কে কে প্রতিদিন একবার হলেও কোরআনকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেন, চুমু খান?
Sawtul Quran-সাউতুল কোরআন
অনলাইনে সহীহ-শুদ্ধভাবে কুরআন শিক্ষা ও হিফজের নির্ভরযোগ্য প্লাটফর্ম।
Operating as usual
বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের মুখ উজ্জল করে বাংলাদেশের বিশ্বজয়,পবিত্র মক্কায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ১১১টি দেশের প্রতিযোগির মধ্যে হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরীম ৩য় স্থান অর্জন করায় তাকে অভিনন্দন 🌹
কুরআনের মানদণ্ডে এটাকেই বলে প্রকৃত সফলতা যা দুনিয়া ও আখিরাতের।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন,
“তোমরা তারতীলের সাথে কুরআন তিলাওয়াত কর। ” (সুরা মুযযাম্মিলঃ ৪)
তাফসীরকারগণ তারতীলের ব্যাখ্যায় বলেছেন ধীরে সুস্থে সুস্পষ্টভাবে এবং সহীহভাবে তিলাওয়াত করা। তাই তাড়াহুড়ো করে অস্পষ্টভাবে এবং অশুদ্ধ উচ্চারণে কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত নয়। বরং সর্বদা ধীরে সুস্থে সুস্পষ্টভাবে এবং শুদ্ধ উচ্চারণে কুরআন তিলাওয়াতের চেষ্টা করা আমাদের একান্ত কর্তব্য।
©️
প্রচলিত ৩০-৪০ টা ক্লাসের কোর্সের মাধ্যমে কি পুরোপুরি সহিহভাবে তেলাওয়াত শেখা যায়?
বিজ্ঞ ক্বারী সাহেবদের উত্তর হবে, না' এত অল্প সময়ের মধ্যে মাখরাজ, তাজভীদ রপ্ত করে সহিহ আলফাজে তেলাওয়াত করা অতটা সহজ নয়।
আসলে একটা কোর্সের মাধ্যমে আপনি কখনোই কোরান শুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করতে পারবেন না, সহি-শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করতে হলে অবশ্যই আপনাকে সরাসরি কোনো উস্তাদের শরণাপন্ন হতে হবে l
যারা স্কুল-কলেজে পড়ার কারণে সরাসরি মাদ্রাসা বা মক্তবে গিয়ে কোরআন শিখতে পারে না আমরা তাদেরকে সম্পূর্ণ নুরানি পদ্ধতিতে সহীহ-শুদ্ধভাবে কোরআন শিক্ষা দেই।
যেন একজন স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মুসলিম ছেলে-মেয়ে সম্পূর্ণ কোরআন বিশুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করতে পারে। মাদ, গুন্নাহ, মাখরাজ, নুনসাকিন, মিম সাকিন মোট কথা কোরআন সহীহভাবে পড়তে হলে যতগুলো কায়দা-কানুন জানা থাকা দরকার সবগুলো ধীরে ধীরে আয়ত্ত করতে পারে।
আমাদের বৈশিষ্ট্য-
🔵নুরানি পদ্ধতিতে কোরআন শিক্ষা দান।
🔵প্রতিটি স্টুডেন্ট থেকে আলাদা আলাদা করে নিয়মিত পড়া আদায় করা।
🔵মাসিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রত্যেকের মেধা যাচাই,
ও সামনে কিভাবে অগ্রসর হওয়া যায় সেই ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান।
🔵জুমে লাইভ ক্লাস।
🔵ও প্রতি সপ্তাহে তিন দিন ক্লাস।
এ ছাড়া বিস্তারিত আরো জানার জন্য আমাদের পেজে নক দিন। অথবা সরাসরি কল করুন।
জাজাকাল্লাহ খাইরান।
#সাউতুল_কোরআন_একাডেমি
সকালে কিছুক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত করুন। এই সময়টুকু একদিন আপনার কাজে দিবে। জীবনে বরকত আসবে। মনে প্রশান্তি আসবে।
আল্লাহ সুবহানাহু ও তায়ালা বলেন: "নিশ্চয়ই আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। " সূরা রাদ, আয়াত-২৮।
কোরআনের পাখিরা,, যারা কোরআনকে ভালোবাসো❤️ তারা লাইক 👍 বাটনে ক্লিক করে আমাদের সাথে থাকো। আমরা তোমাদের জন্য অনেক মজার মজার জিনিস নিয়ে আসবো ইনশাআল্লাহ।
আমি প্রতিদিন কত সময় নষ্ট করি, কত সময় অপচয় করি,
কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য কি কোরআন পড়ি?
আমাদের প্রতিদিনের রুটিনে সব ঠিক থাকে, নাওয়া,খাওয়া, ঘুরতে যাওয়া,বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া,ফেসবুক চালানো, ইউটিউব, সব আমাদের ঠিকঠাক চলে,
কিন্তু কোরআনের ব্যাপারে কেনো আমাদের এত অবহেলা!!
কোরআন পড়ার জন্য কেনো আমাদের এতটুকু সময় হয়ে ওঠে না?
অথচ এই কোরআন যেই ঘরে তেলাওয়াত হয় সেই ঘরে আল্লাহর রহমত নাজিল হয়, শান্তি নাজিল হয়,
আমাদের ঘরগুলোতে এই যে এত অশান্তি এর অন্যতম কারণ হলো আমরা কোরআন থেকে অনেক দূরে সরে গেছি।
তাই আমাদের উপর এখন ফরজ হলো আমাদের দ্রুত কোরআনের দিকে ফিরে আসা, কোরআনকে আঁকড়ে ধরা,
কোরআন অনুযায়ী জীবন-যাপন করা।
এটা যদি করতে পারি, তাহলে অবশ্যই আমাদের ঘরগুলো শান্তিতে ভরে যাবে। আল্লাহর রহমত নাজিল হবে।
সব অশান্তি দূর হয়ে যাবে।
কালকে ফজরের সালাত থেকে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে।
اللّٰه أكبر ، اللّٰه أكبر ، لا إله إلا اللّٰه و اللّٰه أكبر ، اللّٰه أكبر ، و لله الحمد
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওলিল্লাহিল হামদ।
যারা কোরআনের সাথে সম্পর্ক করে, যারা কোরআনের পথে চলে, যারা কোরআনকে আকড়ে ধরে, তাদের সাথে আল্লাহর সম্পর্ক স্থাপন হয় । এই সম্পর্ক যত মজবুত হবে আল্লাহর সাহায্য তার জন্য তত দ্রুত আসবে।
আল্লাহর দয়া ও রহমত সর্বদা তার সাথে থাকবে।
এখন আমরা যদি চাই যে আল্লাহ আল্লাহর রহমত ও দয়া আমার উপর বর্ষিত হোক তাহলে আমাদের আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে, আর আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হলে আমাদের কোরআনের সাথে সম্পর্ক করতে হবে, কোরআন শিখতে হবে, কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। কোরআন তেলাওয়াত দ্বারা অন্তর প্রশান্তি লাভ করে।
মুর্দা অন্তর জীবিত হয়।
তিলাওয়াত অর্থ পঠন, অধ্যয়ন ও আবৃত্তিকরণ। কোরআন তিলাওয়াত একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও বহু তাৎপর্যময় আমল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তুমি বিশুদ্ধভাবে কোরআন তিলাওয়াত করো।’ (সুরা-৭৩ মুজজাম্মিল, আয়াত: ৪)। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে, উম্মে সালামা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোরআন তিলাওয়াত করতেন প্রতিটি হরফ স্পষ্ট উচ্চারণ করে এবং প্রতিটি আয়াতে বা বাক্যে থেমে থেমে।’ (তিরমিজি)।
তাই আমাদের উচিত কোরআনকে বিশুদ্ধভাবে তেলওয়াত করা, সহীহ উচ্চারণ শিক্ষা করা,
মাদ, গুন্নাহ, তানবীন, নুন-সাকিন, মীম-সাকীন, ঠিকমত আদায় করে পড়া।
কোরআনকে যারা ভালোবাসেন তারা লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন।
আমরা কোরআন শিখবো, কোরআন পড়বো, এবং অন্যকেও কোরআন শিখতে উৎসাহিত করবো ইনশাআল্লাহ।
কোরআনকে যারা ভালোবাসেন তারা লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন।
আমরা কোরআন শিখবো, কোরআন পড়বো, এবং অন্যকেও কোরআন শিখতে উৎসাহিত করবো ইনশাআল্লাহ।
আল-কোরআন এসেছে বিশ্ব মানবতাকে হিদায়াতের সঠিক পথের সন্ধান দেয়ার জন্য। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘রমজান মাস, যাতে কোরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদের্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে।’ (সূরা আল-বাকারা-১৮৫) হিদায়াতের এই কিতাব আল-কোরআন শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপরে ফরজ করা হয়েছে।
মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। এসকল নবী-রাসূলদেরকে গাইডবুক হিসেবে সহীফা ও কিতাব দিয়েছেন। এসব কিতাব সমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ কিতাব হচ্ছে আল-কোরআন।
কোরআন অধ্যয়নকারীকে আল্লাহ স্বরণ করেন
এই পৃথিবীতে সর্বোত্তম কাজ হচ্ছে আল-কোরআন অধ্যয়ন করা এবং সে অনুযায়ী জীবনে আমল করা। যারা দুনিয়ায় আল-কোরআন অধ্যয়ন করবে, জেনে-বুঝে আমল করবে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তাদেরকে স্বরণ করবেন এবং এই কোরআনের সংস্পর্শে থাকার কারণে তাদের মাধ্যমে পৃথিবীতে আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে দিবেন।
এ সম্পর্কে আল-হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, ‘হজরত আবু যার গিফারী (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.) এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তিনি একটি লম্বা হাদীস বর্ণনা করলেন। আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আামকে কিছু উপদেশ দিন। তিনি বললেন, আমি তোমাকে আল্লাহকে ভয় করার উপদেশ দিচ্ছি। কেননা ইহা তোমার সমস্ত আমলকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করবে। (আবু যার গিফারী বলেন) আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আপনি আমাকে আরো অতিরিক্ত কিছু উপদেশ দিন। রাসূল (সা.) বললেন, তুমি কোরআন তিলাওয়াত করবে এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহর স্বরণ করবে, তাহলে আসমানে তোমাকে স্বরণ করা হবে এবং দুনিয়ায় এটা তোমার জন্য আলোকবর্তিকা হবে।’ (বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান)
©️
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযি থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লম ইরশাদ করেছেন, (কিয়ামতের দিন) কুরআনের তিলাওয়াতকারী বা হাফেজকে বলা হবে-
اقْرَأْ، وَارْتَقِ، وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا، فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا.
তিলাওয়াত করতে থাক এবং উপরে উঠতে থাক। ধীরে ধীরে তিলাওয়াত কর, যেভাবে ধীরে ধীরে দুনিয়াতে তিলাওয়াত করতে। তোমার অবস্থান হবে সর্বশেষ আয়াতের স্থলে যা তুমি তিলাওয়াত করতে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪৬৪; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯১৪
এই ধীরস্থির বা তারতীলের সাথে তিলাওয়াত কেমন হবে তা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখিয়ে গেছেন, শিখিয়ে গেছেন। হযরত উম্মে সালামাহ রাযি.-কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায ও তিলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তাঁর তিলাওয়াত ছিল-
قِرَاءَةً مُفَسَّرَةً حَرْفًا حَرْفًا
প্রতিটি হরফ পৃথক পৃথকভাবে উচ্চারিত। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯২৩
অর্থাৎ কোনো জড়তা, অস্পষ্টতা ও তাড়াহুড়া ছিল না।
হযরত আনাস রাযি.-কে নবীজীর তিলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তাঁর তিলাওয়াত ছিল (মদের স্থানে) টেনে পড়া। এর পর তিনি بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ পাঠ করে শোনান এবং اللهِ , الرَّحْمٰنِ ও الرَّحِيمِ এ সব জায়গার মদগুলো টেনে উচ্চারণ করে দেখান। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০৪৬
সাহাবায়ে কেরামের তিলাওয়াতের বৈশিষ্ট্যও এমনই ছিল। ধীরস্থিরভাবে তিলাওয়াত করতেন তাঁরা। নিজেরা করতেন, অন্যদেরকেও তাগিদ দিতেন।
قَالَ عَلْقَمَةُ : صَلَّيْتُ مَعَ ابْنِ مَسْعُودٍ مِنْ أَوَّلِ النَّهَارِ إِلَى انْصِرَافِهِ مِنَ الْفَجْرِ فَكَانَ يُرَتِّلُ.
হযরত আলকামাহ রাহ. বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর সাথে নামায পড়লাম দিনের শুরু থেকে ফজর পর্যন্ত। তিনি তিলাওয়াত করছিলেন তারতীলের সাথে, ধীরস্থিরভাবে। -মুখতাছারু কিয়ামিল লাইল পৃ. ১৩১
©️ Al Kawsar
মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। এসকল নবী-রাসূলদেরকে গাইডবুক হিসেবে সহীফা ও কিতাব দিয়েছেন। এসব কিতাব সমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ কিতাব হচ্ছে আল-কোরআন। পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের উপরে ঈমান আনা এবং আল-কোরআনকে মেনে চলা মুসলিমদের উপরে আল্লাহ তায়ালা ফরজ করেছেন।
আল-কোরআন এসেছে বিশ্ব মানবতাকে হিদায়াতের সঠিক পথের সন্ধান দেয়ার জন্য। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘রমযান মাস, যাতে কোরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদের্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে।’ (সূরা আল-বাকারা-১৮৫) হিদায়াতের এই কিতাব আল-কোরআন শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপরে ফরজ করা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন-
وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا
কুরআন তিলাওয়াত কর ধীরস্থির ভাবে, স্পষ্টরূপে। -সূরা মুযযাম্মিল (৭৩) : ৪
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
زينوا القرآن بأصواتكم
সুন্দর সূরের মাধ্যমে কুরআনকে (এর তিলাওয়াতকে) সৌন্দর্যমণ্ডিত কর। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪৬৮
তাই আমাদের উচিত হলো আমাদের সন্তানদের ছোট বয়স থেকেই কোরআন শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেয়া এবং সঠিক পদ্ধতিতে কোরআন শিক্ষা দেয়া।
তাই আপনার সন্তানের কোরআন শিক্ষা বিষয়ক যে কোনো পরামর্শের জন্য সাউতুল কোরআন একাডেমিতে জয়েন যোগাযোগ করুন।
সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষা সংক্রান্ত ভুলভ্রান্তি
মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া
আজ যারা কচিকাচা আগামীতে তারাই হবে জাতির কর্ণধার। সন্তান মা-বাবার কাছে আল্লাহ তাআলার এক মহা আমানত। এই আমানতের যথাযথ হক আদায় করা মা-বাবা ও অভিভাবকের কর্তব্য। কিন্তু অনেক মা-বাবাই সন্তানের তালীম-তরবিয়তের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এর মূলে রয়েছে : এক. দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং সন্তান যে একটি মহা আমানত-এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব। দুই. বিজাতীয় রীতি-নীতি ও ফ্যাশন প্রীতি। তিন. বৈষয়িক উপার্জনকেই জীবনের সাফল্য হিসেবে মনে করা। এ কারণে সন্তানকে একজন ঈমানদার ও সাচ্চা মুসলমান হিসেবে গড়ে তোলার তাগিদ তারা বোধ করেন না। এ সকল মৌলিক চিন্তাগত ভ্রান্তিই সন্তানের তালীম-তারবিয়াতের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।
সন্তান আমানত
সন্তান মা-বাবার নিকট আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আমানত। তাদেরকে দ্বীন শিক্ষা দেওয়া, শরীয়তের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি শেখানো এবং একজন ঈমানদার মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা মা-বাবা ও অভিভাবকের কর্তব্য। আজ বৈষয়িক শিক্ষায় শিক্ষিত করা এবং চাকরি ও উপার্জনক্ষম করে গড়ে তোলাকেই শুধু দায়িত্ব মনে করা হয়। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, সন্তানকে হালাল ও বৈধ পন্থায় আয়-রোজগার শেখানোও পিতামাতার কর্তব্য। কিন্তু এটিই একমাত্র দায়িত্ব নয়; বরং তাদেরকে ইসলামী সভ্যতা (তাহযীব) শেখানো, দ্বীন ও শরীয়তের মৌলিক বিষয়াদি শেখানো এবং একজন দ্বীনদার-নামাযী ও প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাও মা-বাবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। হাদীস শরীফে এসেছে- ‘জেনে রেখ, তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ তার পরিবারবর্গের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তাদের ব্যাপারে তাকে জবাবদিহি করতে হবে।’ -সহীহ বুখারী ১/২২২ হাদীস ৮৯৩
সুসন্তান যেমন মা-বাবার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের বড় সম্পদ এবং সদকা জারিয়া তেমনি সন্তান যদি দ্বীন ও শরীয়তের অনুগত না থাকে, দুর্নীতি ও গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায় তাহলে সে উভয় জগতেই মা-বাবার জন্য বিপদ। দুনিয়াতে লাঞ্ছনা, বঞ্চনা ও পেরেশানির কারণ। আর কবরে থেকেও মা-বাবা তার গুনাহর ফল ভোগ করতে থাকবে। আখিরাতে এই আদরের দুলালই আল্লাহ তাআলার দরবারে মা-বাবার বিরুদ্ধে আপিল করবে যে, তারা আমাকে দ্বীন শেখায়নি। তাদের দায়িত্ব পালন করেনি। তাই এই আমানতের হক আদায়ের প্রতি খুবই যত্নবান হতে হবে।
বিজাতীয় রীতিনীতি ও ফ্যাশন প্রীতি
কুরআন-হাদীসের একটি মৌলিক শিক্ষা হল, আচার-ব্যবহার, সাজসজ্জা, কৃষ্টি-কালচার ইত্যাদিতে ইসলামী স্বাতন্ত্রবোধ থাকা। এসব ক্ষেত্রে বিজাতীয় অনুকরণকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এটা দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এ সম্পর্কে কুরআন-হাদীসে অসংখ্য হেদায়েত রয়েছে।
হাদীস শরীফের ‘কিতাবুল আদব’ অধ্যায়ে এবং অন্যান্য প্রসঙ্গে বিধর্মীদের অনুকরণ না করার এবং কৃষ্টি-কালচারে তাদের বিরোধীতা করার অনেক তাকীদ এসেছে। একটি হাদীসে এসেছে- ‘যে ব্যক্তি কোনো জাতি বা সম্পদায়ের সাদৃশ্য গ্রহণ করল সে তাদের অন্তর্ভু&ক্ত।’
সুতরাং শিক্ষা-দীক্ষা, ফ্যাশন ও রীতিনীতিতে বিজাতীয়দের অনুকরণ করা এবং সে অনুযায়ী সন্তানদের গড়ে তোলা বড় ধরনের ভুল। এতে ইসলাম ও ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন থেকে সে ধীরে ধীরে এমনিভাবে বের হয়ে যায় যার উপলব্ধিও থাকে না।
কুরআন মজীদ না শেখানো
একজন মুসলিম তার সন্তানকে আল্লাহর কালাম শেখাবে না এটা কি কল্পনা করাও সম্ভব? কিন্তু এদেশের অধিকাংশ মুসলমানের অবস্থাই এই। ভেবে দেখুন, লাখ লাখ টাকা খরচ করে সন্তানের জন্য বড় বড় ডিগ্রী নেওয়া হচ্ছে কিন্তু কুরআন পড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে না। আমার একটি অভিজ্ঞতা আপনাদের শোনাই। রমযান মাসের কথা। মাঝবয়সী একজন ভদ্রলোক মসজিদে বসে কুরআন শরীফ খুলে বুক ভাসিয়ে কাঁদছিলেন। নিজেকে কিছুতেই সংবরণ করতে পারছিলাম না। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, চাচা কী হয়েছে? এ কথা শুনে আরো জোরে কেঁদে উঠলেন। এরপর বললেন, বাবা! আমি তো এই পবিত্র কালাম পড়তে পারি না। আমার জীবন তো শেষ প্রায়। আমার কী হবে। আমার বাবা আমাকে ডাক্তার বানিয়েছেন, কিন্তু কখনও কুরআন পড়াননি।’ বলুন তো এ লোকটির পিতা ঐ সময় কবরে থেকে কী পাচ্ছিলেন? ভেবে দেখুন, দুনিয়াতেই অভিযোগ শুরু হয়ে গেছে। এরপর যারা আখেরাতের ভয়াবহ আযাবের মুখোমুখি হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাযত করুন। তাদের অভিযোগ আরো কত কঠিন হবে!! কার বিরুদ্ধে? যে বাবা সন্তান মোল্লা হয়ে যাবে ভেবে কুরআন শেখাননি তার বিরুদ্ধে। শুধু কি তাই? স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও আল্লাহ তাআলার দরবারে এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন। কুরআন মজীদে এসেছে- (তরজমা :) ‘রাসূল বলবেন, হে আমার রব, আমার কওম এই কুরআনকে পরিত্যাগ করেছে!’ (সূরা ফুরকান ৩০)
স্বয়ং কুরআনের অভিযোগ করার কথাও এসেছে। তাই আমাদের অত্যন্ত সচেতন হওয়া কর্তব্য। সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানত, এ ব্যাপারে ভেবে চিন্তে পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদেরকে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানান তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু তাদেরকে ঈমানদার বানানোও আপনার কর্তব্য। সন্তান কুরআন পড়তে ও বুঝতে পারে এতটুকু যোগ্যতা তার মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। তাই শুধু ডাক্তার নয়; বরং দ্বীনদার ডাক্তার ও দ্বীনদার ইঞ্জিনিয়ার বানান। আর যদি দ্বীনের খাদেম আলেম বানাতে পারেন তবে তো সোনায় সোহাগা।
দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর রা.এর ছেলে আব্দুল্লাহ, যখন সূরা বাকারা সমাপ্ত করেছিলেন তখন বাবা খুশিতে উট যবাই করে সমাজের লোকদেরকে দাওয়াত করেছিলেন। আজ আমরাও মিষ্টিমুখ করি কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা হয় সন্তান খৃষ্টান মিশনারীদের নামি দামি স্কুলে চান্স পেয়েছে এজন্য। সন্তান স্কলারশিপ পেয়ে ইসলামের জঘন্যতম শত্রু ইহুদীদের ইউনিভার্সিটিতে সম্পূর্ণ বৈরী পরিবেশে পড়ার সুযোগ পেয়েছে এজন্য।
তাই কলিজার টুকরা সন্তানের কচি সিনা বিধর্মীদের হাতে সোপর্দ না করে আসুন সাহাবায়ে কেরামের মতো আমরাও সন্তানকে আল্লাহ পাকের কালাম শেখাই। আসমান-জমিনের মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র, নূরানী ও সবচেয়ে বরকতময় কালাম কুরআন মজীদ। তাহলে এ থেকে আমার সন্তানকে বঞ্চিত করব কেন? এই কচি মনে যদি আল্লাহর পবিত্র কালাম স্থান পেয়ে যায় তাহলে পরবর্তী জীবনে কখনও যদি সে প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হলেও অন্তরের এই নূর তাকে সৎ পথে চলতে সাহায্য করবে। সে খড়কুটার মতো অন্যায়ের জোয়ারে ভেসে যাবে না ইনশাআল্লাহ।
দ্বীন না শেখানো
সন্তানকে কুরআন শেখায় না এমন মা-বাবার হার যদি শতকরা ৭০ হয়ে থাকে তবে দ্বীন শেখায় না এদের হার শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ। নামায কীভাবে পড়বে তাও শেখায় না। হালাল-হারাম, পাক-নাপাক, অযু-গোসল তো দূরের কথা। অথচ সন্তানকে দ্বীনের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি শেখানো পিতা-মাতার উপর ফরয। এটা না শেখানো সন্তানের উপর সবচেয়ে বড় জুলুম।
বাবা-মাকে এ ভুলের জন্য কিয়ামতের দিন চুলচেরা জবাব দিতে হবে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সতর্কবাণী : ‘পুরুষ তার পরিবারবর্গের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তাকে তাদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে।’ (সহীহ বুখারী ১/২২২, হাদীস ৮৯৩)
সন্তানকে ইসলাম বিদ্বেষী করে গড়ে তোলা
আধুনিকতার লেহাজ করে অনেক মা-বাবাই তাদের সন্তানদেরকে ইসলামের আহকাম ও ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনের ব্যাপারে সম্পূর্ণ বিদ্বেষী করে গড়ে তোলেন। টুপি-দাড়ি, আলিম-ওলামা, মাদরাসা-মসজিদ ইত্যাদি বিষয়ে একটা নেতিবাচক ধারণা। তাদের অন্তরে ঠাঁই পায় (নাউযুবিল্লাহ)। শৈশব থেকেই নাস্তিক প্রকৃতির শিক্ষক বাছাই করা হয়। উপরন্তু স্যাটেলাইট চ্যানেল, ইন্টারনেট এর অবাধ ব্যবহার তো আছেই। সাথে সাথে এ ধরনের লেখকদের বইপত্র পড়তে দেওয়া হয় এবং এই মানসিকতা সম্পন্ন লোকদের পরিবেশেই তাদের বিচরণকে বিচক্ষণতার সাথে সীমাবদ্ধ রাখা হয়। এভাবে শিশুর মন-মানসকে বিষাক্ত করে দেওয়া হয়। এটা মারাত্মক ভুল। এজন্য পিতামাতাকে আল্লাহর দরবারে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
শিশুর প্রথম পাঠশালা
শিশুর প্রথম পাঠশালা হচ্ছে মায়ের কোল। এখানে সে জীবনের অনেক কিছু শেখে। পরবর্তীতে এটাই তার অভ্যাসে পরিণত হয়। শরীয়তে এই পাঠশালার অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় এই যে, শিশুর এই প্রথম শিক্ষা শুরু হয় টিভি দিয়ে। মা-বাবা তাদেরকে সাথে নিয়েই টিভি দেখে, ধীরে ধীরে এই ছোট বাচ্চাটি নাচ-গান থেকে শুরু করে সব ধরনের অশ্লীলতা শিখতে থাকে, বড় পুতুল নিয়ে খেলা করে, ঘুমায়। ফুলের মতো এই বাচ্চার জীবন কী দিয়ে শুরু হচ্ছে একটুও কি তা ভেবে দেখা হয়েছে। এ সবই ভুল। আমানতের খেয়ানত।
শরীয়তের আদেশ হল, ভূমিষ্ট হওয়ামাত্র শিশুর ডান কানে আযান ও বাম কানে ইকামত দিবে। যেন তার জীবন শুরু হয় আল্লাহর বড়ত্বের বাণী ‘আল্লাহু আকবার’ দিয়ে এর পর মা-বাবার দায়িত্ব হল সন্তানের ভালো অর্থবোধক নাম রাখা। বাচ্চা কথা বলা শিখলে তাকে সর্বপ্রথম আল্লাহর নাম শেখানোর চেষ্টা করা উচিত। যিনি এই সন্তান দান করলেন এরপর তাকে বাকশক্তি দিলেন তার নাম সর্ব প্রথম শেখানোই কৃতজ্ঞ বান্দার পরিচয়।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘সন্তানকে প্রথম কথা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ শেখাও এবং মৃত্যুর সময় তাদেরকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর তালকীন কর।’ (শুআবুল ঈমান ৬/৩৯৭-৩৯৮, হাদীস ৮৬৪৯)
বাচ্চা বয়সেই অল্প অল্প করে আল্লাহর পরিচয় শেখানো, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম শেখানো, গল্পে গল্পে তাঁর পরিচয় ও আখলাক তুলে ধরা পিতামাতার কর্তব্য। এককথায় তার জীবনের প্রথম পাঠশালা থেকে সে যেন দ্বীনের শিক্ষা অর্জন করে তা আমাদের কাম্য হওয়া উচিত। ছোট ছোট আদব-কায়দা, যেমন ডান হাতে তিন শ্বাসে বসে পানি পান করতে শেখাবে। জুতা পরিধান করতে আগে ডান পা এবং খোলার সময় আগে বাম পা খোলা। বাথরুমে ঢোকার সময় আগে বাম পা, বের হওয়ার সময় ডান পা ইত্যাদি শেখার উত্তম সময় এই শৈশবটাই। ঘুমের দুআ, ঘুম থেকে ওঠার দুআ, খাওয়ার দুআ ইত্যাদি সহজ বিষয়গুলো এবং ছোট ছোট ব্যবহারিক সুন্নতে অভ্যস্ত করে গড়ে তোলার সময় এখনই। আর এটার দায়িত্ব মা-বাবার।
মূলপাতা
সকল সংখ্যা
বিভাগ
লেখকবৃন্দ
আপনার জিজ্ঞাসা
পরিচিতি
যোগাযোগ
বর্ষ: ০৫, সংখ্যা: ০১
সফর ১৪৩০ || ফেব্রুয়ারী ২০০৯
সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষা সংক্রান্ত ভুলভ্রান্তি
মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া
আজ যারা কচিকাচা আগামীতে তারাই হবে জাতির কর্ণধার। সন্তান মা-বাবার কাছে আল্লাহ তাআলার এক মহা আমানত। এই আমানতের যথাযথ হক আদায় করা মা-বাবা ও অভিভাবকের কর্তব্য। কিন্তু অনেক মা-বাবাই সন্তানের তালীম-তরবিয়তের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এর মূলে রয়েছে : এক. দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং সন্তান যে একটি মহা আমানত-এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব। দুই. বিজাতীয় রীতি-নীতি ও ফ্যাশন প্রীতি। তিন. বৈষয়িক উপার্জনকেই জীবনের সাফল্য হিসেবে মনে করা। এ কারণে সন্তানকে একজন ঈমানদার ও সাচ্চা মুসলমান হিসেবে গড়ে তোলার তাগিদ তারা বোধ করেন না। এ সকল মৌলিক চিন্তাগত ভ্রান্তিই সন্তানের তালীম-তারবিয়াতের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।
সন্তান আমানত
সন্তান মা-বাবার নিকট আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আমানত। তাদেরকে দ্বীন শিক্ষা দেওয়া, শরীয়তের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি শেখানো এবং একজন ঈমানদার মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা মা-বাবা ও অভিভাবকের কর্তব্য। আজ বৈষয়িক শিক্ষায় শিক্ষিত করা এবং চাকরি ও উপার্জনক্ষম করে গড়ে তোলাকেই শুধু দায়িত্ব মনে করা হয়। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, সন্তানকে হালাল ও বৈধ পন্থায় আয়-রোজগার শেখানোও পিতামাতার কর্তব্য। কিন্তু এটিই একমাত্র দায়িত্ব নয়; বরং তাদেরকে ইসলামী সভ্যতা (তাহযীব) শেখানো, দ্বীন ও শরীয়তের মৌলিক বিষয়াদি শেখানো এবং একজন দ্বীনদার-নামাযী ও প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাও মা-বাবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। হাদীস শরীফে এসেছে- ‘জেনে রেখ, তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ তার পরিবারবর্গের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তাদের ব্যাপারে তাকে জবাবদিহি করতে হবে।’ -সহীহ বুখারী ১/২২২ হাদীস ৮৯৩
সুসন্তান যেমন মা-বাবার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের বড় সম্পদ এবং সদকা জারিয়া তেমনি সন্তান যদি দ্বীন ও শরীয়তের অনুগত না থাকে, দুর্নীতি ও গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায় তাহলে সে উভয় জগতেই মা-বাবার জন্য বিপদ। দুনিয়াতে লাঞ্ছনা, বঞ্চনা ও পেরেশানির কারণ। আর কবরে থেকেও মা-বাবা তার গুনাহর ফল ভোগ করতে থাকবে। আখিরাতে এই আদরের দুলালই আল্লাহ তাআলার দরবারে মা-বাবার বিরুদ্ধে আপিল করবে যে, তারা আমাকে দ্বীন শেখায়নি। তাদের দায়িত্ব পালন করেনি। তাই এই আমানতের হক আদায়ের প্রতি খুবই যত্নবান হতে হবে।
বিজাতীয় রীতিনীতি ও ফ্যাশন প্রীতি
কুরআন-হাদীসের একটি মৌলিক শিক্ষা হল, আচার-ব্যবহার, সাজসজ্জা, কৃষ্টি-কালচার ইত্যাদিতে ইসলামী স্বাতন্ত্রবোধ থাকা। এসব ক্ষেত্রে বিজাতীয় অনুকরণকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এটা দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এ সম্পর্কে কুরআন-হাদীসে অসংখ্য হেদায়েত রয়েছে।
হাদীস শরীফের ‘কিতাবুল আদব’ অধ্যায়ে এবং অন্যান্য প্রসঙ্গে বিধর্মীদের অনুকরণ না করার এবং কৃষ্টি-কালচারে তাদের বিরোধীতা করার অনেক তাকীদ এসেছে। একটি হাদীসে এসেছে- ‘যে ব্যক্তি কোনো জাতি বা সম্পদায়ের সাদৃশ্য গ্রহণ করল সে তাদের অন্তর্ভু&ক্ত।’
সুতরাং শিক্ষা-দীক্ষা, ফ্যাশন ও রীতিনীতিতে বিজাতীয়দের অনুকরণ করা এবং সে অনুযায়ী সন্তানদের গড়ে তোলা বড় ধরনের ভুল। এতে ইসলাম ও ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন থেকে সে ধীরে ধীরে এমনিভাবে বের হয়ে যায় যার উপলব্ধিও থাকে না।
কুরআন মজীদ না শেখানো
একজন মুসলিম তার সন্তানকে আল্লাহর কালাম শেখাবে না এটা কি কল্পনা করাও সম্ভব? কিন্তু এদেশের অধিকাংশ মুসলমানের অবস্থাই এই। ভেবে দেখুন, লাখ লাখ টাকা খরচ করে সন্তানের জন্য বড় বড় ডিগ্রী নেওয়া হচ্ছে কিন্তু কুরআন পড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে না। আমার একটি অভিজ্ঞতা আপনাদের শোনাই। রমযান মাসের কথা। মাঝবয়সী একজন ভদ্রলোক মসজিদে বসে কুরআন শরীফ খুলে বুক ভাসিয়ে কাঁদছিলেন। নিজেকে কিছুতেই সংবরণ করতে পারছিলাম না। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, চাচা কী হয়েছে? এ কথা শুনে আরো জোরে কেঁদে উঠলেন। এরপর বললেন, বাবা! আমি তো এই পবিত্র কালাম পড়তে পারি না। আমার জীবন তো শেষ প্রায়। আমার কী হবে। আমার বাবা আমাকে ডাক্তার বানিয়েছেন, কিন্তু কখনও কুরআন পড়াননি।’ বলুন তো এ লোকটির পিতা ঐ সময় কবরে থেকে কী পাচ্ছিলেন? ভেবে দেখুন, দুনিয়াতেই অভিযোগ শুরু হয়ে গেছে। এরপর যারা আখেরাতের ভয়াবহ আযাবের মুখোমুখি হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাযত করুন। তাদের অভিযোগ আরো কত কঠিন হবে!! কার বিরুদ্ধে? যে বাবা সন্তান মোল্লা হয়ে যাবে ভেবে কুরআন শেখাননি তার বিরুদ্ধে। শুধু কি তাই? স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও আল্লাহ তাআলার দরবারে এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন। কুরআন মজীদে এসেছে- (তরজমা :) ‘রাসূল বলবেন, হে আমার রব, আমার কওম এই কুরআনকে পরিত্যাগ করেছে!’ (সূরা ফুরকান ৩০)
স্বয়ং কুরআনের অভিযোগ করার কথাও এসেছে। তাই আমাদের অত্যন্ত সচেতন হওয়া কর্তব্য। সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানত, এ ব্যাপারে ভেবে চিন্তে পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদেরকে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানান তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু তাদেরকে ঈমানদার বানানোও আপনার কর্তব্য। সন্তান কুরআন পড়তে ও বুঝতে পারে এতটুকু যোগ্যতা তার মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। তাই শুধু ডাক্তার নয়; বরং দ্বীনদার ডাক্তার ও দ্বীনদার ইঞ্জিনিয়ার বানান। আর যদি দ্বীনের খাদেম আলেম বানাতে পারেন তবে তো সোনায় সোহাগা।
দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর রা.এর ছেলে আব্দুল্লাহ, যখন সূরা বাকারা সমাপ্ত করেছিলেন তখন বাবা খুশিতে উট যবাই করে সমাজের লোকদেরকে দাওয়াত করেছিলেন। আজ আমরাও মিষ্টিমুখ করি কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা হয় সন্তান খৃষ্টান মিশনারীদের নামি দামি স্কুলে চান্স পেয়েছে এজন্য। সন্তান স্কলারশিপ পেয়ে ইসলামের জঘন্যতম শত্রু ইহুদীদের ইউনিভার্সিটিতে সম্পূর্ণ বৈরী পরিবেশে পড়ার সুযোগ পেয়েছে এজন্য।
তাই কলিজার টুকরা সন্তানের কচি সিনা বিধর্মীদের হাতে সোপর্দ না করে আসুন সাহাবায়ে কেরামের মতো আমরাও সন্তানকে আল্লাহ পাকের কালাম শেখাই। আসমান-জমিনের মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র, নূরানী ও সবচেয়ে বরকতময় কালাম কুরআন মজীদ। তাহলে এ থেকে আমার সন্তানকে বঞ্চিত করব কেন? এই কচি মনে যদি আল্লাহর পবিত্র কালাম স্থান পেয়ে যায় তাহলে পরবর্তী জীবনে কখনও যদি সে প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হলেও অন্তরের এই নূর তাকে সৎ পথে চলতে সাহায্য করবে। সে খড়কুটার মতো অন্যায়ের জোয়ারে ভেসে যাবে না ইনশাআল্লাহ।
দ্বীন না শেখানো
সন্তানকে কুরআন শেখায় না এমন মা-বাবার হার যদি শতকরা ৭০ হয়ে থাকে তবে দ্বীন শেখায় না এদের হার শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ। নামায কীভাবে পড়বে তাও শেখায় না। হালাল-হারাম, পাক-নাপাক, অযু-গোসল তো দূরের কথা। অথচ সন্তানকে দ্বীনের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি শেখানো পিতা-মাতার উপর ফরয। এটা না শেখানো সন্তানের উপর সবচেয়ে বড় জুলুম।
বাবা-মাকে এ ভুলের জন্য কিয়ামতের দিন চুলচেরা জবাব দিতে হবে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সতর্কবাণী : ‘পুরুষ তার পরিবারবর্গের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তাকে তাদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে।’ (সহীহ বুখারী ১/২২২, হাদীস ৮৯৩)
সন্তানকে ইসলাম বিদ্বেষী করে গড়ে তোলা
আধুনিকতার লেহাজ করে অনেক মা-বাবাই তাদের সন্তানদেরকে ইসলামের আহকাম ও ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনের ব্যাপারে সম্পূর্ণ বিদ্বেষী করে গড়ে তোলেন। টুপি-দাড়ি, আলিম-ওলামা, মাদরাসা-মসজিদ ইত্যাদি বিষয়ে একটা নেতিবাচক ধারণা। তাদের অন্তরে ঠাঁই পায় (নাউযুবিল্লাহ)। শৈশব থেকেই নাস্তিক প্রকৃতির শিক্ষক বাছাই করা হয়। উপরন্তু স্যাটেলাইট চ্যানেল, ইন্টারনেট এর অবাধ ব্যবহার তো আছেই। সাথে সাথে এ ধরনের লেখকদের বইপত্র পড়তে দেওয়া হয় এবং এই মানসিকতা সম্পন্ন লোকদের পরিবেশেই তাদের বিচরণকে বিচক্ষণতার সাথে সীমাবদ্ধ রাখা হয়। এভাবে শিশুর মন-মানসকে বিষাক্ত করে দেওয়া হয়। এটা মারাত্মক ভুল। এজন্য পিতামাতাকে আল্লাহর দরবারে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
শিশুর প্রথম পাঠশালা
শিশুর প্রথম পাঠশালা হচ্ছে মায়ের কোল। এখানে সে জীবনের অনেক কিছু শেখে। পরবর্তীতে এটাই তার অভ্যাসে পরিণত হয়। শরীয়তে এই পাঠশালার অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় এই যে, শিশুর এই প্রথম শিক্ষা শুরু হয় টিভি দিয়ে। মা-বাবা তাদেরকে সাথে নিয়েই টিভি দেখে, ধীরে ধীরে এই ছোট বাচ্চাটি নাচ-গান থেকে শুরু করে সব ধরনের অশ্লীলতা শিখতে থাকে, বড় পুতুল নিয়ে খেলা করে, ঘুমায়। ফুলের মতো এই বাচ্চার জীবন কী দিয়ে শুরু হচ্ছে একটুও কি তা ভেবে দেখা হয়েছে। এ সবই ভুল। আমানতের খেয়ানত।
শরীয়তের আদেশ হল, ভূমিষ্ট হওয়ামাত্র শিশুর ডান কানে আযান ও বাম কানে ইকামত দিবে। যেন তার জীবন শুরু হয় আল্লাহর বড়ত্বের বাণী ‘আল্লাহু আকবার’ দিয়ে এর পর মা-বাবার দায়িত্ব হল সন্তানের ভালো অর্থবোধক নাম রাখা। বাচ্চা কথা বলা শিখলে তাকে সর্বপ্রথম আল্লাহর নাম শেখানোর চেষ্টা করা উচিত। যিনি এই সন্তান দান করলেন এরপর তাকে বাকশক্তি দিলেন তার নাম সর্ব প্রথম শেখানোই কৃতজ্ঞ বান্দার পরিচয়।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘সন্তানকে প্রথম কথা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ শেখাও এবং মৃত্যুর সময় তাদেরকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর তালকীন কর।’ (শুআবুল ঈমান ৬/৩৯৭-৩৯৮, হাদীস ৮৬৪৯)
বাচ্চা বয়সেই অল্প অল্প করে আল্লাহর পরিচয় শেখানো, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম শেখানো, গল্পে গল্পে তাঁর পরিচয় ও আখলাক তুলে ধরা পিতামাতার কর্তব্য। এককথায় তার জীবনের প্রথম পাঠশালা থেকে সে যেন দ্বীনের শিক্ষা অর্জন করে তা আমাদের কাম্য হওয়া উচিত। ছোট ছোট আদব-কায়দা, যেমন ডান হাতে তিন শ্বাসে বসে পানি পান করতে শেখাবে। জুতা পরিধান করতে আগে ডান পা এবং খোলার সময় আগে বাম পা খোলা। বাথরুমে ঢোকার সময় আগে বাম পা, বের হওয়ার সময় ডান পা ইত্যাদি শেখার উত্তম সময় এই শৈশবটাই। ঘুমের দুআ, ঘুম থেকে ওঠার দুআ, খাওয়ার দুআ ইত্যাদি সহজ বিষয়গুলো এবং ছোট ছোট ব্যবহারিক সুন্নতে অভ্যস্ত করে গড়ে তোলার সময় এখনই। আর এটার দায়িত্ব মা-বাবার।
সন্তানের জন্য বিধর্মীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিধর্মী শিক্ষককে প্রাধান্য দেওয়া
ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র খৃষ্টান মিশনারীদের বহু স্কুল রয়েছে। তবে এসব স্কুলের অধিকাংশ ছাত্রই মুসলমান। শিক্ষকদের মধ্যে বিধর্মী এবং মুসলমান উভয় ধরনের রয়েছে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে শিক্ষা কারিকুলাম, ড্রেস ইত্যাদি নিয়ন্ত্রিত হয় মিশনারী কর্তৃক।
এগুলোতে পড়ার দ্বারা ছাত্রের একদিকে যেমন ধর্মের প্রতি বিরূপ মনোভাব নিয়ে বেড়ে উঠে অন্যদিকে সম্পূর্ণরূপে পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তাদের ভবিষ্যৎটা ঐভাবেই গড়ে উঠে।
আজকাল এদের অনুকরণে মুসলমানদের তত্ত্বাবধানেও কিছু কিছু স্কুল পরিচালিত হয়। সেখানে বাহ্যিক অশ্লীলতা আরো এক কাঠি বেশি। সন্তানের জন্য এমন স্কুল নির্বাচন করা বড় ধরনের ভুল।
একজন সাধারণ মুসলমানের এটুকু সচেতনতা ও আত্মমর্যাদা বোধ থাকা চাই যে, নিজের সন্তানকে কোনো বিধর্মীর হাতে তুলে দিবে না। লক্ষ করে দেখুন তো কোনো ইহুদী বা খৃষ্টান কি তার সন্তানকে কোনো মুসলিমের হাতে তুলে দেয়? তারা এ বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারে যে, ছাত্রের উপর তার শিক্ষকের অনেক ধরনের প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে পরিণত বয়সের আগে তো শিক্ষকের অনেক কিছুই ছাত্রের হৃদয়পটে অংকিত হয়ে যায়। তাই সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য দ্বীনী মাদরাসাই সবচেয়ে উপযোগী। কিন্তু কেউ যদি এতটুকু না পারেন তবে অন্তত ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন শিক্ষকমন্ডলী এবং ধর্মীয় ভাবধারার স্কুল নির্বাচন করা কর্তব্য। এক্ষেত্রে অভিভাবকের ভুল পদক্ষেপ সন্তানের জন্য বড় ধরনের সর্বনাশ ডেকে আনে। এ পর্যায়ে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি হাদীস উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক শিশু (ইসলামের) ফিতরতের উপর জন্মলাভ করে। কিন্তু পিতা-মাতা তাকে ইহুদী বানায়, খৃষ্টান বানায়, অগ্নিপূজক বানায়। (সহীহ বুখারী ১/১৮৫, হাদীস ১৩৮৫; সহীহ মুসলিম ২/৩৩৬, হাদীস ২৬৫৮)
উপার্জন কেন্দ্রিক শিক্ষা নির্বাচন
আজকাল শিক্ষাকে পেশা হিসেবে অবলম্বন করা হয়ে থাকে। যে শিক্ষায় বেশি টাকা আয় করা যাবে সেটাই চাই। তা হোক না কেন যতই অসার। আবার যে পড়া পড়ালে এমন চাকরি করা যায় যেখানে মূল বেতনের পাশাপাশি অবৈধ ইনকামের পথ খোলা রয়েছে,সেটাকে সাগ্রহে নির্বাচন করা হয়। অর্থাৎ অভিভাবকগণও সন্তানকে শিক্ষিত বানানোর উদ্দেশ্য থাকে বেশি বেশি আয়। ফলে সন্তান ধীরে ধীরে সেবার মানসিকতা ছেড়ে কমার্শিয়াল মানসিকতার হয়ে গড়ে উঠে।
আমার এক আত্মীয় বড় ইঞ্জিনিয়ার। সে অসৎ আয় করে না। এতে তার বাবা-মা তেমন সন্তুষ্ট নন। কেননা তার গ্রামের অন্যান্য ইঞ্জিনিয়াররা কত বড় বড় বিল্ডিং করল কিন্তু সে কিছুই করতে পারছে না। এই হল অভিভাবকদের শিক্ষা। এসবই ভুল।
শিক্ষাকে মানুষ হওয়ার জন্য, দেশ ও দশের সেবার মানসিকতা নিয়ে শিখতে হবে। তবেই তা হবে শিক্ষা। এই দৃষ্টি ভঙ্গি অর্জন করা গেলে নিজের ও জাতির উপকার হয় এমন বিদ্যা শেখার সুযোগ হবে। সাথে সাথে মানুষ গড়ার আসল শিক্ষা কুরআন ও হাদীস শেখারও সুযোগ বের হয়ে আসবে।
উচ্চ শিক্ষার জন্য অমুসলিম দেশে গমন
অনেক মা-বাবাই সন্তানকে উচ্চ শিক্ষার জন্য অমুসলিম দেশে পাঠিয়ে থাকেন। প্রশ্ন এই যে, এই সন্তান কি সেখান থেকে শুধু উচ্চ ডিগ্রীই নিয়ে আসবে? নাকি সঙ্গে করে ধর্মদ্রোহিতা ও নাস্তিকতাও নিয়ে আসবে, তা কি কখনও ভেবে দেখেছেন তার অভিভাবকগণ? মসজিদে ওই সন্তানের জন্য হুজুরের কাছে দুআ চাওয়া হয় কিন্তু কখনও কি হুজুরের কাছে এ সম্পর্কিত মাসআলা জেনেছেন যে, ওই সব দেশে উচ্চ ডিগ্রী কিংবা উপার্জনের উদ্দেশ্যে যাওয়ার হুকুম কী? মাসআলা হল, বৈরী পরিবেশে গিয়ে যে ব্যক্তি ইসলামী আদর্শের উপর অবিচল থাকতে পারবে না তার জন্য সেখানে যাওয়ার কোনো অনুমতি নেই। সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও হারাম। কেননা, এতে ইচ্ছা করেই নিজেকে গুনাহ ও কুফুরীর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়।
সন্তানের স্বাধীনতার নামে তাকে মুক্ত ছেড়ে দেওয়া
আজ সুশীল সমাজ সন্তানের ব্যাপক স্বাধীনতার প্রবক্তা। এই নীতি ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আমদানীকৃত। যখন সন্তানের আখলাক চরিত্র গড়ার সময় তখন তাকে স্বাধীন ছেড়ে দেওয়া হয়। সে ভালো-মন্দ পরিবেশে মিশে যখন যার সাথে ইচ্ছা ঘুরাফেরা করে। ইন্টারনেটে সব ধরনের প্রোগ্রাম দেখতে থাকে। ধীরে ধীরে সে নানা ধরনের মন্দ প্রবণতায় অভ্যস্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে এই সন্তানই মা-বাবার কষ্টের কারণ হয়ে দাড়াঁয়। সময়মতো শাসন না করার কারণে বড় হয়ে বাবা-মার অবাধ্য হয়ে যায়। তাই এই ধরনের স্বাধীনতা দুনিয়াতেও সন্তান এবং পরিবার কারো জন্য সুখের কারণ হয় না। এর ফলে সমাজে বিশৃংখলা ও অপরাধ বৃদ্ধি পায় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এক বৃহৎ অংশ ধ্বংসের মুখে নিপতিত হয়ে যায়।
আজ সমাজে বিভিন্ন ধরনের স্কুল রয়েছে। রয়েছে মাদক নিরাময় স্কুলও। এ জাতীয় স্কুলের সবকটিতে প্রচুর ছাত্র ভর্তি হচ্ছে। এরা ঐ সকল সন্তান, যাদেরকে মা-বাবা সময়মতো নিয়ন্ত্রণ করেননি। সন্তানকে মন্দ ও অসৎকাজ থেকে বাধা দেননি। ফলে সে ধীরে ধীরে অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। সুতরাং সন্তানকে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া একটি অসুস্থ চিন্তা। ভুল পদক্ষেপ। শরীয়ত বলে, সন্তান মা-বাবার কাছে আল্লাহর আমানত। তার আখলাক-চরিত্র গড়ার দায়িত্ব মা-বাবারই। সময় মতো তাকে শাসন করা, মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখা, সৎ ও দ্বীনী পরিবেশে রাখা তাদের নৈতিক দায়িত্ব।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ... সন্তানের বয়স সাত বছর হলে তাদের নামাযের আদেশ দাও, দশ বছর বয়সে নামাযের জন্য শাসন কর এবং এ বয়সে তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।’ (মুসনাদে আহমদ ২/২১৮, হাদীস ৬৭৫৬; সুনানে আবু দাউদ ১/৭১, হাদীস ৪৯৪)
সন্তানকে একেবারে স্বাধীন ছেড়ে দেওয়া যাবে না; বরং বুঝের বয়স হওয়া থেকেই তাকে পরিমিত শাসনের মধ্যে রাখার ব্যাপারে এ হাদীস সুস্পষ্ট দলীল। এছাড়া সাহাবা, তাবেঈন থেকে বহু বর্ণনা রয়েছে যে, মা-বাবার দায়িত্ব এবং কর্তব্য হল, সন্তানকে দ্বীন শেখানো, মন্দ কাজ ও মন্দ পরিবেশ থেকে দূরে রাখা। শুধু কি তাই? সন্তানের পরিণত বয়সে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করাও তাদের দায়িত্ব। যেন তারা কোনো পাপাচারে লিপ্ত না হয়ে যায়। অভিভাবকদের শীথিলতার কারণে সন্তান যদি কোনো গুনাহে জড়িয়ে পড়ে তবে এর জন্য দায়ী হবেন অভিভাবকগণ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যার সন্তান রয়েছে সে যেন তার সুন্দর নাম রাখে এবং তাকে উত্তম চরিত্র শেখায়। যখন সে বালেগ হবে তখন তার বিয়ে দেয়। বালেগ হওয়ার পরও যদি বিয়ে না দেয় আর সে কোনো গুনাহ করে ফেলে তবে তার এ গুনাহ তার পিতার উপর বর্তাবে।’ (শুআবুল ঈমান, বায়হাকী ৬/৪০১, হাদীস ৮৬৬৬)
সুতরাং বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাধীতার অজুহাতে সন্তানকে মুক্ত ছেড়ে দেওয়া তাকে ধ্বংস করারই নামান্তর। বিশেষ করে নিম্নোক্ত বিষয়ে উদারতা করা সন্তানের নিশ্চিত ধ্বংসের কারণ :
ক) অসৎ সংশ্রব অবলম্বনে বাধা প্রদান না করা। সহপাঠী হোক কিংবা প্রতিবেশী বা আত্মীয়ের মধ্যে দুঃশ্চরিত্র ছেলে-মেয়েদের সাথে মেলামেশা করার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া। যখন যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে মিশতে দেওয়া। এতে তাদের খারাপ চরিত্র অতি দ্রুত সন্তানের মধ্যে চলে আসে এবং সেও এক সময় তাদের মতো বা তাদের চেয়ে আরো খারাপ হয়ে যাবে।
খ) ডিশ এন্টিনা, ইন্টারনেট এর অশ্লীল প্রোগ্রাম, সিনেমা, টেলিভিশন, অশ্লীল ছবি, নাচ-গান ইত্যাদি দেখতে বাধা না দেওয়া। এক্ষেত্রে ছাড় দেওয়াও ধ্বংসাত্মক। এতে সন্তান পড়ালেখার পরিবেশ থেকে দূরে সরে যায় এবং তার স্বভাব-চরিত্রে অশ্লীলতা প্রবেশ করতে থাকে। ধীরে ধীরে সে বাবা-মার অবাধ্য হয়ে পড়ে এবং অশ্লীল কাজে জড়িয়ে পড়ে।
গ) পর্দার বিষয়ে ছাড় দেওয়াও ধ্বংসাত্মক। ঘরে-বাইরে সর্বত্র শরয়ী পর্দা রক্ষা করা ফরয। কিন্তু তথাকথিত মডার্ন ফ্যামিলী শরীয়তের এ হুকুমের প্রতি শীথিলতা করে থাকে। নিজেরা যেমনি পর্দা করে না তেমনি সন্তানকেও পর্দায় থাকার আদেশ দেয় না। এর কারণে সমাজের বিভিন্ন স্তরে গুনাহ ব্যাপক হচ্ছে। সন্তানের চরিত্র ধ্বংস হওয়ার এটি একটি বড় কারণ। তাই এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
ঘ) ছেলেদেরকে মাহরাম নয় এমন মেয়েদের সাথে মিশতে দেওয়া এবং মেয়েদেরকে ঘরের বাইরে একাকী যাওয়ার অনুমতি দেওয়া এবং তাদেরকে এ ব্যাপারে স্বাধীন ছেড়ে দেওয়াও ধ্বংসাত্মক।
আল্লাহ তাআলা সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
Click here to claim your Sponsored Listing.
Location
Category
Contact the school
Telephone
Website
Address
House#23, Road#15, Sector#14, Uttara
Dhaka
1230
1227/A/1, Khilgaon, Hajipara
Dhaka, DHAKA-1219
প্রতিযোগীতা মূলক অধ্যয়ন, দ্বীনী অনুশ?
Dhaka, 10010
Assalamu alikum Welcome to my page. Soft spooky is all about Islamic Videos and reels.Plz Follow us😘
1/G East Rampura (Boubajar Road) Near Better Life Hospital, Rampura
Dhaka, 1219
To provide an explanation of understanding and the meaning of Islamic laws related to human
76, Kakrail
Dhaka, 1000
Islamic Takdir Assalamualaikum Dear Muslim brothers and sisters our Islamic youtube Channel mainly work for Islam.
রোড নং ২, ব্লক ত, সেকশন ১২, পল্লবী, মিরপুর
Dhaka, 1216
ঢাকার অন্যতম প্রাচীন মহিলা মাদ্রাসা
Dhaka
Dhaka
This page is an Islamic religious education page. It will be the only means of Ramadan, Salat, Hajj, Jakat and the rules of Islam. Which will handle. M***i, Rakib Uddin. (Rumi).
440/1/C, Mofizur Rahman Road, North Ibrahimpur, Kafrul
Dhaka
ধর্মীয় এবং আধুনিক শিক্ষার সমন্বিত প্রয়াস।