06/12/2021
উদ্যোক্তা
অর্থনীতির গেম চেঞ্জার–২২
নতুন নতুন শিল্পকারখানা করাই ছিল তাঁর নেশা
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য এখন অর্থনীতিতে। ৫০ বছরে বাংলাদেশ নামের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হয়ে উঠেছে চমকে ভরা জাদুর বাক্স। সাহায্যনির্ভর বাংলাদেশ এখন বাণিজ্যনির্ভর দেশে পরিণত। তবে যাত্রাপথটা সহজ ছিল না। বড় ঝুঁকি নিয়ে অভিনব পথে এগিয়ে গেছেন আমাদের সাহসী উদ্যোক্তারা। এ সাফল্যের পেছনে আরও যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অর্থনীতিবিদ যেমন ছিলেন, আছেন নীতিনির্ধারকেরাও। মূলত অর্থনীতির এসব অগ্রনায়ক, পথ রচয়িতা ও স্বপ্নদ্রষ্টারাই ৫০ বছরে বিশ্বে বাংলাদেশকে বসিয়েছেন মর্যাদার আসনে।
আমরা বেছে নিয়েছি সেই নায়কদের মধ্যে ৫০ জনকে। আমাদের কাছে তারাই অর্থনীতির ‘গেম চেঞ্জার’।
মাসুদ মিলাদ
নতুন নতুন শিল্পকারখানা করাই ছিল তাঁর নেশা
১৯৪৬ সাল। দেশভাগের ঠিক আগের বছর। সে বছরই নোয়াখালীর অজপাড়াগাঁ থেকে প্রায় শূন্য হাতে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় এসেছিলেন এক তরুণ। বয়স তখন ১৭। টিকে থাকার লড়াইয়ে প্রথম চাকরি নেন মুদিদোকানে। তবে তাঁর স্বপ্ন ছিল অনেক বড়। চাকরি ছেড়ে পাহাড়তলী বাজারেই চার বছরের মাথায় নিজেই মনিহারি পণ্যের দোকান দিয়েছেন। আবার সেই দোকানের লাভের টাকায় চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বাজারে বিড়ির কারখানা গড়ে তোলেন। দুজন কর্মী নিয়ে শুরু করেন হাতে বানানো বিড়ি। পরে চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লায়ও সম্প্রসারণ করেছেন বিড়ি কারখানা।
এভাবে ব্যবসা একটু একটু করে বড় হতে শুরু করে। বিড়ি কারখানার বাইরে ইটভাটা ও লুঙ্গি তৈরির কারখানাও করেছেন। করেছেন সিনেমা হলে বিনিয়োগ। পণ্য বাণিজ্যও শুরু করেছিলেন। আবার শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে জমিও কিনে রেখেছিলেন। বেসরকারীকরণের শুরুর দিকে নতুন নতুন কারখানার জন্য আবেদনও করে রেখেছিলেন। তবে বড় শিল্পের গোড়াপত্তনের আগে ১৯৭৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৪৯ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি আবুল খায়ের গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আবুল খায়ের।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
মৃত্যুর আগে আবুল খায়ের যেন উত্তরসূরিদের জন্য উদ্যোক্তা হওয়ার বীজ বুনে গিয়েছিলেন। তাঁর সন্তানেরা সেখান থেকে কঠোর পরিশ্রমে আবুল খায়ের গ্রুপকে নিয়ে গেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপে। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) বাংলাদেশের বেসরকারি খাত নিয়ে ২০২০ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে আয়ের দিক থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে এমন ২৩টি কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে আবুল খায়ের গ্রুপ। ওই প্রতিবেদনে যাদের বার্ষিক আয় দেখানো হয় ১৭০ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। যদিও এখন গ্রুপটির বার্ষিক আয় আরও অনেক বেশি।
আবুল খায়ের গ্রুপ বর্তমানে শিল্পের অনেক খাতেই নেতৃত্ব দিচ্ছে। কয়েকটা উদাহরণই যথেষ্ট। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় সিমেন্ট কারখানা শাহ সিমেন্ট আবুল খায়ের গ্রুপের। ঢেউটিনের বাজারেও তারা শীর্ষে আছে গরু মার্কা ঢেউটিন ব্র্যান্ড নিয়ে। আবার রডের বাজারে একেএস ব্র্যান্ডের অবস্থান দ্বিতীয়। দ্রুততম সময়ে স্যানিটারি পণ্যে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে তাদের ব্র্যান্ড স্টেলা। মার্কস ব্র্যান্ডের গুঁড়ো দুধসহ অনেক খাদ্যপণ্যে শীর্ষ অবস্থানটি তাদের। তাদের চায়ের ব্র্যান্ড সিলন বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে।
দোকানের চাকরি দিয়ে শুরু
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের নাটেশ্বর গ্রামের সেরাজুল হকের তিন সন্তানের মধ্যে মেজ আবুল খায়ের। ব্রিটিশ আমলে ১৯২৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। গ্রামের স্কুলেই পড়াশোনা করেন। পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে নবম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় গ্রামের পরিচিত এক ব্যক্তির হাত ধরে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে আসেন তিনি। সেটি ১৯৪৬ সালে। সেখানে গাফফার সাহেব নামের এক ব্যক্তির মুদিদোকানে চাকরি নেন। মাস শেষে যা বেতন পেতেন, খরচের জন্য রেখে বাকিটা বাড়িতে পাঠিয়ে দিতেন। এভাবে কয়েক বছর চাকরি করেন। মুদিদোকানে চাকরি করে নিজের দোকান করার স্বপ্ন জাগে তাঁর। বাবা সেরাজুল হককে সে কথা জানালেন। তাঁর বাবা ছেলের আশা পূরণের জন্য গ্রামে জমি বেচে ছেলের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন। ১৯৫০-৫১ সালের দিকে পাহাড়তলী বাজারে মনিহারি পণ্যের দোকান দেন আবুল খায়ের। সে সময় পাহাড়তলীতে হজ ক্যাম্প চালু হয়। হাজিরা ক্যাম্প থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জাহাজে করে হজ করার জন্য সৌদি আরব যেতেন। হাজিদের আনাগোনায় দুই বছরে দোকানের ব্যবসায় বেশ লাভ হয়। তবে তাঁর স্বপ্ন ছিল আরও বড়।
বিজ্ঞাপন
বিড়ি কারখানা দিয়ে শিল্পের হাতেখড়ি
সে সময় পাট, বিড়িশিল্প, ইটভাটা ও হস্তচালিত তাঁতের কারখানার চল। আবুল খায়ের দেখলেন, হাতে বানানো বিড়ির চল সে সময়। দোকানের লাভের টাকায় পাহাড়তলী বাজারেই ১৯৫৩ সালে দুজন কর্মী নিয়ে বিড়ি বানাতে শুরু করেন তিনি। নিজেই আবার সেই বিড়ি বিক্রি করতেন। নাম দেন ‘৪২ নং আবুল বিড়ি’। শুরুতে টেন্ডু পাতা দিয়ে বিড়ি বানানো হতো। পরে কুম্ভ পাতা দিয়ে শুরু হয় বিড়ি বানানো। পাতা সেদ্ধ করে একটু নরম হলে তামাক মুড়িয়ে বিড়ি বানানো হতো। এরপরে কাগজ দিয়ে।
বিড়ির ব্যবসা জমে ওঠে। ধীরে ধীরে চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে ফেনীর পাঁচগাছি, নোয়াখালীর চৌমুহনী ও কুমিল্লার লাকসামেও বিড়ির কারখানা দেন। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় হারাগাছ থেকে তামাকপাতা সংগ্রহ করতেন তিনি। পরে সেখানেও প্রক্রিয়াজাত কারখানা গড়ে তোলেন।
বিড়ির কারখানা সম্প্রসারণের আগে সে সময়ে ইটভাটাও গড়ে তুলেছেন। ১৯৬৪ সালে সীতাকুণ্ডের মাদামবিবির হাট এলাকায় জমি কিনে ইটভাটা গড়ে তোলেন। দুই-তিন বছর পর সেই ইটভাটা বন্ধ করে খুলশীতে মুরগি ফার্মের কাছে ৪৫ একর জমি কিনে ইটভাটা দেন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত এই ইটভাটা চালু ছিল।
শিল্পকারখানার পরে আমদানি বাণিজ্যে মনোনিবেশ করেন আবুল খায়ের। ১৯৬৫ সালে চট্টগ্রামে তখন আমদানি বাণিজ্যে অবাঙালিদের দাপট। বাঙালিরা অবাঙালিদের এজেন্সিতে চাকরি করতেন। সে সময়ে খাতুনগঞ্জের অদূরে জেল রোডে প্রতিষ্ঠান খুলে পণ্য–বাণিজ্যের ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন তিনি।
জেল রোডে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটিতে শুরুতে ৪২ নং আবুল বিড়ি বিক্রি হতো। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে ক্রেতারা পাইকারি দরে বিড়ি নিয়ে যেতেন। ধীরে ধীরে বিড়ির সরঞ্জামও বিক্রি শুরু হয়।
পরে ব্যবসা বড় করার সিদ্ধান্ত নিলেন। করাচি থেকে লাইসেন্স এনে ব্যবসা করতে হতো সে সময়। ধীরে ধীরে আবুল খায়ের ইস্পাতের পাত, সিমেন্ট, নারকেল তেল, গুঁড়ো দুধ, সিগারেটের কাগজ আমদানির ব্যবসায় যুক্ত হন। এখনো গ্রুপের আমদানি বাণিজ্য পরিচালিত হয় পুরোনো এই ভবন থেকে। পুরোনো ভবনটির দোতলায় এখনো গ্রুপটির আমদানি বাণিজ্য পরিচালনা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে আবুল খায়ের গ্রুপের ইস্পাত কারখানা। উত্তরসূরিদের হাত ধরেই এ শিল্প গড়ে ওঠে
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে আবুল খায়ের গ্রুপের ইস্পাত কারখানা। উত্তরসূরিদের হাত ধরেই এ শিল্প গড়ে ওঠেছবি: কৃষ্ণ চন্দ্র দাস
বিড়ির কারখানা, আমদানি বাণিজ্য কিংবা ইটভাটা গড়ে তুলে থেমে যেতে চাননি আবুল খায়ের। নতুন নতুন শিল্পকারখানা করাই যেন তাঁর নেশা। ১৯৬৮ সালে পাহাড়তলী বাজারের কাছে জমি কিনে লুঙ্গি কারখানা করেন। নাম দেন শিশমহল। সে সময় শিশমহল লুঙ্গি খুব জনপ্রিয় ছিল। তবে ১৯৭৩ সালে সুতার অভাবে লুঙ্গির কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। তবে জায়গা ফেলে রাখেননি। পাহাড়তলী বাজার থেকে বিড়ির কারখানা সরিয়ে কাছাকাছি লুঙ্গির কারখানায় সম্প্রসারণ করেন।
দেশ স্বাধীনের পরে ১৯৭৪ সালে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে সিনেমা হলে বিনিয়োগ করেন। রূপভারতী নামের সেই সিনেমা হল ২০০৩ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। তবে আবুল খায়েরের কনিষ্ঠ সন্তান শাহ্ রফিকুল ইসলামের (টিটু) মৃত্যুর পরদিনই পারিবারিক সিদ্ধান্তে সিনেমা হল ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অল্প বয়সে ডায়াবেটিস দানা বাঁধে শরীরে। আবুল খায়ের তবু থেমে থাকতে চাননি। সাগরিকায় টেক্সটাইল কারখানা করার জন্য আবেদন করেছিলেন। সে সময় ধীরে ধীরে বেসরকারীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। উদ্যোক্তারা শিল্প খাতে পা রাখতে শুরু করেছিলেন। তবে বড় স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই মাত্র ৪৯ বছর বয়সে ১৯৭৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন আবুল খায়ের। এ সময় বিড়ির চার কারখানা, ইটভাটা, সিনেমা হল ও জেল রোডে ট্রেডিংয়ের ব্যবসা ছিল তাঁর। শিল্পকারখানা গড়ে তোলার জন্য জমিও রেখে যান।
টিকিয়ে রাখার লড়াই
আবুল খায়ের যখন মারা যান, তখন বড় সন্তান আবুল কাশেম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়তেন। আবুল খায়েরের স্ত্রী মাছুদা বেগম তখন দিশেহারা। একদিকে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা, অন্যদিকে আট ছেলেমেয়ের পড়াশোনা। সব মিলিয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েন তিনি। এ অবস্থায় বড় ছেলে আবুল কাশেম পড়াশোনার পাশাপাশি যুক্ত হন ব্যবসায়। গৃহিণী থেকে মাছুদা বেগম প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক গাজীউল হক ও আবুল খায়েরের ছোট ভাই আবুল হোসেন ব্যবসা টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে পরিবারটির পাশে এসে দাঁড়ান।
কয়েক বছরের মাথায় আবুল খায়েরের রেখে যাওয়া শিল্প ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন উত্তরসূরিরা। এরপর তা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেন। সে সময় রাষ্ট্রমালিকানাধীন কারখানা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছিল। দেশে বেসরকারীকরণ শুরুর দ্বিতীয় ধাপে ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের নাছিরাবাদ শিল্প এলাকায় বালাগাম ওয়ালা ভেজিটেবল প্রোডাক্টস কারখানা তাদের মালিকানায় আসে।
উত্তরসূরিদের এগিয়ে যাওয়া
বিড়ির কারখানা মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল আবুল খায়েরের। তাঁর উত্তরসূরিদের ক্ষেত্রে ছিল বালাগাম ওয়ালা ভেজিটেবল প্রোডাক্টস কারখানা। এই কারখানায় সয়াবিন তেল, শর্ষে ও ঘি তৈরি হতো। পরে একই কারখানায় নারকেল মাড়াই করে তেল প্রক্রিয়াজাত করা হয়।
বড় ছেলে আবুল কাশেম তত দিনে ব্যবসায় বেশ অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। সয়াবিন তেলের কারখানায় ভালো মুনাফা হয়। কারণ, সে সময় চট্টগ্রামে ভোজ্যতেলের কারখানা ছিল হাতে গোনা। এক দশকে ভালো আয় হয় এই কারখানা থেকে। বড় সন্তানের পর ব্যবসায় যুক্ত হন আবুল খায়েরের দ্বিতীয় সন্তান আবুল হাশেম। পরবর্তীকালে ব্যবসায় যোগ দেন আবু সাঈদ চৌধুরী, শাহ্ শফিকুল ইসলাম ও শাহ্ রফিকুল ইসলাম। আগের ব্যবসা আর নতুন শিল্প মিলে বড় হওয়ার পথ তৈরি করে দেয় আবুল খায়ের গ্রুপকে।
বিনিয়োগ থেকে লাভের টাকায় নতুন শিল্প গড়ায় মনোযোগ দেন সন্তানেরা। বাবার মতো সন্তানদেরও ছিল শিল্পকারখানা গড়ার অদম্য স্পৃহা। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৩ সালে ফেনীর মহিপালে ইলিয়াছ ব্রাদার্স থেকে ঢেউটিন কারখানা কিনে নেন। এক বছর পর বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের নাছিরাবাদে জি এম স্টিল লিমিটেডের মালিকানা আসে আবুল খায়ের গ্রুপের হাতে। সেখানে কনডেন্সড মিল্ক ও গুঁড়ো দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ হয়। পুরোনো কারখানা সরিয়ে ১৯৯৭ সালে সীতাকুণ্ডের মাদামবিবির হাটে দেওয়া হয় ঢেউটিনের বড় কারখানা। বিড়ির পর ১৯৯৮ সালে সিগারেট উৎপাদন শুরু করে গ্রুপটি।
বড় শিল্পে রূপান্তর
আবুল খায়েরের উত্তরসূরিদের ভারী শিল্পে হাতেখড়ি হয় ১৯৯৩ সালে। ঢেউটিন দিয়ে শুরুর পর সেই দশকে ঢেউটিন খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন। কারখানা বড় করেছেন। পুরোনোদের ছাড়িয়ে শীর্ষে নিয়ে গেছেন আবুল খায়ের গ্রুপের ঢেউটিনের ব্র্যান্ড গরু মার্কা ঢেউটিনকে। ২০০২ সালে সিমেন্টশিল্পে যুক্ত হয় এ গ্রুপ। মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুরে সিমেন্ট কারখানায় বিনিয়োগ করে তারা। ২০১৮ সালে ডেনমার্কের এফএলস্মিথ প্রযুক্তিতে বিশ্বের একক বৃহত্তম ভার্টিক্যাল রোলার মিল (ভিআরএম) স্থাপন করে শাহ্ সিমেন্ট গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের স্বীকৃতি পায়। বছরে অর্ধকোটি টন সিমেন্ট উৎপাদিত হয় এই কারখানায়। ২০০৪ সালে চা বিপণনে যুক্ত হয় গ্রুপটি। চায়ের বাজারে শতবর্ষী অনেক প্রতিষ্ঠানকে ছাড়িয়ে খুব দ্রুত দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে উঠে আসে গ্রুপটির সিলন ব্র্যান্ডের চা।
২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি সীতাকুণ্ডে রড তৈরির কারখানায় বিনিয়োগ করে। দেশে প্রথম আন্তর্জাতিক মানের ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস পদ্ধতিতে রড উৎপাদন শুরু করে তারা। বার্ষিক ১২ লাখ টন রড উৎপাদনের এই কারখানার উৎপাদন দিয়ে একেএস ব্র্যান্ড বাজারে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে উঠে আসতে খুব বেশি সময় নেয়নি। ২০১১ সালে সিরামিকস শিল্পেও বিনিয়োগ করে তারা। ফেনীর মহিপালে ঢেউটিনের পুরোনো কারখানায় ম্যাচ কারখানা গড়ে তুলেছেন উত্তরসূরিরা। সমুদ্র ও নৌপথে নিজস্ব জাহাজ ও নৌযানের পাশাপাশি সড়কপথে পণ্য পরিবহনে এই প্রতিষ্ঠানের বড় বিনিয়োগ রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
আবুল খায়ের গ্রুপের আমদানি বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার
দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঝে হচ্ছে আ.লীগের কার্যালয়
শূন্য থেকে শীর্ষে
আবুল খায়েরের মৃত্যুর পর থেকে সন্তানেরা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেন। বড় ছেলে আবুল কাশেম এখন গ্রুপ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দ্বিতীয় ছেলে আবুল হাশেম আছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে। তৃতীয় ছেলে আবু সাঈদ চৌধুরী উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চতুর্থ ছেলে শাহ শফিকুল ইসলাম পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। গ্রুপের হাল ধরা চার সন্তানই পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। আবুল খায়েরের মৃত্যুর পর পড়াশোনা অবস্থায় যুক্ত হয়েছেন গ্রুপের ব্যবসা-বাণিজ্যে। অক্লান্ত পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও দূরদর্শিতার কারণে তাঁরা যেখানেই হাত দিয়েছেন, সেখানেই সফল হয়েছেন।
আবুল খায়ের গ্রুপের হাত ধরে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫০ হাজার মানুষের। গত অর্থবছরে গ্রুপটি শুল্ক, কর ও মূসক সব মিলিয়ে সরকারকে রাজস্ব দিয়েছে ৬ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর মিলে গত অর্থবছরের সরকারের যত রাজস্ব আদায় হয়েছে, তার আড়াই শতাংশ দিয়েছে গ্রুপটি। শুধু কর্মসংস্থানই নয়, করোনাকালে পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের মানুষের। দেশে যখন অক্সিজেনের সংকট, তখন দ্রুত গ্রুপটি সারা দেশে ১৭টি অক্সিজেন ব্যাংক স্থাপন করে করোনা রোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। কারখানায় উৎপাদিত অক্সিজেন বিনা মূল্যে বিতরণ করেছে। সমাজের কল্যাণে কাজের শুরুটাও করেছিলেন আবুল খায়ের। নিজ গ্রামে স্কুল গড়ে তুলেছিলেন।
এত বড় শিল্প গ্রুপ হওয়ার ভিত্তিটা যেন তৈরি করে রেখেছিলেন আবুল খায়ের। ১৯৬৮ সালে পাহাড়তলীতে আবুল খায়েরের গড়ে তোলা লুঙ্গি ও বিড়ি কারখানায় এখন আবুল খায়ের গ্রুপের প্রধান কার্যালয়। ১৯৬৪ সালে তাঁর কেনা জমির সঙ্গে প্রয়োজনীয় জমি কিনে ভাটিয়ারীতে সন্তানেরা পরে প্রতিষ্ঠিত করেন ঢেউটিন কারখানা। আবুল খায়েরের কেনা জমির পাশে ২০০৯ সালে রডের কারখানা গড়ে তুলেছেন সন্তানেরা। কুমিল্লার লাকসামে বিড়ি কারখানার জায়গা সম্প্রসারণ করে ১৯৯৮ সালে সিগারেট কারখানা গড়ে তুলেছেন। খুলশীতে ইটভাটার জায়গায় এখন রড ও চায়ের গুদাম। আবুল খায়ের পণ্যের ট্রেডিং শুরু করেছিলেন ১৯৬৫ সালে, জেল রোডে। তাঁর সন্তানেরা শিল্পের পাশাপাশি এখন বহুগুণ বড় করেছেন ট্রেডিংও। এই তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত পাথর আমদানি। শিল্পে রূপ দিতে করেছেন রেডিমিক্স কারখানাও। সবকিছুর যেন বীজ বপন করে দিয়েছিলেন বাবা। সেটিকেই চারাগাছ থেকে মহীরুহে রূপান্তর করেছেন সন্তানেরা।
06/12/2021
UPPER-MIDDLE INCOME STATUS
Experts for boosting infrastructure, logistics development
Rafikul Islam
06 Dec 2021 00:00:00 | Update: 06 Dec 2021 01:37:10
Experts for boosting infrastructure, logistics development
Bangladesh should accelerate development in infrastructure and logistics sectors as part of its vision to achieve upper-middle income country status by the year 2031, says a recent study published by the Business Initiative Leading Development – also known as BUILD.
Analysts further urged the government to declare “Bangladesh Infrastructure Decade 2021-2031” to aid this acceleration, form a comprehensive national logistics development policy, and mark these sectors as high-priority to attract more foreign direct investment.
nagad
They pointed out that the infrastructure decade – if implemented by the government – will become a brand for Bangladesh, indicating heavy investment in the infrastructure sector keeping pace with the country’s growth trajectory.
Big investment opportunities ahead
The BUILD research “Transport and Logistics: The Right Move” says Bangladesh has the potential to become a gateway between South Asia and Southeast Asia, and also function as a transportation hub for those regions.
But Bangladesh’s investment in infrastructure sector is only 3.6 per cent of the GDP. So, investors have a big scope for investing in this sector.
The study estimates that Bangladesh will inject about $300 billion for infrastructure development until the year 2031, reaching 6 per cent – 7 per cent of its GDP, but the country needs such level of investment as soon as possible.
It should be noted that Taiwan, South Korea, China and Vietnam had heavily invested in infrastructure during their own periods of rapid industrialisation.
For this purpose, Taiwan invested 9.5 per cent of its GDP from 1970 to 1990, South Korea invested 8.7 per cent from 1960 to 1990, China on average invested 8 per cent of its GDP in their infrastructure during rapid industrialisation.
Besides, Vietnam’s investment reached 10 per cent of its GDP, while India, Sri Lanka and Philippines invested 5 per cent of their GDPs.
Speaking to The Business Post, a number of economists pointed out the need for private industrial investment playing an active role to accelerate the investment in Bangladesh’s infrastructure and logistics sectors.
Private investment a must
State Minister for Shipping Khalid Mahmud Chowdhury recently said private sector investment is a must for ensuring dynamic logistics, which in turn will help boost diversification of exports.
He continued, “We have to work towards building world-class infrastructure and transportation systems for the sake of sustainability. Around $285 billion in investments will be needed to further develop our transport infrastructure in the next two decades.
Speaking to The Business Post, Executive Director of Policy Research Institute of Bangladesh Dr Ahsan H Mansur said, “The investment in infrastructure and logistics sectors is still very poor. We need a positive initiative or a big vision to achieve the upper middle income country status.
“Our investment in the infrastructure sector is very low compared to many countries, such as South Korea and Taiwan. So, our investment should increase three times in this segment to achieve Bangladesh’s vision. The investment should be over 7 per cent of our GDP.”
Overcoming infrastructural, logistical challenges
Speaking on the issue, BUILD Chairperson Abul Kasem Khan said, “Bangladesh is overburdened with infrastructural challenges, which in turn is causing the country to underperform. Our low logistics performance is damaging business competitiveness and driving up transaction costs.
“Compared to other countries, our logistics costs are much higher due to unpredictable supply chains and inefficient infrastructure. We spend an additional 20 per cent – 30 per cent cost for producing a product in Bangladesh, while other countries spend 10 per cent – 12 per cent.”
A former president of Dhaka Chamber of Commerce & Industry (DCCI), Kasem continued, “The government is setting up mega projects that will be game changers for the economy. I am now requesting the government to form a national logistic policy as soon as possible.
“Many nations have such as policy, but we are yet to get one. Even Saudi Arabia has a ministry named Transport and Logistics Services.”
Kasem recommended setting up a “National Maritime and Port Authority” to facilitate coordination among various maritime sectors.
“This agency will also act as the sole government body responsible for the entire maritime sector, driving its overall planning and development activities, including the Blue Economy. Such an authority will create confidence in this sector.”
Kasem, also the co-chair of Logistics Infrastructure Development Working Committee, then said, “We should now focus on getting private investments and reducing policy constraints to create more opportunities.
“We also need a world-class and efficient infrastructure and logistic eco-system to improve the overall competitiveness of Bangladesh.” Kasem underscored the need for four strategies – port development under PPP, improved connectivity, port-led industrialisation and coastal community development.
08/06/2021
জলবায়ু ঝুঁকি হ্রাসে চাই কূটনৈতিক তৎপরতা
মোতাহার হোসেন
উন্নত বিশ্ব তাদের আরাম, আয়েশ ও ভোগবিলাসের জন্য উন্নয়নের মহাযজ্ঞে লিপ্ত থাকায় পৃথিবী নামক উপগ্রহের বায়ুমন্ডলে কার্বন নিঃসরণ বাড়ছে। সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণতাও বাড়ছে। পাশাপাশি বায়ুমন্ডল উত্তপ্ত হওয়ায় ক্রমশ মেরু অঞ্চলের বরফ গলে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। এতে জলবায়ুর ওপরও পড়ছে বিরূপ প্রভাব। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশসহ ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্র ও সমুদ্র উপকূলবর্তী ব-দ্বীপ অঞ্চলগুলো হুমকিতে পড়বে। বৈশ্বিক উঞ্চতা বৃদ্ধির ফলে বরফ গলার পাশাপাশি বায়ুমন্ডল উত্তপ্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন এই ক্ষতির সিংহভাগ দায় উন্নত দেশগুলোর হলেও ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। এই ক্ষতি ও বাস্তবতার নিরিখে এবারে পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্যও ছিল উক্ত নিবন্ধের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এবারের প্রতিপাদ্য ‘প্রতিবেশের পুনরুদ্ধার, হোক সবার অঙ্গীকার।’ আর স্লোগান হচ্ছে ‘জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করি।’ পরিবেশ, প্রতিবেশ, প্রকৃতি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে উদ্যোগী হবে এই প্রত্যাশা।
জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উন্নত দেশগুলো বায়ুমন্ডলে কার্বন নিঃসরণ কমানোর পাশাপাশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দেওয়ার অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে তা পূরণ করছে না। জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকির প্রধান শিকারে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২০১৬ সাল ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। এ সময় সমুদ্রের উপরিভাগের জলের তাপমাত্রাও বেড়ে গিয়েছিল; যা ‘এল নিনো’ হিসেবে পরিচিত। এর ফলে বিশ্বের অনেক জায়গায় অস্বাভাবিক গরম ও শুষ্ক অবস্থা দেখা দেয়, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৩৬ কোটি কিলোটন কার্বন ডাই-অক্সাইড (সিওটু) বায়ুমন্ডলে নিগর্ত করে বিশ্ব। এর প্রায় ২৯ শতাংশ চায়না এবং ১৪ শতাংশের বেশি কার্বন নির্গত করে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সব দেশ মিলে কার্বন নির্গত করে ৯ শতাংশ। ক্লাইমেট চেঞ্জ পারফরম্যান্স ইনডেক্স (সিসিপিআই-২০১৭) অনুযায়ী, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য বেশি দায়ী যুক্তরাষ্ট্র ও চীন কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বিশ্ব জলবায়ু রক্ষায় নেওয়া কর্মসূচি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৪৩তম এবং চীনের ৪৮তম। জ্বালানি ও জলবায়ু ইস্যু নিয়ে বিশ্বের খ্যাতনামা ২৮০ জন বিশেষজ্ঞের সহযোগিতায় জার্মানভিত্তিক সংস্থা ‘জার্মানওয়াচ’ এবং ইউরোপিয় সংস্থা ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (সিএএন)’ যৌথভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সিসিপিআই-২০১৭-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব জলবায়ু রক্ষায় ২০১৫ সালে প্যারিসে একটি আন্তর্জাতিক জলবায়ু চুক্তির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর পরও কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে কোনো দেশই কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণ করেনি। বায়ুমন্ডলে কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা অর্ধশতাধিক দেশের ওপর এই গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফলাফল অনুযায়ী, কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে এবং এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের কারণে এবার সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। বিগত ২০১৫ সালে প্যারিসে জলবায়ু সম্মেলন কপ (কনফারেন্স অব পার্টিজ)-২১-এর আয়োজক এই দেশের স্কোর ৬৬ দশমিক ১৭। সিসিপিআই-২০১৬ অনুযায়ী দেশটির অবস্থান ছিল অষ্টম। এবার পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও সাইপ্রাস।
সুইডেন একধাপ উঠে এসেছে, যুক্তরাজ্য এক ধাপ নিচে নেমেছে আর সাইপ্রাস দুই ধাপ ওপরে উঠেছে। অষ্টম স্থান দখল করেছে মারাকাশে কপ-২২ আয়োজনকারী দেশ মরক্কো। গতবার দেশটির অবস্থান ছিল দশম। গতবারের চেয়ে দুই ধাপ নিচে নামা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান ৪৩তম। চীন এক ধাপ নেমে বর্তমানে ৪৮তম স্থানে রয়েছে। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু ও উন্নয়ন শীর্ষক সম্মেলন (ইউএনসিইডি) বা ‘রিও আর্থ সামিট’ থেকে জলবায়ু পরিবর্তন এবং এ সংক্রান্ত ঝুঁকির বিষয়ে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টির কার্যক্রম শুরু হয়। বায়ুমন্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমাতে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন কনভেনশন বা ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি)-এর সদস্য দেশগুলোকে নিয়ে ১৯৯৫ সালে বার্লিনে প্রথম কপ (কনফারেন্স অব পার্টিজ) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ স্পেনে অনুষ্ঠিত হয় কপ-২৩। কিন্তু প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়ন থেকে ট্রাম্পের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ায় অনিশ্চিত হয়েছে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়ন। এখন অবশ্য বাইডেন ফের এই চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে তার অঙ্গীকার ব্যক্ত করায় আবার আশার আলো দেখছে বিশ্ব।
এমনি অবস্থায় স্কটল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য কপ-২৪-এর পুরো বিষয়টি নিয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে, প্যারিস জলবায় চুক্তির প্রকৃত ভবিষ্যৎ। আপাতত সে পর্যন্তু অপেক্ষা করতে হবে বাংলাদেশসহ জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশসমূহকে। জলবায়ু বিশ্লেষকরা বলছেন, তিন দশক ধরে জাতিসংঘ সমর্থিত ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) ও ইউএনএফসিসিসি কেবল নামের মধ্যেই এর কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রেখেছে। কপ-২১ সম্মেলনে নীতিনির্ধারকদের আলোচনা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য খানিকটা আশার সঞ্চার করেছিল। প্যারিসে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে বারাক ওবামার নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রসহ অংশগ্রহণকারী ১৮৭ দেশের প্রতিনিধিরা যত দ্রুত সম্ভব কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমানোর জন্য সম্মত হন। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কিছু দেশের প্রতিশ্রুতি ও দৃঢ় অঙ্গীকার না থাকা সত্ত্বেও সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা সর্বোচ্চ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ইউএনএফসিসিসি-এর ১৯৭ সদস্য দেশের মধ্যে ১০৯ দেশ প্যারিস চুক্তি অনুমোদন করেছে এবং এটি কার্যকর হয়েছে গত বছরের ৪ নভেম্বর থেকে। বাংলাদেশ ২১ সেপ্টেম্বর প্যারিস চুক্তির ‘ইনস্ট্রুমেন্ট অব রেকটিফিকেশন’ জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে হস্তান্তর করে। বাংলাদেশের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিতে ২০৩০ সাল নাগাদ স্বাভাবিকের তুলনায় ৫ শতাংশ কম কার্বন নিঃসরণ এবং বিদেশি সহায়তা পেলে আরো ১৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করার কথা বলা হয়। কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমানোর বিষয়টি অনেকটাই নির্ভর করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ওপর। এ দুই ক্ষমতাধর দেশের প্রতিনিধিরা যদি বিদ্যুৎ ও জীবাশ্ম জ্বালানি শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ডি-কার্বোনাইজ পদ্ধতিকে সক্রিয়ভাবে গ্রহণ করে, তাহলে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমার ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
মারাকাশে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলন কপ-২২ এ বিশ্বনেতাদের বিভিন্ন ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তখন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত থাকা ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজ দেশের অভ্যন্তরে অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে নজর দেবেন। পরবর্তীকালে তিনি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়ন থেকে বেরিয়ে যান। নির্বাচনে জয়লাভ করে চলতি বছর মার্চে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এ-সংক্রান্ত এক নির্বাহী আদেশে সই করেন। একইভাবে ১৯৯২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের কিয়োটো প্রটোকল থেকে সরে আসার ফলে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক একটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে বিশ্বকে আরো দুই দশক অপেক্ষা করতে হয়েছিল। অবশ্য আশার কথা বাইডেন প্রশাসন জলবায়ু ঝুঁকি হ্রাসে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে অঙ্গীকার ব্যক্ত করায় আশার আলো দেখছে বিশ্ব।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশসমূহের অর্থ সহায়তার আহ্বানে সাড়া দিতে ১৯৪ দেশ নিয়ে ইউএনএফসিসিসি-এর কানকুন সম্মেলনে ২০১০ সালে গঠন করা হয় গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) বা সবুজ জলবায়ু তহবিল। দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক এই সংস্থাটির লক্ষ্য ছিল কার্বন নিঃসরণে এগিয়ে থাকা উন্নত দেশ ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ সহযোগিতা নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে থাকা অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা প্রদান করা। তবে এখনো আশানুরূপ তহবিল জোগাড় করতে সক্ষম হয়নি জিসিএফ। বাংলাদেশ জিসিএফের অস্থায়ী সদস্য ছিল। বাংলাদেশ নিজ উদ্যোগে নিজস্ব সম্পদ দিয়ে ৪০০ মিলিয়ন ডলার তহবিলের ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে বিশ্বদরবারে প্রশংসিত হয়। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমাদের সরকারের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও গৃহীত কর্মসূচির কারণে বাংলাদেশকে জিসিএফের স্থায়ী সদস্য হিসেবেও কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। বর্তমানে জিসিএফের খুব বেশি অর্থ নেই। ২০২০ সালের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার তহবিল গঠনের লক্ষ্যে জিসিএফের সদস্য দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছে।
ঝুঁকিতে থাকা দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ৮০ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহযোগিতা পেয়েছে। এরমধ্যে জিসিএফের তহবিল থেকে এসেছে ৪০ মিলিয়ন। এই টাকা দিয়ে সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ এবং এ জাতীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালতি হচ্ছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এসব বাস্তবায়ন করছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রীর সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন একটি বড় সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব লাঘবে আমাদের ভূমিকা খুবই নগণ্য, উন্নত বিশ্বের বড় বড় দেশের ওপরই এটি নির্ভর করে। জলবায়ু তহবিল, টেকনোলজি, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক জলবায়ু প্রশমন হ্রাস-সংক্রান্ত বিষয়ে উন্নত বিশ্বের ভূমিকাই মুখ্য। তাই আমাদের করণীয় হবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি নিরসনে বৈশ্বিক পর্যায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখা। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে পরিবেশ, প্রতিবেশ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম
[email protected]
02/06/2021
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থে ছেলেকে দেড় কোটি টাকার পাজেরো ভিসির
বনি আমিন
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার এই গাড়ি উপাচার্য রোস্তম আলী নিজে ব্যবহার করছেন না। সেটা ব্যবহার করছেন রাজশাহীর পৈতৃক বাড়িতে থাকা তার ছেলেসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। শুধু তাই না, গাড়ির চালকের বেতন এবং জ্বালানি খরচও বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে নেয়া হচ্ছে।
20210119021619.gif
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রামে বলা আছে, মাননীয় উপাচার্য নিজের ব্যবহারের জন্য একটি জিপগাড়ি পাবেন। এর অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের ৭ মার্চ উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন থেকে একটি পাজেরো গাড়ি পান অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলী।
গাড়িটির (পাবনা-ঘ-১১০০৪৬) মূল্য এক কোটি টাকা। তারপরও নিয়ম লঙ্ঘন করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা নিয়ে আরেকটি গাড়ি (পাবনা-ঘ-১১০০৬১) কিনেছেন ড. রোস্তম আলী।
উপাচার্যের জন্য দুটি গাড়িই প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মিতসুবিসি ব্র্যান্ডের এবং দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কেনা হয়। এর মধ্যে মঞ্জুরী কমিশনেরটা মিতসুবিসি পাজেরো স্পোর্টস মডেলের। আর বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে কেনা গাড়িটি আরও আধুনিক পাজেরো (ভি-৬) জিপ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা দিয়ে এই গাড়ি কিনতে উপাচার্য চাহিদাপত্র পাঠান। ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর দরপত্র জমা দেয় প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ। গাড়িটির দরপত্র মূল্য ও রেজিস্ট্রেশনসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ মোট ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ধরা হয়।
পরদিন ২৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটির ৪৬তম সভায় গাড়ি ক্রয়ের দরপত্রের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়। ওই ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার মধ্যে ৯৫ লাখ টাকা রাজস্ব বাজেট ও ৪৫ লাখ টাকা সান্ধ্যকালীন তহবিল থেকে দেয়ার সুপারিশ বিবেচনা করা হয়। যে সুপারিশ চূড়ান্ত অনুমোদন পায় ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থে ছেলেকে দেড় কোটি টাকার পাজেরো ভিসির
ইউজিসি থেকে ভিসিকে দেয়া গাড়ি
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে কেনা বিলাসবহুল এই গাড়ি উপাচার্য রোস্তম আলী নিজে ব্যবহার করছেন না। সেটা ব্যবহার করছেন রাজশাহীর পৈতৃক বাড়িতে থাকা তার ছেলেসহ পরিবারের অন্য সদস্যারা। শুধু তাই না, গাড়ির চালকের বেতন এবং জ্বালানি খরচও বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে নেয়া হচ্ছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লাইড কেমেস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক রোস্তম আলী ২০০৮ সালের জুনে যাত্রা করা পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ উপাচার্য।
তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে রাজশাহীর পৈতৃক বাড়ির বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট বিলের পাশাপাশি গৃহকর্মীর বেতনের টাকাও তোলার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, গাড়ি কেনার আগেই ২৫ লাখের বেশি টাকা খরচ দেখানোর।
এ সংক্রান্ত কাগজপত্র পেয়েছে নিউজবাংলা। সেগুলো ঘেঁটে উপাচার্য রোস্তম আলীর বিরুদ্ধে গাড়ির নম্বর উল্লেখ না করে গাড়ি মেরামত ও জ্বালানি ক্রয়ের নামে ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৬২৬ টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে রাজস্ব খাত থেকে প্রকল্পের গাড়ি ক্রয়ে ৭৪ লাখ ৭৩ হাজার টাকার আর্থিক অনিয়মের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, উপাচার্যের চেয়ারে বসে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না রোস্তম আলী। যা ইচ্ছা তাই করে যাচ্ছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থে ছেলেকে দেড় কোটি টাকার পাজেরো ভিসির
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের গাড়ি প্রাপ্যতার খতিয়ান ও কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, উপাচার্যের ব্যবহারের জন্য ইউজিসির একটি গাড়ি বরাদ্দ দেয়া আছে, যেটি ব্যবহার করছেন তিনি। তারপরও অধ্যাপক রোস্তম আলী উপাচার্য হিসেবে যোগদানের কিছুদিনের মধ্যে আরেকটি গাড়ি কিনতে রাজস্ব খাত থেকে ৯৫ লাখ এবং সান্ধ্যকালীন কোর্স থেকে ৪৫ লাখসহ মোট ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা তোলেন। যে তথ্য ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর অর্থ কমিটির ৪৬তম কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভিসি স্যার এই অনিয়মকে এই বলে জায়েজ করেন যে, আগের ভিসিরা ব্যবহার করতেন, তাই তিনিও করেন। এই জায়গায়ও তিনি ভুল ব্যাখ্যা দেন। কারণ প্রথম ভিসি একই সঙ্গে উপাচার্য ও প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
‘তিনি একটি জিপ ও একটি কার ব্যবহার করতে পারতেন দুটি পদের জন্য। কিন্তু অধ্যাপক রোস্তম আলী শুধুই ভিসি; প্রকল্প পরিচালক আরেকজন। যিনি তার জন্য বরাদ্দ করা গাড়ি ব্যবহার করেন। তারপরও ভিসি ক্ষমতার জোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকার যাচ্ছেতাই ব্যবহার করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়কে ক্ষতির মুখোমুখি করছেন। ভিসির চেয়ারে বসে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে উনি যা ইচ্ছা তাই করে যাচ্ছেন। বিষয়গুলো নজরে না আসলে অচিরেই বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থা শোচনীয়তার শেষ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকবে।’
এ প্রসঙ্গে নিউজবাংলা কথা বলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আজিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এভাবে গাড়ি কেনার তো প্রশ্নই আসে না। ওনার বরাদ্দের গাড়ি আছে। বিষয়টি কী ঘটেছে আমি জানি না। তবে ওনার নামে বেশ কিছু অভিযোগ আছে বলে আমি ক্যাম্পাস থেকেই শুনেছি।’
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপাচার্য রোস্তম আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আপনি যা বলছেন এ ধরনের কোনো অডিট এখানে হয়নি। এগুলো সত্য না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থে ছেলেকে দেড় কোটি টাকার পাজেরো ভিসির
অডিটের কাগজপত্র নিউজবাংলার কাছে আছে বলার পর সুর পাল্টান তিনি। বলেন, ‘হ্যাঁ। বিষয়টি হলো আমি নিজেই চিঠি দিয়ে অডিট করিয়েছি। কিন্তু সেখানে এ ধরনের কোনোকিছু আছে কিনা আমার জানা নেই।’
নম্বর ছাড়া গাড়ির নামে সাড়ে ১২ লাখ টাকা তুলতে ৪৬ ভাউচার
বিলে গাড়ির নম্বর উল্লেখ না করে গাড়ি মেরামত ও জ্বালানি ক্রয়ের নামে ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৬২৬ টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আছে ভিসি রোস্তম আলীর বিরুদ্ধে।
একই অডিটের কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭-১৮ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে গাড়ি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৪৬টি ভাউচারে মোট ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৬২৬ টাকা দেয়া হয়েছে। যেসব গাড়ি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এই টাকা খরচ করা হয়েছে বিলে সেসব গাড়ির নম্বর নেই।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই অর্থ ব্যবহারে অস্বচ্ছতা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ অনুযায়ী এই আর্থিক অনিয়মের জন্য উপাচার্য দায়ী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থে ছেলেকে দেড় কোটি টাকার পাজেরো ভিসির
রাজস্ব খাতের ৭৪ লাখ ৭৩ হাজার টাকায় প্রকল্পের গাড়ি
রাজস্ব খাত থেকে প্রকল্পের গাড়ি ক্রয়ে ৭৪ লাখ ৭৩ হাজার টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে উপাচার্য রোস্তম আলীর বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালের ৩০ জুন একটি ভাউচারের মাধ্যমে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৭৩ হাজার টাকা ব্যয়ে চারটি গাড়ি কেনা হয়। এর মধ্যে ৭৪ লাখ ৭৩ হাজার টাকা রাজস্ব খাত থেকে নিয়ে মূলধন খাতে ব্যয় করা হয়েছে, যা বিধিসম্মত না। বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ অনুযায়ী এই অনিয়মের জন্যও উপাচার্য দায়ী।
এ ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজস্ব খাতের বরাদ্দ দ্বারা গাড়ি ক্রয়ে মূলধন খাতে ব্যয় বিধিসম্মত হয়নি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ জরুরি বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকরা।