Dogair Model High School

Dogair Model High School

Share

Need science teacher to Dogair Model High School.

20/03/2024
24/12/2022

শ্বশুরবাড়িতে বউ হয়ে এসে অন্য সবাইকে ভালো লাগলেও শাশুড়িকে দেখে হতাশ হলাম এবং ভয় পেয়ে গেলাম। আমার শ্বশুরবাড়ির সদস্য সংখ্যা নয়জন। আমার স্বামীরা তিন ভাই এক বোন। সে মেজো। তার বড়ো ভাই বিবাহিত এবং দুই সন্তানের বাবা। তার তিন বছরের ছোটো বোনটির বিয়ে হয়ে গেছে। ও থাকে শ্বশুরবাড়িতে। মাঝে মাঝে বেড়াতে আসে এখানে। সবার ছোটো ভাইটি ভার্সিটিতে পড়ছে।

আমার শাশুড়ি কঠোর ভাবে পর্দা মেনে চলেন। ঘর থেকে বেরুন না বললেই চলে। তবু কখনো কখনো বেরুলে তখন তার পুরো শরীর বোরকাতে ঢাকা থাকা ছাড়াও হাতে পায়ে মোজা পরা থাকে। যাতে শরীরের ক্ষুদ্র একটি অংশও দেখা না যায়। তিনি টিভি দেখেন না। টাচ মোবাইল ব্যবহার করেন না। তার আরেকটি অনাধুনিক আচরণ হলো, পরিবারের সদস্যদের সাথে ডাইনিং টেবিলে তিনি খান না। তিনি খান রান্নাঘরে একা একা। কথাবার্তা কম বলেন। সারাদিন নিজের রুমে থাকেন। নামাজ পড়া, কোরান পড়া, ধর্মীয় বই পড়া, এসবে মগ্ন থাকেন।

শ্বশুরবাড়িতে আসার প্রথম দিনই স্বামী আমাকে বললো,"মায়ের সাথে চলতে তোমার সমস্যা হবে। উনি সেকেলে চিন্তা ভাবনার মানুষ। পড়াশোনা কম করেছেন তো তাই। উনি কতোটা সেকেলে তার একটা উদাহরণ হলো, তিনি স্বামী এবং ছেলেদের সাথেও ডাইনিং টেবিলে বসে খেতে চান না। রান্নাঘরে আলাদা ভাবে খান।"
"তোমরা কখনো ওনাকে তোমাদের সাথে টেবিলে খেতে বলো নি?"
"বলেছি। কিন্তু উনি আমাদের কথা শোনেন নি। আমরা বুঝেছিলাম তিনি পুরনো চিন্তা ভাবনার মানুষ। তাই আর জোর করি নি।"

এবার বলি আমার ভয় পাওয়ার কারণ। শাশুড়ির কঠোর ভাবে পর্দা মানা দেখে ভীত হয়ে পড়লাম। কেননা, আমি নিশ্চিত তিনি আমাকে বোরকা পরতে বাধ্য করবেন। আমি যে পরিবারে বড়ো হয়েছি সেখানে পর্দা মানার জন্য কোনো জোর জবরদস্তি ছিলো না। বোরকা ছাড়া চলতেই আমার ভালো লাগতো। এবং সেভাবেই চলেছি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বোরকা পরতেই হবে। নইলে শাশুড়ি হয়তো মন্দ কথা বলবেন। আমার ভাসুরের স্ত্রীও বোরকা পরেন। ধারণা করতে পারি শাশুড়ির কারণে তিনিও বাধ্য হয়ে বোরকা পরছেন। শাশুড়ির সাথে ঝামেলায় না যাওয়ার জন্য আমি অনিচ্ছায় বোরকা পরতে শুরু করলাম।

আমাকে বোরকা পরতে দেখে আমার স্বামী নিরাশ হয়ে বললো,"মা তোমাকে বোরকা পরতে বলেছে, তাই না? আমি জানতাম এমন যে হবে।"
"তিনি আমাকে বোরকা পরতে বলেন নি। নিজ থেকে পরলাম। ওনার বলার আগেই পরে ফেললাম। ওনার সাথে বিবাদে যেতে চাচ্ছি না।"
"কিন্তু এই বোরকা তো তুমি খুশি হয়ে পরছো না। পরছো ইচ্ছের বিরুদ্ধে। এতে তোমার মন খারাপ থাকবে।"

কিছু না বলে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। সত্যি আমার খুব মন খারাপ হয়ে গেলো।

এর কিছুদিন পর শাশুড়ি একদিন আমাকে তার রুমে ডেকে পাঠালেন।
আমি ভয়ে ভয়ে তার রুমে গেলাম। ভাবছিলাম, না জানি কোন কঠিন নিয়ম চাপিয়ে দেন। আমি রুমে গেলে তিনি আমাকে তার বিছানায় বসতে বললেন।
আমি জড়সড় হয়ে বসলাম।

তিনি তখন বললেন,"বাবার বাড়িতে থাকার সময় কি বোরকা পরতে?"
মাথা নিচু করে বললাম,"জী না।"
"তাহলে এখন কেনো বোরকা পরছো?"
কিছু না বলে চুপ হয়ে রইলাম।
তিনি বললেন,"এই বাড়ির কেউ কি তোমাকে বোরকা পরতে বলেছে? বিশেষ করে বড়ো বউ?"
মাথা দু দিকে নেড়ে বললাম,"জী না।"
"তাহলে কেনো পরছো?"
এর কী উত্তর দেবো বুঝতে পারছিলাম না। তাই চুপ হয়ে রইলাম।

তিনি তারপর বললেন,"তুমি কি আমার ভয়ে বোরকা পরেছো? যদি এমন করে থাকো, তাহলে বলবো, এমন করার কোনো প্রয়োজন নেই। বোরকা পরবে কি পরবে না এই সিদ্ধান্ত তোমার। তোমার ইচ্ছে করলে পরবে, ইচ্ছে না করলে পরবে না। এই বাড়ির কেউ যদি তোমাকে বোরকা পরতে জোর করে তাহলে আমাকে বলবে। আমি তার ব্যবস্থা নেবো।"

তার কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলাম। এবং ভীষণ খুশি হলাম। এমন কথা তিনি বলবেন কল্পনা করি নি। হতবাক হয়ে শাশুড়ির দিকে চেয়ে রইলাম।

শাশুড়ির রুম থেকে বেরিয়ে ভাসুরের স্ত্রীর রুমে গেলাম। ভাসুর তখন বাসায় ছিলেন না।
ভাবীকে বললাম,"ভাবী, আপনাকে একটা প্রশ্ন করবো, উত্তর দেবেন?"
"বলো।"
"আপনি বোরকা কেনো পরেন?"
ভাবী হেসে বললেন,"ওটা আমি স্কুল জীবন থেকে পরতাম। বোরকা পরতে ভালো লাগে।"
"আমি ভাবলাম বিয়ের পর বোধহয় পরতে শুরু করেছেন। হয়তো শাশুড়ির চাপে। কারণ উনি তো কঠোর ভাবে পর্দা মানেন।"
"ওনাকে তুমি এখনো চিনতে পারো নি। আস্তে আস্তে পারবে। উনি কেমন মানুষ তোমাকে সামান্য করে বলি। আমার বোরকা পরার ব্যাপারটা স্বামীর পছন্দ ছিলো না। তারা হলো আধুনিক চিন্তা ভাবনার মানুষ। সে আমাকে পরিষ্কার জানিয়ে দিলো, আমি বোরকা পরতে পারবো না। কিন্তু আমি চাই বোরকা পরতে। এ নিয়ে স্বামীর সাথে বিয়ের পর পরই কয়েকদিন কথা কাটাকাটি হলো। বিষয়টা শাশুড়ির কানে গেলো। তিনি তখন একদিন আমাদের রুমে এসে আমার স্বামীকে দৃঢ় কণ্ঠে বললেন,'বউ যখন বোরকা পরতে চাইছে তখন অবশ্যই সে বোরকা পরবে। খবরদার, জোর করে তোর ইচ্ছেকে বউয়ের ওপর চাপাতে পারবি না। এ নিয়ে যেনো আর কথা না শুনি।' তারপর থেকে আমার স্বামী আর বোরকা পরা নিয়ে আমাকে কোনো কথা বলে নি।"

এরপর বললেন,"আমি যখন শ্বশুরবাড়িতে এসেছিলাম তখন রান্না করতে জানতাম না। শাশুড়ি আম্মা এ নিয়ে কটাক্ষ না করে তিনি হাতে ধরে আমাকে রান্না শিখিয়েছেন। এবার বুঝতে পারছো তিনি কেমন মানুষ?"

হ্যাঁ ততোক্ষণে স্পষ্ট বুঝে গেছি শাশুড়ি কেমন মানুষ। তাকে নিয়ে যে ভুল ধারণাগুলো ছিলো সেগুলো ভেঙে গেলো। আর আমার শ্বশুর, স্বামী এবং তার ভাইয়েরা যে তাকে চিনতে ভুল করেছে সেটাও বুঝতে পারলাম। তারা তাকে বলে সেকেলে। কিন্তু তারা জানে না সেকেলে আসলে তারা, তিনি নন।

কয়কদিন পরের একটা ঘটনা বলি। আমার স্বামী ব্যবসায়ী। তাদের ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে প্রায় সময় পার্টির আয়োজন করে। সেখানে খাওয়া দাওয়ার পাশাপাশি থাকে গান, নাচ, মদ্যপান। আমার ওসব ভালো লাগে না। তাই ঐ পার্টিগুলোতে যেতে চাই না। কিন্তু আমার স্বামী জোর করে আমাকে ওখানে নিয়ে যেতে চায়। অনিচ্ছা প্রকাশ করলে সে রেগে যায়। এ নিয়ে কয়েকদিন ঝগড়া হলো ওর সাথে।

একদিন রেগে গিয়ে সে বললো,"তোমাকে আধুনিক মেয়ে বলে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি তুমি আমাদের মায়ের মতো সেকেলে।"
জবাবে বললাম,"সেকেলে তোমাদের মা নয়, সেকেলে হচ্ছো তোমরা।"
সে অবাক হয়ে বললো,"মানে?"
"তোমরা উচ্চ শিক্ষিত হয়েছো বটে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে শিক্ষিত হও নি। তোমাদের মা হলেন সত্যিকার শিক্ষিত এবং আধুনিক। কারণ তোমরা তোমাদের চিন্তা ভাবনাকে জোর করে স্ত্রীদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাও। তাদের ইচ্ছে অনিচ্ছের কথা মোটেই ভাবো না। তোমরা ভাবো, তোমরা যা করছো তাই আধুনিক। আর বাকি সব সেকেলে। তোমাদের মা কিন্তু এভাবে ভাবেন না। অন্যের ইচ্ছেকে তিনি গুরুত্ব দেন। তিনি কখনই তার ইচ্ছেকে অন্যের ওপর চাপিয়ে দেন না। যা তোমরা করো। তাই বলছি, তোমরা উচ্চ শিক্ষিত হয়েও আধুনিক নও৷ আর তোমাদের মা অল্প শিক্ষিত হয়েও আধুনিক।"

সে আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। তার চেহারা দেখে বোঝা গেলো কথাগুলো শুনে সে ধাক্কার মতো খেয়েছে। এরপর থেকে সে আর কোনো বিষয়ে আমাকে জোর করতো না।

এর কিছুদিন পর ভাবীকে বললাম,"আচ্ছা ভাবী, আম্মা যে রান্নাঘরে একা একা খান এজন্য কিছু করা যায় না?"
"কী করবে? আমি প্রথম প্রথম অনেক বলেছিলাম তাকে ডাইনিং টেবিলে সবার সাথে খাওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি রাজি হলেন না। বলেন, তার নাকি ওভাবেই ভালো লাগে। তাই আর বাড়াবাড়ি করি নি।"
"আমরা সবাই টেবিলে খাবো, আর উনি একা রান্নাঘরে খাবেন। ব্যাপারটা আমার ভালো লাগে না।"
"আমারো ভালো লাগে না।"
"আসুন একটা কাজ করি। এখন থেকে আমরা দুজন টেবিলে না খেয়ে ওনার সাথে রান্নাঘরে খাবো।"
"যদি এটা করি তাহলে আমাদের স্বামীরা বলবে, আমরা মায়ের মতো সেকেলে হয়ে গেছি।"
"তাদের কথা বাদ দিন। তারা জানে না, তাদের মা নয়, তারাই আসলে সেকেলে।"
"একদম ঠিক বলেছো।"
"তাহলে আজ থেকে আমরা ওনার সাথে রান্নাঘরে খাবো।"
"ঠিক আছে।"

দুপুরে যখন আমি আর ভাবী ডাইনিং টেবিলে খেতে না বসে শাশুড়ি মায়ের সঙ্গে রান্নাঘরে খেতে বসলাম, উনি তখন বিস্মিত হয়ে বললেন,"আরে কী করছো তোমরা? এখানে কেনো বসছো? তোমরা টেবিলে খেতে যাও।"
আমি বললাম,"না আম্মা। এখন থেকে আমরা দুজন আপনার সাথে রান্নাঘরে খাবো।"
ভাবী মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।

শাশুড়ি আম্মা আমাদের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,"আমি রান্নাঘরে খাচ্ছি এতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু তোমরা রান্নাঘরে খাবে তা হয় না। তোমাদের বিয়ের সময় তোমাদের বাবা মাকে বলেছিলাম, তোমাদের নিজের মেয়ের মতো দেখবো। আর আমার মেয়েরা রান্নাঘরে খাবে তা হয় না। চলো সবাই টেবিলে যাই।"

তার কথা শুনে আবারো বুঝতে পারলাম, তিনি খুবই আধুনিক মনের মানুষ।

তিনি আমাদের হাত ধরে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে এলেন। এবং নিজেও বসলেন। আমার শ্বশুর এবং স্বামী এবং তার ভাইয়েরা মাকে প্রথমবারের মতো ডাইনিং টেবিলে সবার সাথে খেতে দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো।

আর আমরা দুই বউ মায়ের দুই পাশে বসে তাদের হতভম্ব চেহারার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলাম।

©- রুদ্র আজাদ

01/11/2022

শেষবারের মতো বিদায় জানাতে এভাবেই দৌড়াতে
দৌড়াতে আসবে আমার কোন এক প্রিয়জন..!

Want your school to be the top-listed School/college?

Telephone