
আজ হাফেজ্জী হুজুরের ওফাত দিবস
এক নজরে রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক রাহবার
হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.
=== মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী ===
বিশ্ব বরেণ্য বুজুর্গ ও আলেমেদ্বীন, রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক রাহবার, মুজাহিদে মিল্লাত, জিকিরে মুজাসসাম, কুতুবে আলম, আমীরে শরীয়ত আল্লামা মোহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর (রহঃ) লক্ষীপুর জেলার রায়পুর থানাধীন লুধুয়া গ্রামে ১৮৯৫ সালে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম দ্বীনদার পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৌলভী মুহাম্মদ ইদ্রিস সাহেব এবং দাদার নাম মরহুম মাওলানা মিয়াজী আকরামুদ্দিন সাহেব। মৌলভী ইদরিস সাহেব ছিলেন উর্দু-ফার্সী ভাষার সুদক্ষ একজন আলেম। দাদা আকরামুদ্দিন সাহেব ছিলেন ত্রয়োদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হযরত সাইয়্যেদ আহমদ বেরলভী (রহঃ) এর খলিফা মাওলানা ইমামুদ্দিন বাঙালি (রহঃ) এর শাগরেদ ও খলিফা।
ইসলামী শিক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাঁর শিক্ষা জীবন। বিশিষ্ট আলেম ও বুজুর্গ এক মাত্র চাচা মৌলভী মোহাম্মদ ইউনুস সাহেবের নিকট তিনি বিসমিল্লাহর সবক শুরু করেন। কায়দা-আমপারা থেকে শুরু করে মাসআলা-মাসায়েল এবং ফার্সী ভাষার প্রাথমিক কিতাবসমুহ চাচার নিকট অধ্যায়ন করেন।
তিনি ফরিদপুর জেলার দুলাইরচর প্রাইমারী স্কুলে এবং রায়পুর থানার ফতেহপুর প্রাইমারী স্কুলে দু’বছরের প্রাইমারী কোর্স মাত্র এক বছরে সমাপ্ত করে করেন। তার পর তিনি চন্দ্রগঞ্জ মাদ্রাসা, নোয়াখালীর লাকসাম নবাব ফয়জুন্নেছা মাদ্রাসা, লক্ষীপুর থানার খিলবাইছা মাদ্রাসাতে শুরুর কয়েকটি জামাতের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের কিতাবসমুহ অধ্যয়ন করেন।
দেশে কোন ভাল হেফজ খানা না থাকায় তিনি সুদূর পানিপথে যাওয়ার ইচ্ছায় যাত্রা শুরু করেন খুব সামান্য সামানা নিয়ে। আল্লাহ তাআ'লার গায়েবী ব্যবস্থাপনায় তিনি পানিপথে পৌঁছেন এবং ক্বারী আব্দুস সালাম সাহেবের হেফজখানায় ভর্তি হন। ক্বারী আঃ সালাম সাহেব কিশোর হাফেজ্জী হুজুরের ত্যাগ ও মনোবল দেখে আশ্চর্যাম্বিত হন এবং তাঁর সুন্দর তেলাওয়াতের কারণে হাফেজ্জী হুজুরকে তাঁর স্থানে ইমামতি করার সুযোগ করে দেন। এর পাশাপাশি তাঁকে মসজিদে থাকার সু-ব্যবস্থা করে দেন। ফলে ১৯১৩ থেকে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত মোট ৩ বছরের মধ্যে তিনি পুরো কোরআন শরীফ মুখস্থ করে ফেলেন।
ওস্তাদ খুশি হয়ে তাঁকে হাকীমূল উম্মত আল্লামা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। হেফজ সমাপ্ত করার পর হাকীমূল উম্মত আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) এর পরামর্শে তিনি সাহারানপুর মাজাহিরুল উলুম মাদ্রাসায় কিতাব বিভাগে ভর্তি হন। ১৯১৫ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত তথা মোট ৭ বছর সেখানে পড়া-লেখা করেন। ইলম এবং আমলের সমম্বিত রূপ ছিলেন দ্বীন পিপাসু হাফেজ্জী হুজুর। প্রতিদিনে প্রতিটি দরসে যেমনি উপস্থিত থাকতেন তেমনি সপ্তাহের ছুটির দিনে এবং বার্ষিক ছুটির সময়ও হযরত থানবী (রহঃ) এর খানকাহ থানা ভবনে গিয়ে থাকতেন।
হাদীস, তাফসির, ফেকাহ, উসূলে ফেকাহ, উসূলে তাফসির, বালাগাত, মানতেক ও হেকমত প্রভৃতি বিষয়ের উপর বিশেষ শিক্ষা অর্জনসহ ১৯২২ সালে কৃতিত্বের সাথে সাহারানপুর মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদীসের সর্বোচ্চ সনদ লাভ করেন।
মাজাহিরুল উলুম সাহারানপুরের শিক্ষা জীবনে যে সকল মহামনীষীর নিকট হাফেজ্জী হুজুর (রহঃ) বিশেষ শিক্ষা লাভ করেন তাঁরা হলেন,ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও বুযুর্গ হজরত মাওলানা আব্দুর রহমান কামেলপুরী (রহঃ), মাওলানা আব্দুল লতিফ (রহঃ), মাওলানা মুফতি এনায়েত এলাহী (রহঃ), মাওলানা মঞ্জুর আহমদ (রহঃ) ও মাওলানা ছাবেত আলী (রহঃ) প্রমূখ।
ইসলামী শিক্ষার দুই প্রসিদ্ধ ধর্মীয় বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দ ও মাজাহিরুল উলূম সাহারানপুর। হযরত হাফেজ্জী হুজুর (রহঃ) ছিলেন উক্ত উভয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। সাহারানপুরে হাদিসের সনদ নিলেও ফনুনাতের জন্য ভর্তি হন দারুল উলুম দেওবন্দে। ফকীহুল উম্মত মাওলানা ইযায আলী (রহঃ), মাওলানা বদরে আলম মিরাঠী (রহঃ), মাওলানা রাসুল খান (রহঃ) , আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ: এবং শায়খুল ইসলাম মাওলানা ক্বারী তৈয়্যব(রহ) প্রমূখের মতো তৎকালীন উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ মনীষীদের নিকট তিনি ফনুনাতের কিতাব সমূহ অধ্যয়ন করেন এবং ১৯২৪ সালে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষা ফনুনাত কোর্স সমাপ্ত করেন। অতঃপর আশরাফ আলী থানবী (রহ) খানকাহ'তে কয়েক মাস আধ্যাত্মিক সাধনা করেন।
কর্মজীবন :
জন্মভূমিতে প্রত্যাবর্তন করে তিনি মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহঃ) ও হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহহাব পীরজী হুজুর (রহঃ) এর সাথে একত্রে মিলে দেশের বিভিন্ন স্থানে দেওবন্দের অনুকরণে দ্বীনি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্ঠায় লিপ্ত হন। প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়ায় তারপর বাগেরহাট জেলার গজালিয়া একটি মাদ্রাসায় কয়েক বছর শিক্ষকতা করেন।
হাফেজ্জী হুজুর নামকরণ:
অত্যন্ত পরহেজগার ও উন্নত আখলাক-চরিত্রের অধিকারী মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ হিফজ শেষ করার পর থেকেই সবাই তাকে হাফেজ্জী বলে ডাকতেন। দেশে প্রত্যাবর্তনের পর ১৩৪৪ হিজরী সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইউনুছিয়ায় অধ্যাপনাকালে আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী (রহ) হাফেজ্জীর সাথে হুজুর শব্দটির সংযোজন করে দেন ।
অতঃপর ঢাকায় এসে চকবাজারে বড় কাটারা আশরাফুল উলুম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। বড় কাটারা থাকতেই তিনি লালবাগ শাহী মসজিদের ইমামতির সুবাদে লালবাগ জামেয়া কোরআনিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। হযরত পীরজী হুজুর বড়কাটারাই থেকে যান। পরে হাফেজ্জী হুজুর (রহঃ) ও সদর সাহেব আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহঃ)যৌথভাবে লালবাগ জামিয়া
কোরআনিয়া আরাবিয়ায় চলে আসেন। ফরিদাবাদ জামিয়া ইমদাদুল উলুম মাদ্রাসাসহ সারা দেশে তাঁরা অসংখ্য দ্বীনী প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। অবশেষে হযরত সদর সাহেব (রহঃ) গোপালগঞ্জে চলে যান আর হাফেজ্জী হুজুর (রহঃ) একক প্রচেষ্টায় ১৯৬৫ সালে কামরাঙ্গীরচরে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। স্বীয় দাদা পীরের নামানুসারে মাদ্রাসাটির নাম রাখেন মাদ্রাসা-ই-নূরিয়া যা এখন জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া নামে পরিচিত। পরে হাফেজ্জী হুজুর (রহঃ) তাঁর নিজ গ্রাম লুধুয়াতে ইশা'আতুল উলুম মাদ্রাসাসহ সারাদেশে প্রায় দুইশত মাদ্রাসা ও মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।
হাকীমুল উম্মতের খেলাফত লাভ:
১৯৩৩ সালে প্রথম হজ্ব পালন শেষে দেশে প্রত্যাবর্তনের পথে তিনি হাকীমূল উম্মত আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) এর খানকায় গিয়ে সাক্ষাৎ করে দেশে ফেরেন। দেশে এসে হযরত হাকীমুল উম্মত এর খেদমতে স্বীয় হালত জানিয়ে একটি পত্র দেন। সে পত্র পেয়ে হাকীমুল উম্মত থানবী (রহঃ) তাঁকে খেলাফত দান করেন।
রাজনীতিতে হাফেজ্জী হুজুর:
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যখন ওলামায়ে কেরামদেরকে লাঞ্ছিত-অপমানিত করা হচ্ছিল,কোন আলেম রাজপথে দাঁড়িয়ে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলার সাহস করছিলেন না, ঠিক তখনই হাফেজ্জী হুজুর রহ: তওবার ডাক দিয়ে সরাসরি সক্রিয় রাজনীতিতে অবতীর্ণ হন এবং ১৯৮১সালে ১৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে সরকারি হিসেবে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। একই বছর ২৯ নভেম্বর তাঁর নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন "বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন" নামে একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম। শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, চরমোনাইয়ের মরহুম পীর মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মাদ ফজলুল করিম এবং মুফতি ফজলুল হক আমিনী সাহেব রহ: ছিলেন হাফেজ্জী হুজুর (রহ) ছাত্র ও মুরীদ। তিনজনকেই তিনি খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর নিযুক্ত করেন । জমিয়ত নেতা মাওলানা আব্দুল করিম শায়খে কৌড়িয়া, মাওলানা শামসুদ্দিন কাসেমী, মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিসবাহ, মাওলানা শাহ ফয়জুর রহমান, মাওলানা আবুল হাসান যশোরী ও মুফতি ইউসুফ ইসলামাবাদীসহ দেশবরেণ্য প্রায় সকল ওলামায়ে কেরামই খেলাফত আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ও সক্রিয় ছিলেন।
ইরাক-ইরান যুদ্ধ বন্ধে হাফেজ্জী হুজুর:
ইরাক-ইরান ২টি মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ যুদ্ধ চলছিল। এ যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ১৯৮২ সালের ২ সেপ্টেম্বর হাফেজ্জী হুজুর রহ: ইরান সফরে যান । ইরানের প্রেসিডেন্ট এবং সে দেশের শীর্ষনেতৃবৃন্দের সাথে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে মতবিনিময় করেন। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে যুদ্ধ বন্ধ করার হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ: এর প্রস্তাবে সম্মতি দেন। অতঃপর ইরান থেকে তিনি পবিত্র মক্কা নগরীতে হজ পালন করতে যান। হজ্জ শেষে ৭ অক্টোবর হাফেজ্জী হুজুর ইরাক সফরে যান। ৯ অক্টোবর ইরাকের প্রেসিডেন্টের সাথে যুদ্ধ বন্ধে মতবিনিময় করেন, প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের অনেক প্রশ্নের জবাব দেন হাফেজ্জী হুজুর রহ:। একপর্যায়ে প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম যুদ্ধ বন্ধে হাফেজ্জী হুজুরের প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। কিন্তু পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক চক্রান্তের কারণে দুই দেশের যুদ্ধ বন্ধ করার হাফেজ্জী হুজুরের উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখেনি।
১৯৮৩ সালের ২৩ জুলাই হাফেজ্জী হুজুর সকল পথ ও মতের দেশের সকল দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দকে মানবতার মুক্তির গ্যারান্টি ইসলামী হুকুমত কায়েমের আন্দোলনে শরিক করার মহান লক্ষ্য নিয়ে এক গোলটেবিল বৈঠক আহবান করেন। গোলটেবিল বৈঠকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বাকশাল, কমিউনিস্ট পার্টি, সাম্যবাদী দল, মুসলিম লীগ, ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ, পিপলস লীগ, রিপাবলিকান পার্টি, জামায়াত, ফরায়েজী আন্দোলন, সিপিবিসহ ৩৪ টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। হাফেজ্জী হুজুরের এ গোলটেবিল বৈঠক উপমহাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল।
গোলটেবিল বৈঠকে হাফেজ্জী হুজুর তিন দফা দাবি পেশ করেন।[ ১] অনতিবিলম্বে ইসলামী প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশ ঘোষণা করা। [২] ইসলামী শাসনতন্ত্র রচনা করা।[৩] দেশের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠন করে তিন মাসের মধ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান। হাফেজ্জী হুজুরের ৩নং দাবিটিই পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখায় পরিণত হয়।
১৯৮৩ সালে ১৪ ডিসেম্বর রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসম্মেলন। সম্মেলন শেষে এরশাদ সরকারের জরুরি অবস্থা ভঙ্গ করে লক্ষ লক্ষ মানুষের বিশাল মিছিল নিয়ে বায়তুল মোকাররমে সমাবেশে মিলিত হয়। সেখানে হাফেজ্জী হুজুর ঘোষণা করেন বর্তমান সরকার না ইসলামী সরকার, না জাতীয় সরকার। দেশে ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় জনগণ ইসলামী সরকার ক্ষমতায় দেখতে চায়।
১৯৮৪ সালের ২১ অক্টোবর হযরত হাফেজ্জী হুজুরের নেতৃত্বে দশটি দলের সমন্বয়ে গঠিত হয় সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ। একই বছর ২১ শে ডিসেম্বর রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে এক বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশটি লক্ষ লক্ষ মানুষের জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সভাপতির ভাষণে হযরত হাফেজ্জী হুজুর বলেন, দুর্নীতির গণতন্ত্রের বদলে আমিরুল মুমিনীন, মজলিসে শুরার পদ্ধতি এবং কোরআন-সুন্নাহর শাসন প্রবর্তনের জন্যই আমার সংগ্রাম । সমাবেশে সর্বদলীয় জাতীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
১৯৮৫ সালের ২৫ জুলাই হাফেজ্জী হুজুর লন্ডনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। সম্মেলনে মুসলিম রাষ্ট্রসমূহে ইসলামী শাসনপ্রতিষ্ঠায় ৫ দফা দাবি উত্থাপন করেন।
১৯৮৬ সালে পুণরায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে হাফেজ্জী হুজুর দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।
এছাড়াও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্রপ্রধানদের ইসলাহের উদ্দেশ্যে হাফেজ্জী হুজুর পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান আইয়ুব খান ও জিয়াউল হক এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ-এর নিকট চিঠি প্রেরণ করেন।
ইন্তেকাল:
৮ রমযান ১৪০৭হিজরি, ১৯৮৭ সালের ৭ মে, বৃহস্পতিবার বেলা পৌঁনে ২টায় ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই মহামানব রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক রাহবার আল্লামা মোহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। পরের দিন শুক্রবার বাদ জুমা জাতীয় ঈদগাহে লাখ লাখ মুসল্লির অংশ গ্রহণে তাঁর নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন মরহুমের বড় সাহেবজাদা মাওলানা ক্বারী শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফ রহ.। জানাযায় লক্ষ লক্ষ ছাত্র মুরীদ নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ শোকাহত মানুষের ঢল নামে। ফলে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়েও ঈদগাহ ময়দান এবং আশপাশের এলাকাগুলোতে লোকের সঙ্কলন হয়নি। তখন মাইকে ঘোষণা করা হয় সবাই কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে যান, কাতার বন্দী সম্ভব হচ্ছে না।
জানাযায় শরিক হয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ বলেন, আমার জীবদ্দশায় এত বড় বিশাল জানাজার নামাজ আর কখনো দেখিনি। জানাযায় আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ, ডঃ কামাল হোসেন, বিএনপি'র তৎকালীন মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মাওলানা আবদুল করিম শায়খে কুরিয়া, মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের কূটনীতিকসহ সকল সিলসিলার পীর-মাশায়েখ, ওলামায়ে কেরাম এবং সকল দলের নেতৃবৃন্দ। পরে কামরাঙ্গীরচরে নিজ হাতে গড়া নুরিয়া মাদ্রাসা মসজিদের দক্ষিণ পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।
হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ: ছিলেন সুন্নাতে নববীর সঠিক ধারক-বাহক, সর্বজনমান্য বুজুর্গ, অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, নিরহংকার, নিরভিমান ও নিঃস্বার্থ আল্লাহ প্রেমের মজনু। এদেশে ইসলামী আন্দোলনের প্রেরণার উৎস। তাঁর জীবন,দর্শন, চিন্তাধারা, কর্মপ্রেরণা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অম্লান ও অবিনশ্বর হয়ে থাকবে। আল্লাহ তাআলা হযরতকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুক । আমিন।
---- মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী
নায়েবে আমির, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন।
C