03/08/2023
Class 7 History Chapter -4 Important Questions And Answers | ক্লাস সেভেন ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় তুর্কো - আফগান শাসন প্রশ্ন উত্তর | সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর
⬛ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3
১। আমির ও ওমরাহ কাদের বলা হতো ?
উঃ। দিল্লির সুলতানির ইতিহাসে শাসনকার্যে নিযুক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমির বলা হতো। আমিরগণকে একত্রে বলা হতো ওমরাহ।
২.'তুর্কান-ই চিহ্নলগানি' কথার অর্থ কী ?
উঃ। তুর্কান-ই চিহ্নলগানি কথার অর্থ হলো চল্লিশ জন তুর্কি বা চল্লিশজন তুর্কি পরিবার। এরা খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকে ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছিল।
৩। ইবনবতুতা সম্বন্ধে যা জানো লেখো।
উঃ। সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলকের শাসনকালে উত্তর আফ্রিকার মরক্কো দেশ থেকে পর্যটক ইবনবতুতা এদেশে এসেছিলেন। তাঁর লেখা ভ্রমণ বিবরণীর নাম কিতাব-উর-রিহলা। এই গ্রন্থটি মহম্মদ বিন তুঘলকের যুগ সম্পর্কে জানার একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র।
৪। 'রুমি' কৌশল কী ?
উঃ। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপতের প্রথম যুদ্ধে বাবর তুর্কিদের থেকে শেখা এক ধরনের কৌশল ব্যবহার করেছিলেন। একে 'রুমি' কৌশল বলে।
৫। ইলতুৎমিশ কীভাবে মোঙ্গল আক্রমণ থেকে ভারতকে রক্ষা করেন ?
উঃ। খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকে মোঙ্গল নেতা চেঙ্গিস খান মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ায় ঝড়ের গতিতে আক্রমণ চালান। এর ফলে ভারতেও মোঙ্গল আক্রমণের আভাস তৈরি হয়। ১২২১ খ্রিস্টাব্দ থেকে উত্তর-পশ্চিমে বারবার আক্রমণ ঘটে। ওই আক্রমণের সামনে সিন্ধু নদ ভারতের পশ্চিম সীমান্ত বলে চিহ্নিত হয়। ইলতুৎমিশ। সরাসরি মোঙ্গলদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়ে দিল্লি সুলতানিকে বাঁচিয়ে দেন।
৬। হাবশি কাদের বলা হয় ?
উঃ। ইলিয়াসশাহি ও হোসেনশাহি শাসনের মাঝে বাংলায় আবিসিনিয় সুলতানরা শাসন করেছিলেন। এরা আফ্রিকার আবিসিনিয়া বা ইথিওপিয়া থেকে এসেছিলেন। বাংলায় এদের হাবশি বলা হয়।
৭। জালালউদ্দিন মহম্মদ শাহ কে ছিলেন ?
উঃ। সুলতান জালালউদ্দিন মহম্মদ শাহ বা 'যদু' ছিলেন জন্মসূত্রে হিন্দু। তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর আমলে বাংলার রাজধানী মালদহের হজরত পান্ডুয়া থেকে গৌড়ে চলে আসে।
৮। বাহমন শাহ সম্বন্ধে যা জানো লেখো।
উঃ। মহম্মদ বিন তুঘলকের শাসনকালে হাসান গঙ্গু ১৩৪৭ খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিন হাসান বাহমন শাহ নাম নিয়ে দাক্ষিণাত্যে বাহমনি রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি গুলবর্গায় রাজধানী স্থাপন করে নাম দেন আহসনাবাদ। শাসনকার্যের সুবিধার জন্য তিনি তাঁর রাজ্যকে গুলবর্গা, বেরার, বিদর ও দৌলতাবাদ নামে চারটি প্রদেশে ভাগ করেন এবং প্রত্যেক প্রদেশে একজন করে শাসনকর্তা নিয়োগ করেন।
৯। বাহমনি রাজ্যে দেশীয় ও বাইরের অঞ্চল থেকে আসা অভিজাতদের কী বলা হতো?
উঃ। বাহমনি রাজ্যে দেশীয় অভিজাতদের বলা হতো দক্ষিণী। এই অঞ্চলের বাইরে থেকে আসা দরবারের অভিজাতদের পরদেশি বলা হতো। অর্থাৎ 'দেশ' বলতে মানুষ তখন নিজের এলাকাটাকেই বুঝত।
১০। মহম্মদ ঘুরির মৃত্যুর পর তাঁর জয় করা অঞ্চলগুলি কাদের অধিকারে আসে?
উঃ। ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ ঘুরির মৃত্যুর পর তাঁর জয় করা অঞ্চলগুলি তাঁর চারজন অনুচরদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। গজনির অধিকার পান তাজউদ্দিন ইয়ালদুজ। মুলতান ও উছ এর শাসক হয়ে বসেন নাসিরউদ্দিন কুবাচা। বাংলাদেশের শাসক হন বখতিয়ার খলজি এবং লাহোর ও দিল্লির অধিকার থাকে কুতুবউদ্দিন আইবকের হাতে।
১১। খিজির খান কীভাবে শাসন চালিয়েছিলেন?
উঃ। সৈয়দ বংশের প্রতিষ্ঠাতা খিজির খান নিজে কখনো সুলতান উপাধি নেননি। তিনি একদিকে তুর্কো-মোঙ্গল শাসকদের প্রতি আনুগত্য জানিয়েছিলেন। অন্যদিকে তিনি তাঁর পূর্ববর্তী তুঘলক শাসকদের নাম খোদাই করা মুদ্রা তাঁর রাজ্যে চালু রেখেছিলেন। মধ্যযুগের ভারতবর্ষে এইরকম ঘটনা আগে বা পরে কখনো ঘটেনি।
12. আলাউদ্দিন হোসেন শাহ শ্রীচৈতন্য সম্পর্কে কী নির্দেশ দিয়েছিলেন?
উঃ। কবি বৃন্দাবন দাস তাঁর চৈতন্য ভাগবত গ্রন্থে লিখেছেন যে সুলতান হোসেন শাহ গৌড়ে গিয়ে একটি নির্দেশ দেন। তাতে বলা হয় যে, চৈতন্যদেব সবাইকে নিয়ে কীর্তন করুন অথবা একাকী থাকুন তাঁকে যদি কেউ বিরক্ত করে তা সে কাজি বা কোতোয়াল যেই হোন তার প্রাণদণ্ড হবে।
13.‘খুতবা’ কী ?
উঃ। ‘খুতবা’কথাটির সঠিক অর্থ হল ভাষণ। কোনো সুলতানের শাসনকালে মসজিদের ইমাম নমাজের পরে সবার সামনে ওই ভাষণ বা খুতবাটি পাঠ করতেন। এর মধ্য দিয়ে সুলতান যে নিয়ম মেনে শাসক হয়েছেন তা জানান দেওয়া হত।
14. সুলতান রাজিয়া-কে সুলতানা বলা হয় না কেন ?
উঃ। রাজিয়া একজন নারী হলেও তাঁর উপাধি সুলতানা নয় সুলতান। আরবি ভাষায় সুলতানা' শব্দের অর্থ হলো সুলতানের স্ত্রী। কিন্তু রাজিয়া কোনো সুলতানের স্ত্রী ছিলেন না। রাজিয়া তাঁর মুদ্রায় নিজেকে সুলতান বলে দাবি করেছেন। সে যুগের একজন ঐতিহাসিক মিনহাজ-ই সিরাজ রাজিয়াকে সুলতান বলেই উল্লেখ করেছেন।
15. 'তুর্কান-ই চিহ্নলগানি' বা 'বন্দেগান-ই চিহলগানি' কাদের বলা হতো ?
উঃ। বন্দেগান-ই চিহ্নলগানি কথাটির অর্থ হলো চল্লিশ জন বান্দা বা অনুগামী। এই কথাটি দিয়েই ইলতুৎমিশের অনুগত যোদ্ধাদের বোঝানো হতো। এরা ছিল ত্রয়োদশ শতকের সুলতানি শাসনব্যবস্থার প্রধান স্তম্ভ। নামে তুর্কি হলেও এদের সবাই জাতিগত ভাবে তুর্কি ছিলনা এবং সংখ্যায় তারা চল্লিশ জনের অনেক বেশি ছিল। এদের মধ্যে থেকেই গিয়াসউদ্দিন। বলবন পরে সুলতান হয়েছিলেন।
16. সিজদা ও পাইবস কী ?
উঃ। সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন সুলতানের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতীকরূপে দুটি প্রথার প্রচলন করেন। প্রথা দুটি হলো 'সিজদা' ও পাইবস'। সিজদার অর্থ হলো সুলতানকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করা। আর সুলতানের পদযুগল চুম্বন করাকে বলা হতো পাইবস ।
17. খলজি বিপ্লব কী ?
উঃ। ১২৯০ খ্রিস্টাব্দে বলবনদের বংশধরদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে জালালউদ্দিন ফিরোজ খলজি সুলতান হন। এই ঘটনাকে ইতিহাসে খলজি বিপ্লব বলা হয়। এর ফলে দিল্লিতে ইলবারি তুর্কিদের ক্ষমতা চলে গিয়ে খলজি তুর্কি ও হিন্দুস্থানীদের শক্তি বৃদ্ধি পায়।
18. ফিরোজ শাহ তুঘলকের সামরিক অভিযানের উদ্দেশ্য কী ছিল?
উঃ। ফিরোজ শাহের সামরিক অভিযানের একটা বড়ো উদ্দেশ্য ছিল দাস জোগাড় করা। সুলতানের ১,৮০০০০ দাস ছিল। তাদের জন্য একটা আলাদা দপ্তর খোলা হয়েছিল। রক্ষীবাহিনী, কারখানা ও বিভিন্ন দপ্তরে নিযুক্ত হয়ে এই দাসেরা বেতন পেত। এভাবে সুলতান একটি অনুগত বাহিনী তৈরি করতে চেয়েছিলেন।
19.পানিপতের প্রথম যুদ্ধে বাবরের কৌশল কী ছিল?
উঃ। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপতে বাবরের সঙ্গে ইব্রাহিম লোদির যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে বাবর তুর্কিদের থেকে শেখা এক জাতীয় কৌশল ব্যবহার করেছিলেন। এর নাম 'রুমি' কৌশল। বাবরের সৈন্য সংখ্যা লোদিদের তুলনায় কম থাকলেও বাবর ছিলেন যুদ্ধে পটু। যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদির মৃত্যু হয় এবং দিল্লি এবং আগ্রায় মুঘলদের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়।
20. উলেমা কাদের বলা হতো ?
উঃ। আরবি ভাষায় ইলম্ মানে হলো জ্ঞান। আলিম মানে হলো জ্ঞানী। ইসলামি শাস্ত্রে যাঁরা বিশেষভাবে জ্ঞানী ছিলেন তাদের আলিম বলা হতো। একের বেশি আলিমকে বলা হতো উলেমা।
21.তুরুস্ক দণ্ড কী?
উঃ। কোনো কোনো হিন্দু রাজারা জিজিয়া করের মতো এক ধরনের কর তাদের মুসলমান প্রজাদের উপর চাপিয়েছিলেন। ওই করকে বলা হতো তুরুষ্কদণ্ড।
⬛ রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:তিটা প্রশ্নের মান -5
১। সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক সম্বন্ধে যা জানো লেখো।
উঃ। সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক ইসলামের রীতিনীতি ও উলেমার নির্দেশ অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। তিনি রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার করে 'খরাজ', 'খামস', 'জিজিয়া' ও 'জাকাত'—এই চার ধরনের কর নিতেন। ইসলামীয় রীতি অনুযায়ী যে কর নেওয়া যায় সেগুলি ছাড়া অন্যান্য কর তিনি বাতিল করেন। ফিরোজ শাহ তুঘলক একাধিক জনহিতকর কাজ করেন। তিনি অনেক নতুন নগর, মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল ও বাগান তৈরি করেন। দরিদ্রদের অর্থসাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা ও বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি দপ্তর খোলেন। যেসব জমিতে চাষ হতো না সেগুলির সংস্কার ও কৃষির উন্নতির জন্য তিনি খাল খনন করে সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটান।
২। হোসেন শাহ সম্বন্ধে কী জানা যায় ?
উঃ। মধ্যযুগের বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন আলাউদ্দিন হোসেন শাহ। তিনি স্বভাবে ছিলেন ভদ্র, বিনয়ী এবং সব ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল। তিনি সম্ভবত শ্রীচৈতন্যদেবের ভক্ত ছিলেন। প্রসিদ্ধ দুই বৈস্নব রূপ ও সনাতনের মধ্যে একজন তাঁর দপ্তরে ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন বলে জানা যায়। সাধারণ মানুষ নাকি হোসেন শাহকে শ্রীকৃষ্ণের অবতার বলে মনে করত। তাঁর শাসনকাল উদারনীতির জন্য বিখ্যাত ছিল। হোসেন শাহের রাজত্বে বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদ হিন্দুদের দেওয়া হতো। তাঁর শাসনকালে বাংলা ভাষায় লেখালেখির চর্চা খুবই উন্নত হয়।
৩। বিদেশি পর্যটকদের বিবরণীতে বিজয়নগর সম্পর্কে কী কী জানা যায় ?
উঃ। বিজয়নগর সাম্রাজ্যে বহু বিদেশি পর্যটক এসেছিলেন। এদের মধ্যে ছিলেন ইতালির পর্যটক নিকোলো কন্টি, পারস্যের দূত আব্দুর রাজ্জাক। পোর্তুগিজ পর্যটক পেজ ও নুনিজ, দুয়ার্তে করবোসা প্রমুখ। এই পর্যটকরা সকলেই বিজয়নগরের সম্পদ দেখে আশ্চর্য হয়েছিলেন। তাঁদের বর্ণনা থেকে জানা গেছে বিজয়নগর শহরটি সাতটি প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল। জনসাধারণের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষি, জলসেচের সুবন্দোবস্ত ছিল। ভূমি রাজস্বই ছিল রাজ্যের প্রধান আয়, কৃষি ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছিল। পোর্তুগিজদের সঙ্গে বিজয়নগরের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল। পর্যটক পেজ তাঁর রচনায় বিজয়নগর সম্পর্কে বলেছেন যে নগরটি রোম শহরের মতোই বড়ো ছিল। স্বচ্ছজলের অনেকগুলি খাল শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ছিল। মাঝে মাঝে ছিল দীঘি, রাজপ্রসাদ প্রভৃতি। এই নগরের লোকসংখ্যা অসংখ্য, এ শহরটির মতো এতো সুন্দর খাওয়া পরার ব্যবস্থা পৃথিবীর অন্য কোনো শহরে নেই। তবে পর্যটকরা একথাও বলেছেন যে ধনী ও গরিবদের জীবনযাপনের অনেক তফাৎ সেখানে ছিল।
৪। আলাউদ্দিন খলজির অর্থনৈতিক সংস্কারগুলি কী ছিল ?
উঃ। রাজকোশের আয় বাড়াতে আলাউদ্দিন খলজি কতকগুলি অর্থনৈতিক সংস্কার করেন। পূর্ববর্তী সুলতানদের প্রচলিত ইকতা প্রথা তিনি বাতিল করেন। ধর্মীয় কারণে দেওয়া নিষ্কর জমি ও সম্পত্তি তিনি ফিরিয়ে নেন। সমস্ত জমি জরিপ করিয়ে রাজস্বের হার বাড়ানো হয়। এর পাশাপাশি সুলতান আলাউদ্দিন সুলতানির খরচ কমানোর চেষ্টা চালান। তিনি গঙ্গা-যমুনার মধ্যবর্তী দোয়াব অঞ্চলের অধিবাসীদের কাছ থেকে উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক অংশ রাজস্ব হিসেবে আদায় করেন। ভূমি রাজস্ব ছাড়াও গৃহকর, গোচারণভূমি কর, জিজিয়া কর প্রভৃতি কর তিনি আদায় করার নির্দেশ দেন। তাঁর অন্যতম অর্থনৈতিক সংস্কার ছিল বাজারদর নিয়ন্ত্রণ। আলাউদ্দিন বাজারের সমস্ত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ঠিক করে দেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল মুদ্রাস্ফীতি রোধ করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা এবং জনগণকে সস্তায় প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করা। এজন্যে তিনি বিভিন্ন রাজকর্মচারী নিয়োগ করেন। আলাউদ্দিন রেশন ব্যবস্থার প্রচলনও করেন। এইভাবে তিনি অর্থনৈতিক সংস্কার দ্বারা জনকল্যানমূলক কাজ করেন।
5.শাসকের উপাধি সম্পর্কে কী জানা যায় ?
উঃ। রাজা, সম্রাট, সুলতান এইসব শব্দগুলি হলো শাসকের উপাধি। শাসকের ধর্ম ও দেশ এবং শাসন ক্ষমতার হেরফেরে উপাধিগুলির ব্যবহার বদলে যেত। যেমন রাজা হলেন রাজ্যের শাসক, আবার যে রাজা অনেক রাজ্য জয় করে বিরাট অঞ্চলের শাসক হয়েছেন তাকে সম্রাট বলা হতো। সম্রাটের সাম্রাজ্য একটি বিরাট অঞ্চল। একটি সাম্রাজ্যের ভিতরে রাজ্য থাকতেও পারে। রাজা সম্রাটের চেয়ে সম্মান ও ক্ষমতায় ছোটো। সুলতানরা ছিলেন তুর্কি, সেজন্যই রাজা বা সম্রাট উপাধি না নিয়ে সুলতান উপাধি নিতেন।
6। লোদি সুলতানরা কীভাবে নিজেদের শাসনক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
উঃ। লোদি সুলতানদের শাসনকালে দিল্লি সুলতানির আকার অনেকটা ছোটো হয়ে এলেও সুলতানদের ক্ষমতা খানিকটা বেড়েছিল। সুলতান বহলোল লোদি আফগানদের সাবেকি রীতি মেনে অন্যান্য আফগান সর্দারদের সঙ্গে আসন ভাগ করে নিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি লোদিদের ক্ষমতাও প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। সেই কারণে পাশের রাজ্য জৌনপুর তিনি দখল করে নেন। পরবর্তী শাসক সিকান্দার লোদি অন্যান্য আফগান সর্দারদের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি আফগান সর্দারদের জানান যে, তারা একান্তভাবেই সুলতানের নিয়ন্ত্রণের অধীন। তাদের ভালোমন্দ সুলতানের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করত। এইভাবে সিকান্দার শাহ আফগান সর্দার ও সাধারণ জনগণ উভয়ের ওপরেই তিনি নিজের সার্বভৌমিকতা প্রতিষ্ঠা করেন।
7. দাগ ও হুলিয়া কী
উঃ। সুলতান আলাউদ্দীন খলজির সেনাবাহিনি মূলত পদাতিক ও ঘোড়সওয়ার নিয়ে তৈরি কতো। সুলতান সেনাবাহিনীতে জালিয়াতি বন্ধ করে সংস্কার করার উদ্দেশ্যে 'দাগ' ও হুলিয়া ব্যবস্থা দুটি চালু করেছিলেন। সেনাবাহিনি সমস্ত ঘোড়া পরীক্ষা করে তাদের চিহ্নিত করে 'দাগ' দেওয়া হতো। ফলে ঘোড়া পর্যবেক্ষণের সময় কোনো ঘোড়াকে দুবার পেশ করা বা সতেজ ঘোড়ার বদলে দুর্বল বা খারাপ ঘোড়া পেশা করার জালিয়াতি বন্ধ হয়। হুলিয়া' ব্যবস্থা চালু করার ফলে কোনো অদক্ষ ব্যক্তি নাম ভাঙিয়ে সেনাবাহিনিতে যোগ দিতে বা অন্যের নামে বেতন নিতে পারত না।
8. কে, কেন সুলতানি আদবকায়দা চালু করেছিলেন ?
উঃ। গিয়াসউদ্দিন বলবন বন্দেগান-ই-চিহ্নলগানির সদস্য ছিলেন। পরে তিনি যখন সুলতান হন তখন কেউ যাতে তাঁর অধিকার নিয়ে প্রশ্ন না করতে পারে সেজন্য তিনি দরবারে কতকগুলি নিয়ম চালু করেন। শোনা যায় বলবন দরবারে আসতেন খুব জমকালো পোশাক পরে। কোনো হাসি তামাসা বা হালকা কথা তিনি বরদাস্ত করতেন না। সুলতানকে গম্ভীরভাবে দরবার চালাতে দেখে অতিথিরা ভয় পেত।
9. ইকতা ব্যবস্থা সম্বন্ধে যা জানো লেখো।
উঃ। মধ্য এশিয়ার ইসলামীয় সাম্রাজ্যে সামরিক অভিজাতদের ইকতা দেওয়া হতো। এই ইকতাগুলি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেওয়া হতো। এই ব্যবস্থার উৎপত্তি হয় খ্রিস্টীয় নবম শতকে। সেই সময় রাজকোশে যথেষ্ট পরিমাণে রাজস্ব জমা পড়ছিল না এবং যুদ্ধ করেও তেমন ধনসম্পদ পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই সামরিক নেতাদের বেতনের বদলে ইকতা দেওয়া হতে থাকে। একাদশ শতকে সেলজুক তুর্কি সাম্রাজ্যে ইকতা ব্যবস্থার প্রচলন দেখা যায়। অটোমান তুর্কিদের আমলে ইকতা ব্যবস্থার বদলে ‘তিমার’নামে অন্য একটি ব্যবস্থার কথা জানা যায়। দিল্লির সুলতানরা সাম্রাজ্য বিস্তার রাজস্ব সংগ্রহ ও শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ইকতা ব্যবস্থার নানা রদবদল ঘটিয়ে ছিলেন। একজন ইকতাদার হতে পারতেন একটি গোটা প্রদেশের শাসনকর্তা।
10. জিজিয়া কর কী ?
উঃ। মুসলমান শাসকরা অমুসলমান প্রজাদের থেকে মাথাপিছু একটি কর আদায় করতেন। এর বিনিময়ে অ-মুসলমানদের জীবন, অধিকার ও সম্পত্তির সুরক্ষা দেওয়া হতো। খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে আরবের সেনাপতি মহম্মদ বিন কাশিম সিন্ধু প্রদেশে প্রথম জিজিয়া কর চালু করেন। দিল্লি সুলতানিতে ব্রাক্ষ্মণ, নারী, নাবালক ও দাসদের জিজিয়া কর দিতে হতো না। সন্ন্যাসী, অন্ধ ও খোঁড়া ও উন্মাদ ব্যক্তিরা গরিব হলে তাদের জিজিয়া কর দিতে হতো না।
11. একডালা দুর্গটি কীরূপ ছিল।
উঃ। গৌড় থেকে একডালা দুর্গটি খুব দূরে ছিল না। দুর্গটি ঘিরে ছিল গঙ্গার দুই শাখানদী চিরামতি এবং বালিয়া। দুর্গটি প্রায় দুর্ভেদ্য ছিল। ফিরোজ শাহ তুঘলক যখন পান্ডুয়া আক্রমণ করেন, ইলিয়াস শাহ একডালা দুর্গে আশ্রয় নেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফিরোজ শাহ একডালা দুর্গ দখল করতে পারেন নি। তবে এই দুর্গটির কোনো চিহ্নই আজ আর নেই।
12. রাজা কৃয়দেব রায় সম্পর্কে কী জানা যায় ?
উঃ। বিজয়নগর রাজ্যের তুলুভ বংশের বিখ্যাত শাসক ছিলেন কৃষ্ণদেব রায়। তাঁর রাজত্বকালেই বিজয়নগর রাজ্যের গৌরব বৃদ্ধি পায়। আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রসার ছাড়াও শিল্প, সাহিত্য, সংগীত ও দর্শনশাস্ত্রের উন্নতি তাঁর সময়ে লক্ষ করা যায়। কৃয়দেব রায় নিজেও তেলেগু ভাষায় ‘আমুক্তমাল্যদ' গ্রন্থ রচনা করেন। পোর্তুগিজ পর্যটক পেজ রাজা কৃয়দেব রায়ের সময় বিজয়নগর রাজ্য আসেন এবং তিনি রাজার খুব প্রশংসা করেন।
13. দিল্লির সুলতানদের কখন খলিফাদের অনুমোদন দরকার হতো?
উঃ। ইসলাম ধর্ম অনুসারে প্রধান শাসক একজনই তা হলেন খলিফা। ইসলামের আওতায় যত অঞ্চল ছিল, তার মূল শাসক খলিফা। তিনি মুসলমানদের ধর্মগুরুও বটে। ফলে, দিল্লির সুলতানির উপরেও খলিফারই অধিকার ছিল। যেহেতু মুসলিম সম্প্রদায় এক বিশাল অঞ্চল শাসন করতেন, একজন খলিফার পক্ষে সমস্ত অঞ্চল শাসন করা সম্ভব ছিল না। তাই খলিফার অনুমোদন নিয়ে নানান অঞ্চলে নানান ব্যক্তি শাসন করতেন। ভারতবর্ষের মুসলিম শাসকগণ সুলতান নামে পরিচিত ছিলেন। এমনিতে সুলতানরা খলিফাকে যে খুব মেনে চলতেন তা নয়, তবে মাঝেমধ্যেই কে সুলতান হবে, এই নিয়ে গোলমাল লেগে যেত। তখন কে প্রকৃত সুলতান হবেন তা নিয়ে খলিফার অনুমোদন দরকার হত। খলিফার অনুমোদনের একটা সম্মান ছিল, তা বাকিরা নাকচ করতে পারতেন না।
14.সুলতান ইলতুৎমিশের সামনে প্রধান তিনটি সমস্যা কী ছিল?
উঃ। ইলতুৎমিশ যখন দিল্লির সুলতান হন তখন তাঁর সামনে তিনটি সমস্যা দেখা দেয়। এগুলি হলঃ (১) সাম্রাজ্যের মধ্যে যারা তাঁকে মানতে চাইছিলেন না অর্থাৎ বিদ্রোহী শক্তিগুলোকে কীভাবে তিনি দমন করতে পারবেন। (২) সেই সময় মধ্য এশিয়ার দুর্ধর্ষ মোঙ্গল শক্তি ছিল একটা বড়ো আতঙ্ক, সব দেশের সব রাজশক্তির কাছেই। তিনি কীভাবে এই মোঙ্গল শক্তিকে মোকাবিলা করবেন, তা ছিল ইলতুৎমিশের কাছে একটা বড়ো সমস্যা। (৩) কীভাবে সুলতানিতে একটা রাজবংশ তৈরি করা যাবে, যাতে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকারী গোলমাল ছাড়াই সিংহাসনে বসতে পারবেন ।
15. কারা ছিল সুলতান রাজিয়ার সমর্থক? কারা ছিল তাঁর বিরোধী ?
উঃ। ইলতুৎমিশের সার্থক উত্তরাধিকারী ছিলেন সুলতান রাজিয়া। ইলতুৎমিশের সন্তানদের মধ্যে রাজিয়া ছিলেন যোগ্যতম। ইলতুৎমিশের এক ছেলে অল্প কিছুদিনের জন্যে শাসক হলেও শেষ পর্যন্ত রাজিয়াই ইলতুৎমিশের প্রকৃত উত্তরাধিকারী হতে পেরেছিলেন। রাজিয়ার সুলতান হওয়া নিয়ে সমর্থন ছিল সেনাবাহিনী, অভিজাতদের একাংশ ও দিল্লির সাধারণ লোকেদের। তাঁর বিরুদ্ধে ছিলেন তুর্কি' অভিজাতরা। এছাড়া উলেমা এবং রাজপুত শক্তিও তাঁর শাসনের বিরোধী ছিলেন।
16. আলাউদ্দিন খলজি কীভাবে মোঙ্গল আক্রমণের মোকাবিলা করেন?
উঃ। আলাউদ্দিন খলজির সময়ে দিল্লি দুবার মোঙ্গলদের হাতে আক্রান্ত হয়। সুলতান আলাউদ্দিন খলজি বিরাট এক সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলেন মোঙ্গলদের প্রতিরোধ করার জন্য। সৈনিকদের থাকবার জন্য সিরি নামে এক নতুন শহর তৈরি করা হয়। সেনাবাহিনীকে রসদ জোগানোর জন্যে দোয়াব অঞ্চলের কৃষকদের ওপর বেশি হারে কর চাপানো হয়। দুর্গনির্মাণ, সৈন্যসংগ্রহ ও মূল্যনিয়ন্ত্রণ করে সফলভাবে আলাউদ্দিন মোঙ্গল আক্রমণের মোকাবিলা করেন।
17. ইলিয়াসশাহি এবং হোসেন শাহি আমলে বাংলার সংস্কৃতির পরিচয় দাও।
উঃ। ইলিয়াস শাহি এবং হোসেন শাহির আমলে বাংলার সংস্কৃতির উন্নয়ন হয়েছিল। এই সময়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, স্থাপত্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়। হোসেন শাহের আমলে বাংলা লেখালেখির চর্চা বাড়ে। ইলিয়াসশাহি ও হোসেনশাহি সুলতানরা ছিলেন অন্য ধর্মমত বিষয়েও উদার। সুলতানদের ধর্মীয় উদারতা বাংলায় সব ধর্মের মানুষকে কাছাকাছি আসতে সাহায্য করেছিল। এই সময়েই বাংলায় শ্রীচৈতন্যের নেতৃত্বে ভক্তিবাদের প্রচার শুরু হয়।
18.গিয়াসউদ্দিন বলবনের সময় দিল্লি সুলতানির প্রধান সমস্যা কী ছিল?
উঃ। ১২৬৬ খ্রিস্টাব্দে গিয়াসউদ্দিন বলবন নিজেই সুলতানি হন। সিংহাসনে বসার পর তিনি নানা সমস্যার সম্মুখীন হন। বলবন এক শক্তিশালী কেন্দ্ৰীভূত শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। গিয়াসউদ্দিন বলবনের সময়ে দিল্লি সুলতানির প্রধান সমস্যা ছিল ভিতরের বিদ্রোহ। আমির ওমরাহরা ক্ষমতালোভী হয়ে ওঠে। তিনি কঠোরভাবে এই বিদ্রোহগুলিকে দমন করেন। তাদের চল্লিশ চক্র ভেঙে দেন। রাজতন্ত্রের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে তিনি দরবারে সিজদা অর্থাৎ সুলতানের সামনে সাষ্টাঙ্গে নতজানু হওয়া ও পাইবস অর্থাৎ সুলতানের পদযুগল চুম্বন করার প্রথা চালু করেছিলেন। এই প্রথাগুলি চালু করার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল অভিজাতদের থেকে সুলতানের ক্ষমতা যে বেশি তা বোঝানো। বলবন সুলতান হয়ে তাবরহিন্দ, সুনাম ও সামানা দুর্গ সুরক্ষিত করেন। বিপাশা নদী বরাবর সৈন্য ঘাঁটি বসান। তিনি নিজে দিল্লিতে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকেন।
প্রঃ-শেরশাহের শাসনব্যবস্থায় কী কী মানবিক চিন্তার পরিচয় তুমি পাও তা লেখো।
উঃ। শেরশাহের প্রশাসনিক ব্যবস্থা, রাজস্ব ব্যবস্থা ও জনহিতকর কাজের সঙ্গে সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ও সম্রাট আকবরের শাসনব্যবস্থার অনেকটা মিল ছিল। শাসন পরিচালনা ও রাজস্ব ব্যবস্থায় শেরশাহ কিছু সংস্কার করেছিলেন। এই সংস্কারগুলি হল: (১) শেরশাহ কৃষককে ‘পাট্টা’ দিতেন। এই পাট্টায়কৃষকের নাম, জমিতে কৃষকের অধিকার, কত রাজস্ব দিতে হবে প্রভৃতি লেখা থাকত। তার বদলেকৃষকেরা রাজস্ব দেওয়ার কথা কবুল করে ‘কবুলিয়ত’ নামে অন্য একটি দলিল রাষ্ট্রকে দিত। (২)যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে শেরশাহ সড়কপথের উন্নতি করেন। তিনি বাংলার সোনার গাঁ থেকে উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে পেশোয়ার পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণ করেন। রাস্তাটির নাম ছিল ‘সড়ক-ই-আজম’। এটি পরবর্তীকালে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড নামে খ্যাত হয়। এ ছাড়াও শেরশাহ আরওকিছু রাজপথ নির্মাণ করেন। (৩) পথিক ও বণিকদের সুবিধার জন্য রাস্তার ধারে ধারে অনেক সরাইখানা তৈরি করা হয়েছিল।(৪) ঘোড়ার মাধ্যমে ডাক যোগাযোগ ব্যবধার উন্নতি করেছিলেন। (৫) দাগ ও হুলিয়া ব্যবস্থা চালু করেন।
প্রঃ- সুলহ-ই-কুল কী?
উঃ। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক আদর্শ ছিল মূলত বিভিন্ন গোষ্ঠীকে সাম্রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করে একটি যথার্থই ভারতীয় সাম্রাজ্য গড়ে তোলা। তাই আকবরের প্রশাসনিক আদর্শকে তৈমুরীয়, পারসিক এবং ভারতীয় রাজতন্ত্রের সংমিশ্রণ বলা চলে। এই আদর্শে বাদশাহ ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ী শাসন করবেন এবং প্রজাদের প্রতি তাঁর পিতৃসুলভ
ভালোবাসা থাকবে। অর্থাৎ তাঁর শাসন করার অধিকার অন্য কোনো শাসকের থেকে পাওয়া নয়, এই ক্ষমতা তাঁর নিজের। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি তাঁর পক্ষপাত থাকবে না। সকলের প্রতি সহনশীলতা এবং সকলের জন্য শাস্তির
এই পথকেই বলা হয় 'সুলহ-ই-কুল'।)
প্রঃ- মুঘলরা কেন নিজেদের বাদশাহ বলত?
উঃ। বাদশাহ বা পাদশাহ বা পাদিশাহ শব্দগুলি ফারসি। ‘পাদ’ অর্থাৎ প্রভু এবং 'শাহ' মানে শাসক বা রাজা। মুঘলরা সার্বভৌম শাসকের ক্ষেত্রে 'পাদশাহ' অথবা 'বাদশাহ' শব্দটি ব্যবহার করত। আমরা জেনেছি আগে দিল্লির শাসকেরা নিজেদের 'সুলতান' বলতেন। মুঘলরা কিন্তু 'সুলতান' শব্দটি যুবরাজদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতেন। 'বাদশাহ' উপাধি ব্যবহার করে মুঘলরা বোঝাতে চাইতেন যে তাদের শাসন করার ক্ষমতা অন্য কারোর অনুমোদনের উপর নির্ভরশীল