Most Ven. Sadhanananda Mahathera

Most Ven. Sadhanananda Mahathera

Comments

[ বহুজন্মের সাধনার ফলে মনুষ্যজন্ম লাভ হয়... ]

একসময় পূজ্যষ্পদ শ্রাবকবুদ্ধ বনভন্তে রাজবন বিহারের দেশনালয়ে আয়োজিত দানানুষ্ঠানে সমবেত দায়ক-দায়িকাবৃন্দের উদ্দেশ্যে ধর্মদেশনায় বলেন, বৌদ্ধধর্ম বুঝতে হলে জ্ঞানী লোকের প্রয়োজন। অজ্ঞানীদের পক্ষে বৌদ্ধধর্ম বুঝা সম্ভব নয়। যার কাছে জ্ঞান থাকে, কেবল সে-ই বৌদ্ধধর্ম বুঝতে পারে। অর্থাৎ যার কাছে অন্তর্দৃষ্টিভাব থাকবে, সে বৌদ্ধধর্ম বুঝতে পারবে। ভগবান বুদ্ধ দেশনা প্রদান করার আগে দায়ক-দায়িকাদের চিত্তে অন্তর্দৃষ্টিভাব উদয় হয়েছে কিনা সেটা দেখে নিতেন। যদি দেখতেন যে দায়ক-দায়িকাবৃন্দের চিত্তে অন্তর্দৃষ্টিভাব উদয় হয়েছে তখনই বুদ্ধ ধর্মদেশনা প্রদান করতেন আর সঙ্গে সঙ্গে দায়ক-দায়িকারাও ধর্মকে বুঝতে পারত, স্রোতাপত্তি মার্গফলাদি লাভ করত। অন্তর্দৃষ্টিভাব শব্দের অর্থ নিজেকে দর্শন, নিজেকে বুঝবার ক্ষমতা। অন্তর্দৃষ্টিভাব-সম্পন্ন ব্যক্তিকে ধর্মদেশনা প্রদান করলে সে স্রোতাপত্তি, সকৃদাগামী, অনাগামী, অর্হত্ত্ব মার্গফলে প্রতিষ্ঠিত হতে সক্ষম হয়। কিন্তু যার কাছে অন্তর্দৃষ্টিভাব উৎপন্ন হয় না, সে মার্গফলে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। তাহলে দেখা যাচ্ছে, মার্গফলাদি লাভ করতে হলে তোমাদের অন্তর্দৃষ্টিভাব উৎপন্ন হতে হবে। অন্তর্দৃষ্টিভাব উৎপন্ন হলে স্কন্ধ, আয়তন, ধাতু সম্পর্কিত দেশনাসমূহ হৃদয়ঙ্গম করা সম্ভব হয়। সঙ্গে সঙ্গে মার্গফলাদি লাভ হয়ে থাকে। অন্যদিকে, তোমরা গৌতম বুদ্ধের শাসনে মনুষ্য জনম লাভ করে এক দুর্লভ সুযোগ পেয়েছ। কারণ এখনো দুঃখ থেকে মুক্ত হবার সময় রয়েছে, নির্বাণ সাক্ষাৎ করার সময় রয়েছে। তবে হ্যাঁ, তজ্জন্য তোমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা না করলে সময় থাকলেও দুঃখ থেকে মুক্ত হওয়া, নির্বাণ সাক্ষাৎ করা সম্ভব হবে না। আর যদি দুঃখ থেকে মুক্ত হতে ও নির্বাণ সাক্ষাৎ করতে না পার তাহলে নানা যোনিতে জন্মধারণ করবে। শৃগাল, কুকুর, গরু, হাতি, বাঘ, ভল্লুক, টিয়া, ময়না, মানুষ, ভূত, প্রেত, যক্ষ, পিশাচ, দেবতা, ব্রহ্মা হয়ে সীমাহীন দুঃখ যাতনা ভোগ করতে হবে। তাই যারা জ্ঞানী ব্যক্তি তারা পুনর্জন্ম গ্রহণ না করে দুঃখমুক্তি নির্বাণ সাক্ষাৎ করতে তৎপর থাকেন।

বহু জন্মের সাধনার ফলে (বর্তমানে) তোমরা এ মনুষ্য জন্ম লাভ করেছ। যদি অকুশল পাপকর্ম সম্পাদনের ফলে এ মনুষ্য জনম একবার হারিয়ে ফেলে পশু-পক্ষীকুলে জন্মগ্রহণ কর, তাহলে পুনর্বার মনুষ্য জনম লাভ করা দুঃসাধ্য ব্যাপার হবে। শাস্ত্রে বলা হয়েছে, ‘এই গৌতম বুদ্ধের শাসনের মধ্যে এখনো দুঃখ থেকে মুক্ত হবার, নির্বাণ সাক্ষাৎ করার সময় রয়েছে।’ কাজেই গৌতম বুদ্ধের শাসনে মনুষ্য জনম লাভ করত কেহ যদি দুঃখ থেকে মুক্ত হবার, নির্বাণ সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করে, তাহলে সে দুঃখ থেকে মুক্ত হতে পারবে, নির্বাণ সাক্ষাৎ করতে পারবে। তাই তো ভগবান বুদ্ধ বলেছেন, ‘মনুষ্য জনম লাভ করা দুর্লভ।’ দুর্লভ এ মনুষ্য জনম লাভ করেও তোমরা যদি বল ‘আমরা দুঃখ থেকে মুক্ত হবো না, নির্বাণ সাক্ষাৎ করবো না’ তাহলে শৃগাল, কুকুর, বানর, হাতি, ঘোড়া, বাঘ, ভল্লুক প্রভৃতি পশু-পক্ষী কুলে জন্মগ্রহণ করে নানা দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতেই থাকবে। বর্তমানে তোমরা মনুষ্যকুলে জন্মগ্রহণ করত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অবস্থান করছ। কিন্তু পূর্বজন্মের কোনো আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কি পশু-পক্ষীকুলে থাকতে পারে না? অবশ্যই থাকতে পারে। যদিও বা বর্তমানে তোমরা তাকে চিনতে পারছ না। বানরের মধ্যেও তোমাদের পূর্বজন্মের আত্মীয়-স্বজন থাকতে পারে। মা থাকতে পারে, বাপ থাকতে পারে, বোন থাকতে পারে, ভাই থাকতে পারে, স্ত্রী-পুত্র থাকতে পারে। সামনে উপবিষ্ট একজনকে দেখায়ে দিয়ে ভন্তে বলেন, ধর্‌ তোমার বাবা মৃত্যুর পর তোমার পালিত ছাগলকুলে জন্ম নিল। কিন্তু, তুমি সেটা জানতে পারছ না। এদিকে সেই ছাগলছানা বড় হয়ে গেলে তুমি সে ছাগলকে হত্যা করে ফেলছ। আবার, তোমার মা মৃত্যুর পর গরুকুলে জন্ম নিল। তুমি সেই গরুকে খুঁটিতে বেঁধে সজোরে বেত্রাঘাত করছ। সে-রকম হতে পারে নয় কি? হ্যাঁ ভন্তে, হতে পারে। কেন সে সব হচ্ছে? পুনর্জন্ম গ্রহণ করার হেতুতে। তাই তো ভগবান বুদ্ধ পুনর্জন্ম গ্রহণ করাকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করেছেন। এবং পুনর্জন্ম না হতে উপদেশ দিয়েছেন। মনে রাখবে পুনর্জন্ম হলে দুঃখ পেতে হয়, দেহধারণ করলে দুঃখ পেতে হয়। পুনর্জন্ম গ্রহণ করাটা একটা শত্রু, দেহধারণ করাটা একটা শত্রু। বর্তমানে তোমরা পুনর্জন্ম শত্রুর দ্বারা দুঃখ পাচ্ছ, দেহধারণ শত্রুর দ্বারা দুঃখ পাচ্ছ। বুদ্ধ বলেছেন তোমরা পুনর্জন্ম শত্রু ও দেহধারণ শত্রুকে নিয়ে অবস্থান করবে না। দেহধারণ শত্রুর দ্বারা কি দুঃখভোগ করতে হয় জান? শীত, উষ্ণ, ক্ষুধা, পিপাসা, ব্যাধি ও অপরের দ্বারা নিহত হওয়া, অবরুদ্ধ হওয়া, প্রহৃত হওয়া, আবার অন্ন-বস্ত্রের অন্বেষণাদি অনেক প্রকার দুঃখভোগ করতে হয়। বাস্তবিক দেহধারণ করলে এসব দুঃখভোগ করতে হয়। দেহ আছে বলেই অপরজনে (তোমাকে) প্রহার করতে পারছে, গ্রেপ্তার করতে পারছে। দেহ না থাকলে কোথায় প্রহার করবে? কাকে গ্রেপ্তার করবে? কোথায় শীত-উষ্ণ, ক্ষুধা-পিপাসা অনুভব হবে? তাই তো বলি, দেহধারণ না করলে এসব দুঃখভোগ করতে হয় না। কে দেহধারণ করে জান? অজ্ঞানে দেহধারণ করে। অজ্ঞানের কারণে দেহধারণ করতে হয়। কে পুনর্জন্ম গ্রহণ করে? তৃষ্ণাই পুনর্জন্ম গ্রহণ করে। ভবের মধ্যে তৃষ্ণা থাকলে পুনর্জন্ম গ্রহণ করতে হয়। এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, পুনর্জন্ম গ্রহণ করলে দুঃখ পেতে হয়, দেহধারণ করলে দুঃখ পেতে হয়। সবাই বলো “পুনর্জন্ম গ্রহণ করে আমরা এসব দুঃখ পাচ্ছি। দেহধারণ করে আমরা এসব দুঃখ পাচ্ছি।” কাজেই নিজের দুঃখের জন্য কারোর দোষারোপ করা চলে না। ভগবান বুদ্ধের মতে, ‘অমুকের দ্বারা আমি দুঃখ পাচ্ছি’ এটা বলা উচিত নয়। কি, মনে থাকবে তো? ‘আমি অমুকের দ্বারা দুঃখ পাচ্ছি’ এবং ‘আমি অমুকের দ্বারা সুখ পাচ্ছি’ এসব না বলতে উপদেশ দিয়েছেন ভগবান বুদ্ধ। আবার বুদ্ধ বলেছেন, ‘নির্দয় রাজা, প্রবল শত্রু, হিংস্র জন্তু যতখানি অনিষ্ট করে, মিথ্যায় আকৃষ্ট চিত্ত মানুষের তদপেক্ষা অধিক ক্ষতি করে থাকে। আর মাতা-পিতা, বন্ধু-বান্ধব কিংবা জ্ঞাতিবর্গ যে উপকার, মঙ্গল সাধন করে, সত্যে নিবিষ্ট চিত্ত ততোধিক উপকার মঙ্গল করে।’ বুঝতে পারছ তো? মনে রাখবে নির্দয় রাজা, প্রবল শত্রু, হিংস্র জন্তু তোমাদেরকে যতখানি অনিষ্ট, ক্ষতি করবে, মিথ্যায় আকৃষ্ট চিত্ত তদপেক্ষা অধিক অনিষ্ট, ক্ষতিসাধন করবে তোমাদেরকে। অন্যদিকে মাতা-পিতা কিংবা জ্ঞাতিবর্গ তোমাদেরকে যে উপকার, মঙ্গল করবে, সত্যনিবিষ্ট চিত্ত ততোধিক উপকার, মঙ্গল করবে। মোটকথা তোমাদের চিত্ত যদি সত্যপথে চালিত হয়, তাহলে তোমাদের প্রভূত উপকার, মঙ্গল সাধিত হবে। আর যদি মিথ্যাপথে চালিত হয়, তাহলে তোমাদের জীবনে নেমে আসবে মহাক্ষতি, অমঙ্গল। তোমরা যদি নিজের চিত্তকে সত্যপথে নিয়ে যাও, তাহলে তোমাদের পরম লাভ, সুখ ও মঙ্গল বলে জানবে। আর যদি মিথ্যাপথে নিয়ে যাও, তাহলে তোমাদের মহাদুঃখ, অশান্তি ও সর্বনাশ হয়ে যাবে। বর্তমান নর-নারীর চিত্ত মিথ্যাপথে যাচ্ছে বলে এতো দুঃখ, অশান্তি, বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে তারা। সত্যপথ অর্থ ঠিকপথ, মিথ্যাপথ অর্থ ভুলপথ। মনে রাখবে, তোমাদের চিত্ত যদি ঠিকপথে যায়, তাহলে তোমাদের মঙ্গল, সুখ হবে। আর চিত্ত যদি ভুলপথে যায়, তাহলে তোমাদের দুঃখ, বিপদের সীমা থাকবে না। তোমরা স্বীয় স্বীয় চিত্তকে পরীক্ষা করে দেখ, চিত্ত কি সত্যপথে চালিত হচ্ছে? নাকি মিথ্যাপথে চালিত হচ্ছে? আর চিত্তকে বল, ‘হে চিত্ত! তুমি মিথ্যাপথে চালিত হবে না; সত্যপথেই চালিত হও।’ আমি বলছি, যদি তোমাদের চিত্ত সত্যপথে যায়, তাহলে তোমাদের সুখ, শান্তি, মঙ্গল বয়ে আসবে এবং তোমরা হবে পরম সৌভাগ্যবান। আর যদি তোমাদের চিত্ত মিথ্যাপথে যায়, তাহলে তোমাদের দুঃখ, অশান্তি, বিপদ লেগেই থাকবে এবং তোমরা হবে দুর্ভাগা। তাই বলা হয়েছে, চিত্তগামী মনের ন্যায় বন্ধু নেই এবং চিত্তগামী মনের ন্যায় শত্রু নেই। মনচিত্ত যদি সত্যপথে চালিত হয়, তাহলে মনচিত্ত পরম বন্ধু আর মনচিত্ত যদি মিথ্যাপথে চালিত হয়, তাহলে মনচিত্ত প্রবল শত্রু। কাজেই তোমাদের মনচিত্ত তোমাদের বন্ধুও হতে পারে, আবার শত্রুও হতে পারে। চিত্ত সত্যপথে চালিত হলে বন্ধু আর মিথ্যাপথে চালিত হলে শত্রু বলে জানবে। মনে রাখিও স্বীয় মনচিত্তকে সত্যপথে চালিত করতে পারলে সুখ, মঙ্গল হয়। ইহাই বৌদ্ধধর্ম। এখন তোমরা বলো ‘সৌভাগ্যবান হবে নাকি দুর্ভাগা হবে?’ সমবেত দায়ক-দায়িকাবৃন্দ সমস্বরে বলে উঠেন, ভন্তে, আমরা সৌভাগ্যবান হবো। ‘তোমরা স্বীয় চিত্তকে বন্ধু বানাবে নাকি শত্রু বানাবে?’ দায়ক-দায়িকাবৃন্দ আবারো সমস্বরে বলে উঠেন, ভন্তে, চিত্তকে বন্ধু বানাবো।

শ্রদ্ধেয় ভন্তে আরো বলেন, বৌদ্ধধর্মের লক্ষ্য স্বর্গ, ব্রহ্ম নয়। এ ধর্মের লক্ষ্য হল দুঃখমুক্তি নির্বাণ প্রত্যক্ষ করা। সমস্ত তৃষ্ণা ক্ষয়, পুনর্জন্ম নেই ও যাবতীয় দুঃখ থেকে চির বিমুক্তকে বলা হয় নির্বাণ। তবে নির্বাণ লাভ করা অত সহজ নয়। মার নির্বাণ লাভ করতে বাধা দেয়, দুঃখ থেকে বিমুক্ত হতে বাধা দেয়। তোমরা যদি নির্বাণ লাভ করতে চাও, তাহলে মার নানাভাবে অন্তরায় সৃষ্টি করে দেবে, ভয়-ভীতি প্রদর্শন করবে, হুমকি প্রদান করবে। সেই অন্তরায়, ভয়-ভীতি, হুমকি অতিক্রম করে তবেই নির্বাণ লাভ করতে হয়। অন্যথায় নির্বাণ লাভ করা সম্ভবপর হয়ে উঠে না। তবে হ্যাঁ, মার কর্তৃক ভয়-ভীতি প্রদর্শন করার সময় তোমরা যদি মারকে চিনতে পার, তাহলে মার আর ভয়-ভীতি প্রদর্শন করবে না। সেখান থেকে দূরে সরে যাবে। কিন্তু চিনতে না পারলে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতেই থাকবে। এসব হল মারের হুমকি। আবার নির্বাণ লাভের পথে মার প্রলোভনের ফাঁদ পেতে রাখে। তার কন্যাদিগকে দিয়ে তথা পঞ্চ কামগুণে প্রলুব্ধ রেখে নির্বাণ লাভ করা হতে বিরত রাখে। নির্বাণ লাভের পথে মার কি কি করে জান? প্রলোভনে প্রলুব্ধ করে, ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে, পর্বত প্রমাণ বাধা-বিপত্তি সৃষ্টি করে দেয়। সে সব প্রলোভন, ভয়-ভীতি, হুমকি ও বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে পারলে তবেই নির্বাণ লাভ হয়। তাই তো বলি, নির্বাণ লাভ করতে হলে বীর হতে হবে। হীন, কাপুরুষের পক্ষে নির্বাণ লাভ করা সম্ভব নয়। সেই বীর কে? যিনি নিজকে দমন করতে পারে, নিজকে জয় করতে পারে সেই বীর। আত্মদমন করতে পারলে তবেই নির্বাণ, আত্মজয় করতে পারলে তবেই নির্বাণ (বা নির্বাণ লাভ হয়)। মনে রাখবে, যে নিজেকে দমন করতে পারবে, নিজেকে জয় করতে পারবে, সেই নির্বাণ লাভে সক্ষম হবে। ভগবান বুদ্ধের উপদেশ হল নিজকে দমন করা, নিজকে জয় করা। সবাই বলো “বুদ্ধের উপদেশ হল নিজেকে দমন করা, নিজেকে জয় করা। অপরকে দমন করা নয়, অপরকে জয় করা নয়।” অপরজনকে নয়, নিজেকে দমন করা, নিজেকে জয় করাই হল বৌদ্ধধর্ম। তোমরা অপরজনকে দমন, জয় করতে চাইবে না; নিজকেই দমন করবে, নিজকেই জয় করবে। যদি নিজেকে দমন করতে পার, নিজেকে জয় করতে পার, তাহলে পরম সুখ নির্বাণ লাভ করতে পারবে। আবার, ভগবান বুদ্ধ বলেছেন সাধারণ মানুষ আমার কর্তৃক প্রচারিত এ ধর্ম অনুধাবন করতে পারবে না। যারা অসাধারণ কেবল তারাই এ ধর্ম অনুধাবন করতে পারবে। অসাধারণ অর্থ যাদের নিকট চারি আর্যসত্য জ্ঞান, প্রতীত্যসমুৎপাদ-নীতি জ্ঞান, আসবক্ষয় জ্ঞান রয়েছে। সেই অসাধারণ ব্যক্তিরাই বৌদ্ধধর্ম অনুধাবন করতে পারেন। সবাই বলো “সাধারণ মানুষ বৌদ্ধধর্ম অনুধাবন করতে পারবে না। আর যারা মারের অধীন হয়ে থাকে তারাও বৌদ্ধধর্ম অনুধাবন করতে পারবে না।” বৌদ্ধধর্ম অনুধাবন করতে হলে স্বাধীন ও অসাধারণ হতে হবে। স্বাধীন ও অসাধারণ হলে তবেই বৌদ্ধধর্ম অনুধাবন করতে পারবে। কিভাবে বৌদ্ধধর্ম অনুধাবন করতে পারবে? স্বাধীন ও অসাধারণ হলে তবেই বৌদ্ধধর্ম অনুধাবন করতে পারবে। যারা অধীন ও সাধারণ তারা বৌদ্ধধর্ম অনুধাবন করতে পারবে না। কারণ মারের অধীন থাকলে দুঃখ পেতে হয়; চারি আর্যসত্য জ্ঞান, প্রতীত্যসমুৎপাদ-নীতি জ্ঞান, আসবক্ষয় জ্ঞান না থাকলে দুঃখ পেতে হয়। সেই দুঃখাবস্থায় বৌদ্ধধর্ম অনুধাবন করা যায় না। বৌদ্ধধর্ম অনুধাবন করতে হলে চারি আর্যসত্য জ্ঞান, প্রতীত্যসমুৎপাদ-নীতি জ্ঞান, আসবক্ষয় জ্ঞানে অসাধারণ ও মারের অধীন থেকে মুক্ত বা স্বাধীন হতে হয়।

যাবতীয় দুঃখ থেকে চিরমুক্তি নির্বাণ লাভ করতে হলে তোমাদেরকে মারের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে। ভগবান বুদ্ধ গয়ার বোধিমূলে মারের সঙ্গে কিভাবে যুদ্ধ করেছিলেন জান? অস্ত্র-শস্ত্র ছাড়া ক্ষান্তির বল, মৈত্রীর বলে মারের সঙ্গে যুদ্ধ করে মারকে পরাজিত করেছিলেন। বিনা দণ্ডে, বিনা অস্ত্রে কেবল ক্ষান্তির বলে, মৈত্রীর বলে ভগবান বুদ্ধ মারকে পরাজিত করেছিলেন সেদিন। ভগবান বুদ্ধ কিভাবে মারকে পরাজিত করেছিলেন? অস্ত্র-শস্ত্র ছাড়া ক্ষান্তির বলে, মৈত্রীর বলে মারকে পরাজিত করেছিলেন। তোমাদেরকেও ক্ষান্তির বলে, মৈত্রীর বলে বলীয়ান হতে হবে। সর্বদা চিত্তের মধ্যে ক্ষান্তিভাব, মৈত্রীভাব বজায় রাখতে হবে। অমুক আমাকে গালি দিয়েছে, প্রহার করেছে, ঠকিয়েছে, পরাজিত করেছে; আমার সম্পদ চুরি করেছে, বাগিয়ে নিয়েছে এরূপ বলা চলবে না। এরূপ বললে বা চিন্তা করলে ক্ষান্তি, মৈত্রীভাব উধাও হয়ে যায়। হিংসা, প্রতিশোধ স্পৃহা জ্বলতে থাকে। তাই বলছি, তোমরা সেই সব চিন্তা করবে না। বরং সেরূপ পরিস্থিতির শিকার হলেও ক্ষান্তিভাব, মৈত্রীভাব অটুট রাখবে। সবসময় ক্ষমা, মৈত্রীর সহিত অবস্থান করবে। মনে রাখবে ক্ষমা, মৈত্রীর বলে মারকে জয় করা যায়। ভগবান বুদ্ধ অস্ত্র-শস্ত্র ছাড়া ক্ষান্তির বলে, মৈত্রীর বলে মারকে পরাজিত করেছিলেন। তোমরাও ক্ষান্তির বলে, মৈত্রীর বলে মারকে পরাজিত করতে সচেষ্ট থাক।

পরিশেষে তিনি বলেন, তোমরা সবাই পণ্ডিত হও। সহনশীলতা, জীবের প্রতি দয়ালু, কুশলকার্যে নির্ভীক, ক্ষমা, মৈত্রী ও নিজকে অক্ষুণ্ন রাখতে পারলে পণ্ডিত হওয়া যায়। পণ্ডিত লোকেরা নির্বাণ লাভ করতে পারে, দুঃখ থেকে মুক্ত হতে পারে। মূর্খ লোকেরা নির্বাণ লাভ করতে পারে না, দুঃখ থেকে মুক্ত হতে পারে না। তোমরা মূর্খ হবে না। মূর্খ হলে দুঃখ থেকে মুক্ত হতে পারবে না। বুঝতে পারছ তো? তোমরা সবাই পণ্ডিত হবে; সাধু হবে। অসাধু কাকে বলে? যে প্রাণিহত্যা করে, চুরি করে, ব্যভিচার করে, মিথ্যাকথা বলে, নেশাদ্রব্য সেবন করে সে অসাধু। আর যেজন প্রাণিহত্যা করে না, চুরি করে না, ব্যভিচার করে না, মিথ্যাকথা বলে না, নেশাদ্রব্য সেবন করে না সে সাধু। তোমাদের কাজ হল মূর্খ না হয়ে পণ্ডিত হওয়া, অসাধু না হয়ে সাধু হওয়া। অন্যদিকে, ভগবান বুদ্ধ বলেছেন, “হে ভিক্ষুগণ! তোমরা মূর্খদেরকে পণ্ডিত বানাও, অসাধুদেরকে সাধু বানাও।” মূর্খদের পক্ষে নির্বাণ লাভ করা সম্ভব নয়। যারা পণ্ডিত কেবল তারাই নির্বাণ লাভ করতে সক্ষম হন। নির্বাণ লাভ করতে হলে তোমাদেরকেও পণ্ডিত হতে হবে...। আমি আবারো বলছি, তোমরা সবাই পণ্ডিত হয়ে যাও। মনে রাখবে, বৌদ্ধ পরিষদ চার প্রকার। কি কি? ভিক্ষু, ভিক্ষুণী, উপাসক, উপাসিকা। বুদ্ধ বলেছেন, ‘এই চতুর্বিধ বৌদ্ধ পরিষদের মধ্যে যারা আমার বাক্যের দিকে কর্ণপাত করবে না অর্থাৎ শ্রদ্ধা উৎপন্ন করবে না তারা অপায়ে গমন করবে।’ তাই বলছি, তোমাদেরকে বুদ্ধের বাক্যের দিকে কর্ণপাত করতে হবে, শ্রদ্ধা উৎপন্ন করতে হবে। নতুবা চারি অপায় : নরক, তির্যক, প্রেত ও অসুরকুলে উৎপন্ন হয়ে দুর্বিষহ দুঃখ-যাতনা ভোগ করতে হবে। তোমরা প্রত্যেকে বুদ্ধের বাক্যের দিকে কর্ণপাত কর, শ্রদ্ধা উৎপন্ন কর এবং মারের সাথে যুদ্ধ কর। তাহলে তোমাদের মনুষ্য সুখ, দেবতা সুখ ও নির্বাণ সুখ লাভ হবেই।

সাধু, সাধু, সাধু।

কার্টেসি: Most Ven. Sadhanananda Mahathera

A monastery of eternal peace, a beautiful
sightseeing place of Bangladesh & the place of
Gautama Bud His father’s
name was Mr. He was not even attentive. Oh! Ven.

নোঙ্গররূপ মিথ্যাভাব ও আসক্তি ত্যাগ কর

এক সময় শ্রদ্ধেয় বনভান্তে নিজের আবাসিক ভবনে ভিক্ষুসঙ্ঘকে দেশনা প্রদান প্রসঙ্গে বলেন—জগতের সবকিছুই নামরূপ। দৃশ্যমান সকল সত্ত্ব, জীব, মানুষ, পুরুষ, মহিলা অর্থাৎ প্রাণীজগতের সকল জীবকেই নামরূপ বুঝায়। এখানে জীব, সত্ত্ব, আমি, আমার, আমিত্ব বলে কিছু নেই। আমি, আমার, আমিত্ব, মানুষ, পুরুষ, মহিলা, সত্ত্ব, জীব বলে দর্শন করলে মিথ্যাকে দর্শন করা হয়। আর আমি, তুমি, অমুক, সমুক

Operating as usual

21/12/2022

কেহ পরীক্ষায় পাশ করার জন্য, কেহ ভোটে জয়ী হবার জন্য, কেহ বড়লোক হবার জন্য আর কেহ যেকোনো একটির জন্য প্রার্থনায় করে বসে। এ পৃথিবীতে মনুষ্যরা টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, ধন-সম্পত্তি, স্ত্রী-পুত্র, মান-যশ-স্বাস্থ্য, পদ-রাজ্য এমনকি আপন সমৃদ্ধির জন্য নানাবিধ প্রার্থনা করে থাকে। এইগুলি হল হীন প্রার্থনা। কেবল একটি প্রার্থনা করা উচিত। যে প্রার্থনায় সর্বদুঃখ হতে মুক্তি লাভ করা যায়। তা হল নির্বাণ প্রার্থনা।

-পূজ্য বনভান্তে

12/12/2022

তোমরা বৌদ্ধের শাসন মানবে, দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করবে, কর্মফল কে বিশ্বাস করবে, পরকালকে বিশ্বাস করবে, কখনো কারোর প্রতি অন্যায় আচরণ করবে না। তাহলে তোমাদের সুখ লাভ হবে, সর্বদিকে জয়যুক্ত হতে পারবে।

🙏শ্রদ্ধেয় বনভান্তের দেশনা 🙏

28/11/2022

নিজেকে মৈত্রী কামনা করা অপর কেউ মৈত্রী কামনা করা।

05/11/2022

কারো সাথে অন্যায় করবে না। কাউকে ক্ষতি করবে না। কাউকে হিংসা করবে না। কারোর সাথে শত্রুতা করবে না। নিশ্চয়ই তোমাদের সুখ হবে, শ্রীবৃদ্ধি হবে।
~ (বনভান্তে বাণী)

04/11/2022

বৌদ্ধধর্মের মতে ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা বলে কেউই নেই। এ জগতে সত্ত্বগণের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, উন্নতি-অবনতি সবই স্বকীয় কর্মের উপর নির্ভর করে থাকে। কাজেই যারা জ্ঞানী তারা ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভর করে বসে থাকে না। বসে থাকাকে উচিত বলে মনে করে না। আমি আবারও বলছি বৌদ্ধধর্মের মতে ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ-ই নেই। কর্মের দ্বারা সবকিছু সংঘটিত হয়ে থাকে। কীভাবে কর্ম সম্পাদিত হয়? চিত্তই কর্ম সম্পাদন করে। তোমাদের চিত্ত যদি অকুশলের দিকে ধাবিত হয়, তাহলে তোমরা অকুশল কর্ম সম্পাদন করবে। আর যদি কুশলের দিকে ধাবিত হয়, তাহলে তোমরা কুশল কর্ম সম্পাদন করবে। কাজেই চিত্তকে সংযত রাখতে হবে, যাতে অকুশলের দিকে ধাবিত না হয়। মনে রাখবে চিত্ত যদি সংযত হয়, তার গতিও সৎ হবেই। সেই সদাচারী চিত্তই তোমাদেরকে প্রকৃত সুখ দিতে পারে। চিত্তকে কীভাবে সংযত রাখবে? চিত্তকে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়ে আকৃষ্ট হতে না দিয়ে নির্বাণ বিষয়ে নিমগ্ন রেখে চিত্তকে সংযত রাখবে। এককথায় কেবল নির্বাণের চিত্ত হয়ে অবস্থান করতে হবে। নির্বাণের চিত্ত হয়ে অবস্থান করলে কোনো প্রকার পাপ হয় না; চিত্ত সংযত থাকে।

___পূজনীয় সাধনানন্দ মহাস্থবির (বনভন্তে)

28/10/2022

পৃথিবীতে কোথাও প্রকৃত আশ্রয় নেই। একমাত্র জ্ঞানের আশ্রয় ও সত্যের আশ্রয়-ই প্রকৃত আশ্রয়। জ্ঞান আর সত্য মানুষকে রক্ষা করে। ক্ষমাশীল হও। যেমন এই মহাপৃথিবী ক্ষমাশীল। তুমি যা কিছু কর না কেন; যা কিছু বল না কেন; পৃথিবী কখনো কম্পিত হয় না। প্রতিহিংসা করে না। পৃথিবীর মত ক্ষমাশীল হলে শত্রু ও বিপদ তিরোহিত হয়। এসব মহাপুরুষের উপদেশ

— পূজ্য বনভান্তে

09/10/2022

"তোমরা নির্দয় ও হিংসুক হবে না। তোমরা যদি নির্দয় হও, হিংসুক হও, তাহলে দেবতাগণও তোমাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করবে। তোমরা সকল প্রাণীর প্রতি দয়াশীল হও। মানুষ, পশু-পক্ষী, কীট-পতঙ্গ সকলের প্রতি সমান দয়াশীল হবে। কোনো প্রকার প্রভেদ রাখবে না।কোনো জীবকে আমরা হিংসা করবে না। সকল প্রাণীকে সমানভাবে দয়া করবে। সকল প্রাণীকে দয়া করলে মনের মধ্যে অনবদ্য সুখ শান্তি লাভ হয়"

~ বনভান্তে

07/09/2022

প্রত্যেকের একদিন মরণ হবে। এই চিন্তা কর সবে। চিরকাল কেউ বেঁচে থাকবে না। এ সত্যটি কম বেশি সবার জানা। সেজন্য প্রত্যেকের মৃত্যুর দুঃখ থাকে। মৃত্যু দুঃখ অতি ভয়ঙ্কর।
"পিতা-পুত্র পরিজন, কেহ না করে রক্ষণ;
মৃত্যু বশে সর্বজন, কর স্মৃতি মরণং।"
যে ব্যক্তি মৃত্যু সম্বন্ধে সম্যক গবেষণা করেন সেই ব্যক্তি পাপ কার্য হতে বিরত থাকেন।

পূজ্য বনভান্তে-

06/09/2022

‘আমি’কে নিয়ে থাকবে না। ‘আমার’কে নিয়ে থাকবে না। ‘আমিত্ব’কে নিয়ে থাকবে না। আমি তোদের বলছি, ‘আমি, আমার, আমিত্ব’কে নিয়ে থাকবে না। আত্মদমন, আত্মজয় কর। একেই বলে নির্বাণ। অন্যকে নয়; নিজেকে জয় কর, নিজেকে দমন কর।

— পূজ্য বনভান্তে

27/08/2022

✍️ চিত্তের মধ্যে হীনমনুষ্য, হীনতৃষ্ণা ও হীনসংস্কার থাকলে শীল প্রতিপালন করা যায় না। শীল প্রতিপালন করতে হলে চিত্ত থেকে হীনমনুষ্য, হীনতৃষ্ণা ও হীনসংস্কার বিদূরিত করা চাই। হীনমনুষ্য, হীনতৃষ্ণা ও হীনসংস্কারে আচ্ছন্ন চিত্ত সর্বদা পাপের দিকে ধাবিত হয়। যেই ভিক্ষু স্বীয় চিত্তকে হীনমনুষ্য, হীনতৃষ্ণা ও হীনসংস্কারে আচ্ছন্ন রাখবে, তার কাছ থেকে সদ্ধর্ম শ্রীবৃদ্ধিকারক কোনো কাজ আশা করা যায় না।

—বনভন্তে

13/08/2022

বনভান্তে ধর্ম কধা শুনে যা আমারে...

11/08/2022

"তোমরা বাজে তর্ক, বাজে কাজ না করে কার কতটুকু লোভ, দ্বেষ, মোহ, তৃষ্ণা ক্ষয়সাধন হয়েছে সেটা পরীক্ষা করে দেখ। বাজে তর্ক, বাজে কাজ করে অনর্থক সময় নষ্ট করো না। যত লোভ, দ্বেষ, মোহ, তৃষ্ণা ক্ষয়সাধন হবে ততই সুখ লাভ হবে। লোভ, দ্বেষ, মোহ, তৃষ্ণা ক্ষয়সাধন না করে বাজে তর্ক, বাজে কাজ করলে কিছুতেই সুখ লাভ হবে না। লোভ, দ্বেষ, মোহ, তৃষ্ণা ক্ষয়সাধন করতে পারলে তবেই সুখ লাভ করা যায়; সুখের মুখোমুখি হওয়া সম্ভব হয়। অন্যথায় সুখ সোনার হরিণের মতো অধরাই থেকে যাবে।আর কার কতটুকু লোভ, দ্বেষ, মোহ, তৃষ্ণা ক্ষয়সাধন হয়েছে সেটা পরীক্ষা করে দেখো।সেই পরীক্ষায় যদি প্রমাণ মিলে লোভ,দ্বেষ, মোহ, তৃষ্ণা ক্ষয়সাধন হয়েছে; চিত্তের মধ্যে আর লোভ, দ্বেষ, মোহ, তৃষ্ণা নেই, তাহলে জানবে তোমাদের সুখ লাভ হয়েছে। যতই লোভ, দ্বেষ, মোহ, তৃষ্ণা ক্ষয়সাধন করতে সমর্থ হবে ততই সুখের অধিকারী হতে পারবে"

✍️ পূজ্য বনভান্তে

04/08/2022

প্রত্যেকের একদিন মরণ হবে। এই চিন্তা কর সবে। চিরকাল কেউ বেঁচে থাকবে না। এ সত্যটি কম বেশি সবার জানা। সেজন্য প্রত্যেকের মৃত্যুর দুঃখ থাকে। মৃত্যু দুঃখ অতি ভয়ঙ্কর।
"পিতা-পুত্র পরিজন, কেহ না করে রক্ষণ;
মৃত্যু বশে সর্বজন, কর স্মৃতি মরণং।"
যে ব্যক্তি মৃত্যু সম্বন্ধে সম্যক গবেষণা করেন সেই ব্যক্তি পাপ কার্য হতে বিরত থাকেন।

~ পূজ্য বনভান্তে

13/07/2022

আমি মানুষ’ এ ধারণা নিয়ে অবস্থান কর, তাহলে তোমাদের চিত্তে অজ্ঞানতা থাকবে। অজ্ঞানতা থাকলে মারও থাকবে। মার তোমাদের দিয়ে পাপকর্ম সম্পাদন করায়ে পাপের সুখ করবে। মার তোমাদের দুঃখ থেকে মুক্ত হতে দিবে না। নির্বাণ লাভ করতে দেবে না।

মার কি বলে জান? মার বলে, আমি কাউকে মুক্ত হতে দেবো না। মুক্তি কিসের প্রয়োজন? তোমরা পাপকর্মই সম্পাদন করো। পাপকর্ম সম্পাদন করলে সুখ লাভ হয়। তোমরা যখন অজ্ঞান হবে, তখন মার তোমাদের উপর চেপে বসবে। আর তোমাদেরকে দিয়ে ইচ্ছামত পাপকর্ম (সম্পাদন) করিয়ে নিবে। তোমাদের বললেও নির্বাণ লাভ করবে না। দুঃখ থেকে মুক্ত হবে না। পাপকর্ম সম্পাদন করে করে দিন-যামিনী অতিবাহিত করবে।

এগুলো হলো মারের কাজ। কাজেই তোমাদের চিত্তে যদি অজ্ঞানতা, মার (বিদ্যমান) থাকে, তাহলে বৌদ্ধধর্ম আচরণ করতে পারবে না। মনে রাখবে, তোমরা যদি ‘আমি মানুষ’ এ ধারণা পোষণ কর, তাহলে তোমাদের চিত্তে অজ্ঞানতা থাকবে। অজ্ঞানতা থাকলে মারও থাকবে। আর তোমরা যদি ‘আমি মানুষ’ এ ধারণা পোষণ না কর, তাহলে তোমাদের চিত্তে অজ্ঞানতা থাকবে না।

-পূজ্য বনভন্তে।
-দেশনা করেন ২৮/০৩/২০০৮ইংরেজী।

06/07/2022

যারা জ্ঞানী, পণ্ডিত তারা মদ খায় না এবং কোনো প্রকার পাপকর্ম সম্পাদন করে না।” আমি বলে দিচ্ছি, তোমরা প্রত্যেকে জ্ঞানী, পণ্ডিত হয়ে যাও; অজ্ঞানী, মূর্খ হবে না। অজ্ঞানী, মূর্খ হলে দুঃখ ভোগ করতে হয়; বাধ্য হয়েই পাপকর্ম সম্পাদন করতে হয়। জ্ঞানী, পণ্ডিত হলে সুখ লাভ হয়; পাপকর্ম সম্পাদন করা বন্ধ হয়ে যায়। অজ্ঞানী, মূর্খেরা ইহকাল-পরকাল উভয়কালেই দুঃখ যাতনার ভোগ করে। আমি পাপ করেছি-এই চিন্তা, অনুতাপে তারা ইহকালে যেমন দগ্ধ হতে থাকে, তেমনি সেই পাপের ফলে পরকালে নরকে পতিত হয়ে আরও শত-সহস্র গুণে দুঃখ পায়। অজ্ঞানী, মূর্খেরা আপতসুখের আশায় এমন অনেক পাপকর্ম সম্পাদন করে যার দরুন তাদের নরকগামী হতে হয়। কিন্তু অজ্ঞানী, মূর্খ মানুষের দৃষ্টি নিকট বর্তমানকে অতিক্রম করে বেশি দূরে যায় না। তারা সেসব পরিণাম দেখতে পায় না। তাই ভগবান বুদ্ধ ধর্মপদে বলেছেন—যত দিন ফল না ফলে ততদিন মূর্খেরা পাপকাজকে মধুরময় বলেই মনে করে। তবে পাপের ফল যখন ফলতে শুরু করে তখন থেকেই তার দুঃখেরও শুরু (হয়)।

— পূজ্য বনভান্তে

05/07/2022

নিজের কর্ম প্রচেষ্টা দ্বারা চারি আর্যসত্য; আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ; প্রতীত্যসমুৎপাদ নীতি এবং সাঁইত্রিশ প্রকার বোধিপক্ষীয় ধর্ম আয়ত্ব করা যায়। গভীর শ্রদ্ধা, স্মৃতি, একাগ্রতা ও প্রজ্ঞা ইন্দ্রিয় সংযম-ই নির্বাণ গমনের একমাত্র চাবিকাঠি।

— পূজ্য বনভান্তে

02/07/2022

জীবনে সংযম সাধনাই সর্বশ্রেষ্ঠ সাধনা। দারিদ্রতা মানুষের সর্বগুণ নাশক। সংসার বন্ধন বড়ই দুচ্ছেদ্য। অতীতে ব্যাথা বেদনা স্মৃতিচারণ না করাই উত্তম। স্বার্থ-চিন্তা মানুষকে অন্ধ করে; মহৎ-চিন্তা উদার ও মহান করে। পাপময় জীবন মানুষকে দুর্বিসহ করে তোলে। কর্মের ফল অখণ্ডনীয়। যেমন কর্ম তেমন ফল। সংসার একান্ত অপূর্ণ ও অতৃপ্ত। দলাদলি আর রেষারেষিতে মানুষের সর্বশক্তি ক্ষয় হয়।

— পূজ্য বনভান্তে

Photos from Most Ven. Sadhanananda Mahathera's post 17/06/2022

পূজ্য বনভন্তের চোখে ছানি পড়লে ৩০ নভেম্বর ২০০৪ সালে ভারতের মাদ্রাজ (ভেল্যুর) থেকে আগত বিশিষ্ট চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এন্ড্রু ব্রাগেন পূজ্য ভন্তের বামচক্ষু অপারেশন করেন।

12/06/2022
03/06/2022

গতি হল দুটি। একটা সংসারগতি অপরটি নির্বাণগতি। পঞ্চস্কন্ধ সমন্বিত সংসারগতি। নারী বা পুরুষ জন্ম হওয়া দুঃখজনক। তাতে অনেক দুঃখের সৃষ্টি হয়। জন্ম হলে যেমন জরা দুঃখ, ব্যাধি দুঃখ, অপ্রিয় সংযোগ দুঃখ, প্রিয় বিয়োগ দুঃখ, ইচ্ছিত বস্তুর অলাভজনিত দুঃখ, বর্তমান আহার অন্বেষণ দুঃখ, পূর্ব জন্মার্জিত পাপজনিত দুঃখ প্রভৃতি উৎপত্তি হয়। তোমরা তোমাদের ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখগুলি পর্যবেক্ষণ কর। ব্যক্তিগত জীবন থেকে পারিবারিক, পারিবারিক থেকে সামাজিক, সামাজিক থেকে জাতিগত, জাতিগত থেকে দেশ, দেশ থেকে বিদেশগত কত যে মারামারি, কাটাকাটি এবং যুদ্ধ বিগ্রহের সৃষ্টি হয়। তাতে অনেক দুঃখের উৎপত্তি হয়। নারী বা পুরুষ মৃত্যুর পর পুনরায় নারী-পুরুষ অথবা চারি অপায়ে পতিত হয়ে মহাযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। এগুলির কারণ একমাত্র সংসারগতি। সংসারগতি পঞ্চমারের অধীনে থাকতে হয়। মার ঊর্ধ্বলোকে বা নির্বাণগতিতে যেতে দেয় না। সবসময় মারের ভুবনে থাকতে বাধ্য করে।

25/05/2022

ভগবান বুদ্ধের উপদেশ হলো তোমরা অজ্ঞানী, মূর্খ হবে না। সবাই জ্ঞানী, পণ্ডিত হয়ে যাও। পণ্ডিত কাকে বলে? এম.এ., বি.এ. পাস কিংবা ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করলে পণ্ডিত হওয়া যায় না। বাংলা, ইংরেজিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বক্তৃতা দিতে পারলে তদ্বারাও পণ্ডিত হওয়া যায় না। বুদ্ধের মতে, যিনি সহনশীলতা, জীবের প্রতি দয়ালু, কুশলকর্মে নির্ভীক, ক্ষমা, মৈত্রী, ও নিজকে অক্ষুণ্ণ রাখার সদ্‌গুণে গুণীয়ান তিনিই পণ্ডিত। বুদ্ধ ভিক্ষুদের বলেছেন—হে ভিক্ষুগণ! তোমরা মূর্খদের পণ্ডিত বানাবে, অজ্ঞানীদের জ্ঞানী বানাবে। ভিক্ষুদের প্রতি বুদ্ধের এ নির্দেশ সত্যিই অতুলনীয়; মহানুভবতার এক জ্বলন্ত উদাহারণ।

08/05/2022

পূজ্য বনভান্তের উপদেশ........

পরিত্রাণ পাঠ শুনতে হলে শ্রদ্ধা থাকা চায়। শ্রদ্ধা থাকা অর্থাৎ তোমাদের চিত্তে বিশ্বাস থাকতে হবে। কী বিশ্বাস? মনের মধ্যে বুদ্ধের প্রতি বিশ্বাস, ধর্মের প্রতি বিশ্বাস, সঙ্ঘের প্রতি বিশ্বাস। বুদ্ধ, ধর্ম, সঙ্ঘের প্রতি বিশ্বাস থাকলে চিত্তে সুখ হয়, পুণ্য হয়। অর্থাৎ বুদ্ধ, ধর্ম, সঙ্ঘের প্রতি বিশ্বাস থাকলে চিত্তে প্রীতি উৎপন্ন হয়। সেই প্রীতি চিত্তে পুণ্য অর্জিত হয়। আর বুদ্ধ, ধর্ম, সঙ্ঘের প্রতি বিশ্বাস না থাকলে চিত্তে দুঃখ উৎপন্ন হয়। সেই দুঃখপূর্ণ চিত্তে পাপই অর্জিত হয় মাত্র। কাজেই তোমরা বুদ্ধ, ধর্ম, সঙ্ঘের প্রতি বিশ্বাস রেখে পরিত্রাণ শুনবে। এটাও মনে রাখবে-বুদ্ধ, ধর্ম, সঙ্ঘের প্রতি অবিশ্বাস করলে চিত্তে দুঃখ উৎপন্ন হয়। সে দুঃখের হেতুতে পাপ অর্জিত হয় অনিবার্যরূপে। তাতে নরকে পতিত হতে হবে। বুঝতে পারছ তো? বনভান্তের মনচিত্তে সারাক্ষণ বুদ্ধ, ধর্ম, সঙ্ঘ থাকে। অর্থাৎ বুদ্ধ, ধর্ম, সঙ্ঘের গুণ সজাগরূক থাকে। তোমাদের মনে যদি বুদ্ধ থাকে তাহলে ধর্মও থাকবে। বুদ্ধ বলেছেন, যে বুদ্ধকে অর্থাৎ জ্ঞানকে দেখে, সে ধর্মকেও দেখে। যে ধর্মকে দেখে, সে বুদ্ধও দেখে।

— পূজ্য বনভান্তে

26/04/2022

রূপ কী? রূপ মার। বেদনাও মার, সংজ্ঞাও মার, সংস্কারও মার, বিজ্ঞানও মার। ভগবান বুদ্ধ এ মাররূপী পঞ্চস্কন্ধে অবস্থান না করতে উপদেশ দিয়েছেন। কেন দিয়েছেন? কারণ পঞ্চস্কন্ধে অবস্থান করলে বা পঞ্চস্কন্ধ বিদ্যমান থাকলে মরতে হয়, মরে যেতে হয়। রূপ বিদ্যমান থাকলে মরতে হয়, মরে যেতে হয়। বেদনা বিদ্যমান থাকলে মরতে হয়, মরে যেতে হয়। সংজ্ঞা বিদ্যমান থাকলে মরতে হয়, মরে যেতে হয়। সংস্কার বিদ্যমান থাকলে মরতে হয়, মরে যেতে হয়। বিজ্ঞান বিদ্যমান থাকলে মরতে হয়, মরে যেতে হয়। এ পঞ্চস্কন্ধে অবস্থান করলে দুঃখ পেতে হয়, নির্বাণ লাভ করা যায় না। পঞ্চস্কন্ধ দুই ভাগে বিভক্ত। যারা আর্যপুদ্গল বা মার্গফললাভী তারা পঞ্চস্কন্ধকে অনিত্য, দুঃখ, অনাত্ম, অশুচিরূপে দর্শন করেন। এবং পঞ্চস্কন্ধের প্রতি অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করেন। যারা পৃথকজন তারা পঞ্চস্কন্ধকে নিত্য, সুখ, আত্মা, শুচিরূপে দর্শন করে। এবং পঞ্চস্কন্ধের প্রতি আসক্ত হয়ে অবস্থান করে পঞ্চস্কন্ধকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চেষ্টা করে। এ কারণে তারা দুঃখ পায়, দুঃখ থেকে মুক্ত হতে পারে না। অপরদিকে আর্যপুদ্গলেরা পরম সুখে অবস্থান করেন। যেহেতু তারা পঞ্চস্কন্ধকে অনিত্য, দুঃখ, অনাত্ম, অশুচিরূপে দর্শন করে তাতে অনাসক্ত থাকেন।

~ সাধনানন্দ মহাস্থবির (বনভন্তে)

19/04/2022

কোন একসময়ে পুরাতন স্মৃতি, দেশনালয়ে নিয়ে যাচ্ছেন পরমপূজ্য বনভন্তেকে ভদন্ত ব্রহ্মদত্ত ভান্তে ও বিমলানন্দ ভান্তে ।

তারিখ: ১৯৯৭ইং, রোজ শুক্রবার।

17/04/2022

⚛️ বনভান্তে বলেন, তোমরা গরীব কেন?

▪️---------------------------------------------▪️

তোমরা কেন গরীব জান? কারণ তোমরা পাপ কর, শীল পালন কর না, তাই তোমরা গরীব, ভগবান বুদ্ধ বলেছেন, পাপ কার্য থেকে বিরত থাকলে, শীল পালন করলে ভিক্ষুও ধনী হয় এবং দায়কও ধনী হয়। ভিক্ষু যদি শীল পালন না করে ভিক্ষুও গরীব আর দায়ক যদি শীল পালন না করে দায়কও গরীব হবে।

🔹জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।

🙏--------সাধু, সাধু, সাধু।------🙏

16/04/2022

জগতে নানা ধর্ম বিদ্যমান। তারমধ্যে বিচার করলে পাপধর্ম ও পুণ্যধর্ম দু’টি দেখা যায়। পাপধর্ম সত্ত্বগণকে অপায়ে নিয়ে যায় এবং পুণ্যধর্ম সত্ত্বগণকে সুগতি স্বর্গে নিয়ে যায়। যারা বিজ্ঞ, জ্ঞানী তারা পুণ্যধর্মও ত্যাগ করেন। কারণ, স্বর্গ-ব্রহ্ম ভোগ করার পর অপায়ে পতিত হবার আশঙ্খা থাকে। তারা সুখ-দুঃখ বিরহিত নির্বাণ লাভ করেন।

— পূজ্য বনভান্তে

14/03/2022

#লোকোত্তর ধর্মে অবিদ্যা তৃষ্ণা ভব নেই...

একসময় পরম পূজ্য অর্হৎ বনভন্তে মহোদয় নিজ আবাসিক ভবনে ভিক্ষুসঙ্ঘকে ধর্মদেশনা প্রদানকালে বলেন, তোমরা সর্বদা স্মৃতি দ্বারা চিত্তকে অকুশল, পাপ থেকে রক্ষা করবে। সম্যকদৃষ্টিকে সম্মুখে বজায় রেখে কর্ম সম্পাদনে মনোযোগী হবে। পঞ্চস্কন্ধে উদয়-ব্যয় দর্শন করবে, ঘুম পরিহার করে চলবে, তাহলে যাবতীয় দুঃখ থেকে মুক্ত হতে পারবে। তাই উদানে বলা হয়েছে :

কর তাই চিত্ত সংরক্ষণ,
সম্যক সংকল্প সদা কর আলম্বন;
সম্মুখে সম্যকদৃষ্টি নিয়ে,
উদয়-বিলয় পঞ্চস্কন্ধের জানিয়ে;
তন্দ্রালস্য পরাভব করি,
সকল দুর্গতি ভিক্ষু যাও পরিহরি।

তোমরা এ উপদেশসমূহ মনে-প্রাণে গ্রহণ করত যথাযথ আচরণে সচেষ্ট হও। যথাযথভাবে আচরণ করতে পারলে পরম সুখ লাভ হবে। বর্তমান ভিক্ষুরা আচরণ করছে না। আর তাই পরম সুখের অধিকারী হতে পারছে না তারা। আমি আবারো বলছি, তোমরা চিত্তকে সুরক্ষা কর, সম্যক সংকল্পকে আলম্বন করে অবস্থান কর, সম্মুখে সম্যকদৃষ্টি বজায় রাখ, পঞ্চস্কন্ধের উদয়-বিলয় জান বা অবগত হও, আলস্য-তন্দ্রা বিতাড়িত করে দাও তাহলে অবশ্যই তোমাদের সুখ লাভ হবে।
ভগবান বুদ্ধ আনন্দকে বলেছিলেন, হে আনন্দ! যতদিন পর্যন্ত আমি জীবিত ছিলাম ততদিন আমি তোমাদেরকে অনুশাসন করেছিলাম। আমার অবর্তমানে মৎ কর্তৃক যে ধর্মবিনয় দেশিত ও প্রজ্ঞাপ্ত হয়েছে, সেই চুরাশি হাজার ধর্মস্কন্ধ তোমাদেরকে অনুশাসন করবে। শ্রদ্ধেয় বনভন্তে ভিক্ষুসঙ্ঘের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন, বর্তমানে আমাদিগকে অনুশাসন করবে কে? ভিক্ষুসঙ্ঘ : চুরাশি হাজার ধর্মস্কন্ধই আমাদেরকে অনুশাসন করবে। হ্যাঁ, চুরাশি হাজার ধর্মস্কন্ধই আমাদেরকে অনুশাসন করবে। তজ্জন্য আমি সমগ্র ত্রিপিটক শাস্ত্র এ রাজবন বিহারে এনেছি। এখানে ত্রিপিটক শাস্ত্র (সংরক্ষিত) থাকলে লংকা (শ্রীলংকা), বার্মা (মায়ানমার), থাইল্যান্ড যেতে হবে কেন? কোথাও আর যেতে হবে না। আমার সাথে বলো “বর্তমানে আমাদেরকে চুরাশি হাজার ধর্মস্কন্ধ বা ত্রিপিটক শাস্ত্রই অনুশাসন করবে।” ত্রিপিটক শাস্ত্রে উল্লেখিত শিক্ষা, উপদেশসমূহ নির্ভুলভাবে মেনে চললে তোমাদের প্রব্রজিত জীবন পরম সার্থকতায় ভরে উঠবে, অনাবিল শান্তি লাভে সমর্থ হবে। মনে রাখবে, ভগবান বুদ্ধ যতোদিন জীবিত ছিলেন ততোদিন তিনি একাই অনুশাসন করেছিলেন। বর্তমানে বুদ্ধের অবর্তমানে তাঁর দেশিত চুরাশি হাজার ধর্মস্কন্ধই আমাদেরকে অনুশাসন করবে।
তোমরা ত্যাগের যোগ্য ত্যাগ কর, গ্রহণের যোগ্য গ্রহণ কর। তবে গ্রহণে অনাসক্ত থাকবে। ধর্‌ কোনো ব্যক্তি যদি তার কন্যাকে দান করতে চাই, সেটা ত্যাগের যোগ্য, গ্রহণের যোগ্য নয় বলে জানবে। ধান, চাউল দান দিতে চাই, সেগুলো ত্যাগের যোগ্য, গ্রহণের যোগ্য নয়। অপক্ক মাংস, মাছ দান দিতে চাই; সে সবও ত্যাগের যোগ্য, গ্রহণের যোগ্য নয়। ছাগল, গরু, মহিষ, হাতি দান দিতে চাই; সেগুলোও ত্যাগের যোগ্য, গ্রহণের যোগ্য নয়। টাকা-পয়সা, স্বর্ণ-রৌপ্য দান দিতে চাই; সেসবও ত্যাগের যোগ্য, গ্রহণের অযোগ্য বলে জানবে। আবার, কেহ চারি প্রত্যয় যেমন চীবর, পিণ্ড, ঔষধ, বিহার ইত্যাদি দান করতে চাইলে, সেগুলো গ্রহণের যোগ্য বলে গ্রহণ করতে হবে। এভাবে জ্ঞানের সহিত বিচার করত কোনোটা ত্যাগের যোগ্য এবং কোনোটা গ্রহণের যোগ্য জানতে হবে। আমি আবারো বলছি, তোমরা ত্যাগের যোগ্য ত্যাগ কর, গ্রহণের যোগ্য গ্রহণ কর। এবং গ্রহণে অনাসক্ত থাক। তাহলে তোমরা নির্বাণ লাভে সমর্থ হবে। গ্রহণে অনাসক্ত কীরকম? ধর্‌ কেহ তোমাদেরকে কোনো খাদ্যদ্রব্য দান দিল। তোমরা সেটা গ্রহণ করত কেবলমাত্র জীবন রক্ষা করার জন্য ঔষধ হিসাবে খাবে। খাদ্যের প্রতি তৃষ্ণা উৎপন্ন করবে না। এরূপ খাদ্য আগামীকাল আবারো খেতে পাবো কি? অথবা কিরূপে পাবো? তৃষ্ণাজাত এসব হীনচিন্তা না করা। উপরন্তু আজকে যা খাওয়া হলো, যা লাভ হলো, সঙ্গে সঙ্গে সে সবের কথা ভুলে যাওয়া, পুনরায় স্মরণ না করাকে গ্রহণে অনাসক্ত বলা হয়। আমার সাথে বলো “আমরা ত্যাগের যোগ্য ত্যাগ করব, গ্রহণের যোগ্য গ্রহণ করব। তবে গ্রহণে অনাসক্ত থাকব।” অনাসক্তকে নির্বাণ বলে। নির্বাণ সুখ লাভ করতে তোমরা আমি, আমার, আমিত্ব বোধ উৎপন্ন করবে না। আমি, আমার, আমিত্বের মোহ নিগড়ে আবদ্ধ হলে নির্বাণ লাভ করা যায় না। আমি বললে দুঃখ পেতে হয়, আমার বললে দুঃখ পেতে হয়, আমিত্ব বললে দুঃখ পেতে হয়। বর্তমান ভিক্ষুরা আমি, আমার, আমিত্ব ধারণা পোষণ করছে বলে দুঃখ পাচ্ছে। অনেক ভিক্ষু আমাকে বলেছিল ‘দুঃখ পাচ্ছি’। দুঃখ থেকে মুক্ত হবার জন্যেই তো এ প্রব্রজ্যা জীবন গ্রহণ করা। কি, তাই তো? হ্যাঁ, ভন্তে। তবে তারা দুঃখ পাচ্ছে কেন? তারা আমি, আমার, আমিত্ব ধারণা পোষণ করছে বলেই দুঃখ পাচ্ছে। কাজেই তোমরা আমি, আমার, আমিত্ব ধারণা পোষণ করে অবস্থান করবে না। আমি বললে অজ্ঞান, আমার বললে তৃষ্ণা এবং আমিত্ব বললে ভ্রান্তধারণা উৎপন্ন হয়। আমি না বললে অজ্ঞান উৎপন্ন হতে পারে না, আমার না বললে তৃষ্ণা উৎপন্ন হতে পারে না, আমিত্ব না বললে ভ্রান্ত ধারণা উৎপন্ন হতে পারে না। পারবে কি, আমি-আমার-আমিত্ব ধারণা পোষণ না করে অবস্থান করতে? যদি পার তাহলে নির্বাণ লাভে সক্ষম হবে। নির্বাণে আমি নেই, আমার নেই, আমিত্ব নেই। আমি, আমার, আমিত্ব বললে নির্বাণ লাভ হয় না। মনে রাখবে আমি, আমার, আমিত্ব বললে দুঃখ পেতে হয়। অন্যদিকে আমি-আমার-আমিত্ব না বললে সুখ লাভ হয়। তোমরা আমার এসব কথা (উপদেশ) পরীক্ষা কর। আমি দৃপ্তকণ্ঠে বলতে পারি, আমি যা বলছি তাই সত্য বলে প্রমাণিত হবে।
তিনি আরো বলেন, ভগবান বুদ্ধকে একদা এক দেবতা জিজ্ঞাসা করেছিল, ভন্তে, আপনি বলে থাকেন অর্হৎগণ আমি, আমার, আমিত্ব ধারণা পোষণ করেন না। কিন্তু তারাও তো আমি (আমি বলছি), আমার (সেটা আমার) বলে থাকেন। বুদ্ধ : অর্হৎগণ যে আমি, আমার বলেন সেটা ভাষাস্থলে, ব্যবহারিকরূপেই বলে থাকেন। মিথ্যাধারণা জাত আমি, আমার, আমিত্ব বোধ থেকে নয়। তাঁরা ব্যবহারিক সত্য হিসাবে আমি, আমার শব্দ প্রয়োগ করেন বটে কিন্তু পারমার্থিকভাবে গ্রহণ করেন না। বল তো অর্হৎগণ কিভাবে আমি, আমার বলে থাকেন? অর্হৎগণ ব্যবহারিক সত্যরূপে, ভাষাস্থলে আমি, আমার বলেন থাকেন মাত্র। কখনো পারমার্থিক সত্য হিসাবে নয়। ভগবান বুদ্ধও ভাষাস্থলে ব্যবহারিক সত্য হিসাবে আমি, আমার বলতেন। কিন্তু পারমার্থিক সত্য হিসাবে আমি, আমার ধারণা পোষণ করতেন না। তোমরা কখনো আমি, আমার ধারণা পোষণ করবে না। আমি, আমার ধারণা পোষণ না করলে তোমাদের সুখ লাভ হবে, পুণ্য হবে। আর যদি আমি, আমার ধারণা পোষণ কর, তাহলে দুঃখই পাবে সার। কিছুতেই সুখ লাভ করতে পারবে না। মনে রাখবে আমি, আমার ধারণা পোষণ না করলে পরম সুখের অধিকারী হতে পারবে।
যেকোনো বিষয়ের প্রতি যদি তৃষ্ণা থাকে, এবং সেই তৃষ্ণার সহিত ভবের মধ্যে অবস্থান করা হয় তাহলে অনিবার্যরূপে দুঃখ পেতে হয়। কোনো বিষয়ের প্রতি তৃষ্ণা না থাকলে, ভবের মধ্যে অবস্থান না করলে অকুশলধর্ম থাকতে পারে না। সে অবস্থায় সদ্ধর্ম আচরণ করা সম্ভব হয় এবং পরম সুখ লাভ হয়ে থাকে, ইহাই বৌদ্ধধর্ম। তোমরা কোনো বিষয়ের প্রতি তৃষ্ণা উৎপন্ন করবে না, ভবের মধ্যে অবস্থান করবে না তাহলে চিত্তের মধ্যে বুদ্ধজ্ঞান জাগ্রত থাকবে। সদ্ধর্ম আচরণ করা সম্ভব হবে। চিত্তের মধ্যে জ্ঞান জাগ্রত থাকলে, সদ্ধর্ম আচরণ করলে তবেই সুখ অর্জিত হয়। কিন্তু সদ্ধর্ম আচরণ করা ও সদ্ধর্ম শ্রবণ করা দুর্লভ। কেন দুর্লভ? কারণ তৃষ্ণা বিদ্যমান থাকলে সদ্ধর্ম শ্রবণ করা যায় না, সদ্ধর্ম আচরণ করা যায় না। তৃষ্ণা সদ্ধর্ম শ্রবণ করতে দেয় না, সদ্ধর্ম আচরণ করতে দেয় না। তৃষ্ণা পরধর্ম (লোভ, দ্বেষ, মোহজাত ধর্ম) শ্রবণ এবং পরধর্ম আচরণ করতে বাধ্য করায়। যার চিত্তে তৃষ্ণা নেই তিনিই সদ্ধর্ম আচরণ করেন, সদ্ধর্ম শ্রবণ করেন। মনে রাখবে পরধর্ম আচরণ ও পরধর্ম শ্রবণ করলে দুঃখ আর সদ্ধর্ম শ্রবণ ও আচরণ করলে সুখ। সদ্ধর্ম কাকে বলে? মার্গ-ফল-নির্বাণকে বলা হয় সদ্ধর্ম। আমি আবারো বলছি, তোমরা কোনো বিষয়ের প্রতি তৃষ্ণা উৎপন্ন করবে না। যদি তৃষ্ণা উৎপন্ন না কর তাহলে পরম সুখে অবস্থান করতে সক্ষম হবে। আর তৃষ্ণা উৎপন্ন করলে দুঃখভোগ করা ছাড়া অন্য গত্যন্তর থাকবে না। সাধারণ নর-নারী ভবের মধ্যে তৃষ্ণা উৎপন্ন করত স্বামী-স্ত্রী হয়ে সাংসারিক জীবন-যাপন করতেছে। এ সাংসারিক জীবন-যাপন করতে গিয়ে তাদেরকে কতো রকমের দুঃখ যাতনা ভোগ করতে হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। নর-নারীগণ তৃষ্ণার কারণে পরস্পর পরস্পরের স্বামী-স্ত্রী হয়ে থাকে। মোটকথা তৃষ্ণার দ্বারাই নর নারীকে আকর্ষণ করে, নারী নরকে আকর্ষণ করে। উত্তর মেরু চুম্বক ও দক্ষিণ মেরু চুম্বক যেমন পরস্পর পরস্পরকে আকর্ষণ করে ঠিক তেমনি তৃষ্ণার কারণে নারী নরকে আকর্ষণ করে আর নর নারীকে আকর্ষণ করে থাকে। সে অবস্থায় স্বামী স্ত্রীকে নিয়ে পাপ করে, স্ত্রী স্বামীকে নিয়ে পাপ করে। কাজেই ভবের মধ্যে তৃষ্ণা উৎপন্ন করলে পরধর্ম হয়। পরধর্ম আচরণ করলে স্বামী-স্ত্রী হয়ে সাংসারিক জীবন-যাপন করত বর্ণনাতীত দুঃখ যাতনার শিকার হতে হয়। অন্যদিকে ভবের মধ্যে তৃষ্ণা উৎপন্ন না করলে সদ্ধর্ম হয়। সদ্ধর্ম আচরণ করলে স্বামী-স্ত্রী নেই, সাংসারিক জীবন-যাপন নেই। ইহাই পরম সুখ নির্বাণ লাভের উপায়। তোমরা যেকোনো ভবের মধ্যে তৃষ্ণার সহিত অবস্থান করবে না। যদি ভবের মধ্যে তৃষ্ণার সহিত অবস্থান কর তাহলে দুঃখ পাবে, লজ্জা পাবে (লজ্জিত হবে), প্রতারিত হবে; সুখ লাভের প্রত্যাশা চিরকাল সোনার হরিণ হয়ে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকবে। আর কিছুতেই দুঃখ থেকে মুক্ত হতে পারবে না। মনে রাখবে, সকল প্রকার দুঃখভোগের মূলই হল ভবের মধ্যে তৃষ্ণার সহিত অবস্থান করা। তাই বলছি, তোমরা যদি কোনো বিষয়ের প্রতি তৃষ্ণা নেই বা তৃষ্ণা উৎপন্ন না কর, ভবের মধ্যে তৃষ্ণা উৎপন্ন না কর, তাহলে পরম সুখের অধিকারী হবে।
শ্রদ্ধেয় বনভন্তে বলেন, তোমরা মনুষ্যধর্ম ত্যাগ করে লোকোত্তরধর্ম গ্রহণ কর। মনুষ্যধর্ম ত্যাগ করে লোকোত্তরধর্ম গ্রহণ করলে পরম সুখ লাভ হয়। সব চাইতে বেশি সুখ হচ্ছে লোকোত্তরধর্ম অনুশীলন করা। লোকোত্তরধর্মে অবিদ্যা নেই, তৃষ্ণা নেই, ভব নেই। তজ্জন্য এধর্ম অনুশীলনে বেশি সুখ লাভ হয়। মনুষ্যধর্মে অবিদ্যা বিদ্যমান থাকে, তৃষ্ণা বিদ্যমান থাকে, ভব বিদ্যমান থাকে। তাই এ ধর্ম অনুশীলনে দুঃখ পেতে হয় অনিবার্যরূপে। তোমরা মনুষ্যধর্ম অনুশীলন করবে না। মনুষ্যধর্ম অনুশীলন করলে অবর্ণনীয় দুঃখের মধ্যে দিনাতিপাত করবে সার। মনুষ্যধর্ম অনুশীলন করলে দুঃখ পেতে হয়, পাপ সৃষ্টি হয় এবং পুনঃপুন জন্মগ্রহণ করতে হয়। আর লোকোত্তরধর্ম অনুশীলন করলে সুখ লাভ হয়, পুণ্য অর্জিত হয় এবং পুনঃপুন জন্মগ্রহণ করা বন্ধ হয়ে যায়। আমার সাথে বলো “আমরা মনুষ্যধর্ম অনুশীলন করব না, লোকোত্তরধর্মই অনুশীলন করব।” বর্তমানে লোকোত্তরধর্মের কথা বলার মতন ভিক্ষু এদেশে নেই। কেবল আমিই যা তোমাদেরকে বলে দিই। তবে তোমরা যদি মনুষ্যধর্ম অনুশীলন করাকে সুখ এবং লোকোত্তরধর্ম অনুশীলন করাকে দুঃখ মনে কর তাহলে কিছুই হবে না। অর্থাৎ তোমরা লোকোত্তরধর্ম অনুশীলন করতে পারবে না। তোমাদেরকে এটা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতে ও জানতে হবে যে, মনুষ্যধর্ম অনুশীলন করলে দুঃখ, পাপ, তৃষ্ণা বৃদ্ধি পায় এবং পুনঃপুন জন্মগ্রহণ করতে হয়। আর লোকোত্তরধর্ম অনুশীলন করলে সুখ, পুণ্য বর্ধিত হয়, তৃষ্ণা ধ্বংস হয়ে যায় এবং পুনর্জন্ম রুদ্ধ হয়। এসব বিষয় ভালোভাবে জেনে, দেখে তোমরা মনুষ্যধর্ম অনুশীলনে বিরত থেকে লোকোত্তরধর্ম অনুশীলন কর।
তোমাদের মনচিত্তে যদি অবিদ্যা, মিথ্যাদৃষ্টি বিদ্যমান থাকে তোমরা ‘মানুষকে’ বিশ্বাস করবে, ‘মানুষকে’ সুখ মনে করবে। অর্থাৎ ‘আমি একজন মানুষ’ বলে আত্মবাদে দৃঢ়বিশ্বাসী হবে, আত্মবাদে সুখ খুঁজবে এবং পরের জিনিসকে সুখ বলবে। অর্থাৎ টাকা-পয়সা, জায়গা-জমি, ধন-সম্পদকে সুখ বলে মনে করবে। মনচিত্তে যদি অবিদ্যা, মিথ্যাদৃষ্টি বিদ্যমান না থাকে তোমরা ‘মানুষকে’ বিশ্বাস করবে না, ‘মানুষকে’ সুখ বলে মনে করবে না এবং পরের জিনিস সুখ বলবে না। আমি তোমাদের সবাইকে বলছি, তোমরা মনে মনে অবিদ্যার সহিত অবস্থান করবে না, মিথ্যাদৃষ্টির সহিত অবস্থান করবে না। তাহলে তোমরা আর মানুষকে বিশ্বাস করবে না, মানুষকে সুখ বলবে না এবং পরের জিনিসকেও সুখ বলবে না। যারা পরের জিনিসকে সুখ মনে করে তারা দুঃখ পাবে, লজ্জিত হবে, ঠকবে ও মরবে। তোমরা পরের জিনিসকে সুখ মনে করবে না। পরের জিনিসকে সুখ বলে মনে না করাকে বিদ্যা বলে। আমার সাথে বলো ‘মানুষ সবই মিথ্যা এবং দুঃখ।’ যারা মনচিত্তের মধ্যে অবিদ্যা, মিথ্যাদৃষ্টিকে স্থান দেয় তারা বৌদ্ধধর্ম আচরণ করতে পারবে না। যারা মনচিত্তের মধ্যে অবিদ্যা, মিথ্যাদৃষ্টিকে স্থান দেয় না তারা বৌদ্ধধর্ম আচরণ করতে সক্ষম হয়। সবাই বলো “আমরা অবিদ্যার সহিত অবস্থান করব না, মিথ্যাদৃষ্টির সহিত অবস্থান করব না।” অবিদ্যা, মিথ্যাদৃষ্টির সহিত অবস্থান করলে মহাপাপ সম্পাদিত হয়। অবিদ্যা নেই, মিথ্যাদৃষ্টি নেই হলে পরম সুখ লাভ হয়ে থাকে। তোমরা সবাই অবিদ্যা প্রহীণ, মিথ্যাদৃষ্টি প্রহীণ হয়ে অবস্থান কর। এতে পরম সুখ লাভ হবে।
পরিশেষে তিনি বলেন, ভগবান বুদ্ধ বলেছেন, ‘নির্বাণ সুখ বিনামূল্যে’। নির্বাণ সুখ যে বিনামূল্যে তা আমি পরীক্ষা করে দেখলাম, কথাটা ঠিক। বুদ্ধের একথাটি আমি সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করি। এখন আমিও বলছি, নির্বাণ সুখ বিনামূল্যে। স্বামী-স্ত্রী হয়ে পুত্র, কন্যা নিয়ে সাংসারিক করলে সবই দামি। মনে রাখবে, নির্বাণ সুখ বিনামূল্যে আর সাংসারিক সুখ বহুমূল্যে। তোমরা যদি সবাই নির্বাণপ্রাপ্ত হও তাহলে সকলে বিনামূল্যে নির্বাণ সুখ উপলব্ধি করতে পারবে। নির্বাণ সুখ সস্তাও নয়, সস্তা হলেও কিছু দাম দিতে হয়। নির্বাণ সুখ একেবারে বিনামূল্যে। এ সুখ লাভের জন্য কোনো টাকা-পয়সা দিতে হয় না। নর-নারীরা স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যাসহ যে সাংসারিক সুখ করছে সেখানে সবকিছুই দামি। কাপড়চোপড় দামি, আসবাবপত্র দামি, চাউল দামি, ঔষধ দামি, লবণ দামি, মরিচ দামি, তৈল দামি, আলু দামি, বেগুন দামি, সবই দামি। এক কথায়, নির্বাণ সুখ ব্যতীত সব কিছু দামি। আচ্ছা, নির্বাণ সুখ যদি বিনামূল্যে হয়, তাহলে তোমরা বিনামূল্যে সুখ করবে না কেন? অবশ্যই প্রত্যেক জ্ঞানীদের বিনামূল্যে নির্বাণ সুখ করা উচিত। নির্বাণপ্রাপ্ত হলে সুখভোগ করা বন্ধ হয়ে যায়, পাপকর্ম সম্পাদন বন্ধ হয়ে যায়। নির্বাণলাভীগণ সুখভোগ করেন না, পাপ করেন না বলে নির্বাণ সুখ বিনামূল্যে। সুখভোগ করলে, পাপ করলে দামি হয়। অর্থাৎ সুখভোগ ও পাপকর্মের মাধ্যমে যে সুখ করা হয় সেই সুখ দামি বলে কথিত। কেন নির্বাণ সুখ বিনামূল্যে লাভ হয়? নির্বাণে সুখভোগ নেই, পাপ নেই বলে নির্বাণ সুখ বিনামূল্যে লাভ হয়। বিনামূল্যে নির্বাণ সুখ লাভ করার জন্য তোমরা প্রত্যেকে তৎপর হও। বিনামূল্যে নির্বাণ সুখ লাভ করতে অক্ষম হলে দামি সুখ করতে হবে সন্দেহ নেই। বল তো বিনামূল্যে নির্বাণ সুখ লাভ করতে পারবে কি? ‘হ্যাঁ ভন্তে, আমরা যথাসাধ্য বিনামূল্যে নির্বাণ সুখ লাভে চেষ্টা করব।’ আমার সাথে বলো “আমরা বিনামূল্যে নির্বাণ সুখ লাভ করবো।” তোমরা সবাই বিনামূল্যে নির্বাণ সুখ লাভ করতে সচেষ্ট থাক।

সাধু, সাধু, সাধু।

পূজ্য বনভান্তের সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি

১৯৪৩ : রথীন্দ্র যখন ২৩ বছরের যুবক তখন হঠাৎ তাঁর পিতা হারুমোহন চাকমার অকালমৃত্যু ঘটে। ফলে জ্যেষ্ঠ সন্তান হিসেবে পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্বভার তাঁর উপর এসে পড়ে।

১৯৪৯ : ১৯৪৯ সালে পটিয়ার নাইখাইন গ্রামের অধিবাসী বাবু গজেন্দ্র লাল বড়ুয়ার ঐকান্তিক সহযোগিতায় ২৯ বছর বয়সে ভরা যৌবনে শুভ ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথিতে তিনি চট্টগ্রামস্থ নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারের তৎকালীন অধ্যক্ষ শ্রীমৎ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাস্থবির (বিএ) মহোদয়ের নিকট প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন। তখন গৃহী নামের সাথে মিল রেখে তাঁর নাম ‘রথীন্দ্র শ্রামণ’ রাখা হয়।

১৯৪৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে দুঃখমুক্তির অন্বেষায় গুরুভান্তের অনুমতি নিয়ে জন্মভূমি রাঙামাটির উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামস্থ নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহার ত্যাগ করেন। পথিমধ্যে বেতাগী বনাশ্রমে সাধকপ্রবর ত্রিপিটক বাগ্মীশ্বর ভদন্ত আনন্দমিত্র মহাস্থবির মহোদয়ের নিকট সপ্তাহকাল অবস্থান করেন। অতঃপর পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পুণ্যতীর্থ চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারে এসে তিনি পক্ষ্কাল অবস্থান করেন।

Videos (show all)

বনভান্তে ধর্ম কধা শুনে যা আমারে...
কনক চাঁপাকে নিয়ে পূজ্য বনভান্তে কী বলেছিলেন- বনভান্তের দেশনা।
Banabhante Deshana
বুদ্ধ পুত্তো বনভান্তে
যাঁরা ত্রিহেতুক মানুষ
102nd Birthday Celebration 2021
Deshana

Location

Category

Address


Rangamati

Other Tutors/Teachers in Rangamati (show all)
Bijoy's English World Bijoy's English World
Banarupa
Rangamati

Hi all! I am an English teacher. I want to dedicate myself in teaching the weaker students so that t

SSTT shine SSTT shine
Rangamati
Rangamati, 4500

Sumitra,Shrashta, Tapur & Tupur's simple presentation.

Chakma language unknown history Chakma language unknown history
College Gate (Rangamati Road)
Rangamati, 4500

1. To digitize, revitalize, promote and preserve the Chakma language over the globe. It's also conta

𝐕𝐞𝐧𝐞𝐫𝐚𝐛𝐥𝐞 𝐁𝐚𝐧𝐚𝐛𝐡𝐚𝐧𝐭𝐞 𝐕𝐞𝐧𝐞𝐫𝐚𝐛𝐥𝐞 𝐁𝐚𝐧𝐚𝐛𝐡𝐚𝐧𝐭𝐞
Rajbana Vihar
Rangamati, 4500

রাজবন বিহার, রাঙ্গামাটি।।