Madrasah Rawdatul Iman Dhaka.

Madrasah Rawdatul Iman Dhaka.

Share

"ইলম ও আমলের আলোকে গড়বো সমৃদ্ধ জীবন, দুনিয়া ও আখিরাতে হবো সফল।"

আলোর পথে জ্ঞানের যাত্রা – মাদানী নেসাবে আরবী, আধুনিকতায় বিশ্বজয়ী।

Operating as usual

11/03/2025

আজ হাফেজ্জী হুজুরের ওফাত দিবস
এক নজরে রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক রাহবার
হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.
=== মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী ===
বিশ্ব বরেণ্য বুজুর্গ ও আলেমেদ্বীন, রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক রাহবার, মুজাহিদে মিল্লাত, জিকিরে মুজাসসাম, কুতুবে আলম, আমীরে শরীয়ত আল্লামা মোহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর (রহঃ) লক্ষীপুর জেলার রায়পুর থানাধীন লুধুয়া গ্রামে ১৮৯৫ সালে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম দ্বীনদার পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৌলভী মুহাম্মদ ইদ্রিস সাহেব এবং দাদার নাম মরহুম মাওলানা মিয়াজী আকরামুদ্দিন সাহেব। মৌলভী ইদরিস সাহেব ছিলেন উর্দু-ফার্সী ভাষার সুদক্ষ একজন আলেম। দাদা আকরামুদ্দিন সাহেব ছিলেন ত্রয়োদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হযরত সাইয়্যেদ আহমদ বেরলভী (রহঃ) এর খলিফা মাওলানা ইমামুদ্দিন বাঙালি (রহঃ) এর শাগরেদ ও খলিফা।

ইসলামী শিক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাঁর শিক্ষা জীবন। বিশিষ্ট আলেম ও বুজুর্গ এক মাত্র চাচা মৌলভী মোহাম্মদ ইউনুস সাহেবের নিকট তিনি বিসমিল্লাহর সবক শুরু করেন। কায়দা-আমপারা থেকে শুরু করে মাসআলা-মাসায়েল এবং ফার্সী ভাষার প্রাথমিক কিতাবসমুহ চাচার নিকট অধ্যায়ন করেন।

তিনি ফরিদপুর জেলার দুলাইরচর প্রাইমারী স্কুলে এবং রায়পুর থানার ফতেহপুর প্রাইমারী স্কুলে দু’বছরের প্রাইমারী কোর্স মাত্র এক বছরে সমাপ্ত করে করেন। তার পর তিনি চন্দ্রগঞ্জ মাদ্রাসা, নোয়াখালীর লাকসাম নবাব ফয়জুন্নেছা মাদ্রাসা, লক্ষীপুর থানার খিলবাইছা মাদ্রাসাতে শুরুর কয়েকটি জামাতের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের কিতাবসমুহ অধ্যয়ন করেন।

দেশে কোন ভাল হেফজ খানা না থাকায় তিনি সুদূর পানিপথে যাওয়ার ইচ্ছায় যাত্রা শুরু করেন খুব সামান্য সামানা নিয়ে। আল্লাহ তাআ'লার গায়েবী ব্যবস্থাপনায় তিনি পানিপথে পৌঁছেন এবং ক্বারী আব্দুস সালাম সাহেবের হেফজখানায় ভর্তি হন। ক্বারী আঃ সালাম সাহেব কিশোর হাফেজ্জী হুজুরের ত্যাগ ও মনোবল দেখে আশ্চর্যাম্বিত হন এবং তাঁর সুন্দর তেলাওয়াতের কারণে হাফেজ্জী হুজুরকে তাঁর স্থানে ইমামতি করার সুযোগ করে দেন। এর পাশাপাশি তাঁকে মসজিদে থাকার সু-ব্যবস্থা করে দেন। ফলে ১৯১৩ থেকে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত মোট ৩ বছরের মধ্যে তিনি পুরো কোরআন শরীফ মুখস্থ করে ফেলেন।
ওস্তাদ খুশি হয়ে তাঁকে হাকীমূল উম্মত আল্লামা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। হেফজ সমাপ্ত করার পর হাকীমূল উম্মত আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) এর পরামর্শে তিনি সাহারানপুর মাজাহিরুল উলুম মাদ্রাসায় কিতাব বিভাগে ভর্তি হন। ১৯১৫ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত তথা মোট ৭ বছর সেখানে পড়া-লেখা করেন। ইলম এবং আমলের সমম্বিত রূপ ছিলেন দ্বীন পিপাসু হাফেজ্জী হুজুর। প্রতিদিনে প্রতিটি দরসে যেমনি উপস্থিত থাকতেন তেমনি সপ্তাহের ছুটির দিনে এবং বার্ষিক ছুটির সময়ও হযরত থানবী (রহঃ) এর খানকাহ থানা ভবনে গিয়ে থাকতেন।
হাদীস, তাফসির, ফেকাহ, উসূলে ফেকাহ, উসূলে তাফসির, বালাগাত, মানতেক ও হেকমত প্রভৃতি বিষয়ের উপর বিশেষ শিক্ষা অর্জনসহ ১৯২২ সালে কৃতিত্বের সাথে সাহারানপুর মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদীসের সর্বোচ্চ সনদ লাভ করেন।
মাজাহিরুল উলুম সাহারানপুরের শিক্ষা জীবনে যে সকল মহামনীষীর নিকট হাফেজ্জী হুজুর (রহঃ) বিশেষ শিক্ষা লাভ করেন তাঁরা হলেন,ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও বুযুর্গ হজরত মাওলানা আব্দুর রহমান কামেলপুরী (রহঃ), মাওলানা আব্দুল লতিফ (রহঃ), মাওলানা মুফতি এনায়েত এলাহী (রহঃ), মাওলানা মঞ্জুর আহমদ (রহঃ) ও মাওলানা ছাবেত আলী (রহঃ) প্রমূখ।
ইসলামী শিক্ষার দুই প্রসিদ্ধ ধর্মীয় বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দ ও মাজাহিরুল উলূম সাহারানপুর। হযরত হাফেজ্জী হুজুর (রহঃ) ছিলেন উক্ত উভয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। সাহারানপুরে হাদিসের সনদ নিলেও ফনুনাতের জন্য ভর্তি হন দারুল উলুম দেওবন্দে। ফকীহুল উম্মত মাওলানা ইযায আলী (রহঃ), মাওলানা বদরে আলম মিরাঠী (রহঃ), মাওলানা রাসুল খান (রহঃ) , আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ: এবং শায়খুল ইসলাম মাওলানা ক্বারী তৈয়্যব(রহ) প্রমূখের মতো তৎকালীন উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ মনীষীদের নিকট তিনি ফনুনাতের কিতাব সমূহ অধ্যয়ন করেন এবং ১৯২৪ সালে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষা ফনুনাত কোর্স সমাপ্ত করেন। অতঃপর আশরাফ আলী থানবী (রহ) খানকাহ'তে কয়েক মাস আধ্যাত্মিক সাধনা করেন।

কর্মজীবন :
জন্মভূমিতে প্রত্যাবর্তন করে তিনি মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহঃ) ও হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহহাব পীরজী হুজুর (রহঃ) এর সাথে একত্রে মিলে দেশের বিভিন্ন স্থানে দেওবন্দের অনুকরণে দ্বীনি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্ঠায় লিপ্ত হন। প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়ায় তারপর বাগেরহাট জেলার গজালিয়া একটি মাদ্রাসায় কয়েক বছর শিক্ষকতা করেন।
হাফেজ্জী হুজুর নামকরণ:
অত্যন্ত পরহেজগার ও উন্নত আখলাক-চরিত্রের অধিকারী মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ হিফজ শেষ করার পর থেকেই সবাই তাকে হাফেজ্জী বলে ডাকতেন। দেশে প্রত্যাবর্তনের পর ১৩৪৪ হিজরী সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইউনুছিয়ায় অধ্যাপনাকালে আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী (রহ) হাফেজ্জীর সাথে হুজুর শব্দটির সংযোজন করে দেন ।
অতঃপর ঢাকায় এসে চকবাজারে বড় কাটারা আশরাফুল উলুম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। বড় কাটারা থাকতেই তিনি লালবাগ শাহী মসজিদের ইমামতির সুবাদে লালবাগ জামেয়া কোরআনিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। হযরত পীরজী হুজুর বড়কাটারাই থেকে যান। পরে হাফেজ্জী হুজুর (রহঃ) ও সদর সাহেব আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহঃ)যৌথভাবে লালবাগ জামিয়া
কোরআনিয়া আরাবিয়ায় চলে আসেন। ফরিদাবাদ জামিয়া ইমদাদুল উলুম মাদ্রাসাসহ সারা দেশে তাঁরা অসংখ্য দ্বীনী প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। অবশেষে হযরত সদর সাহেব (রহঃ) গোপালগঞ্জে চলে যান আর হাফেজ্জী হুজুর (রহঃ) একক প্রচেষ্টায় ১৯৬৫ সালে কামরাঙ্গীরচরে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। স্বীয় দাদা পীরের নামানুসারে মাদ্রাসাটির নাম রাখেন মাদ্রাসা-ই-নূরিয়া যা এখন জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া নামে পরিচিত। পরে হাফেজ্জী হুজুর (রহঃ) তাঁর নিজ গ্রাম লুধুয়াতে ইশা'আতুল উলুম মাদ্রাসাসহ সারাদেশে প্রায় দুইশত মাদ্রাসা ও মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।

হাকীমুল উম্মতের খেলাফত লাভ:
১৯৩৩ সালে প্রথম হজ্ব পালন শেষে দেশে প্রত্যাবর্তনের পথে তিনি হাকীমূল উম্মত আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) এর খানকায় গিয়ে সাক্ষাৎ করে দেশে ফেরেন। দেশে এসে হযরত হাকীমুল উম্মত এর খেদমতে স্বীয় হালত জানিয়ে একটি পত্র দেন। সে পত্র পেয়ে হাকীমুল উম্মত থানবী (রহঃ) তাঁকে খেলাফত দান করেন।

রাজনীতিতে হাফেজ্জী হুজুর:
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যখন ওলামায়ে কেরামদেরকে লাঞ্ছিত-অপমানিত করা হচ্ছিল,কোন আলেম রাজপথে দাঁড়িয়ে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলার সাহস করছিলেন না, ঠিক তখনই হাফেজ্জী হুজুর রহ: তওবার ডাক দিয়ে সরাসরি সক্রিয় রাজনীতিতে অবতীর্ণ হন এবং ১৯৮১সালে ১৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে সরকারি হিসেবে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। একই বছর ২৯ নভেম্বর তাঁর নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন "বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন" নামে একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম। শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, চরমোনাইয়ের মরহুম পীর মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মাদ ফজলুল করিম এবং মুফতি ফজলুল হক আমিনী সাহেব রহ: ছিলেন হাফেজ্জী হুজুর (রহ) ছাত্র ও মুরীদ। তিনজনকেই তিনি খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর নিযুক্ত করেন । জমিয়ত নেতা মাওলানা আব্দুল করিম শায়খে কৌড়িয়া, মাওলানা শামসুদ্দিন কাসেমী, মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিসবাহ, মাওলানা শাহ ফয়জুর রহমান, মাওলানা আবুল হাসান যশোরী ও মুফতি ইউসুফ ইসলামাবাদীসহ দেশবরেণ্য প্রায় সকল ওলামায়ে কেরামই খেলাফত আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ও সক্রিয় ছিলেন।

ইরাক-ইরান যুদ্ধ বন্ধে হাফেজ্জী হুজুর:
ইরাক-ইরান ২টি মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ যুদ্ধ চলছিল। এ যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ১৯৮২ সালের ২ সেপ্টেম্বর হাফেজ্জী হুজুর রহ: ইরান সফরে যান । ইরানের প্রেসিডেন্ট এবং সে দেশের শীর্ষনেতৃবৃন্দের সাথে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে মতবিনিময় করেন। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে যুদ্ধ বন্ধ করার হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ: এর প্রস্তাবে সম্মতি দেন। অতঃপর ইরান থেকে তিনি পবিত্র মক্কা নগরীতে হজ পালন করতে যান। হজ্জ শেষে ৭ অক্টোবর হাফেজ্জী হুজুর ইরাক সফরে যান। ৯ অক্টোবর ইরাকের প্রেসিডেন্টের সাথে যুদ্ধ বন্ধে মতবিনিময় করেন, প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের অনেক প্রশ্নের জবাব দেন হাফেজ্জী হুজুর রহ:। একপর্যায়ে প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম যুদ্ধ বন্ধে হাফেজ্জী হুজুরের প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। কিন্তু পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক চক্রান্তের কারণে দুই দেশের যুদ্ধ বন্ধ করার হাফেজ্জী হুজুরের উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখেনি।

১৯৮৩ সালের ২৩ জুলাই হাফেজ্জী হুজুর সকল পথ ও মতের দেশের সকল দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দকে মানবতার মুক্তির গ্যারান্টি ইসলামী হুকুমত কায়েমের আন্দোলনে শরিক করার মহান লক্ষ্য নিয়ে এক গোলটেবিল বৈঠক আহবান করেন। গোলটেবিল বৈঠকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বাকশাল, কমিউনিস্ট পার্টি, সাম্যবাদী দল, মুসলিম লীগ, ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ, পিপলস লীগ, রিপাবলিকান পার্টি, জামায়াত, ফরায়েজী আন্দোলন, সিপিবিসহ ৩৪ টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। হাফেজ্জী হুজুরের এ গোলটেবিল বৈঠক উপমহাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল।
গোলটেবিল বৈঠকে হাফেজ্জী হুজুর তিন দফা দাবি পেশ করেন।[ ১] অনতিবিলম্বে ইসলামী প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশ ঘোষণা করা। [২] ইসলামী শাসনতন্ত্র রচনা করা।[৩] দেশের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠন করে তিন মাসের মধ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান। হাফেজ্জী হুজুরের ৩নং দাবিটিই পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখায় পরিণত হয়।

১৯৮৩ সালে ১৪ ডিসেম্বর রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসম্মেলন। সম্মেলন শেষে এরশাদ সরকারের জরুরি অবস্থা ভঙ্গ করে লক্ষ লক্ষ মানুষের বিশাল মিছিল নিয়ে বায়তুল মোকাররমে সমাবেশে মিলিত হয়। সেখানে হাফেজ্জী হুজুর ঘোষণা করেন বর্তমান সরকার না ইসলামী সরকার, না জাতীয় সরকার। দেশে ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় জনগণ ইসলামী সরকার ক্ষমতায় দেখতে চায়।
১৯৮৪ সালের ২১ অক্টোবর হযরত হাফেজ্জী হুজুরের নেতৃত্বে দশটি দলের সমন্বয়ে গঠিত হয় সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ। একই বছর ২১ শে ডিসেম্বর রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে এক বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশটি লক্ষ লক্ষ মানুষের জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সভাপতির ভাষণে হযরত হাফেজ্জী হুজুর বলেন, দুর্নীতির গণতন্ত্রের বদলে আমিরুল মুমিনীন, মজলিসে শুরার পদ্ধতি এবং কোরআন-সুন্নাহর শাসন প্রবর্তনের জন্যই আমার সংগ্রাম । সমাবেশে সর্বদলীয় জাতীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

১৯৮৫ সালের ২৫ জুলাই হাফেজ্জী হুজুর লন্ডনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। সম্মেলনে মুসলিম রাষ্ট্রসমূহে ইসলামী শাসনপ্রতিষ্ঠায় ৫ দফা দাবি উত্থাপন করেন।

১৯৮৬ সালে পুণরায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে হাফেজ্জী হুজুর দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।
এছাড়াও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্রপ্রধানদের ইসলাহের উদ্দেশ্যে হাফেজ্জী হুজুর পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান আইয়ুব খান ও জিয়াউল হক এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ-এর নিকট চিঠি প্রেরণ করেন।

ইন্তেকাল:
৮ রমযান ১৪০৭হিজরি, ১৯৮৭ সালের ৭ মে, বৃহস্পতিবার বেলা পৌঁনে ২টায় ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই মহামানব রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক রাহবার আল্লামা মোহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। পরের দিন শুক্রবার বাদ জুমা জাতীয় ঈদগাহে লাখ লাখ মুসল্লির অংশ গ্রহণে তাঁর নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন মরহুমের বড় সাহেবজাদা মাওলানা ক্বারী শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফ রহ.। জানাযায় লক্ষ লক্ষ ছাত্র মুরীদ নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ শোকাহত মানুষের ঢল নামে। ফলে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়েও ঈদগাহ ময়দান এবং আশপাশের এলাকাগুলোতে লোকের সঙ্কলন হয়নি। তখন মাইকে ঘোষণা করা হয় সবাই কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে যান, কাতার বন্দী সম্ভব হচ্ছে না।

জানাযায় শরিক হয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ বলেন, আমার জীবদ্দশায় এত বড় বিশাল জানাজার নামাজ আর কখনো দেখিনি। জানাযায় আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ, ডঃ কামাল হোসেন, বিএনপি'র তৎকালীন মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মাওলানা আবদুল করিম শায়খে কুরিয়া, মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের কূটনীতিকসহ সকল সিলসিলার পীর-মাশায়েখ, ওলামায়ে কেরাম এবং সকল দলের নেতৃবৃন্দ। পরে কামরাঙ্গীরচরে নিজ হাতে গড়া নুরিয়া মাদ্রাসা মসজিদের দক্ষিণ পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।
হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ: ছিলেন সুন্নাতে নববীর সঠিক ধারক-বাহক, সর্বজনমান্য বুজুর্গ, অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, নিরহংকার, নিরভিমান ও নিঃস্বার্থ আল্লাহ প্রেমের মজনু। এদেশে ইসলামী আন্দোলনের প্রেরণার উৎস। তাঁর জীবন,দর্শন, চিন্তাধারা, কর্মপ্রেরণা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অম্লান ও অবিনশ্বর হয়ে থাকবে। আল্লাহ তাআলা হযরতকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুক । আমিন।
---- মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী
নায়েবে আমির, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন।

C

04/03/2025

এই রামাদান হোক জীবনের শ্রেষ্ঠ রামাদান। আমরা ১৫টি কাজের মাধ্যমে এবারের মাহে রামাদানকে স্পেশাল বানাবো, ইনশাআল্লাহ।

১) প্রতিদিন অন্তত ৪ রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করবো এবং কিছু সময় আন্তরিকভাবে দু‘আয় কাটাবো। শেষ রাতের দু‘আ ও ইস্তিগফার আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়।

২) সারা মাসে কমপক্ষে একবার কুরআন পড়ে শেষ করবো। বিশেষভাবে রাতের বেলা কিছু সময় তিলাওয়াত করবো। রাতের তিলাওয়াতের মর্যাদা অনেক বেশি।

৩) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আওয়াল ওয়াক্তে (ওয়াক্তের শুরুতেই) পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আদায় করবো। পুরুষরা অবশ্যই জামাতের সাথে নামাজ আদায় করবো। ধীরে-সুস্থে তারাবি পড়বো। বাসায় তারাবি পড়লে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জামাতের সাথে পড়বো এবং নারীদেরও শামিল রাখার চেষ্টা করবো। তাঁদের কাতার হবে সবার শেষে। নারীদের কাতারে কোনো পুরুষ থাকবে না।

৪) গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবো: বিশেষত রোজা অবস্থায় চোখ, কান এবং জিহ্বা দিয়ে কোনো ছোট গুনাহও করবো না।

৫) প্রয়োজন ব্যতীত অনলাইনে আসবো না। কারণ অনলাইন হলো গুনাহের মহাসমুদ্র। ইউটিউবের শর্টস, ফেইসবুকের রিল কিংবা টিকটকে ডুবে যাবো না।

৬) সারা মাসে অন্তত একবার আত্মীয়দের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করবো অথবা ফোন করে খোঁজ-খবর নেবো। আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরজগুলোর একটি।

৭) প্রতিদিন অন্তত ২/৩ ঘণ্টা সময় কুরআন তিলাওয়াত, হিফজ এবং কুরআনের অর্থ ও তাফসির পাঠে ব্যয় করবো। সম্ভব হলে সম্মিলিতভাবেও এই কাজটি করা যায়। কুরআন এবং রামাদান একই সূত্রে গাঁথা।

৮) সাধ্যানুযায়ী পুরো মাস জুড়ে অসহায় ও দরিদ্রদের দান-সাদাকাহ করবো। এক্ষেত্রে নিজ আত্মীয়দের প্রাধান্য দেবো। এটিই ইসলামের নির্দেশনা। এমন অনেক পরিবার খাদ্যসংকটে আছে, যারা লজ্জায় কারও কাছে হাত পাততে পারে না; তাদেরকে খুঁজে বের করে সাধ্যানুযায়ী হেল্প করবো। এটি বিরাট নেকির কাজ হবে। বিশেষ করে তাদের সাহরি ও ইফতারের খোঁজ নেবো।

৯) মনের সংকীর্ণতা দূর করে উদারচিত্তে সবাইকে ক্ষমা করে দেবো। বিনিময়ে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দেবেন। কুরআন ও হাদিসে এই ওয়াদা আছে।

১০) রামাদানের শেষ দশকে ইবাদাতে ডুবে যাবো এবং লাইলাতুল কদর তালাশ করবো; শুধু ২৭তম রাতেই নয়, শেষ দশকের প্রতিটি রাতেই; বিশেষত বিজোড় রাতগুলোতে।

১১) সাহরি ও ইফতারে খাবারের অপচয় করবো না এবং খাবার নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা, কথা-বার্তা ও হৈ-হুল্লোড় করবো না। খাবার তৈরিতে বাসার নারীদের যথাসাধ্য সহযোগিতা করবো এবং কোনো খাবার পছন্দ না হলে মেজাজ দেখাবো না।

১২) নামাজের পর, সকাল-সন্ধ্যায় ও ঘুমের আগে-পরের মাসনুন যিকরগুলো গুরুত্বের সাথে পড়বো। বিশেষ করে, আয়াতুল কুরসি ও ৩ তাসবিহ নিয়মিত আদায় করবো। পাশাপাশি দোহার/চাশতের নামাজে অভ্যস্ত হবো। প্রতিদিন অন্তত ৪ রাকাত আদায় করবো।

১৩) সর্বদা তাওবাহ-ইস্তিগফারের আমল জারি রাখবো। সাহরি ও ইফতারের সময়ে দু‘আয় কিছু সময় কাটাবো। এ দুটো সময়ে দু‘আ কবুল হয়। রামাদানে মুমিনের প্রধান কাজ হলো, নিজের গুনাহগুলো মাফ করানো। তাই, এটিই হোক আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

১৪) আমরা যারা গিবত, গান শোনা, নাটক-মুভি দেখা, পর্নোগ্রাফি, কুদৃষ্টি, কুধারণা, লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার এবং অন্যান্য গুনাহ থেকে বের হতে পারছি না, বরং এগুলো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, তারা রামাদানের দীর্ঘ এক মাসের কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের সংশোধন করে নিতে পারি। যারা অনলাইন গেইম এবং খেলা দেখায় আসক্ত, তারাও নিজেদের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারি। দৃঢ়প্রতিজ্ঞা, কঠোর সাধনা এবং দু‘আ-কান্নাকাটির মাধ্যমে আমরা আমাদের বদঅভ্যাসগুলো পরিবর্তন করতে পারবো, ইনশাআল্লাহ।

১৫) এই রামাদানই হতে পারে আমাদের অনেকের জীবনের শেষ রামাদান। তাই, হাসি-ঠাট্টা, ফূর্তিবাজি ও গতানুগতিক উদ্দেশ্যহীন জীবনযাপন বাদ দিয়ে যথাসাধ্য তাকওয়া, বিনয় ও গাম্ভীর্যের সাথে এমনভাবে এই রামাদান কাটাবো, যেন সবাই আমরা মৃত্যুপথযাত্রী। এই অনুভূতি ধারণ করে রামাদানের মহামূল্যবান সময়গুলো কাজে লাগাবো।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এগুলোর উপর আমল করার তাওফিক দিন, আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করুন এবং তাঁর সন্তুষ্টির উপর মৃত্যু দিয়ে কবরবাসী করুন। আমিন।

01/03/2025

نهنئكم بحلول شهر ‎ #رمضان المبارك، تقبل اللهُ من الجميع صالح الأعمال.

28/02/2025

আল্লামা ইকবালের **"তরানা-ই-মিল্লি"** কবিতাটি উর্দু ভাষায় রচিত একটি বিখ্যাত কবিতা, যা মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, গৌরব এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করে।

# # # **উর্দু:**
چین و عرب ہمارا، ہندوستاں ہمارا
مسلم ہیں ہم، وطن ہے سارا جہاں ہمارا

توحید کی امانت سینوں میں ہے ہمارے
آساں نہیں مٹانا نام و نشاں ہمارا

دنیا کے بت کدوں میں پہلا وہ گھر خدا کا
ہم اس کے پاسباں ہیں، وہ پاسباں ہمارا

تختِ سکندری سے فغفورِ چینی تک
ہم نے کیا ہے پرورش لا الہ کے ترجمانوں کی

تیرے دریا میں طوفان، تیری صحرا میں پیاس
تیری ویرانیوں میں زندگی کی رمق ہے کیا

محمدﷺ کے نام سے ہو روشن دل و نگاہ
محمدﷺ کے نام سے ہو روشن دل و نگاہ

---

# # # **বাংলা অনুবাদ:**
চীন ও আরব আমাদের, হিন্দুস্তান আমাদের,
আমরা মুসলিম, আমাদের দেশ হলো সমগ্র বিশ্ব।

তাওহীদের আমানত আমাদের হৃদয়ে ধারণ করে আছে,
মুছে ফেলা সহজ নয় আমাদের নাম ও চিহ্ন।

দুনিয়ার মন্দিরগুলোর মধ্যে প্রথম হলো আল্লাহর ঘর (কাবা),
আমরা তার রক্ষক, আর তিনি আমাদের রক্ষক।

সিকান্দারের সিংহাসন থেকে চীনের সম্রাট পর্যন্ত,
আমরা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর বার্তাবাহকদের লালন-পালন করেছি।

তোমার নদীতে সুনামি, তোমার মরুভূমিতে তৃষ্ণা,
তোমার ধ্বংসস্তূপে জীবনের স্পন্দন কোথায়?

মুহাম্মাদ ﷺ-এর নামে হোক হৃদয় ও দৃষ্টি আলোকিত,
মুহাম্মাদ ﷺ-এর নামে হোক হৃদয় ও দৃষ্টি আলোকিত।

28/02/2025

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি অবমাননার শাস্তি: কুরআন, হাদীস ও আকাবির আসলাফের বক্তব্য

১. কুরআনের দলিল:

আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ رَسُولَ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
"যারা আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়, তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।" (সুরা আত-তাওবা: ৬১)

إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ
"নিশ্চয়ই তোমার বিদ্বেষীই সর্বাধিক অপদস্থ ও নির্বংশ হবে।" (সুরা আল-কাওসার: ৩)

২. হাদীসের দলিল:

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
مَنْ سَبَّ نَبِيًّا فَاقْتُلُوهُ
"যে কেউ নবীকে গালি দেয়, তাকে হত্যা করো।" (সুনান আদ-দারিমি: ২৫৩৯)

৩. আকাবির আসলাফদের ফতোয়া ও ব্যাখ্যা:

১. ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) বলেন:
"যে ব্যক্তি রাসূল (সা.)-কে গালি দেয় বা তাঁর অবমাননা করে, সে কাফির ও মুরতাদ। ইসলামী শরিয়তে তার শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড।" (অস-সারিমুল মাসলুল, পৃষ্ঠা: ৩৪০)

২. ইমাম মালেক (রহ.) বলেন:
"যে ব্যক্তি নবী (সা.)-কে গালি দেয়, তার তওবা গ্রহণযোগ্য নয়, তাকে হত্যা করা হবে।" (আল-মুদাওয়ানাহ, ৫/৪৩৬)

৩. ক্বাদি আইয়াদ (রহ.) বলেন:
"নবী (সা.)-কে কটাক্ষকারী ব্যক্তির জন্য উম্মতের ইজমা (ঐকমত্য) হলো, তাকে হত্যা করা হবে।" (আশ-শিফা, ২/২১৪)

কুরআন, হাদীস ও ইসলামী ইতিহাস অনুযায়ী, যে ব্যক্তি রাসূল (সা.)-কে গালি দেয় বা তাঁর অবমাননা করে, তার জন্য কঠোর শাস্তি নির্ধারিত হয়েছে, যা ইসলামী শরিয়তে মৃত্যুদণ্ড। ইসলামের স্বর্ণযুগ থেকে শুরু করে বর্তমান যুগ পর্যন্ত উলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত।

28/02/2025

আরব বিশ্বে রমাদানের চাঁদ উঠেছে।
আলহামদুলিল্লাহ।
খোশ আমদেদ,
মাহে রমাদান।

28/02/2025

জানিনা এই দলের মাধ্যমে ইসলাম কিংবা আলেমদের কোন উপকার হবে কিনা কিন্তু আল্লাহ তাআলার কাছে এই দোয়াই করব : অন্তত ইসলাম এবং আলেমদের ক্ষতি যেন না হয় এই দলের মাধ্যমে ।
আর এই দলকেও আল্লাহ তা'আলা নাস্তিকতা , ইসলাম বিদ্বেষ এবং আলেমবিদ্বেষ থেকে সর্বোচ্চ হেফাজত করুন এবং তাদেরকে ঈমান মুখী, সুন্নাহমুখী , আখেরাতমুখী করে দিন ! আমীন

25/02/2025

প্রথম জাতীয় শহীদ সেনা দিবসে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার সাহেবের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। তাঁর বক্তব্যের প্রতিটি বাক্য ক্লিয়ার অ্যান্ড লাউড ছিল। কথায় অস্পষ্টতা নাই, কোনো গোঁজামিল নাই। উনার কথার সাথে শরীরের ভাষা লক্ষ কলরাম, সেটাও পরিষ্কার! মনে ধরেছে তাঁর বক্তব্য। উনার বক্তব্যের মূল পয়েন্টগুলো আমি তুলে ধরার চেষ্টা করছি

১) আপনারা এগুলো (শহীদ সেনাদের বিভৎস ছবিগুলি) ছবিতে দেখেছেন, কিন্তু এগুলো আমার চাক্ষুষ দেখা। আমি চাক্ষুষ স্বাক্ষী এই সমস্ত বর্বরতার। একটা জিনিস আমাদের পরিষ্কার মনে রাখতে হবে, এই সমস্ত বর্বরতা কোনো সেনা সদস্য দ্বারা ঘটেনি, এ সমস্তটাই বিজিবি সদস্যদের দ্বারা ঘটেছে। ফুল স্টপ। এখানে কোনো ইফ বা বাট নাই; এখানে যদি ইফ বা বাট আনেন, তাহলে সঠিক বিচারের প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। অপরাধীরা উপযুক্ত শাস্তি পাবে না।

২) যে সমস্ত সদস্য শাস্তি পেয়েছে, তারা শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। এখানে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাইরের কোনো শক্তি ইনভলভড ছিল কিনা, তার জন্য কমিশন করে দেওয়া হয়েছে। তারা এটা বের করবেন এবং আপনাদের পরিষ্কার জানাবেন।

৩) আমার উপদেশ গ্রহণ করলে আপনারা লাভবান হবেন, এটা আমি আপনাদের নিশ্চিত করছি। আমরা নিজেরা ভেদাভেদ সৃষ্টি না করি। আমরা নিজেরা ইউনাইটেড থাকি। আমাদের নিজেদের মধ্যে যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে, সেটা আমরা আলোচনার মাধ্যম সমাধান করব। এটার জন্য ডানে-বামে দৌঁড়িয়ে কোনো লাভ হবে না। তা না হলে নিজের ক্ষতিই হবে।

৪) ২০০৯ সাল থেকে যারা শাস্তি পেয়েছেন, কেউ কেউ বলছেন তারা অযাচিতভাবে শাস্তি পেয়েছেন। এটা জন্য আমি একটা বোর্ড করে দিয়েছি। সেই বোর্ড প্রথম ফেইজে ৫১ জনের ব্যাপারে রিকমেন্ডেশন নিয়ে এসেছে। আমি তা গ্রহণ করেছি। নেভি এয়ারফোর্সও তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

৫) আমার স্ট্যান্ড পয়েন্ট হচ্ছে— যদি কেউ অপরাধ করে থাকে, সেটার জন্য শাস্তি পেতেই হবে। কোনো ছাড় হবে না। বিন্দুমাত্র ছাড় নাই। আমি আপনাদের পরিষ্কার করে দিচ্ছি। ইট ইজ অ্যা ডিসিপ্লিন ফোর্স।

৬) আজকের দেশের ক্রান্তিলগ্নে দেশের প্রতিটি বাহিনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে খালি (শুধু) সেনাবাহিনী টিকে আছে; বিমানবাহিনী টিকে আছে; নৌবাহিনী টিকে আছে; কেন? বিকজ অব ডিসিপ্লিন!

৭) আমি আমার অফিসারদের আদেশ দিয়েছি, যদি সামান্যতমও কারো বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ থাকে, সেটা তাদের পেপারে যাবে। এটা আমার ঢালাওভাবে নির্দেশ।

৮) আপনারা আমার কথায় হয়ত খুশি হবেন না। কিন্তু পরিষ্কার করে জেনে রাখুন, আমার অন্য কোনো আকাঙ্খা নাই। আমার একটাই আকাঙ্খা, দেশ ও জাতিকে একটা সুন্দর জায়গায় রেখে ছুটি কাটানো।

৯) দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পেছনে কিছু কারণ আছে। প্রথম কারণ, আমরা নিজেরা হানাহানির মধ্যে ব্যস্ত, এটা একটা চমৎকার সুযোগ অপরাধীদের জন্য। তারা জানে এ পরিস্থিতিতে অপরাধ করে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হবে। আমরা যদি সংঘবদ্ধ থাকি। তাহলে এ সমস্যা মোকাবেলা করা সহজ হবে।

১০) পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবিসহ অন্যান্য বাহিনী অপরাধ যেমন করেছে তেমনি দেশের স্থিতিশীলতা টিকিয়ে রাখতে ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু অপরাধ যারা করেছে, তাদের বিচার হবে। হতে হবেই। নাহলে সেই আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। প্রত্যক দোষীকে বিচারের আওতায় আনতেই হবে। মনে রাখতে হবে এই অর্গানাইজেশনগুলোকে আন্ডারমাইন করে ‘আমরা শান্তিতে থাকব’ এ চিন্তা করলে, সেটা কখনো সম্ভব হবে না। দুই লক্ষ পুলিশ আছে, বিজিবি আছে, র‍্যাব আছে, আনসার আছে, আর আমার আছে মাত্র ৩০ হাজার সৈন্য, এই ৩০ হাজার সৈন্য দিয়ে আমি কিভাবে বিরাট খালি জায়গা পূরণ করব। প্রতিটি অর্গানাইজেশনকে ফাংশন করতে হবে।

১১) ডক্টর ইউনূস যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন দেশটাকে ইউনাইটেড করে রাখতে। উনাকে আমাদের সহযোগিতা করতে হবে, উনি যেন সফল হতে পারেন। আমরা একসাথে ইনশাআল্লাহ কাজ করে যাবো।

১২) আমরা নিজেদের মধ্যে কাটাকাটি, হানাহানি বাদ দিয়ে একসাথে ইউনাইটেড হয়ে কাজ করতে হবে। আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি, পরে বলবেন সতর্ক করা হয়নি! আপনারা যদি নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে একসাথে কাজ করতে না পারেন, কাটাকাটি, মারামারি করেন, তাহলে এ জাতি কখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে।

১৩) আমি লক্ষ করছি, সেনাবাহিনী বা আমার প্রতি কারো কারো বিদ্বেষ; কিন্তু তাদের বিদ্বেষ কী কারণে, তা আমি খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা আপনাদের জন্যই কাজ করে যাচ্ছি। আমাদেরকে সাহায্য করেন, প্লিজ আক্রমণ করবেন না। আমাদের অনুপ্রাণিত করেন, যেকোনো কাজে উপদেশ দেন। আমরা অবশ্যই উপদেশ গ্রহণ করব। দেশ ও জাতিতে আমরা একসাথে সবাই মিলে এগিয়ে নিব। এটা আমার কমিটমেন্ট।

৫ আগস্টে সেনাপ্রধানের ওই বক্তব্যের পর আজকের এই বক্তব্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়েছে আমার কাছে। যে সিচুয়েশনের মধ্য দিয়ে তিনি, তাঁর বাহিনী দেশের স্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করতে কাজ করছেন, তাতে আমাদের পূর্ণ সহযোগিতা করা উচিত। সমালোচনা করার মতো অনেক কাজ করেছে ঠিক, কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে দেশের চরম ক্রান্তিলগ্নে এই বাহিনীই একমাত্র ফাংশন করেছে। দেশের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে নিয়েছে। ব্যারাকে থাকার বাহিনী ৭ মাস ধরে মাঠে, কিছু ক্ষেত্রে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা অস্বাভাবিক না। আমরা চাই, সেনাবাহিনী দেশের প্রতি তাদের কমিটমেন্ট ঠিক রেখে দায়িত্ব পালন করে যাক।

16/02/2025

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে কওমি মাদ্রাসা!! ছাত্র উস্তাদের মধ্যে রুহানিয়াত নেই। শুধু ক্ষমতা আর প্রতি হিংসার আগুন জলছে -শিক্ষক তলাবাদের মধ্যে!!!
...........................................................................

মূল: মুফতি তাকি উসমানী হাফি.
অনুবাদ: ইবনে নাজ্জার
সূত্র: "শাহ রাহে ইলম"

এই লেখাটা মুফতি তাকি উসমানী সাহেব হাফি. কওমি মাদ্রাসার বর্তমান এই দুরাবস্থা দেখে, নিজের শত শত তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন। মনের গভীরে চেপে রাখা অনেক দিনের কষ্ট আর আফসোস গুলো কলমের ভাষায় প্রকাশ করেছেন।

তাই প্রত্যেকটা কওমি মাদ্রাসার সম্মানিত শিক্ষক মন্ডলী ও পরিচালনা কমিটির কাছে, এই লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত মনোযোগের সাথে পড়ার আন্তরিক নিবেদন রইল।
আল্লাহ তা'আলা আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন।)

তিনি বলেন, অনেক চিন্তা ভাবনা করার পর যতোটুকু আমি বুঝতে পারলাম তা হল; কওমি মাদ্রাসার অধঃপতনের মূল কারণ হল "আস্তে আস্তে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাটা গতানুগতিক একটি প্রথায় পরিণত হয়েছে। আর এর আসল উদ্দেশ্য আমরা ভুলে গিয়েছি"। যদিও আমাদের মুখে এখনো এ কথাই শোনা যায় যে, "এই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল ইসলাম ধর্মের খেদমত করা"। তবে তিক্ত বাস্তবতা হল, এগুলো শুধু মুখেই বলা হয় অন্তরে থাকে অন্য কিছু। কেননা বাস্তবেই যদি আমাদের অন্তরে এই উদ্দেশ্য থাকত, তাহলে আমাদের সার্বক্ষণিক ব্যস্ততা এটাই থাকত। আকাবির ও আসলাফদের মত সর্বদা আমাদের মাথায় ঘুরত, আমাদের কোনো কাজে আল্লাহ তা'আলা অসন্তুষ্ট হচ্ছেন কিনা?
আমাদের কাজে-কর্মে দ্বীনের কতটুকু খেদমত হচ্ছে?
আমরা আমাদের মূল উদ্দেশ্যে কতটুকু সফল হয়েছি?

বরং উল্টো আমরা আমাদের সম্পূর্ণ মনোযোগ মাদ্রাসার বাহ্যিক উন্নতিতে লাগিয়েছি, যা আমাদের আসল উদ্দেশ্য নয়। বেশিরভাগ মাদ্রাসার পরিচালকরা সর্বদা এটাই চেষ্টা করেন যে, কিভাবে আমার মাদ্রাসাটা প্রসিদ্ধতা লাভ করবে? কিভাবে ছাত্রের সংখ্যা বাড়ানো যাবে? কিভাবে দেশের নামকরা শিক্ষকদের এখানে জমায়েত করা যাবে?

এক কথায় কিভাবে জনসাধারণের মাঝে মাদ্রাসা এবং মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির ভালোবাসা আর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে? আর এগুলোর পিছনে আমাদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর রাত-দিনের দৌড়ঝাঁপ দেখলে তো মনে হয়, এগুলোই আমাদের আসল উদ্দেশ্য। আবার এই উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য আমরা এমন পন্থাও অবলম্বন করি, যা একজন আলেমের জন্য কখনো সমিচীন নয়। বরং কখনো কখনো তো আমরা স্পষ্ট নাজায়েজ আর অবৈধ-পন্থা অবলম্বন করতেও দ্বিধাবোধ করি না।

অন্যদিকে যদি কোনো মাদ্রাসা মোটামুটিভাবে এগুলো অর্জন করে ফেলে, তাহলে মনে করা হয় আসল উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে গেছে। অথচ আমাদের ছাত্রদের শিক্ষা, চারিত্রিক ও ধর্মীয় অবস্থা কেমন? আমরা মুসলিম সমাজ পরিচালনা করার জন্য কেমন মানুষ তৈরি করেছি?
আমাদের চেষ্টা ও মুজাহাদার দ্বারা বাস্তবে ইসলামের কতটুকু উপকার হচ্ছে? সেগুলোর কোন খবরই থাকে না।
আর আস্তে আস্তে তো এসব বিষয়ের খোঁজখবর নেওয়া, চিন্তাভাবনা করার মানুষও কমে যাচ্ছে।

মোটকথা এই অধঃপতনের মূল কারন হল, "খিদমতে দ্বীন আমাদের আসল উদ্দেশ্য" এটা একবার মুখে উচ্চারণ করার পর কর্মজীবনে আমরা তা ভুলে যাই। আর এই বাহ্যিক জিনিসগুলো ঘিরেই চলতে থাকে আমাদের মেহনত-মুজাহাদা, শ্রম-সাধনা সবকিছুই। অথচ এগুলো আমাদের মূল উদ্দেশ্য নয়। বরং এগুলোর সাথে তো ইসলামের কোনো সম্পর্কই নেই আর থাকলেও এই শর্তে যে, আমাদের মূল উদ্দেশ্য ইসলামের উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য নিয়ত শুদ্ধ রেখে এগুলোকে শুধু মাত্র মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। কিন্তু অত্যন্ত আফসোস ও পরিতাপের বিষয় হল, আমরা এগুলোকেই মূল উদ্দেশ্য বানিয়ে ফেলেছি।

এমনিভাবে কওমি মাদ্রাসার গৌরবময় ইতিহাসের এক উজ্জল বৈশিষ্ট্য হল, এখানের শিক্ষক ছাত্রদের পারস্পরিক সম্পর্কটা গতানুগতিক সাধারণ কোন সম্পর্ক নয়, যা শুধু মাত্র শ্রেণিকক্ষের চার দেওয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। বরং এটা পরস্পরের মধ্যে আত্মার পবিত্র সম্পর্ক। যা শিক্ষা জীবন থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত অটুট থাকত। উস্তাদ শুধুমাত্র কিতাব পড়ানোর জন্য নিযুক্ত কোন শিক্ষক ছিল না, বরং নিজ ছাত্রদের জন্য তাঁরা ছিলেন কল্যাণকামী দরদী এক মহান পিতা।
আর ছাত্রদের চারিত্রিক ও আধ্যাত্মিক দিক নির্দেশনা প্রদান কারী। ইলম ও আমলের ময়দানে ছাত্রদের শুভাকাঙ্ক্ষী এক অভিভাবক। সাথে সাথে তাঁরা ছাত্রদের নিজস্ব বিষয়গুলোও দেখাশোনা করতেন। ফলে ছাত্ররা শিক্ষকদের থেকে পুঁথিগত শিক্ষা পাওয়ার সাথে সাথে চারিত্রিক শিক্ষাও গ্রহণ করত। তাঁদের থেকে জীবন পরিচালনা করা শিখত। শিখত ধার্মিকতা, একনিষ্ঠতা, বিনয়-নম্রতাসহ উত্তম চরিত্রের আরো অনেক গুণাবলী। আর এভাবেই ছাত্ররা শিক্ষা-দীক্ষায়, জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় শিক্ষকদের সাদৃশ্য হয়ে উঠত।

বিশেষ করে "দারুল উলুম দেওবন্দ" যেই মৌলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে বিশ্বের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এক ভিন্নরকম উচ্চতায় পৌঁছেছে।
তা হল, এটি শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয় বরং আদর্শ মানুষ গড়ার এক বিশাল কারখানা। যেখানে শিক্ষার চেয়ে দীক্ষার পরিমাণই বেশি থাকে। ফলে তৈরি হয় সঠিক শুদ্ধ আকিদায় বিশ্বাসী একনিষ্ঠ একজন পাক্কা মুসলমান। যারা কথার চেয়ে বেশি নিজেদের সুন্দর আচার-ব্যবহার আর উত্তম চরিত্রের মাধ্যমেই ইসলামের প্রচার-প্রসার করে।

কিন্তু আফসোসের বিষয় হল আস্তে আস্তে এ বিষয় গুলো আদিম যুগের ইতিহাসের মতো হয়ে যাচ্ছে।
আর এর মূল কারণ হচ্ছে শিক্ষকরা নিজেদের মূল উদ্দেশ্য এটা কে বানিয়েছেন যে, শ্রেণিকক্ষে এমন ভাবে পড়ানো যাতে ছাত্ররা খুশি হয়ে যায। তাঁরা সব সময় ভাবতে থাকে, পড়ানোর জন্য তাঁদেরকে কেমন প্রবন্ধ বা কিতাব দেওয়া হয়েছে? কিভাবে ছাত্রদের ওপর নিজের জ্ঞানের প্রভাব পড়বে?
কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে ছাত্রদের মাঝে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে? আর এই গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে গিয়ে কোন পদ্ধতিতে পড়ালে ছাত্রদের বেশি উপকার হবে, সেটা ভুলে যায়। বরং কখনো তো তাঁরা খুঁজতে থাকে যে, কোন পদ্ধতিটা ছাত্রদের প্রবৃত্তির চাহিদা অনুযায়ী হবে? ফলে শিক্ষকগণ ছাত্রদেরকে দিক-নির্দেশনা দেওয়ার পরিবর্তে তাদের প্রবৃত্তির অনুগত হয়ে যায়। আর ছাত্ররা শিক্ষকের পিছনে চলে না বরং শিক্ষকরা ছাত্রদের চাহিদার পিছনে দৌড়াতে থাকে।

কিন্তু কিভাবে পড়ালে ছাত্রদের উপকার হবে?
কী কী শেখালে ছাত্ররা ধর্ম, দেশ ও জাতির জন্য আরও উপকারী হিসেবে গড়ে উঠবে?
ছাত্রদের কী ধরনের আগ্রহ-উদ্দীপনা, চাহিদা তাদের জন্য ক্ষতিকর?
কিভাবে ক্ষতিকর জিনিস থেকে তাদের আগ্রহ দূর হবে?
শ্রেণীকক্ষের বাইরে তারা কিভাবে চলা ফেরা করছে?
এগুলো বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করা, ছাত্রদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য পূরণে এগিয়ে আসার মতো লোকেরাও আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে।

তাই এখন সর্বপ্রথম আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ এলাকায় কওমি মাদ্রাসার মৃত্যুপ্রায় এই "প্রাণ" পুনরায় তাজা করার প্রয়োজন। কেননা এটি ছাড়া আমাদের কওমি মাদ্রাসাগুলো বেশির থেকে বেশি আক্ষরিক জ্ঞানের "কেন্দ্র" হতে পারবে। ইসলামের সবচেয়ে বড় ভয়ঙ্কর শত্রু ইউরোপ আমেরিকার মুশরিক প্রাচ্যবিদদের মতো মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা এবং নির্দিষ্ট কিছু বিষয় পড়াশোনা করানোই আমাদের মূল উদ্দেশ্য হয়ে যাবে। আর আস্তে আস্তে একদিন আমরা দ্বীনি শিক্ষার অপরিহার্য ও আবশ্যকীয় এই বৈশিষ্ট্যগুলি হারিয়ে, অবশেষে একদিন দ্বীনহারা হয়ে পড়ব।

কওমি মাদ্রাসার এই প্রাণ যা সময়ের ঘূর্ণিপাকে আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে, এটাকে পুনর্জীবিত করতে সবচেয়ে বড় গুরুদায়িত্ব হল প্রত্যেকটি মাদ্রাসার শিক্ষক এবং পরিচালনা কমিটির সদস্যের উপর। তাদের উচিত হল সর্ব প্রথম তাঁরা নিজেদের আমল-আখলাকের দিকে নজর দিবে। তাঁরা দেখবে ইসলামী শিক্ষা তাদের জীবনে কোনো পরিবর্তন এনেছে কি না?
আল্লাহর ভয় আর আখেরাতের চিন্তায় তাঁদের অন্তর কেঁপে ওঠে কি না?
রবের সাথে তাঁদের নৈকট্য বৃদ্ধি পেয়েছে কি না?
ইবাদতের প্রতি তাঁদের আগ্রহ কতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে?
আমলের যেই ফজিলতগুলো দিনরাত তাঁরা অন্যকে শোনাচ্ছেন, নিজেরা তার উপর কতটুকু আমল করছেন?
আল্লাহর রাস্তায় দান সদকা করার জন্য অন্যদেরকে কুরআন হাদীস শুনিয়ে যেই উৎসাহ উদ্দিপনা দেওয়া হয়, নিজেরা তাতে কতটুকু অংশ গ্রহণ করেছে?
ইসলামের জন্য জান ও মালের কুরবানী দেওয়ার জন্য কতটুকু প্রস্তুতি নিয়েছে? সমাজের এই অধঃপতনে তাঁরা অস্থির হয়ে ছটফট করছে কি না?
সুন্দর সুশীল সমাজ বিনির্মাণের চিন্তা-চেতনা তাদের মন-মস্তিস্কে কতটুকু প্রভাব ফেলেছে?
যদি এ বিষয় গুলো নিয়ে আমরা চিন্তা করি, বাস্তবতা আর সততার সাথে নিজেদের মাঝে এগুলোর উত্তর খুঁজি তাহলে লজ্জায় শরমে মাথা নিচু করে আফসোস আর অনুতাপ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

তাই এখন সময়ের দাবি, এই আফসোস আর অনুতাপ থেকে শিক্ষা নিয়ে আর লজ্জা-শরমকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যৎ সুন্দর করা।
তবে এটা সাময়িক হলে, তাতে কোন উপকার হবে না। বরং সর্বদা এটা মনেপ্রাণে ধারণ করে নিতে হবে, আর নিজেদের ভবিষ্যৎকে চোখের সামনে ভাসিয়ে তুলতে হবে। তাহলেই হয়ত আবার ফিরে যেতে পারি আমাদের হারিয়ে যাওয়া সেই সোনালী অতীতে।
আল্লাহ তা'আলা আমাদের সবাইকে দ্বীনের জন্য কবুল করুন।
©️

Islami Jindegi 08/02/2025

শাইখুল হাদিস মুফতি মনসুরুল হক দামাত বারাকাতুহুম এর পরিচিতি.........

শাইখুল হাদীস মুফতী মনসূরুল হক দামাত বারাকাতুহুম বাংলাদেশের অন্যতম একজন খ্যাতনামা আলেম। তিনি ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান মুফতী ও শাইখুল হাদীস। মুফতী মনসূরুল হক দামাত বারাকাতুহুম-যুগ সংস্কারক এবং হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর খলীফা, মুহিউস সুন্নাহ হযরত মাওলানা শাহ সাইয়্যিদ আবরারুল হক রহ. এর একজন বিশিষ্ট খলীফা। তিনি একাধারে একজন জনপ্রিয় আলেম, শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, রূহানী চিকিৎসক, সমাজ সংস্কারক এবং হকের পক্ষে ও বাতিলের বিরুদ্ধে এক নির্ভীক সৈনিক। দেশের বহু মসজিদ ও মাদরাসার কর্মসূচী হযরতের পরামর্শে পরিচালিত হচ্ছে। মুফতী সাহেব দামাত বারাকাতুহুম মাদরাসার সিলেবাসভুক্ত ‘তাইসীরুল মুবতাদী’ও ‘ক্বাওয়ায়েদে উর্দু’কিতাবদ্বয়ের অনুবাদক। ‘ক্বাওয়ায়েদে উর্দু’ কিতাবটি ‘তাইসীরুল মুবতাদী’ কিতাবের শেষে যুক্ত করা হয়েছে।

তিনি খুলনার কমলাপুর মাদরাসাতে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু করেন। সেখানে তিন বছর অধ্যয়নের পর খুলনা দারুল উলূম মাদরাসাতে পরবর্তী ২ বছর এবং মাওলানা শামসূল হক ফরিদপুরী রহ. প্রতিষ্ঠিত গওহরডাঙ্গা মাদরাসাতে চার বছর পড়ালেখা করেন। এরপরে হযরত জামি‘আ কুরআনিয়া লালবাগ, ঢাকায় (লালবাগ মাদরাসাতে) চলে আসেন এবং মিশকাত, বুখারী, ইফতা ও উলূমুল হাদীসে পাণ্ডিত্য লাভ করেন। মুফতী সাহেব দামাত বারাকাতুহুম গওহরডাঙ্গা মাদরাসাতে শিক্ষারত অবস্থায় পুরো কুরআন শরীফ হিফয করেন। শাইখুল হাদীস মুফতী মাওলানা মনসূরুল হক দামাত বারাকাতুহুম ছয় জন শাইখুল হাদীস থেকে বুখারী শরীফের সনদ লাভ করেছেন।

মুফতী সাহেব দামাত বারাকাতুহুম লালবাগ কেল্লা মসজিদের ইমাম ছিলেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত লালবাগে শিক্ষকতা করার পর ১৯৮৬ সালে মুফতী সাহেব দামাত বারাকাতুহুমঢাকার মুহাম্মাদপুরে ঐতিহ্যবাহী সাত মসজিদের পাশে জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া, (যা বিখ্যাত রাহমানিয়া মাদরাসা হিসেবে পরিচিত) প্রতিষ্ঠা করেন। জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়। রাহমানিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অর্থাৎ একত্রিশ বছরের বেশি সময়কাল ধরে মুফতী সাহেব দামাত বারাকাতুহুম ছাত্রদের বুখারী শরীফ সহ অন্যান্য বহু হাদীসের কিতাবের দারস দিয়ে আসছেন। হযরতের ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষাদান পদ্ধতি ছাত্রদের কাছে আজও জনপ্রিয়।

শিক্ষকতা শুরুর কিছু সময় পরেই মুফতী সাহেব দামাত বারাকাতুহুম মুহিউস সুন্নাহ হযরত মাওলানা শাহ সাইয়্যিদ আবরারুল হক রহ. সাহেব থেকে খিলাফত লাভ করেন। মুফতী মনসূরুল হক দামাত বারাকাতুহুম মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের নায়েবে আমীর এবং ঢাকার মুহাম্মাদপুর এলাকার দাওয়াতুল হকের জিম্মাদার। তিনি কখনো কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ বা মিটিং মিছিলে অংশগ্রহণ করেন না। হযরত বলেন,‘সত্যিকারের জিহাদ হলো অন্য ভাইদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়া, কোনো জাতি যদি দাওয়াতী মেহনত করে তো আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের যমীনের বুকে খিলাফত দান করবেন’।

হযরতের লিখিত কিতাব পড়ে এবং বয়ান শুনে সারা দুনিয়ার মানুষ উপকৃত হচ্ছে।
হযরতওয়ালার বয়ান, কিতাব, প্রবন্ধ, মালফুযাত পেতে ভিজিট করুনঃ
www.darsemansoor.com
www.islamijindegi.com
আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক দামাত বারাকাতুহুমকে উচুঁ মর্যাদা দান করেন। আমীন।

শাইখুল হাদীস মুফতী মনসূরুল হক দা.বা.
জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা

Islami Jindegi বিজ্ঞাপনমুক্ত সহীহ ইসলামী এ্যাপ

Want your school to be the top-listed School/college in Muhammadpur?

Click here to claim your Sponsored Listing.

Videos (show all)

জানিনা এই দলের মাধ্যমে ইসলাম কিংবা আলেমদের কোন উপকার হবে কিনা কিন্তু আল্লাহ তাআলার কাছে এই দোয়াই করব :  অন্তত ইসলাম এবং...
المسجد الأقصي
এত উত্তম নাসিহা ! আল্লাহ সবাইকে আমল করার তৌফিক দান করুন ।
ما أروع ، الله أكبر كبيرا  ؛! حفظه الله و رعاه من جميع السوء و من كيد الظالمين
استغفروا ربكم يا عباد الله !
হযরত তাকী উসমানী সাহেব দা.বা. এর চমৎকার একটি বয়ান। হযরত এতে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন: ১— ওলামায়ে দীন ও দীনী মাদারিসে...

Location

Telephone

Website

Address

Shekhertek
Muhammadpur