্বারাই হয়। যে পর্যন্ত আমার মদদ (সাহায্য) তোমার প্রতি না হয়, সে পর্যন্ত তুমি কোন ইবাদত করতে পার না।”
তারপর আমার প্রভু আমার বাইরের ও অন্তরের দৃষ্টি বন্ধ করে দিলেন এবং তাঁর তৌহিদের রূপ দর্শন করতে শিক্ষা দিলেন। আমার আমিত্বকে দূর করে অন্তরকে জীবিত করলাম। তিনি আমাকে নিজের প্রিয় করলেন, আর তাঁর বাতেনী তত্ত্ব সম্বন্ধে প্রকাশ্যে আমাকে জ্ঞানদান করলেন। আমি তাঁর দ্বারাই তাঁকে দেখতে সক্ষম হলাম, তাতেই শান্তি পেলাম ও তাতেই ঘর তৈরি করলাম। কুকথা শ্রবণকারী কানকে বন্ধ করলাম। যে জিহ্বা অনিষ্টের কথা বলত তাকে বন্ধ করলাম। অর্থকরী বিদ্যা ছেড়ে দিলাম। ইন্দ্রিয়গুলির পরাক্রম সম্মুখ হতে দূর করলাম; মানুষের সোহবত ত্যাগ করে কিছুকাল একাকী রইলাম। অপব্যয়ের পথ কঠোর হস্তে বন্ধ করে দিলাম। আবার তিনি আমার উপর দয়া বর্ষণ করলেন, আমাকে প্রকৃত জ্ঞান দান করলেন, আপন নূরে আমার চোখ সৃষ্টি করলেন, তার সাহায্যে সমুদয় মখলুক দেখতে লাগলাম।

11/02/2025

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
🌐 ১১ শাবান ১৪৪৬ হিজরী:
💠 হযরত আলী আকবর ইবনে হোসাইন (রাদ্বি.)-এর জন্মদিন।
🔷 হযরত আলী আকবর ইবনে আল-হোসাইন (রাদ্বি.), সাধারণভাবে আলী আল-আকবর নামে পরিচিত।
🔷 জীবনী
হযরত আলী আল-আকবর ১১ শা'বান ৩৩ হিজরিতে (১০ মার্চ ৬৫৪ খ্রিস্টাব্দ) পবিত্র মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হযরত ইমাম হোসাইন ইবনে আলী এবং তার মা লায়লা বিনতে আবি মুররা। কারবালার যুদ্ধে তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছর। তাঁর দুই ভাইয়ের নামও ছিল 'আলী'; একজন আলী আল-আসগর ইবনে হোসাইন এবং আরেকজন আলী আল-আওসাত ইবনে হোসাইন যা পরবর্তীতে জয়নুল আবিদিন হিসেবে পরিচিত। বংশতালিকাবিদ এবং ঐতিহাসিকরা আকবর নামের কারণে তাঁকে ইমাম হোসাইনের (রাদ্বি.) জ্যেষ্ঠ পুত্র বলে মনে করেন। আকবর একটি আরবি শব্দ যার অর্থ "বৃহত্তর" বা "সর্বশ্রেষ্ঠ"। কিশোরটি তাঁর মাতামহ প্রিয়নবী (সা.), আল্লাহর নবীর সাথে এতটাই সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল যে, হোসাইন ইবনে আলী প্রায়শই বলতেন, "যখনই আমি আমার নানাকে মিস করি তখনই আমি আলী আল-আকবরের মুখের দিকে তাকাই।" আলী আল-আকবর কারবালার যুদ্ধে ৬১ হিজরির ১০ মুহররমে মুরাহ ইবনে মুনকাদের হাতে শহীদ হন।
🔷 সমাধি
৬৮০ সালের ১০ অক্টোবর (১০ মুহররম, ৬১ হিজরি) আশুরার দিনে হযরত আলী আল-আকবর ইয়াজিদের সেনাবাহিনীর হাতে শহিদ হন। তিনি বনী হাশিম-এর প্রথম ব্যক্তি যিনি যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে শহীদ হন। তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় ইমাম হোসাইনের (রাদ্বি.) পায়ের নিচে। ইমাম হোসাইনের মাজার-টি ষড়ভুজাকার কারণ আলী আল-আকবরের সমাধিস্থলটি হোসাইনের মাজারের ভিতরে অবস্থিত।
🔷 প্রভাব
হযরত আলী আল-আকবর ছিলেন পিতা ইমাম হোসাইনের (রাদ্বি.) পদাংক অনুসারী, যুদ্ধের ময়দানে সত্যের জন্য এক তেজস্বী সহযোগীও। ইসলামী বিশ্বে ইমাম হোসাইনের কষ্ট ও ইন্তিকাল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রামে এবং অন্যায় ও মিথ্যার বিরুদ্ধে ন্যায় ও সত্যের জন্য সংগ্রামে আত্মত্যাগের প্রতীক হয়ে ওঠে। অত্যাচারী শাসকদের দ্বারা ইসলামের কলুষতা ঠেকাতে এবং এর ধ্যান-ধারণাকে রক্ষা করার জন্য ইমাম হোসাইন এবং তাঁর অনুসারীদের আত্মত্যাগের অবস্থানটি অত্যাচারী ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতের অভ্যুত্থানকে অনুপ্রাণিত করে প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠে। নেলসন ম্যান্ডেলা এবং মহাত্মা গান্ধীর মতো অনেক বিখ্যাত চরিত্র, নিপীড়নের বিরুদ্ধে ইমাম হোসাইনের অবস্থানকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাদের নিজস্ব লড়াইয়ের মডেল হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

Photos from Maizbhandari Academy's post 09/02/2025

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত 'অমর একুশে বইমেলা ২০২৫'
আলোকধারা বুকস প্রকাশনা' স্টল # ১৭,
শহীদ মিনার চত্বর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
৯ ফেব্রুয়ারি২০২৫ হতে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ।
প্রতিদিন সকাল ১০টা হতে রাত ৮টা পর্যন্ত।

07/02/2025

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
🌐 ০৭ শা’বান ১৪৪৬ হিজরী:
💠 প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবারের সদস্য হযরত কাসিম বিন ইমাম হাসান (রাদ্বি.)-এর জন্মদিবস।
🔷 হযরত কাসিম (রাদ্বি.) এর পিতা ইসলামের পঞ্চম খলিফা হযরত ইমাম হাসান ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব (রাদ্বি.) এবং তাঁর মাতার নাম হযরত উম্মে ফারওয়া (রাদ্বি.)। তিনি ৪৭ হিজরির ৭ই শা’বান পবিত্র মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। হযরত কাসিম (রাদ্বি.) ইমাম হাসান (রাদ্বি.) এর ওফাতের ২-৩ বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন। আর এ কারণে তিনি তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করেন এবং লালিত-পালিত তাঁর চাচা হযরত ইমাম হুসাইন (রাদ্বি.) এর তত্ত্বাবধানে। তিনি দেখতে ইমাম হাসান (রাদ্বি.) এর সদৃশ্য ছিলেন। আর এ কারণে যখন ইমাম হুসাইন (রাদ্বি.) তাঁর ভাইয়ের কথা স্মরণ করতেন তখন তিনি হযরত কাসিমের চেহারার প্রতি লক্ষ্য করতেন এবং তাঁকে অতিরিক্ত আদর ও স্নেহ করতেন। তিনি হযরত কাসিম (রাদ্বি.) কে নিজের কোলে নিয়ে আদর করতেন। হযরত কাসিম দেখতে এতই সুন্দর ছিলেন যে ইমাম হুসাইন (রাদ্বি.) তাঁকে চাঁদের টুকরার সাথে তুলনা করতেন। ইমাম হুসাইন (রাদি.) তাঁকে এতই বেশি ভালবাসতেন যে তাঁকে নিজের সন্তান বলে ডাকতেন।
ইমাম হুসাইন (রাদ্বি.) ও কখনও হযরত কাসিম (রাদ্বি.) কে এক মূহূর্তের জন্য চোখের আড়াল হতে দেননি। এমনকি মদিনার পরিবেশ কলুষিত হয়ে গেলে যখন তিনি মক্কা অভিমুখে রওনা হন তখনও তিনি ইমাম হাসান (রাদ্বি.) এর পরিবার পরিজনকে নিজের সাথে নিয়ে যান। যখন হুসাইনি কাফেলা কারবালার মরু প্রান্তরে পৌঁছায় তখন হযরত কাসেম (রাদ্বি.) এর বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। কারবালার ময়দানে ইয়াজিদ বাহিনীর সাথে অসীম সাহসিকতার সাথে লড়তে লড়তে তিনি শহীদ হন।
তাঁর মাজার কারবালায় হযরত ইমাম হুসাইন (রাদ্বি.)-এর পবিত্র রওজার পাশে ৭২ জন শহীদের সাথে রয়েছে।

05/02/2025

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
সোনালী অতীতের কুশলী নির্মাতা
৫ই শাবান:
আলী ইবনুল হুসায়ন ইবন আলী ইবন আবু তালিব আল-কারশী, আল-হাশিমী [ইমাম যায়নুল আবেদীন (রাদ্বি.)-এর জন্মদিন।]
আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসীর আদ-দামেশকী (রহ.) রচিত ‘আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থ হতে কয়েক পর্বে ইমাম যায়নুল আবেদীন রাদ্বি.-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী অবিকল তুলে ধরা হলো]
তাঁর পূর্ণ নাম আলী ইবনুল হুসায়ন ইবন আলী ইবন আবু তালিব আল-কারশী, আল-হাশিমী। তিনি যায়নুল আবেদীন বলে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তাঁর মাতা ছিলেন ক্রীতদাসী। তার নাম ছিল সালামা। তার চেয়ে বড় ছিলেন তার এক ভাই, যার নামও ছিল আলী। পিতার সাথে শাহাদাত বরণ করেন। আলী তার পিতা, চাচা হাসান ইবন আলী (রা), জাবির (রা), ইবুন আব্বাস (রা), আল-মিসওয়ার ইন মাখরামা (রা), আবূ হুরায়রা (রা), মু'মিনগণের মাতা সাফিয়্যা (রা), আইশা (রা) ও উম্মে সালামা (রা) হতে হাদীস বর্ণনা করেন। তার থেকে উলামায়ে কিরামের একদল হাদীস বর্ণনা করেন। তাঁদের মধ্যে প্রসিদ্ধ তার ছেলেগণ- যায়, আবদুল্লাহ ও উমর, আবু জাফর মুহাম্মদ ইব্ন আলী ইব্ন কারর, যায়দ ইবন আসলাম, তার সমসাময়িক তাউস, আয-যুহরী, ইয়াহইয়া ইবন সাঈদ আল-আনসারী, তাঁর সমসাময়িক আবু সালামা ও আরো অনেক।
ইবুন খাল্লিকান বলেন, পারস্যের শেষ সম্রাট ইয়াযদগারদ-এর কন্যা ছিলেন উম্মে সালামা। রাবীউল আবরার নামী কিতাবে আল্লামা যামাখশারী (র.) উল্লেখ করেন যে, উমর ইবন খাত্তাব (রা.)-এর আমলে ইয়াযদগারদ-এর তিন কন্যা বন্দী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে একজনকে আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা.) লাভ করেন এবং তার গর্ভে যে সন্তান জন্ম নেন তার নাম সালিম। দ্বিতীয় কন্যাকে মুহাম্মদ ইব্ন আবু বকর সিদ্দীক (রা.) লাভ করেন এবং তার গর্ভে যে সন্তান জন্ম নেন তার নাম ছিল কাসিম। তৃতীয় কন্যাকে হুসায়ন ইব্ন আলী (রা.) লাভ করেন এবং তার গর্ভে যে সন্তান জন্ম নেন তার নাম ছিল আলী বা যায়নুল আবেদীন। তাই তারা সকলে খালাতো ভাই ইবন খাল্লিকান বলেন, কুতায়বা ইন মুসলিম যখন ফিরোয ইবুন ইয়াযদগারদকে হত্যা করেন, তখন তিনি তার দুই কন্যাকে হাজ্জাজের কাছে প্রেরণ করেন। একটিকে হাজ্জাজ নিজে গ্রহণ করেন এবং অন্যটিকে আল-ওয়ালীদের কাছে প্রেরণ করেন। তার গর্ভে যে সন্তান জন্ম নেয় তার নাম ছিল ইয়াযীদ নাকিস। ইবন কুতায়বা বিশ্বকোষে উল্লেখ করেন যে, যায়নুল আবেদীনের মাতা ছিলেন সিন্ধী মাহিলা। তার নাম ছিল সালামা। কেউ কেউ বলেন, তার নাম ছিল গাযালাহ। যায়নুল আবেদীন তার পিতার সাথে কারবালা ময়দানে অবস্থান করেন। তার বয়স কম হওয়ায় কেউ কেউ বলেন তিনি পীড়িত থাকায় বেঁচে যান। তার বয়স ছিল তখন বছর। কেউ কেউ বলেন, তার বয়স ছিল ২৩ বছরের অধিক। উবায়দুল্লাহ্ ইবন যিয়াদ তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। পর মহান আল্লাহ্ তাকে এ কাজ থেকে বিরত রাখেন। কোন কোন পাপিষ্ঠ তাকে হত্যা করার জন্যে ইয়াযীদ ইবন মুআবিয়াকে ইঙ্গিত করেছিল, তাকেও আল্লাহ তা'আলা এ কাজ থেকে বিরত রাখেন। এরপর ইয়াযীদ তাকে সম্মান করত, মর্যাদা প্রদান করত এবং নিজের সাথে মজলিসে বসাত। যায়নুল আবেদীনকে ব্যতীত ইয়াযীদ খাদ্য গ্রহণ করত না। তারপর ইয়াযীদ যায়নুল আবেদীন ও তাঁর পরিবারকে পবিত্র মদীনায় প্রেরণ করে। পবিত্র মদীনাতেও যায়নুল আবেদীন সম্মানিত ও মর্যাদাবান ছিলেন।
ইবন আসাকির বলেন, দামেশকে একটি মসজিদ তৈরী করা হয়েছে, যা মসজিদে যায়নুল আবেদীন নামে প্রসিদ্ধ। আল্লামা ইবন কাছীর (র.) বলেন, দামেশকে জামে মসজিদের পূর্বদিকে যায়নুল আবেদীনের মাযার অবস্থিত। আবদুল মালিক ইবন মারওয়ান তাকে দ্বিতীয় বার দামেশকে আপ্যায়ন করেছিলেন এবং রােমের সম্রাট থেকে প্রাপ্ত পত্রের উত্তর প্রদান কালে, মুদ্রা সংক্রান্ত ব্যাপারে ও পত্র লিখার নিয়ম পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি যায়নুল আবেদীন থেকে পরামর্শ গ্রহণ করেছিলেন। ইমাম যুহরী (র.) বলেন, আমি কুরায়শের কোন ব্যক্তিকে তার চেয়ে বেশী পরহেযগার ও মর্যাদাবান দেখি নাই। তাঁর পিতা ইমাম হুসায়ন (রা.) যখন শাহাদতবরণ করেন, তখন তিনি তার পিতার সাথে ছিলেন। তিনি পীড়িত ছিলেন এবং তার বয়স ছিল তখন ২৩ বছর। উমর ইবন সা'দ বলেন, এ পীড়িত লোকটির কোন ক্ষতি সাধন করো না। | আল্লামা আল-ওয়াকিদী বলেন, তিনি ছিলেন লোকজনের মধ্যে বেশী পরহেযগার, বেশী ইবাদতগুর এবং মহান আল্লাহর ভয়ে বেশী ভীতসন্ত্রস্ত। যখন তিনি চলাফেরা করতেন তিনি গর্ববোধ অহংকার করতেন না। তিনি সাদা পাগড়ী বাঁধতেন এবং পিছনের দিকে পাগড়ীর লেজ ঝুলিয়ে দিতেন। তার কুনিয়াত আবুল হাসান। কেউ কেউ বলেন, তার কুনিয়ত আবু মুহাম্মদ। আবার কেউ কেউ বলেন, তার কুনিয়ত আবু আবদুল্লাহ্।
মুহাম্মদ ইবন সা'দ বলেন, তিনি ছিলেন বিশ্বস্ত, আমানতদার, অধিক হাদীস বর্ণনাকারী, মর্যাদাবান, মহান ও পরহেযগার। তার মাতার নাম গাযালাহ। ইমাম হুসায়ন (রা.)-এর শাহাদত বরণ করার পর তার উপর কর্তৃত্ব করেন তার গোলাম, যুবায়দ। তার গর্ভে যে সন্তান জন্ম নেয় তার নাম আবদুল্লাহ ইবন যুবায়দ। তিনি ছিলেন ছোট আলী। আর বড় আলী তার পিতার সাথে নিহত হন। একাধিক বর্ণনাকারী উপরোক্ত মন্তব্যটি পেশ করেন।
সাঈদ ইবন মুসায়্যিব, যায়দ ইবন আসলাম, মালিক ও আবু হাযিম বলেন, আহলে বায়তের সদস্যদের মধ্যে কেউ তাঁর মত ছিলেন না।
ইয়াহইয়া ইবন সাঈদ আল-আনসারী বলেন, আলী ইবন হুসায়ন ছিলেন শ্রেষ্ঠ হাশিমী। তাকে আমি বলতে শুনেছি তিনি বলতেন : হে মানবমণ্ডলী! তােমরা আমাদেরকে ইসলামের ন্যায় ভালবাস। আমরা ক্রমে লজ্জিত হওয়া পর্যন্ত যেন তোমাদের মহব্বত আমাদের জন্যে সব সময় অক্ষুন্ন থাকে। অন্য এক বর্ণনায় আছে, যতক্ষণ না তোমরা জনগণের কাছে আমাদের জন্যে হিংসার পাত্র হয়ে উঠবে। আল-আসমাঈ (র.) বলেন, শুধুমাত্র আলী ইবন হুসায়ন (যায়নুল আবেদীন)-এর মাধ্যমে ইমাম হুসায়ন (রা.)-এর বংশধারা জারী ছিল। তার চাচা হাসানের সন্তানের মাধ্যমে ব্যতীত আলী ইবন হুসায়ন বা যায়নুল আবেদীনের কোন বংশধারা বিরাজমান ছিল না। মারওয়ান ইন হাকাম তাকে বলল, যদি আপনি দাসী গ্রহণ করেন, তাহলে আপনার সন্তান বেশী হবে। তিনি তখন বললেন, আমার এরূপ সম্পদ নেই যার দ্বারা আমি দাসী খরিদ করব। তখন তিনি তাকে এক লাখ মুদ্রা ধার দেন এবং তার জন্য কিছুসংখ্যক দাসী খরিদ করেন। তারা তার জন্যে সন্তান জন্ম দিল এবং এভাবে তার বংশ বৃদ্ধি পেল। তারপর মারওয়ান যখন মৃত্যু শয্যায় শয্যাগত হয়, তখন সে ওসিয়ত করে যায় যেন তার এ ঋণের অর্থ যায়নুল আবেদীন হতে নেওয়া না হয়। তার থেকেই হযরত ইমাম হুসায়ন (রা.)-এর সমস্ত বংশ দেখতে পাওয়া যায় । আবূ বাকর ইবন আবূ শায়বাহ বলেন, ইমাম যুহরী যায়নুল আবেদীন হতে, তিনি তাঁর পিতা ও তাঁর দাদা হতে শুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেন যে, ইমাম যায়নুল আবেদীন একদিন যে ঘরে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন সে ঘরটি আগুন লেগে পুড়ে যায়। যখন তিনি সালাত শেষ করেন, তখন পরিবারের সদস্যরা তাকে বলল, আপনি কেন সালাত থেকে বিরত রইলেন না? তিনি বলেন, আমি এ অগ্নি থেকে অন্য অগ্নি নিয়েই বেশী বিভোর ছিলাম। তিনি যখন উযু করতেন, তখন বিবর্ণ হয়ে যেতেন। আর যখন সালাতে দাঁড়াতেন ভয়ে কাঁপতে থাকতেন। যখন তাঁকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, তখন তিনি বলেন, তোমরা কি জান, আমি কার সামনে দাঁড়াচ্ছি? এবং কার সামনে চুপি চুপি কথা বলছি ? যখন তিনি হজ্জ করতে মনস্থ করেন ও তালবিয়াহ পড়ার ইচ্ছে করলেন, তিনি কাঁপতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, আমার ভয় হচ্ছে যদি আমি বলি লাব্বায়কা আল্লাহুম্মা লাব্বায়কা অর্থাৎ “হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে হাযির, হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে হাযির।” যদি আমাকে বলা হয়, লা লাব্বায়কা অর্থাৎ তোমার উপস্থিতি মনযুর করা হবে না। তারপর তারা সকলে তাকে তালবিয়াহ পড়ার জন্য। উৎসাহিত করল। যখন তিনি তালবিয়াহ পাঠ করলেন, তখন তিনি বেহুশ হয়ে গেলেন এমনকি সাওয়ারী থেকে নীচে পড়ে গেলেন। তিনি দিবারাত্র এক হাজার রাকআত সালাত আদায় করতেন।
তাউস বলেনঃ হাতীমের কাছে সিজদারত অবস্থায় তাকে আমি বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, তোমার নগণ্য বান্দাহ তোমার প্রতি উৎসর্গিত, তোমার ভিখারী তোমার প্রতি উৎসর্গিত, তোমার ফকীর তোমার প্রতি উৎসর্গিত।
তাউস আরো বলেন, আল্লাহর শপথ, আমি যে মুসীবতেই তার দু'আ কামনা করতাম, সে মুসীবতই আমা হতে দূর হয়ে যেত।
ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেন যে, তিনি ছিলেন রাতের বেলায় বেশী বেশী সাদাকা প্রদানকারী এবং তিনি বলতেন, রাতের সাদাকা প্রতিপালকের ক্রোধকে নির্বাপিত করে, অন্তর ও কবরকে আলােকিত করে এবং কিয়ামতের দিন বান্দা হতে অন্ধকার দূর করবে। আর আল্লাহ তা'আলা তার সম্পদকে দ্বিগুণ করে দেবেন।
মুহাম্মদ ইবন ইসহাক বলেন, কতিপয় লোক পবিত্র মদীনায় খুব সুখে জীবন যাপন করতেন। কিন্তু তারা জানতেন না কোথা হতে তারা জীবনোপকরণ পেতেন এবং কে তাদেরকে এ জীবনোপকরণ সরবরাহ করতেন। তবে আলী ইবন হুসায়ন (রা.) যখন ইনতিকাল করেন, তখন তারা এ সুযোগ হারিয়ে ফেলে এবং তারা বুঝতে পারে যে, তিনিই ঐ ব্যক্তি যিনি রাতের বেলায় তাদের যাবতীয় সামগ্রী তাদের ঘরে পৌছিয়ে দিতেন। তিনি যখন ইন্তিকাল করেন, তখন পরিবারের সদস্যরা তার পিঠে ও হাতে বোঝা বহন করার দাগ দেখতে পেলেন। তিনি বিধবা এবং মিসকীনদের ঘরে রাতের বেলায় বোঝা পৌছিয়ে দিতেন। কেউ কেউ বলেন, তিনি পবিত্র মদীনায় ১০০টি পরিবারের রসদ সরবরাহ করতেন। কিন্তু, তারা তার ওফাত পর্যন্ত সরবরাহকারীকে জানত না। একদিন মুহাম্মদ ইবন উসামা ইবন যায়দের ঘরে সেবা শুশ্রুষার জন্য আলী ইবন হুসায়ন (রা.) প্রবেশ করেন। তখন ইব্ন উসামা ক্রন্দন করতে লাগলেন। তিনি তখন তাকে বললেন, তুমি কেন কাঁদছ? তিনি বললেন, ঋণ পরিশোধের জন্য। তিনি বললেন, তোমার ঋণ কত দীনার? ইবন উসামা বলেন, ১৫ হাজার দীনার। অন্য এক বর্ণনায় আছে ১৭ হাজার দীনার। আলী ইবন হুসায়ন (রা.) বললেন, এ ঋণ পরিশোধ করার দায়িত্ব আমি নিলাম। আলী ইবন হুসায়ন (রা.) বলেন, হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) ও হযরত উমর (রা.) রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর জীবদ্দশায় যেরূপ মান-মর্যাদার অধিকারী ছিলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর ইতিকালের পরেও তার কাছে তাদের সে রূপই মানমর্যাদা অক্ষুন্ন রয়েছে। একদিন এক ব্যক্তি তার নিকট থেকে কিছু দান-খয়রাত গ্রহণ করে, কিন্তু তিনি তাকে উপেক্ষা করছিলেন। মনে। হয় যেন তিনি তার কথা শুনছিলেন না। তখন তাকে লোকটি বলল, আমাকে আরো কিছু। সাহায্য করুন। আলী ইবন হুসায়ন (রা.) তাকে বললেন, আমি তোমাকে উপেক্ষা করছি।
তিনি একদিন মসজিদ থেকে বের হন, তখন একটি লোক তাকে গালি দিল। লোকজন। তাকে তাড়া করল। আলী ইবন হুসায়ন (রা.) বলেন, তাকে তোমরা ছেড়ে দাও। তারপর তিনি তাকে সম্বোধন করেন এবং বলেন, তোমার কাছে আল্লাহ্ তা'আলা আমাদের যেসব দোষত্রুটি লুকিয়ে রেখেছেন তা অনেক। তোমার কি কোন প্রয়োজন আছে যা দূর করার জন্য আমি তোমাকে কোন সাহায্য করতে পারি? লোকটি তখন লজ্জাবোধ করতে লাগল। তারপর তিনি তার গায়ের কালো চাদরটি দিয়ে দেন ও তাকে এক হাজার দিরহাম দেওয়ার হুকুম দেন। এরপর লোকটি যখনই আলী ইবন হুসায়নকে দেখতেন, তখনই বলতেন, আপনি ত নবীর সস্তান।
ইতিহাসবিদগণ বলেনঃ একদিন আলী ইবন হুসায়ন (রা.) বলেন, চিন্তাধারা একটি দর্পণের ন্যায়, তার মধ্যে মুমিন বান্দা তার কল্যাণ ও অকল্যাণ দেখতে পায়।
ইতিহাসবিদগণ আরো বলেন, একদিন আলী ইবন হুসায়ন (রা.) এবং হাসান ইবন হাসান (রা.)-এর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। আর এ দু’জনের প্রতিদ্বন্দিতা বিরাজমান ছিল। হাসান ইবন হাসান কিছু কটু কথা বললেন। কিন্তু, আলী ইবন হুসায়ন (রা.) চুপ থাকলেন। যখন রাত। এল আলী ইবন হুসায়ন, হাসান ইবন হাসান-এর বাড়ী গেলেন এবং বললেন, হে চাচাত ভাই! যদি তুমি সত্য বলে থাক মহান আল্লাহ যেন আমাকে ক্ষমা করেন। আর যদি তুমি মিথ্যে বলে। থাক, তাহলে মহান আল্লাহ যেন তোমাকে ক্ষমা করে দেন। তোমার উপর মহান আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। তারপর তিনি ফিরে আসলেন। এরপর হাসান ইবন হাসান, আলী ইবুন। হুসায়ন-এর সাথে সাক্ষাত করেন এবং তার সাথে সন্ধি করেন। আলী ইবন হুসায়নকে একদিন জিজ্ঞাসা করা হলো, জনগণের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশী আশংকাজনক অবস্থায় আছে? তিনি বললেন, যিনি দুনিয়াকে নিজের জন্য কোন গুরুত্বই দেন না। তিনি আরো বলেন, বন্ধু-বান্ধবদের হারানোই দীনতা। তিনি আরো বলতেন, একটি সম্প্রদায় মহান আল্লাহকে ভয় করে ইবাদত করে। আর এই ইবাদত গোলামদের ইবাদত। অন্য একটি সম্প্রদায় মহান আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাঁরই ইবাদত করে। এ হলো ব্যবসায়ীদের ইবাদত। অন্য একটি দল মহান আল্লাহর প্রতি মহব্বত ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের জন্য মহান আল্লাহর ইবাদত করে। আর তা হলো স্বাধীন সৎ লোকের ইবাদত। একবার তিনি তার ছেলেকে বলেন, ফাসিকের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করবে না। কেননা, সে তোমাকে এক টুকরো খাদ্যের বিনিময়ে বিক্রি করে দেবে। এমনকি তার চেয়ে কম মূল্যমানের বস্তুর বিনিময়েও তোমাকে বিক্রি করবে। যা সে অর্জন করতে প্রয়াস পাবে। কিন্তু, তা তার জন্য সম্ভব হবে না। তুমি কোন কৃপণ ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করবে না। কেননা, সে তোমাকে তার কাছে রাখা তোমার প্রয়োজনীয় সম্পদের অপমান করবে। কোন মিথুকের সাথেও বন্ধুত্ব স্থাপন করবে না। কেননা, সে মরীচিকার ন্যায়। দূরবর্তীতে অবস্থিত লোককে তোমার নিকটে দেখাবে। আর নিকটবর্তীতে অবস্থিত লোককে তোমার থেকে অনেক দূরে দেখাবে। কোন বোকা লোকের সাথেও তুমি বন্ধুত্ব স্থাপন করবে।
কেননা, সে তোমার উপকার করতে গিয়েও তোমার ক্ষতি করে বসবে। কোন সম্পর্কচ্ছেদকারীর সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করবে না। কেননা, সে মহান আল্লাহর কিতাবে মালউন। (লা'নতপ্রাপ্ত কিংবা অভিশপ্ত) বলে অভিহিত হয়েছে। সূরায়ে মুহাম্মদ-এর ২২ ও ২৩ নং আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
فهل عسيتم إن توليتم أن تفسدوا في الأرض وتقطعوا أرحم أولئك الذين لعنهم الله فأصمهم وأعمى أبصارهم .
অর্থাৎ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয়ের সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে করেন অভিশপ্ত, আর করেন বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন। আলী ইবন হুসায়ন (রা.) যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন, তখন তিনি লোকজনের কাঁধ। ডিঙ্গিয়ে যেতেন ও যায়দ ইবন আসলামের মজলিসে উপবিষ্ট হতেন। নাফি' ইবুন জুবায়র ইবুন। মুতইম তাকে বলেন: “আল্লাহ পাক আপনাকে ক্ষমা করুন। আপনি জনগণের সরদার। শিক্ষিত লোক ও কুরায়শদের মজলিস ডিঙ্গিয়ে আপনি কালো গোলামের মজলিসে গিয়ে কেন। উপবিষ্ট হন?” আলী ইবন হুসায়ন (রা.) তাকে বলেন, “একজন মানুষ ঐ জায়গায় বসেন, যেখানে তিনি উপকার লাভ করেন। আর জ্ঞানতো যেখানে থাকে সেখান থেকে অন্বেষণ করতে হয়।” মাসউদ ইবন মালিক হতে আল-আ'মাশ বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদিন আমাকে আলী ইবুন হুসায়ন (রা.) বলেন, “তুমি কি আমার ও সাঈদ ইবন জুবায়রের মধ্যে একদিন সাক্ষাত করাতে পার ?” আমি বললাম, এতে আপনার কি কাজ হবে ? তিনি বললেন, “আমি তাকে এমন কয়টি কথা জিজ্ঞাসা করতে চাই যেগুলোর দ্বারা আল্লাহ তা'আলা আমাদের উপকার করবেন, অপকার করবেন না। কেননা, তারা (ইরাকবাসীরা) আমাদেরকে এমন কয়েকটি দোষে দোষারোপ করছেন যেগুলো আমাদের মধ্যে কিছুই নেই।”

04/02/2025

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
০৪ শা’বান ১৪৪৬ হিজরী:
হযরত আল আব্বাস ইবনে আলী (রাদ্বি.)-এর জন্মদিবস।
হযরত আল আব্বাস ইবনে আলী (রাদ্বি.) ইসলামের চতুর্থ খলিফা আমিরুল মু’মিনীন আসাদুল্লাহিল গালিব হযরত আলি ইবনে আবি তালিব (রা.)’র পুত্র। তিনি হযরত ইমাম হাসান এবং ইমাম হোসাইন (রা.)’র সৎ ভাই এবং কারবালার যুদ্ধে হোসাইনী সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধান ছিলেন।
তিনি হোসাইন ইবনে আলী কাফেলারও প্রধান ছিলেন। পবিত্র পাহাড় সাফাও মারওয়া মধ্যে দূরত্ব যতটুকু আল আব্বাস ইবনে আলীর মাজার ও ইমাম হোসাইনের মাজারের মধ্যবর্তী দূরত্বও ঠিক একই। মাজারটি আহলে বাইতের অনুসারীদের কাছে বিশেষভাবে সম্মানিত। আহলে বাইতের অনুসারীরা প্রতি বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় মুহররম মাসে জিয়ারত করতে বেশি আাসন। বহু বছরের পরিবেশগত প্রভাবের কারণে ইউফ্রেটিস নদীর প্রবাহের দিক পরিবর্তিত হয়েছে। কারবালা যুদ্ধের প্রায় চৌদ্দ শত বছর পর, নদীটি আল আব্বাস ইবনে আলীর মাজার পাশ হয়ে বয়ে গেছে এবং মাজারকে এটি প্রদক্ষিণ করে আছে। এখন বলা হয় যে ইউফ্রেটিস নদী আল আব্বাস ইবনে আলীর মাজারের কাছে চলে এসেছে। বর্তমান সময়ে মাজারের ভিতর এবং বাহিরে ধারাবাহিক সংযোজন ও সাজ সজ্জার কাজ সম্পন্ন হয়েছে, যেমন গম্বুজের সোনালি বার্নিশ কাজ এবং অতি সম্প্রতি মাজার আঙ্গিনায় ছাদের ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে তীর্থযাত্রীদের জন্য অধিক বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যায়। প্রতি বছর সমগ্র বিশ্ব থেকে লাখো অনুসারীগণ আল আব্বাসের মাজার জিয়ারত করতে আসেন।
ইতিহাস এবং নকশা
বিভিন্ন রাজবংশের সম্রাট ও রাজাগণ আল আব্বাস ইবনে আলীর মাজারে বিভিন্ন প্রকারের মূল্যবান উপহার ও প্রশংসনীয় দ্রব্য বস্তু উৎসর্গ করেন। ১৬২২ সালে আব্বাস শাহ সাফাবি রওজার ওপর গম্বুজটির অলংকরণ করেন। তিনি সমাধির চারপাশে জানালার ব্যবস্থা করেন। মাজারের আধুনিক নকশার অধিকাংশই করেছেন ফারসী ও মধ্য এশিয়ার স্থাপত্যবিদরা। আল আব্বাসের রওজাটিতে খাঁটি স্বর্ণের আবরণ দেওয়া হয়েছে এবং রওজার চারপাশে রুপা দিয়ে তৈরী জালি দ্বারা বেষ্টন করা হয়েছে। মাজারের মেঝেতে ইরানের গালিচা বিছানো হয়েছে।
হযরত আব্বাস ইবনে আলী (রাদ্বি.) কারবালার যুদ্ধে শহীদ হন। ইরাকের কারবালায় হযরত ইমাম হোসাইন (রাদ্বি.)-এর মাযারের কাছে তাঁর মাজার।

Want your school to be the top-listed School/college in Chittagong?

Click here to claim your Sponsored Listing.

Videos (show all)

মাইজভাণ্ডারী একাডেমি ওয়েবিনার (পর্ব ৪৭(
‘মাইজভাণ্ডারী একাডেমি’ ওয়েবিনার (পর্ব ৪৬):
‘মাইজভাণ্ডারী একাডেমি’ ওয়েবিনার (পর্ব ৪৪)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমঅষ্টাদশ পর্ব: 'আত্মীয়তার সম্পর্কের গুরুত্ব’সঞ্চালনায়: মাওলানা আহমেদ রেজা ফারুকী, খতীব, সুপ্রি...
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমসপ্তদশ পর্ব: 'পারিবারিক সহিংসতা রোধে সুফিবাদ চর্চা’সঞ্চালনায়: মাওলানা আহমেদ রেজা ফারুকী, খতীব...
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমষষ্ঠদশ পর্ব: 'ইসলামে নারীর মর্যাদা’সঞ্চালনায়: মাওলানা আহমেদ রেজা ফারুকী, খতীব, সুপ্রিম কোর্ট ...
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমষষ্ঠদশ পর্ব: 'ইসলামে নারীর মর্যাদা’আগামী ১২ জানুয়ারি ২০২৪ শুক্রবার বিকেল ৪.৩০ মিনিটে SZHM Tru...
মাইজভাণ্ডারী একাডেমি ওয়েবিনার (৪৪)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমপঞ্চদশ পর্ব: 'সুফি দর্শনে পরমতসহিষ্ণুতা’আজ শুক্রবার বিকেল ৪.৩০ মিনিটে SZHM Trust নিবেদিত ইসলা...
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমপঞ্চদশ পর্ব: 'সুফি দর্শনে পরমতসহিষ্ণুতা’আগামী ৫ জানুয়ারি ২০২৪ শুক্রবার বিকেল ৪.৩০ মিনিটে SZHM...
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমচতুর্দশ পর্ব: ‘সকলের নবী হযরত মুহাম্মদ (দ.)’সঞ্চালনায়: মাওলানা আহমেদ রেজা ফারুকী, খতীব, সুপ্র...
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমচতুর্দশ পর্ব: ‘সকলের নবী হযরত মুহাম্মদ (দ.)’আগামী শুক্রবার বিকেল ৪.৩০ মিনিটে SZHM Trust নিবেদ...

Location

Telephone

Address

Dew Udayan, Level-12, Bus Terminal Connecting Road, Chandgaon
Chittagong
4212