Jhalakathi N S Kamil Madrasah

Jhalakathi N S Kamil Madrasah

Share

Jhalakathi N S Kamil Madrasah

১.প্রতিষ্ঠান পরিচিতি ঃ
ওলীয়ে বরহক, ইনসানে কামেল, বিশিষ্ট দার্শনিক, মুজাদ্দিদ, হাদীয়ে যামান হযরত মাওলানা মুহম্মদ
আযীযুর রহমান নেছারাবাদী কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ. ১৯৫৬ ইং সনে আজকের ঝালকাঠী এন এস
কামিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন ফোরকানিয়া মাদ্রাসা হিসেবে। ১৯৬১ ইং সনে দাখিল কার্যক্রম শুরু হয়ে
১৯৮৬ ইং সনে কামিল (হাদীস) পর্যায়ে উনড়বীত হয় অত্র প্রতিষ্ঠান।
১৯৯৪ ইং সনে বর্তমান অধ্যক্ষ জনাব মাওলানা মুহম্মদ খলীলুর

Operating as usual

25/12/2023
12/11/2023

আমাদের নূন্যতম লজ্জাটুকুও কেড়ে নিতে চায়! বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে একজন মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষিকা এর প্রতিক্রিয়া!

06/11/2023

ইসলামে মানবতা, মানবাধিকার ও আজকের বাস্তবতা

بسم الله الرحمن الرحيم. الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على سيد المرسلين وعلى آله وصحبه أجمعين, أما بعد!

ভূমিকাঃ
ইসলাম মানে শান্তি। তাই ইসলাম প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে অশান্ত, বিশৃঙ্খল ও ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ মরুময় আরবের জেহালত সমাজে সৌহার্দ্যময় পরিবেশ, স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ অবস্থা ফিরে আসে। ঐশী নির্দেশনার আলোকে পৃথিবী এক নতুন সভ্যতার স্পর্শ পায়। মানুষ মানুষকে মানবতা, পরমতসহিষুষ্ণতা ও ঔদার্যের দৃষ্টিকোণ থেকে চিনতে শেখে, পরস্পর পরস্পরকে সম্মান করতে শেখে এবং অজ্ঞতা-মূর্খতা ও পাষণ্ডতার শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে আসে। ইসলামের কল্যাণে বর্বর আরব সমাজ ওহির জ্ঞানে আলোকিত হয়, সব নিষ্ঠুরতা তিরোহিত হয় এবং মানবতা পূর্ণতা পায়। রাজা-প্রজার পার্থক্য, ধনী-নির্ধনের ভেদাভেদ আর সাদা-কালোর বৈষম্য দূরীভূত হয়। মানুষের কর্ম ও কৃতিত্বের মাধ্যমে তার মর্যাদা ও অবস্থান নিশ্চিত হয় এবং মানব সমাজের সব পঙ্কিলতা দূরীকরণে আদম সন্তানরা নিরন্তর প্রয়াস চালায়। কিছুসংখ্যক আল্লাহর বান্দা ত্যাগ-তিতিক্ষা, কষ্ট-যাতনা আর ইসলামের জীবনপদ্ধতি বাস্তবে রূপায়ণ করতে দিবস-যামিনী অক্লান্ত শ্রম দেন। তাদের বিরামহীম সাধনা আর অবর্ণনীয় পরিশ্রমে ইসলাম অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে দুনিয়ার অন্যতম বৃহৎ এক জীবনাদর্শে পরিণত হয়। পৃথিবীর বুকে নিগৃহীত, বঞ্চিত ও উপেক্ষিত জনমানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটে। কেননা ইসলাম তাদের সবার যৌক্তিক, মানবিক ও কাঙ্ক্ষিত চাহিদা পরিপূরণে এক স্বপ্নসারথির ভূমিকা পালন করে।

মানবতাঃ
মানবতা হচ্ছে ‘মানুষ হিসেবে মানুষের স্বভাবিক গুণাবলী, মনুষ্যসুলভ আচরণ তথা মানুষ হিসেবে অন্য মানুষের কল্যাণে যে আচরণ সমীচীন তা প্রদর্শন এবং মানবজাতির সদস্য হিসেবে যে আচরণ অশোভনীয় ও অসমীচীন তা বর্জনই হলো মানবতা বা মানবিকতা’। মানবতার বড়ই দুর্দিনে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ইসলামের প্রবর্তন হলো যার মাধ্যমে তিনি হলেন বিশ্বমানবতার পরম সুহৃদ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (ﷺ) যার শুভাগমনের মধ্য দিয়েই ধরণীতে মানবিকতার সব দিক পূর্ণতা লাভ করে। মহান আল্লাহ তাকে পৃথিবীর মানবমণ্ডলীর অনুসরণের জন্য সর্বোত্তম নমুনা তথা আদর্শের মূর্ত প্রতীক হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তাকে প্রস্টম্ফুটিত করেছেন উন্নততর ও মহত্তম চারিত্রিক মাধুর্যে; মানুষ ও মানবতার জন্য তার রেখে যাওয়া নীতি-আদর্শকে অবধারিত করে দিয়েছেন। তার সব আদেশকে ফরজ আর সব নিষেধকে হারাম ঘোষণা করেছেন। আর পরম স্রষ্টার পক্ষ থেকে এসবই করা হয়েছে একটি শান্তিময় মানব সমাজ গড়ে তোলার জন্য; যে সমাজে মানবতার সব গুণ ও বৈশিষ্ট্য বিকশিত হবে।

মানবতার কল্যাণে ইসলামের নির্দেশনাঃ
রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এরশাদ করেছেনঃ عَنْ عبد الله بن عمر رضى الله عنهما اَنَّ رسول الله صلى الله عليه وسلم قال المسلم اخوالمسلم لايظلمه ولا يسلمة من كان فى حاجة اخيه كان الله فى حاجته ومن فرّج عن مسلم كربةً فرَّج الله عنه بها كربةً من كربات يوم القيامة ومن ستر مسلما ستره الله يوم القيامة – (رواه البخارى)
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর (رضى الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এরশাদ করেছেন, এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার ভাইয়ের উপর জুলুম করবে না, তাকে বিপদে ফেলবে না, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজনে পাশে থাকবে, আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রয়োজনে পাশে থাকবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের একটি বিপদ দূর করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তার বিপদসমূহ দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ ত্র“টি গোপন রাখবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তার দোষত্র“টি গোপন রাখবে। [সহীহ বোখারী শরীফ, হাদীস নম্বর ২৪৪২]

মানব ও সমাজসেবায় ইসলামের প্রেরণাঃ
ইসলাম মানুষকে সর্বোচ্চ মানবিকতা, পরহিতৈষণা, সহমর্মিতা ও মহানুভবতার শিক্ষা দিয়েছে। এ উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাঁর নবীকে প্রেরণ দয়া ও সহমর্মিতার প্রতীক হিসেবে। অনাহারীর কষ্টের ভাগিদার হতে এবং জনমদুখী বান্দার দুঃখে সমব্যথী হতে আল্লাহ তা‘আলা রমযানের সিয়াম ফরয করেছেন। দুঃখীর অভাব মোচনে যাকাত ফরয ও সাদাকুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন। একই উদ্দেশে সালাত, সিয়াম ইত্যাদির ফিদইয়া ও লে‘আনের বিধান এবং কসম ইত্যাদির কাফফার বিধান প্রবর্তন করেছেন। দান-সদকা ও অন্যের জন্য খরচে উদ্বুদ্ধ করে অনেক আয়াত নাযিল হয়েছে। যেমন :আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿مَّن ذَا ٱلَّذِي يُقۡرِضُ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا فَيُضَٰعِفَهُۥ لَهُۥ وَلَهُۥٓ أَجۡرٞ كَرِيمٞ ١١﴾ [الحديد: ١١]
‘এমন কে আছে যে, আল্লাহকে উত্তম করয দেবে? তাহলে তিনি তার জন্য তা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেবেন এবং তার জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান।’ [ সূরা আল-হাদীদ, আয়াত : ১১]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿مَّن ذَا ٱلَّذِي يُقۡرِضُ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا فَيُضَٰعِفَهُۥ لَهُۥٓ أَضۡعَافٗا كَثِيرَةٗۚ وَٱللَّهُ يَقۡبِضُ وَيَبۡصُۜطُ وَإِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ ٢٤٥﴾ [البقرة: ٢٤٥]
‘কে আছে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে, ফলে তিনি তার জন্য বহু গুণে বাড়িয়ে দেবেন? আর আল্লাহ সংকীর্ণ করেন ও প্রসারিত করেন এবং তাঁরই নিকট তোমাদেরকে ফিরানো হবে।’ [ সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২৬১]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ وَٱسۡمَعُواْ وَأَطِيعُواْ وَأَنفِقُواْ خَيۡرٗا لِّأَنفُسِكُمۡۗ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفۡسِهِۦ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٦ إِن تُقۡرِضُواْ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا يُضَٰعِفۡهُ لَكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡۚ وَٱللَّهُ شَكُورٌ حَلِيمٌ ١٧﴾ [التغابن: ١٦، ١٧]

‘অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর, শ্রবণ কর, আনুগত্য কর এবং তোমাদের নিজদের কল্যাণে ব্যয় কর, আর যাদেরকে অন্তরের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়, তারাই মূলত সফলকাম। যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও, তিনি তা তোমাদের জন্য দ্বিগুন করে দিবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী, পরম ধৈর্যশীল।’ [সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত : ১৬-১৭]

এ ধরনের আরো অসংখ্য আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা মানবের সেবা ও সমাজের কল্যাণের নির্দেশ ও উৎসাহ দিয়েছেন। তেমনি মানবমুক্তি ও সমাজকল্যাণের মহান প্রতিভূ মুহাম্মদে আরাবী (ﷺ) জীবনভর এ শিক্ষা প্রচার করেছেন। মানবসেবা ও সমাজকল্যাণের চর্চা করেছেন আপন কর্মে যেমন, তেমনি নানা উপলক্ষ্যে নানাভাবে এর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন আপন বাণী বা উক্তিসমগ্রে। কিয়ামত অবধি আগত মানবতার শান্তি ও কল্যাণে তিনি অনাগত সকল ঈমানদারের সামনে এ আদর্শ রেখে গেছেন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)র আর্তমানব সেবার অনন্য উপমা খুঁজে পাওয়া যায় মা খাদিজা (رضى الله عنه)র প্রজ্ঞাপূর্ণ উক্তিতে। প্রথম ওহী দর্শনে ভীত-সন্ত্রস্ত স্বামীকে অভয় দিতে গিয়ে যা তিনি উচ্চারণ করেছিলেন। যেমনটি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দীকা (رضى الله عنه) সূত্রে ইমাম বুখারীর সহীহ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে আস্বস্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন,

« كَلَّا وَاللَّهِ مَا يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا، إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ ، وَتَحْمِلُ الكَلَّ، وَتَكْسِبُ المَعْدُومَ، وَتَقْرِي الضَّيْفَ، وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الحَقِّ».

(ভার্বার্থ) ‘কখনো নয়, আল্লাহর শপথ, আল্লাহ আপনাকে কখনো অপমানিত করবেন না। কারণ, আপনি আত্মীয়দের প্রতি দয়াশীল, পীড়িত মা ও আতুরদের ব্যয়ভার বহন করেন, নিঃস্বদের জন্য উপার্জন করেন, আপনি অতিথিপরায়ন এবং সত্যিকার বিপদাপদে সদা সাহায্যকারী।’ [বুখারী : ০৩; মুসলিম : ৪২২]

৬ষ্ঠ হিজরীর শেষের দিকে খায়বার বিজিত হয়। ৯ম হিজরীতে যখন আরব উপদ্বীপ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)র অনুগত হয়, তখন তিনি বিশাল রাজ্যের অধিপতি। চারদিক থেকে মদীনায় যত ধন-দৌলত প্রেরিত হয় সবই তিনি অকাতরে বিলিয়ে দেন অনাথ ও দুস্থদের মাঝে। নিজে কিছুই ভোগ করেন না তিনি। মা আয়েশা (رضى الله عنه) ভাষ্য মতে, তিনি এমনভাবে ইহলোক ত্যাগ করেছেন যে তাঁর পরিবার লাগাতার দু’দিন পেট পুরে যবের রুটি খেতে পারে নি।
প্রখ্যাত সাহাবী জাবির ইবন আবদুল্লাহ (رضى الله عنه) বলেন, রাসূলুল্লাল্লাহ (ﷺ) জীবনে কখনো কোনো প্রার্থীকে ‘না’ বলেন নি। তাঁর বদান্যতা, পরোপকার, মানবসেবা ও সমাজকল্যাণে অবদানের অসংখ্য দৃষ্টান্ত ইতিহাস ও হাদীস গ্রন্থসমূহে লিপিবদ্ধ হয়েছে। মানব সেবায় গুরুত্বারোপ এবং এতে উদ্বুদ্ধ করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অসংখ্য বাণী উচ্চারণ করেছেন, স্বল্প পরিসরে যা উল্লেখ সম্ভব নয়। সেদিকে না দিয়ে সংক্ষেপে কয়েকটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরা যাক।

আবূ হুরায়রা (رضى الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

«مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفَّسَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ يَسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ اللَّهُ عَلَيْهِ فِى الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ فِى الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَاللَّهُ فِى عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِى عَوْنِ أَخِيهِ».
‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কষ্টসমূহ থেকে কোনো কষ্ট দূর করবে কিয়ামতের কষ্টসমূহ থেকে আল্লাহ তার একটি কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবীকে দুনিয়াতে ছাড় দেবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে তাকে ছাড় দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ তা‘আলা বান্দার সাহায্যে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে যায়।’ [মুসলিম : ৭০২৮; আবূ দাঊদ : ৪৯৪৮; তিরমিযী : ১৪২৫]

অপর হাদীসে রয়েছে, প্রখ্যাত সাহাবী আবূ হুরায়রা (رضى الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

لاَ وَاللَّهِ لاَ يُؤْمِنُ ، لاَ وَاللَّهِ لاَ يُؤْمِنُ ، لاَ وَاللَّهِ لاَ يُؤْمِنُ قَالُوا : وَمَنْ ذَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ : جَارٌ لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ ، قِيلَ : وَمَا بَوَائِقُهُ ؟ قَالَ : شَرُّهُ.
‘না, আল্লাহর কসম সে ঈমান আনে নি’; ‘না, আল্লাহর কসম সে ঈমান আনে নি’; ‘না, আল্লাহর কসম সে ঈমান আনে নি’। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, তারা কারা হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, ‘সেই ব্যক্তি যার হঠকারিতা থেকে প্রতিবেশি নিরাপদ নয়।’ জিজ্ঞেস করা হলো, হঠকারিতা কী? তিনি বললেন, ‘তার অনিষ্ট বা জুলুম’। [মুসনাদ আহমদ : ৮৪১৩; মুসনাদ বাযযার : ২০২৬] বলাবাহুল্য আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদের অপচয় করা অথচ নিকটস্থ অসহায়ের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করাও এক ধরনের জুলুম।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দারিদ্রক্লিষ্ট বনী আদম এবং অসহায় নারীদের সাহায্যে উদ্বুদ্ধ করেছেন ব্যাপকভাবে। আবূ হুরায়রা (رضى الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

« السَّاعِى عَلَى الأَرْمَلَةِ وَالْمِسْكِينِ كَالْمُجَاهِدِ فِى سَبِيلِ اللَّهِ – وَأَحْسِبُهُ قَالَ – وَكَالْقَائِمِ لاَ يَفْتُرُ وَكَالصَّائِمِ لاَ يُفْطِرُ ».

বিধবা ও অসহায়কে সাহায্যকারী ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য।’ (বর্ণনাকারী বলেন,) আমার ধারণা তিনি আরও বলেন, ‘এবং সে ওই সালাত আদায়কারীর ন্যায় যার ক্লান্তি নেই এবং ওই সিয়াম পালনকারীর ন্যায় যার সিয়ামে বিরাম নেই।’ [বুখারী : ৬০০৭; মুসলিম : ৭৬৫৯]

স্ত্রীর প্রতি সদাচারে তাগিদ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এমন বাণীও উচ্চারণ করেছেন যা নিয়ে আমাদের মা-বোনেরা সত্যিই গর্ব করতে পারেন। যা লজ্জা দিতে পারে তথাকথিত নারী স্বাধীনতার ধ্বজাধারীদের। মা আয়েশা (رضى الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,

« خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لأَهْلِهِ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لأَهْلِى ».
‘তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম যে স্ত্রীর কাছে তোমাদের মধ্যে উত্তম। আর আমি আমার স্ত্রীর কাছে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।’ [তিরমিযী : ৩৮৯৫]

অন্য ভাইয়ের প্রয়োজনে এগিয়ে যাওয়া, অন্যের আহ্বানে সাড়া দেয়াকে তিনি অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। এটাকে তিনি ঐচ্ছিক হিসেবে নয়; একেবারে দায়িত্বের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। যেমন : আবূ হুরায়রা (رضى الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

« حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ سِتٌّ ». قِيلَ مَا هُنَّ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ « إِذَا لَقِيتَهُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ وَإِذَا دَعَاكَ فَأَجِبْهُ وَإِذَا اسْتَنْصَحَكَ فَانْصَحْ لَهُ وَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللَّهَ فَسَمِّتْهُ وَإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ وَإِذَا مَاتَ فَاتَّبِعْهُ ».
‘এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের ছয়টি হক রয়েছে। বলা হলো সেগুলো কী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, (১) তুমি যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তাকে সালাম দেবে। (২) সে যখন তোমাকে নিমন্ত্রণ করবে তা গ্রহণ করবে। (৩) সে যখন তোমার মঙ্গল কামনা করবে, তুমিও তার মঙ্গল কামনা করবে। (৪) যখন সে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলবে, তখন তুমি ইয়ারহামুকাল্লাহ (আল্লাহ তোমার প্রতি রহমত করুন) বলবে। (৫) যখন সে অসুস্থ হবে তাকে, দেখতে যাবে। (৬) এবং যখন সে মারা যাবে, তখন তার জানাযায় অংশগ্রহণ করবে।’ [মুসলিম : ৫৭৭৮; মুসনাদ আহমাদ : ৮৮৩২]

আরেক হাদীসে বলা হয়েছে, আবূ মূসা (رضى الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

« عُودُوا الْمَرِيضَ، وَأَطْعِمُوا الْجَائِعَ، وَفُكُّوا الْعَانِيَ ».
‘অসুস্থ লোকের সেবা করো, ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও এবং বন্দিকে মুক্ত করো।’ [বুখারী : ৫৬৪৯; মুসনাদ আবী ই‘আলা : ৭৩২৫]

মানবসেবা ও সমাজকল্যাণে ইসলামের অতি আগ্রহ এবং অনন্ত প্রেরণার স্বাক্ষর হিসেবে আর কিছু নয় কেবল নিম্নোক্ত হাদীসে কুদসীই যথেষ্ট হতে পারে। আবূ হুরায়রা (رضى الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

« إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَا ابْنَ آدَمَ مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدْنِى. قَالَ يَا رَبِّ كَيْفَ أَعُودُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ. قَالَ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ عَبْدِى فُلاَنًا مَرِضَ فَلَمْ تَعُدْهُ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ عُدْتَهُ لَوَجَدْتَنِى عِنْدَهُ يَا ابْنَ آدَمَ اسْتَطْعَمْتُكَ فَلَمْ تُطْعِمْنِى. قَالَ يَا رَبِّ وَكَيْفَ أُطْعِمُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ. قَالَ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّهُ اسْتَطْعَمَكَ عَبْدِى فُلاَنٌ فَلَمْ تُطْعِمْهُ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ أَطْعَمْتَهُ لَوَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِى يَا ابْنَ آدَمَ اسْتَسْقَيْتُكَ فَلَمْ تَسْقِنِى. قَالَ يَا رَبِّ كَيْفَ أَسْقِيكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ قَالَ اسْتَسْقَاكَ عَبْدِى فُلاَنٌ فَلَمْ تَسْقِهِ أَمَا إِنَّكَ لَوْ سَقَيْتَهُ وَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِى ».
‘কেয়ামত দিবসে নিশ্চয় আল্লাহ তাআ’লা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রূষা করো নি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক। আপনিতো বিশ্বপালনকর্তা কিভাবে আমি আপনার শুশ্রূষা করব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তাকে তুমি দেখতে যাও নি। তুমি কি জান না, যদি তুমি তার শুশ্রূষা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে।?’ ‘হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে আহার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাও নি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব, তুমি হলে বিশ্ব পালনকর্তা, তোমাকে আমি কীভাবে আহার করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জান না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি খাদ্য দাও নি। তুমি কি জান না যে, তুমি যদি তাকে আহার করাতে বে আজ তা প্রাপ্ত হতে।?’ ‘হে আদম সন্তান, তোমার কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাও নি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রভু, তুমি তো রাব্বুল আলামীন তোমাকে আমি কীভাবে পান করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল কিন্তু তাকে তুমি পান করাও নি। তাকে যদি পান করাতে তবে নিশ্চয় আজ তা প্রাপ্ত হতে।’ [মুসলিম : ৬৭২১; সহীহ ইবন হিব্বান : ৭৩৬]
এত সব আয়াত ও হাদীসকে সামনে রাখলে কোনো মুসলিমের পক্ষেই সমাজসেবা বিমুখ হওয়া সম্ভব নয়।

মানবাধিকারঃ
‘হে মানব! আমি তোমাদের এক পুরুষ এবং এক নারী হতে সৃষ্টি করেছি এবং বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে যেন তোমরা একে অন্যকে চিনতে পার’।(সূরা হুজুরাতের ১৩ নং আয়াত) একই পুরুষ-নারী থেকে যারা জন্ম লাভ করে তাদের ‘পূর্ণ ভাই-বোন’ (Full brothers-sisters) বলা হয়। সুতরাং পৃথিবীর সকল মানুষ একে অন্যের ভাই-বোন। এ কথাটিই প্রতিভাত হয়েছে। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘একজন অনারবের ওপর একজন আরবের, একজন আরবের ওপর অনারবের, কালো মানুষের ওপর লাল মানুষের, লাল মানুষের ওপর কালো মানুষের আল্লাহ ভীতি ব্যতীত কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই’।মানুষ হিসাবে পৃথিবীর সকল সম্প্রদায়ের সকল মানুষের স্বাধীনতা ও আইনী অধিকার সমান, এটা কেবল ইসলামেই রয়েছে। জাতিসংঘ ইতিপূর্বে এ বাক্যের সাথে পরিচিত ছিল না। এ সম্পর্কে রাসূল (ﷺ) বলেন, মুহাম্মাদের মেয়ে ফাতেমাও যদি চুরি করতো, তবে আমি তাঁর হাত কেটে দিতাম।অধিকার সংরক্ষণে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে ভেদাভেদের কোন অবকাশ নেই। আবুবকর (رضى الله عنه) খলীফার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম ভাষণে বলেছিলেন, জেনে রেখো! যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল, আমি যতক্ষণ তার অধিকার আদায় করে দিতে না পারব, ততক্ষণ সে আমার কাছে সবচেয়ে শক্তিশালী। আর যে ব্যক্তি সবচেয়ে শক্তিশালী, তার কাছ থেকে যতক্ষণ অধিকার আদায় করতে না পারব, ততক্ষণ সে আমার কাছে সবচেয়ে দুর্বল।অর্থাৎ এ ভাষণে পৃথিবীর সকল মযলূম ও দুর্বল মানুষের নায্য অধিকার আদায়ের দিকটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এখানে প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকারের সুস্পষ্ট বক্তব্যও ফুটে উঠেছে। এখানে যুলমবাজদের স্থান নেই। ধর্ম-বর্ণ মতের কোন পার্থক্য করা হয়নি এখানে। আইনের দৃষ্টিতে প্রত্যেক নাগরিক যে সমান অধিকার লাভ করবে, মহান খলীফা আবুবকরের এই উক্তি থেকে তা প্রতিভাত হয়েছে।
এ সম্পর্কে বিদায় হজ্জ ভাষণে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘তোমাদের সবাই আদমের সন্তান আর আদম মাটির তৈরী’। মানবীয় মূল্যায়ন ও সম্মানে মানুষ যে সমান- সে সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘সকল মানুষের জন্য নিজ নিজ কাজ অনুপাতে মর্যাদা রয়েছে’ (কাহাফ ১৯)। হাদীছ এসেছে, ‘মুসলমানদের রক্তের বদলা নিতে হবে’। মানুষের কর্মের ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে সমান সে সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, هُوَ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ ذَلُوْلاً فَامْشُوْا فِيْ مَنَاكِبِهَا وَكُلُوْا مِنْ رِّزْقِهِ وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ– ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য ভূমিকে সুগম করে দিয়েছেন। অতএব তোমরা তার দিগ-দিগন্তে বিচরণ কর এবং তাঁর প্রদত্ত জীবনোপকরণ হতে আহার্য গ্রহণ কর। পুনরুত্থান তো তাঁরই নিকট’ (মূলক ১৫)।

‘অতপব ছালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে’ (জুম‘আ ১০)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْراً يَرَهُ– وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرّاً يَرَهُ–‘ যে ব্যক্তি কণা পরিমাণও ভাল কাজ করবে সে তা দেখবে, আর যে কণা পরিমাণও মন্দ কাজ করবে, সে তাও দেখবে’ (যিলযাল ৭-৮)।

ফেরাঊন বলেছিল, ‘নিশ্চয়ই ফেরাঊন দেশে পরাক্রমশালী হয়েছিল এবং তথাকার অধিবাসীদেরকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে তাদের একটি শ্রেণীকে সে হীনবল করেছিল, তাদের পুত্রদেরকে সে হত্যা করত এবং নারীদেরকে সে জীবিত রাখত। নিশ্চয়ই সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী’ (ক্বাছাছ ৪)।

আবু হুরায়রা (رضى الله عنه) বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন মহামহিম আল্লাহ বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি রুগ্ন ছিলাম, তুমি আমার সেবা শুশ্রূষা করনি। বান্দা বলবেন, হে আমার প্রতিপালক! আমি কি করে আপনার সেবা-শুশ্রূষা করতে পারি? আপনি তো বিশ্বলোকের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা রোগাক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু তুমি তার সেবা করনি। তুমি কি জানতে না যে, তার সেবা করলে তুমি আমাকে তার কাছেই পেতে? মহান আল্লাহ বলবেন, আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম এবং তোমার নিকট খাবার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাওনি। আদম সন্তান বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি কি করে আপনাকে আহার করাতে পারি, অথচ আপনি হচ্ছেন গোটা সৃষ্টি লোকের রিযিক দাতা? মহান আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা খাবার চেয়েছিল? কিন্তু তুমি তাকে খাবার দাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তাকে আহার করালে তুমি ঐ খাবার আমার নিকট পেতে? হে আদম সন্তান! আমি তোমার নিকট পানি চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পান করাওনি। সে বলবে, হে প্রভু! আমি আপনাকে কিভাবে পান করাতে পারি, অথচ আপনি হচ্ছেন গোটা সৃষ্টিকুলের প্রতিপালক? মহান আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক পিপাসার্ত বান্দা তোমার নিকট পানি চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে পান করাওনি। তুমি যদি তাকে পান করাতে তবে সেখানে তুমি আমাকে পেতে’। অসহায়-দরিদ্র মানুষের অধিকারের কি অপূর্ব সমাধান ইসলাম দিয়েছে দেড় হাযার বছর আগেই।(মিশকাত হা/১৫২৮)

একবার ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (رضى الله عنه) দু’টি নতুন কাপড় পরে একটু দেরীতে মসজিদে এলেন। অতঃপর জুম‘আর খুৎবা দেওয়ার জন্য মিম্বরে বসলেন। সালমান ফারেসী (رضى الله عنه) জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের সবাইকে আপনি একটি করে কাপড় বণ্টন করেছেন। অথচ আপনার পরনে দু’টি কাপড় দেখছি? ওমর (رضى الله عنه) তার বড় ছেলে আবদুল্লাহর দিকে ইঙ্গিত করলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضى الله عنه) বললেন, ওটি আমার অংশের কাপড় যা আববাকে দিয়েছি পায়জামা করার জন্য’। ওমরের কাপড়ে সাধারণতঃ ১২/১৪টি করে তালি লাগানো থাকত। নতুন কাপড়টি ছিল রাষ্ট্রীয় বায়তুল মাল থেকে সবার জন্য বণ্টিত অংশ মাত্র’।
খুলাফায়ে রাশেদীন জাতির এই স্বাধীনতাকে কখনও খর্ব করতেন না। বরং আরও সাহস যোগাতেন। সবেমাত্র খেলাফতের দায়িত্ব পেয়েছেন, তখন আবুবকর (رضى الله عنه) তাঁর স্বাগত ভাষণে বলেছিলেন, যদি আমি সঠিক পথে চলি তাহলে আপনারা আমাকে সাহায্য করবেন, আর যদি বাঁকা পথে ধাবিত হই তাহ’লে আমাকে সোজা করে দিবেন।
এসব আলোচনা থেকে একথাই প্রতীয়মান হয় যে, জাতিসংঘ সনদের সার্বজনীন মানবাধিকার সনদের ২নং অনুচ্ছেদে যে মানুষের মধ্যে পার্থক্য ছাড়াই সকলের সমান মর্যাদা ও অধিকার প্রদান করা হয়েছে অর্থাৎ ‘আইনের দৃষ্টিতে সমতা’ নীতির কথা উল্লেখ রয়েছে তার বাস্তব প্রতিফলন প্রায় ১৫শ’ বছর পূর্বে আল্লাহপাক রাসূল (ﷺ)-এর মাধ্যমে সমাধান দিয়ে গেছেন। অতএব বলা যায়, জাতিসংঘের এই সনদ নয়; ইসলামই মানুষের সমতা নীতি ও জবাবদিহিতার সুমহান উদহারণ রেখে গেছে। বিশ্বের কোন রাষ্ট্রনায়ক ও সমাজসেবী ব্যক্তি বা সংগঠন এরকম দৃষ্টান্ত দিতে পারেনি।

‘সমতা’ আলোচনায় ‘নারী’ প্রসঙ্গটি চলে আসে। আধুনিক ইতিহাসে দেখা যায়, নারীদের অধিকারের ব্যাপারে ইসলামই সর্বপ্রথম বাস্তব ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জাহেলী যুগের কন্যা সন্তান হত্যা বন্ধ, সম্পত্তির উত্তরাধিকার, বিবাহ, সম্মান, প্রভৃতির ক্ষেত্রে এতে তাদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। ইসলামী উত্তরাধিকারী আইনে প্রথম শ্রেণীর উত্তরাধিকার ‘কুরআনী অংশীদারের’ ১২ জনের মধ্যে ৮ জন মহিলা (সূরা নিসা)। অথচ ইসলাম পূর্ব যুগে পৃথিবীর কোথাও তারা উত্তরাধিকার পেত না। স্ত্রীর প্রতি আচরণ বিষয়ে পুরুষের উদ্দেশ্যে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, أَسْكِنُوْهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنتُمْ مِّن وُجْدِكُمْ وَلاَ تُضَارُّوهُنَّ لِتُضَيِّقُوْا عَلَيْهِنَّ ‘তোমরা তোমাদের সামর্থ অনুযায়ী যেরূপ গৃহে বাস কর, তাদেরকেও বসবাসের জন্য সেরূপ গৃহ দাও। তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সংকটাপন্ন কর না’ (তালাক ৬)।

তাই তো সমতা বিধানে ইসলামী প্রচেষ্টায় মুগ্ধ হয়ে Dr. Ahmad Golwash তাঁর The Religion of Islam গ্রন্থে বলেন, Equallity of Right was the distinguishing feature of the Islamic Commonwealth. A Convert from a humbler can enjoyed the same rights and previleges as on who belonged to the noblest koraish.
উল্লিখিত বিষয়ে রাসূল (ﷺ) বিদায় হজ্জ ভাষণে বলেন, ‘তোমরা যা খাও ও পরিধান কর, দাসদেরও তা খেতে ও পরতে দাও’।অর্থাৎ আইনের দৃষ্টিতে মানুষ মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই একথাই বলা হয়েছে।

মানবতার দৃষ্টান্তঃ
আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (ﷺ)-এর নবুওয়ত প্রাপ্তির পর ইসলাম প্রচারের প্রারম্ভে একবার তিনি কোথাও যাচ্ছিলেন। রাস্তায় এক বৃদ্ধ মহিলাকে বড় বোঝা বহন করে নিয়ে যেতে দেখে মহানবী (ﷺ) তার সাহায্যার্থে বোঝাটি নিজের কাঁধে নিয়ে পথ চলতে চলতে জিজ্ঞেস করলেন, মা, তুমি এত বড় বোঝা নিয়ে কোথায় যাচ্ছো? বৃদ্ধা জানালেন, তার এলাকায় মুহাম্মদ নামে এক ব্যক্তি বেরিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে যার দেখা হয়, সে-ই পিতৃধর্ম হারিয়ে ফেলে। তাই বৃদ্ধ বয়সে পিতৃধর্ম রক্ষার উদ্দেশ্যে বৃদ্ধা এই এলাকা ছেড়ে দূরে চলে যাচ্ছেন। মহানবী (ﷺ) আর কিছু না বলে বৃদ্ধাকে তার গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিয়ে বিদায় চাইলে বৃদ্ধা মহানবী (ﷺ)-এর মানবতা ও মহানুভবতায় বিমুগ্ধ হয়ে তার নাম ও পরিচয় জানতে চান। মহানবী (ﷺ) মিথ্যা বলতে জানতেন না এবং কখনো মিথ্যা বলেননি। তিনি বললেন, আমার নাম মুহাম্মদ ইবনে আবদুলস্নাহ। বৃদ্ধা মহানবী (ﷺ)-এর মমতা ও মানবতা প্রেমে মুগ্ধ হন এবং বুঝতে পারেন এমন চরিত্র সত্য নবী ছাড়া কারো হতে পারে না। তিনি মহানবী (ﷺ)-এর সাক্ষাৎধন্য হয়ে মহাসত্য ইসলামের দীক্ষা গ্রহণ করেন।

আজকের বাস্তবতাঃ
ইসলামের সোনালি অর্জনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে আজ আমরা কী দেখছি? ৯১ শতাংশ মুসলমানের দেশে ইসলামের অনুপম জীবনাদর্শ আমাদের সমাজ জীবনে কতটুকু রহমত বা আশীর্বাদ নিয়ে আসতে পারছে? বরং শান্তির ধর্ম ইসলামের মোড়কে যেন আজ সমাজ থেকে শান্তি বিতাড়নের মহড়া চলছে। বাংলাদেশ মুসলিম অধ্যুষিত জনপদ হিসেবে এ ভূখণ্ডের ঐতিহাসিক, সুদীর্ঘ ও প্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে। আবহমানকাল থেকে এ দেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করে চলেছেন। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবার সহাবস্থানের অপরূপ চিত্র আমাদের সমাজ জীবনের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। সুফি-সাধক, পীর-ওলি ও গাউস-কুতুবদের পদভারে ধন্য হয়েছে এ ভূখণ্ড। জীবন সম্পর্কে তাঁদের নির্দেশনা, উপদেশ ও শিক্ষা এতদঞ্চলের মানুষের হৃদয় গভীরে প্রোথিত। সুফি-সাধক ও ইসলাম প্রচারকদের মূল শিক্ষাই ছিল উদারতা, মানবিকতা, মনুষ্যত্ববোধ, সহমর্মিতা, পরমতসহিষুষ্ণতা আর সার্বজনীন ভালোবাসা ও ত্যাগের মহিমা। তাঁদের ব্যক্তি-মাধুর্য, নৈতিক চরিত্র আর আচার-ব্যবহারে অজস্র বনি আদম মুগ্ধ হয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে সমবেত হয়। পাক-ভারতীয় উপমহাদেশে, বিশেষ করে বাংলা ভূখণ্ডে ইসলামের ব্যাপক প্রচার-প্রসার ও প্রভাবের পেছনে সুফিবাদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। এতদঞ্চলের জনমানুষের হৃদয়-গভীরে ইসলাম প্রোথিত হওয়ার ক্ষেত্রে সুফি-সাধকদের সীমাহীন ত্যাগ ও অবর্ণনীয় কষ্ট স্বীকার আর ব্যাপক কর্মকৌশল অবদান রেখেছে। কিন্তু আজকের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারে সুফি-সাধকদের সুদীর্ঘকালের চিরায়ত ঐতিহ্যের সেই ধারা যেন বিলুপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। শান্তির ধর্ম ইসলামের রক্ষক যারা হবেন, তারাই আজ ইসলামকে সাময়িক স্বার্থসিদ্ধির উপকরণ, পার্থিব লালসা অর্জনের হাতিয়ার ও জাগতিক ক্ষমতার অংশীদার হয়ে মোহ-মত্ততায় নিমজ্জমান থাকার উৎস হিসেবে ব্যবহার করছেন।

ইসলামের উদারতা, মহানুভবতা আর হৃদয়ের বিশালতা ভুলে আজ আমরা মানসিক দৈন্যদশার পরিচয় দিচ্ছি; সংকীর্ণ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছি। মূলত মুসলমানদের সংকীর্ণ মানসিকতাসম্পন্ন হওয়ার কোনো সুযোগই নেই; জাতিগত বা সুনির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীর গণ্ডিতে নিজেদের আবদ্ধ করারও কোনো অবকাশ নেই। কেননা, মহান আল্লাহতায়ালা হলেন ‘রাব্বুল আলামিন তথা সমগ্র বিশ্বপরিমণ্ডলের পালন কর্তা; তিনি কেবল ‘রাব্বুল মুসলেমিন’ তথা মুসলমানদের প্রতিপালক নন। একইভাবে তাঁর নাজিলকৃত আল কোরআন নামক পবিত্র গ্রন্থটিকেও ‘হুদাল্লিল আলামিন’ তথা সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়েতের আলোকবর্তিকা অথবা ‘হুদাল্লিন্‌ নাস’ তথা সমগ্র মানবের জন্যই পথপ্রদর্শক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাই পবিত্র কোরআন কখনও শুধু ‘হুদাল্লিল মুসলেমিন’ তথা মুসলমানদের জন্য হেদায়েত গ্রন্থ হিসেবে নাজিল হয়নি। অনুরূপভাবে মানবতার পরম সুহৃদ রাসুলে আকরাম (ﷺ) ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ তথা সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য করুণার মূর্ত প্রতীক হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। তাঁর ৬৩ বছরের বর্ণাঢ্য, বৈচিত্র্য ও কীর্তিময় জীবনের প্রতিটি কর্মে, বাণীতে ও পয়গামে এবং রেখে যাওয়া তাঁর জীবনাদর্শে মানুষ ও মানবতা, সমাজ ও সভ্যতার জন্য অতুলনীয় সব নিয়ামক শক্তি রয়েছে। আর সে জন্যই ইসলামকে আজ সাম্প্রদায়িক কূপমণ্ডূকতার আবর্তে ঘূর্ণায়মান রাখা চলবে না; এর বিশ্বজনীন ও সার্বজনীন উদার ও মানবিক রূপটিই মানবসমাজে প্রস্টম্ফুটিত করতে হবে।

জাগতিক নেতৃত্ব ও জ্ঞান-গরিমায় একসময় মুসলমানরা ছিল শীর্ষ পর্যায়ে; কিন্তু আজ নেতৃত্ব ও জ্ঞান-গরিমা তো দূরের কথা, মুসলমানরা নিজেরা নিজেদের পারস্পরিক মতপার্থক্যের কারণে একে অন্যকে মুসলমান তো নয়ই- অনেক সময় মানুষও মনে করতে পারে না।

পরিশেষঃ
ইসলামের মানবতার শিক্ষা হলো সংঘাত নয় সমঝোতা, সাম্প্রদায়িকতা নয় সহমর্মিতা, যুদ্ধ নয় শান্তি, পরনিন্দা নয় আত্মসমালোচনা, কুৎসা নয় আত্মশুদ্ধি, অহঙ্কার নয় বিনম্রতা, শত্রুতা নয় বন্ধুত্ব, পরশ্রীকাতরতা নয় ভ্রাতৃত্ব, জবরদস্তি নয় ন্যায় পরায়নতা, অমঙ্গল কামনা নয় সমবেদনা, ক্ষতিসাধন নয় কল্যাণ কামনা এবং হিংস্রতা ও পশুত্ব নয় সদাচরণ ও মানবতা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে মানবতাবোধে উদ্‌ভাসিত হয়ে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সুখ ও শান্তি লাভ করার শক্তি দান করুন।

وصلى الله على سيدنا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين. والحمد لله رب العالمين

তথ্যসুত্রঃ
০১ .আল কুরআন।
০২. সহীহুল বুখারী, কৃতঃ ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল বুখারী (رحمة الله عليه) ।
০৩. সহীহুল মুসলিম, কৃতঃ ইমাম মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ (رحمة الله عليه) ।
০৪. আল আদাবুল মুফরাদ, কৃতঃ ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল বুখারী (رحمة الله عليه) ।
০৫. মুসনাদে আহমাদ,কৃতঃ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله عليه) ।
০৬. সুনানে ইবনে মাযাহ, কৃতঃ ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইযাজিদ (رحمة الله عليه) ।
০৭. সুনানে আবু দাঊদ, কুতঃ ইমাম সুলায়মান ইবনুল আশআম (رحمة الله عليه) ।
০৮. সহীহ ইবন হিব্বান, কৃতঃ ইমাম আবু হাতিম মুহাম্মদ ইবনে ফয়সাল আল-তামিমি আল-দারিমি আল-বুস্তি (رحمة الله عليه) ।
০৯. মুসনাদ আবী ই‘আলা, কৃতঃ ইমাম আবু ইয়ালা আহমদ বিন আলী বিন মুতহান্না বিন ইয়ালা আত তামিমি আল মুসুলী (رحمة الله عليه) ।
১০. মিশকাতুল মাসাবিহ, কৃতঃ ইমাম আবু মুহাম্মদ হুসাইন ইবনে মাসাউদ ফারাবা বাগাবি(رحمة الله عليه) ।
১১. আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে মানবাধিকার, কৃতঃ মোঃ মাহবুব-উল হক জোয়ার্দ্দার, ( ঢাকা : বাংলা একাডেমী)।
১২. মানবাধিকার আইন সংবিধান ইসলাম, কৃতঃ ড. রেবা মন্ডল ও ড. শাহজাহান মন্ডল,এনজিও(ঢাকা : শামস পাবলিকেশন্স)।
১৩. বিধিবদ্ধ ইসলামী আইন, সংকলনে : গবেষণা পরিষদ (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)।
১৪. আন্তর্জাতিক আইন,কৃতঃ ডঃ আনসার আলী খান (ঢাকা: কামরুল বুক হাউস)।
১৫. Elements of Human Rights and legal Aids,By: Dr. A.B.M. Mofijul Islam Patwari and Md. Akhtaruzzaman, (Dhaka).
১৬. Dr. Borhan Uddin Khan, IDHRB, 10 December Dhaka 1998, P. 198.
১৭. মৌলিক মানবাধিকার, সালাহ উদ্দীন (ঢাকা : ই.ফা.বা.)।
১৮. আইয়ামে খিলাফতে রাশেদাহ

লেখকঃ ইসলামী গবেষক, লেখক ও বক্তা।
অনলাইন এক্টিভিষ্ট বাংলাদেশ।
[email protected]

14/02/2023

মিলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক আলোচনা-
________________________________________________
অনুরোধ: আজকের পোষ্ট বড় হলেও ঈমানের তাগিদে তা নিজের কাছে রেখে দিবেন।

★মিলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ সম্পর্কে পবিত্র মক্কাতুল মুয়াজ্জামা এবং পবিত্র মদীনাতুল মুনাওয়ারা শরীফাঈন এর ইমাম ও সম্মানিত মুফতীগনের ফতোয়া:

*১.পবিত্র মক্কা শরীফ এর হানাফী মাযহাব এর মুফতী , মাওলানা শায়খ জামাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতোয়া: ”মিলাদ শরীফ মাহফিল অনুষ্ঠান করা হচ্ছে সারা বছর ব্যাপী শান্তি নিরাপত্তায় থাকা এবং মকসুদ হাসীল হওয়ার মাধ্যম ! ”

*২.পবিত্র মক্কা শরীফের হানাফী মাযহাবের মুফতী শায়খ আব্দুর রহমান সিরাজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতোয়া: ”পূর্বসূরী শীর্ষ স্থানীয় ওলামায়ে কিরাম মিলাদ শরীফ এক অনুষ্ঠান পালনকে মুস্তহসান বা ভাল কাজ মনে করেন !”

*৩.মক্কা শরীফ এর মালেকী মাযহাবের মুফতী শায়খ রহমাতুল্লাহ সাহেব উনার ফতোয়া: ”এ অধম উপরোক্ত ফতোয়ার বিষয় সম্পর্কে অবহিত হয়েছি,এ প্রশ্নের উওরে হানাফী মাযহাবের মুফতী সাহেব যে উত্তর দিয়েছেন, তা সম্পূর্ণ বাস্তব সত্য বিষয় !”

*৪.পবিত্র মক্কা শরীফ এর শাফেঈ মাযহাবের মুফতী সাঈদ ইবনে মুহম্মদ আবসীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতোয়া: ”রহমতের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার জন্ম(মোবারক) ও প্রকাশ অপেক্ষা বড় শ্রেষ্ঠ নিয়ামত আর কি হতে পারে !”

*৫.পবিত্র মক্কা শরীফ এর হাম্বলী মাযহাবের মুফতী শায়খ খলফ ইবনে ইব্রাহিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন: ”ওলামায়ে কিরাম গনের ঐক্যমতে মীলাদ শরীফ অনুষ্ঠান করা জায়িয !”

*৬.মক্কা শরীফ এর হানাফী মাযহাবের মুফতী শাইখ আবদুল্লাহ ইবনে সিরাজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতোয়া: ”নবীজীর বিলাদত শরীফ উপলক্ষে মিলাদ শরীফ অনুষ্ঠান করা হয়,তখন ক্বিয়াম শরীফ করে উঁনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা বিশিষ্ট ও নামযাদা ইমামদের থেকে উত্তরাধিকার. সূত্রে প্রপ্ত !”

*৭.পবিত্র মক্কা শরীফ এর মালেকী মাযহাবের এর মুফতী আবু বকর হাজী বসাউনি রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর ফতোয়া: ”মিলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ এর ফতোয়ার ব্যপারে হানাফী মাযহাবের বর্তমান মুফতী সাহেবের সাথে এক মত,উনার ফতোয়া সঠিক ও নির্ভুল !”

*৮.পবিত্র মক্কা শরীফের হাম্বলী মাযহাবের মুফতী শাইখ মুহম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে হামীদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতোয়া: ”মিলাদ শরীফ এর অনুষ্ঠানে নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আলোচনা কালে ক্বিয়াম শরীফ করা হচ্ছে শিষ্টাচার ও অাদবের. দাবি ! ক্বিয়াম শরীফ করা কখনোই শরীয়তের নীতিমালার পরিপন্থি নয় !”

*৯.মক্কা শরীফ এর হাম্বলী মাযহাবের মুফতী শায়খ মুহম্মদ ইবনে ইয়াহিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতোয়া: ”হ্যাঁ,মিলাদ শরীফ এর অনুষ্ঠানে যখন নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম. উনার বিলাদত শরীফ এর আলোচনা কালে ক্বিয়াম শরীফ করা ওয়াজিব !”

*১০.পবিত্র মক্কা শরীফ এর মালেকী মাযহাবের মুফতী হুসাইন ইবনে ইব্রাহীম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতোয়া: ”মীলাদ শরীফ অনুষ্ঠানে নবীজী উনার জন্ম মুবারক আলোচনার সময় ক্বিয়াম শরীফ করা অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম গন মুস্তহাসান. মনে করেন !”

*১১.পবিত্র মক্কা শরীফ এর শাফেয়ী মাযহাবের ফতোয়া বোর্ডের সভাপতি মুফতী শায়খ মুহম্মদ উমর ইবনে আবু বকর রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতোয়া: ”নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিলাদত শরীফ এর.আলোচনা কালে ক্বিয়াম শরীফ করা মুস্তহাসান,ঐ সময় কাজটি করা উত্তম !’”

[দুররুল মুনাজ্জাম,৭ম অধ্যায়,২য় পরিচ্ছেদ; ২৩২-২৮৬ পৃষ্ঠা।ইশবাউল কালাম,হাক্বীকতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী]
মিলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ সম্পর্কে মক্কা শরীফ-মদিনা শরীফ-এর মুফতীগণের প্রাচীন ফতোয়ার কালেকশন
আল্লামা আব্দুর রহীম তুর্কমানী (রহঃ) ১২৮৮ হিজরী সনে মক্কা ও মদিনা এবং জেদ্দাহ ও হাদিদার উলামায়ে কেরামের দ্বারা মিলাদ ও কিয়াম সম্পর্কে একটি ফতোয়া লিখিয়ে হিন্দুস্তানে নিয়ে আসেন এবং নিজ গ্রন্থ ” রাওয়াতুন নাঈম ” -এর শেষাংশে ছেপে প্রকাশ করেন । [আনওয়ারে ছাতেয়া দেখুন]
প্রশ্নঃ আল্লাহ তায়ালা অসীম রহমত আপনার উপর বর্ষিত হোক । নিম্নে বর্নিত বিষয়ে আপনার অভিমত ও ফতোয়া কি ?

”মিলাদ শরীফ পাঠ করা–বিশেষ করে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জন্ম (মোবারক) বৃত্তান্ত পাঠকালে কিয়াম করে সম্মান প্রদর্শন করা,মিলাদের জন্য দিন তারিখ নিদিষ্ট করা,মিলাদ মজলিস কে সাজানো,আতর গোলাপ ও খুশবু ব্যাবহার করা। কুরআন শরীফ হতে সুরা ক্বেরাত পাঠ করা এবং মুসলমানদের জন্য খানাপিনা (তাবারুক) তৈরি করা – এই ভাবে অনুষ্ঠান করা জায়েয কিনা এবং অনুষ্ঠানকারীগন এতো সাওয়াবের অধিকারী হবেন কিনা ? বর্ণনা করে আল্লাহর পক্ষ হতে পুরস্কৃত হোন ।
[আব্দুর রহীম তুর্কমানী–হিন্দুস্তান,১২৮৮ হিজরি]মক্কা শরীফের ফতোয়াদাতাগনের জবাব ও ফতোয়া:

অনুবাদঃ ”জেনে নিন–উপরে বর্নিত নিয়মে (কিয়াম) মিলাদ শরীফের অনুষ্ঠান করা মোস্তাহসান ও মুস্তাহাব আল্লাহ ও সমস্ত মুসলমানের নিকট ইহা উত্তম।ইহার অস্বীকারকারীগন বিদআতপন্থী ও গোমরাহ্‌।

★হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্নিত হুজুর (দরুদ) -এঁর হাদিস আছে -” মুসলমান যে কাজকে পছন্দনীয় বলে বিবেচনা করেন -তা আল্লাহর নিকট ও পছন্দনীয় “। ( মুসলিম শরীফ )।

এখানে মুসলমান বলতে ঐ সমস্ত মুসলমানকে বুঝায়-যারা কামেল মুসলমান।যেমন পরিপূর্ন আমলকারী উলামা,বিশেষ করে আরবেরদেশ , মিশর,সিরিয়া ,তুরস্ক ও স্পেন-ইত্যাদি দেশের উলামাগন সলফে সালেহীনদের যুগ থেকে অদ্যবধি (১২৮৮ হিঃ)

★সকলেই মিলাদ কিয়ামকে মুস্তাহসান, উত্তম ও পছন্দনীয় বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।সর্বযুগের উলামাগনের স্বীকৃতির কারনে মিলাদও কিয়ামের বিষয় বরহক।
উহা গোমরাহী হতে পারে না।নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন।”আঁমার উম্মত গোমরাহ বিষয়ে একমত হতে পারে না ” (আল হাদিস)
সুতরাং যারা মিলাদ ও কিয়াম কে অস্বীকার করবে-শরীয়তের বিচারকের উপর তাদের যথাযথ শাস্তি প্রদান করা ওয়াজিব।
(ফতুয়া সমাপ্ত)

🌹মক্কা শরিফের ফতোয়াদাতা মুফতীগনের স্বাক্ষর ও সিলমোহর:

১. আল্লামা আব্দুর রহমান সিরাজ।
২. আল্লামা আহনদ দাহলান।
৩. আল্লামা হাসান।
৪. আল্লামা আব্দুর রহমান জামাল।
৫. আল্লামা হাসান তৈয়ব।
৬. আল্লামা সোলায়মান ঈছা।
৭. আল্লামা আহমদ দাগেস্তানী।
৮. আল্লামা আব্ডুল কাদের সামস।
৯. আল্লামা আব্দুর রহমান আফেন্দী।
১০. আল্লামা আব্দুল কাদের সানখিনী।
১১. আল্লামা মুহাম্মদ শারকী।
১২. আল্লামা আব্দুল কাদের খোকীর।
১৩. আল্লামা ইবরাহিম আলফিতান।
১৪. আল্লামা মুহাম্মদ জারুল্লাহ।
১৫. আল্লামা আব্দুল মুত্তালিব।
১৬. আললামা কামাল আহমেদ।
১৭. আল্লামা মুহাম্মাদ ছায়ীদ আল–আদাবি।
১৮. আল্লামা আলি জাওহাদ।
১৯. আল্লামা সৈয়দ আব্দুল্লাহ কোশাক।
২০. আল্লামা হোসাইন আরব।
২১. আল্লামা ইব্রাহিম নওমুছি।
২২. আল্লামা আহমদ আমিন।
২৩. আল্লামা শেখ ফারূক ।
২৪. আল্লামা আব্দুর রহমান আযমী।
২৫. আল্লামা আব্দুল্লাহ মাশশাত।
২৬. আল্লামা আব্দুল্লাহ কুম্মাশী।
২৭. আল্লামা মুহাম্মদ বা–বাসীল।
২৮. আল্লামা মুহাম্মদ সিয়ুনী।
২৯. আল্লামা মুহাম্মদ সালেহ জাওয়ারী।
৩০. আল্লামা আব্দুল্লাহ জাওয়ারী।
৩১. আল্লামা মুহাম্মাদ হাবীবুল্লাহ।
৩২. আল্লামা আহমদ আল মিনহিরাভী।
৩৩. আল্লামা সোলাইমান উকবা।
৩৪. আল্লামা সৈয়দ শাত্বী ওমর।
৩৫. আল্লামা আব্দুল হামিদ দাগেস্তানী।
৩৬. আল্লামা মুস্তফা আফীফী।
৩৭. আল্লামা মানসুর।
৩৮. আল্লামা মিনশাবী।
৩৯. আল্লামা মুহাম্মদ রাযী।
(১২৮৮ হিজরী)।

★ক্বওমী মৌলভীদের সকল কিতাবের লেখক মুরুব্বীগনের কিতাব ও অন্যান্য:
*১. ইমদাদুল মুশতাক ৩৮ পৃঃ
*২. মাওয়ায়িজে আশরাফিয়া
*৩. আশরাফুল জাওয়া
*৪.মাকতুবাতে মাদানী
*৫. মুরকুমাতে ইমদাদিয়াহ
*৬. হাশিয়ায়ে হায়দারী
*৭.তাছাউফ তত্ত ৩৯-৪৩ পৃঃ
*৮. এমদাদুল ফতুয়া,চতুর্থ খন্ড,৪২০ পৃ:
*৯. তরীকায়ে মিলাদ,৮ পৃষ্ঠা
*১০. মাকতুবাতে শাইখুল ইসলাম, ১ম খণ্ড, ৩৩৯ পৃঃ
*১১. মিলাদ ও ক্বিয়ামের ফতোয়া,৮৬ পৃঃ
*১২. ফায়ছালায়ে হাফতি মাসায়েল ৭ পৃঃ সহ
*১৩. বুখারী ১/১৭৮, ২/৫৯১ পৃঃ
*১৪. মুসলিম ২/৯৫, ১/৩১২ ৩১৩পৃঃ
*১৫. মিশকাত ৪০২, ৪০৩পৃঃ
*১৬. মিরকাত
*১৭. লুময়াত
*১৮. আশয়াতুল লুময়াত
*১৯. মুসতাদরেকে হাকিম
*২০. সুনানুদ দ্বারিমী
*২১. দ্বারি কুতনী
*২২. মিলাদে আহম্মদি ১/৪৭পৃঃ
*২৩. তাফসীরে রুহুল বয়ান
*২৪. মিসবাহুয যুজাজাহ আলা সুনানে ইবনে মাজাহ
*২৫. ফতহুল মুবিন লি ইমাম নববী
*২৬. জামিউল ফতওয়া
*২৭. মজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে আযীযিয়া
*২৮. ফতওয়ায়ে বরকতিয়া
*২৯. রুদ্দুল মুহতার
*৩০. হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা
*৩১. আহকামে শরীয়ত
*৩২. সুন্নীহ বেহেশতী জেহর
*৩৩. জায়াল হক্ব
*৩৪. কিতাবুত তানবীর
*৩৫. ফি মাওলুদিল বাশীর ওয়ান নাযীর
*৩৬. ছুবুলুল হুদা ফি মাওলুদিল মুস্তাফা
*৩৭. হুসনুল মাকসিদ
*৩৮.সীরতে শামী ১/৮৪৩,১/১৪৫ পৃ:
*৩৯. সীরতে নববী
*৪০. যুরকানী
*৪১. মা সাবাতা বিস্সুন্নাহ
*৪২. আদ দুররুল মুনাযযাম
*৪৩. ছাবিলুল হুদা ওয়ার রাশাদ
*৪৪. আল ইনতিবাহ্
*৪৫. মিয়াতে মাসায়িল
*৪৬. মিরআতুয যামান
*৪৭. আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ১/১১ পৃঃ
*৪৮. আল মাওলূদুল কবীর
*৪৯. ইশবাউল কালাম
*৫০. আশ শিফা
*৫১. আল মুলাখ খাছ
*৫২. কিতাবুস্ সীরাতিল মুহম্মাদিয়া
*৫৩. আল জাওহারুল মুনাজ্জাম *৫৪.আল ইনসানুল উয়ুন ১/১০০পৃঃ
*৫৫. ইক্বদুল জাওহার
*৫৬.আস্ সুলুকুল মুয়াজ্জাম
*৫৭. ক্বিয়ামুল মিল্লাহ
*৫৮. নুযহাতুল মাজালিস
*৫৯. হাবিউল ফাতওয়া ১/২৬২পৃঃ
*৬০. সিরাতে হালবিয়া ১/৮৪, ৯৯পৃঃ
*৬১. আলগীরী ১/৩৬,১৩৬ পৃঃ
*৬২. কবিরী ১/২৫৬পৃঃ
*৬৩. আশবাউন নাযায়ের ১/১৮০পৃঃ
*৬৪. কওমীদের কিতাব ইমদাদুল ফতুয়া ৪/২৭১ পৃঃ
*৬৫. মাদারীজুন নবুওয়াত ২/৬১ পৃঃ *৬৬. থানোবির তাবলীগ ১/৩৮ পৃঃ
*৬৭. শিফাউছ সুদুর ১/১০পৃঃ
*৬৮. আকাঈদে দেওবন্দ ১/১৯ পৃঃ
*৬৯. হুসাইন আহম্মদ মাদানী লিখিত মাকতুবাতে শাইখুল ইসলাম ১/২৩৯পৃঃ
*৭০. আবু দাউদ ৪০২ পৃঃ
*৭১. আইনী ৫/২৫৪ পৃঃ
*৭২. মাজমাউল ফাতুয়া ২/১৬১ পৃঃ
*৭৩. মাওয়াহেব ১/৪৪৫ পৃঃ
*৭৪. মাকতুবাতে মোজাদ্দিদ আলফেসানী ১/৩৫৩ পৃঃ ইত্যাদি সহ প্রায় ৩৫০ টি কিতাব রয়েছে)।
মিলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক আলোচনা-

★১৮. বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী (রহ:) স্বীয় “মাওলুদে কাবীর” কিতাবে উল্লেখ করেছেন:

فيقال نظير ذلك في القيام عند ذكر ولادته صلي الله عليه وسلم. وأيضا قد اجتمعت الأمة المحمدية عن أهل السنة والجماعة علي استحسان القيام المذكور وقد قال صلي الله عليه وسلم لا تجتمعوا أمتي علي الضلالة

‘নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর মিলাদ পাঠকালে কিয়াম করা মুস্তাহাব।তিনি আরও বলেন, উল্লেখিত কিয়াম মুস্তাহসান হওয়ার ব্যাপারে উম্মতে মুহাম্মদী তথা আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআহ’র ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।আর হুযুর পাক ﷺ ইরশাদ করেন,“আঁমার উম্মতগণ কোন ভ্রষ্টতার উপর ঐক্যমত হবে না।”
[আল-কাউকাবুল আযহার ওয়াদ্ দুআরুল মুয়াজ্জম: ১৪৩]

★১৯. আনুষ্ঠানিক মিলাদ অনুষ্ঠানে কিয়ামে তাযিমীর ব্যাপারে উলামাগণের ঐক্যমত রয়েছে। যেমন: তাফসীরে রুহুল বয়ানের ৯ম খন্ডের ৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে:

وقد اجتمع عند الإمام تقي الدين السبكي رحمه اللـه جمع كثير من علماء عصره فأنشد منشد قول الصرصري رحمه اللـه في مدحه عليه السلام

قليلٌ لمدحِ المصطفى الخطُّ بالذهَبْ … على وَرِقٍ مِن خَطِ أحسنِ مَن كتبْ
وأن تَنْهضَ الأشرافُ عندَ سَماعِهِ … قيامًا صفوفًا أو جُثِيًّا على الرُكبْ

فعند ذلك قام الإمام السبكي وجميع من بالمجلس فحصل أنس عظيم بذلك المجلس ويكفي ذلك في الاقتداء

‘যুগশ্রেষ্ঠ মুজতাহিদ ও ইমাম তকীউদ্দীন সুবকী মিশরী এর এক সমাবেশে যুগের বিখ্যাত অনেক উলামায়ে কিয়ামের উপস্থিতি ছিল। তখন তিনি হুযুর পাকের প্রশংসা সম্বলিত ইমাম ছরছরির রচিত দু’লাইন ক্বাছিদা পাঠ করেন।

**কাছিদার অর্থ হল- “সুন্দরতম কিতাবের পাতায় স্বর্ণাক্ষরেও যদি নবী মুস্তফার নাম অঙ্কন করা হয়, তবুও তার বিশাল মর্যাদার তুলনায় অতি তুচ্ছ। অনুরূপভাবে শুধু তাঁর নাম শুনেও যদি উচ্চ পর্যায়ের লোকেরা সারিবদ্ধ কিয়াম (দাঁড়িয়ে যায়) করে অথবা আরোহী অবস্থায় নতজানু হয়ে যায় তবু তাঁর মহান মর্যাদার তুলনায় অতি সামান্যই হবে।”

**ইমাম ছরছরির এ পংক্তি দু’টো পাঠ করে সাথে সাথে ইমাম সুবকীসহ মসজলিসের সকলে কিয়াম করেন এবং মজলিসে নবী প্রেমের ঢেউ খেলে গেলো, সকলেই আবেগাপ্লুত হলেন। কিয়ামের বৈধতার জন্য ইমাম সুবকী ও উপস্থিত উলামায়ে কিরামের অনুসরণই যথেষ্ট।’

★২০. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী(রহ:) স্বীয় কিতাব ‘আখবারুল আখইয়ার’-এর শেষে একটি মুনাজাত রচনা করেন। এতে লিখেন:

اے اللہ !ميرا كوئی عمل ايسا نہین ہے جسے آپکے دربار مین پیش کرنے کے لائق سمجھو ميرے تمام اعمال مین فساد نیت موجود رہتی ہے البتہ مجھ حقير فقير كا ايك عمل صرف تيرے ذات پاک کی عنايت كيوجہ سے بہت شاندار ہے اور وہ یہ ہےکہ مجلس ميلاد كے موقع پر مین کھرے ہو کر سلام پرتا ہو اور نہایت ہی عاجزی وانكساری محبت وخلوص كے ساتھ تیرے حبيب پاک صلی اللہ عليہ وسلم پر درود وسلام بھیجتا رہاہون

“হে আল্লাহ! আমার এমন কোন আমল নেই,যা আঁপনার আলীশান দরবারের উপস্থাপন যোগ্য। আমার জীবনের সকল নেক আমলই নিয়্যাতের ঘাটতিতে আবদ্ধ। তবে এটা দৃঢ়তর সাথে বলছি যে, আমি ফকীরের একটি আমল শুধুমাত্র আঁপনার পবিত্র সত্ত্বার দয়ায় বড়ই শানদার (উপস্থাপনযোগ্য)।

আর তা এই যে, মিলাদের মজলিসের সময়ে আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করি অতীব বিনয়-নম্রতা ও আন্তরিক মুহাব্বতের সাথে আঁপনার হাবীব পাকের উপর দরূদ ও সালামের হাদীয়া পেশ করে থাকি।”

★২১. আল্লামা ইবনে আবেদীন (রহঃ) “ফাতোয়ায়ে শামী”তে লিখেন-নিশ্চয়ই ক্বিয়াম সিজদায় যাওয়ার জন্য অবনত হওয়ার একমাত্র অসীলা।সিজদা হলো মূল।কেননা কিয়াম ব্যতিত সিজদা ইবাদত হিসেবে গন্য নয়।যেমনঃ সিজদায়ে তিলাওয়াত উহা আদায়ের জন্য কিয়াম প্রয়োজন হয় না।শুধুমাত্র কিয়াম ইবাদতের পর্যায়ভূক্ত করা হয় নি।এমন কি আল্লাহ ছাড়া কাউকে সিজদা করলে কাফির বলা যাবে, কিন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য কিয়াম করলে কাফির বলা যাবে না।
[ফতোয়ায়ে শামী,২য় খন্ড,১৩২ পৃঃ]

★২২. মাওলানা আব্দুল হাই লাখনবী সাহেব তদীয় ‘মজমুয়ায়ে ফাতওয়া’ নামক কিতাবের ২য় জিলদের হজর ও এবাহাত অধ্যায়ে লিখেছেন-

وملخص مقام اينكه ذكر مولد فى نفسه امريست مندب০০০
وكسى ندبش رامنكر نشده مكر يك طائفه قليله كه رب النوع ان طائفه تاج الدين فاكهانى مالكىست و اور طاقتى نيست كه بمقابله بعلمائى مستنبطين كه فتوى به ندب ذكر مولد دارند كند يس قولش درين باب معتبر نيست০

অর্থাৎ “প্রচলিত মিলাদ অনুষ্ঠান মূলত মুস্তাহাব। মালেকী মাজহাব অবলম্বী মাওলানা তাজউদ্দিন ফাকিহানী ও তাঁর অনুগত অতি নগণ্য একটি দল ব্যতীত কোন মাজহাবের আর কোন আলেম উহা অস্বীকার করেন নাই। যে সকল উলামায়ে মুস্তাম্বিতিন বা কোরআন-সুন্নাহর গবেষক উলামায়ে কেরামগণ মিলাদ শরীফকে মুস্তাহাব বলে ফতোয়া দিয়েছেন,তিনি (ফাকিহানী) তাদের মোকাবিলা করতে পর্যদস্ত হয়ে গিয়েছেন।সুতরাং প্রচলিত মিলাদ শরীফ সম্পর্কে তার মতামতের কোনই মূল্য নেই।”

**লাখনবী সাহেব উক্ত অধ্যায়ে মিলাদ শরীফকে মুস্তাহাব প্রমাণ করতে গিয়ে হাফিজুল হাদিস আল্লামা ইবনে হজর মক্কী হায়তামী (রাঃ) এর লিখিত আননি’মাতুল কুবরা আলাল আলামে নামক কিতাবকেও দলিল স্বরূপ উল্লেখ করেছেন।

যে কিতাবে মিলাদ শরীফ সম্পর্কে বহু হাদিস রয়েছে।তিনি (লাখনবী সাহেব) উক্ত কিতাবের ৩য় জিলদে লিখেছেন মক্কা ও মদীনা শরীফের উলামায়ে কেরামগণ মিলাদ শরীফের মাহফিলে কিয়াম করতেন। অতঃপর তিনি ইমাম জাফর বিন হোসাইন বরজঞ্জী (রাঃ) এর লিখিত ‘মাওলিদে বরজঞ্জী’ নামক কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন- বিচক্ষণ উলামায়ে কেরামগণ মিলাদ মাহফিলে কিয়াম করা মুস্তাহসান বলেছেন।

★২৩. আমরা যেভাবে মজলিস করে মিলাদ মাহফিল করে থাকি তা খোদ আল্লাহ পাক-এঁর হাবীব হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত সাহাবায়ে কিরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের যামানাতেই ছিল।এ প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা তাঁর নিজ গৃহে সমবেত সাহাবীগণকে আল্লাহ পাক-এঁর হাবীব হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এঁর বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন।

**এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশী প্রকাশ করেছিলেন এবং আল্লাহ পাক-এঁর প্রশংসা তথা তাসবীহ তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-এঁর হাবীব হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এঁর উপর (সালাত- সালাম) দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন।এমন সময় হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হলেন।(তিঁনি যখন উপস্থিত হলেন, সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে অর্থাৎ ক্বিয়াম শরীফ করে ছলাত ও সালাম পেশ করতঃ আসনে বসালেন)। তিঁনি লোকজনের মিলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তোমাদের জন্য আঁমার শাফায়াত ওয়াজিব।”
[সুবুলুল হুদা ফি মাওলিদে মোস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী, পৃষ্ঠা ৩৫৫]

👏আরো ইরশাদ হয়েছে,হযরত আবূ দারদা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এঁর সাথে হযরত আবূ আমের আনছারী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এঁর গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি তাঁর সন্তানাদি এবং আত্মীয়- স্বজন, জ্ঞাতী-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে রসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এঁর বিলাদত শরীফের ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস অর্থাৎ এই দিবসে রসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমীনে তাশরীফ এনেছেন।(তিঁনি যখন উপস্থি হলেন সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে কিয়াম শরীফ করে ছলাত ও সালাম পেশ করতঃ আসনে বসালেন।)

তিঁনি লোকজনের মিলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাঁর রহমতের দরজা তোমাদের জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফিরিস্তাগণ তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ কিয়ামত পর্যন্ত তোমাদের মত এরূপ করবেন। তোমার মত সেও নাজাত ও ফযীলত লাভ করবে।”

[কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযির, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মোস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]

♦মিলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক আলোচনা- ৮ম পর্ব

★২৪. মিশকাত শরীফের ৪১০ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে:

ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻗﺎﻟﺖ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻀﻊ ﻟﺤﺴﺎﻥ ﻣﻨﺒﺮﺍ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻳﻘﻮﻡ
ﻋﻠﻴﻪ ﻗﺎﺋﻤﺎ ﻳﻔﺎﺧﺮ ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻭ ﻳﻨﺎﻓﺢ ﻭﻳﻘﻮﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﺆﻳﺪ ﺣﺴﺎﻥ ﺑﺮﻭﺡ ﺍﻟﻘﺪﺱ ﻣﺎﻧﺎﻓﺢ ﺍﻭ ﻓﺎﺧﺮ ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ ০( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ )

অর্থাৎ ‘হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত হাসসান (রাঃ) এর জন্য মসজিদে নববীতে একটি মিম্বর স্থাপন করলেন। তিনি উহার উপর দাঁড়িয়ে আল্লাহর হাবিবের পদমর্যাদা (গুণাবলী ও গৌরবময় জীবনী) সজোরে বয়ান করতেন।অথবা (মুশরিকদের) প্রতিবাদ করতেন, এবং আল্লাহর হাবিব (তা শ্রবণ করে সন্তুষ্টচিত্তে) বলতেন, নিশ্চয়ই হাসসান যতক্ষণ (মুশরিকদের) প্রতিবাদ করতে থাকেন।কিংবা হুজুরের গুণরাজী বয়ান করতে থাকেন ততক্ষণ আল্লাহ তা’য়ালা হযরত জিব্রাঈল (আঃ) দ্বারা তাঁর সহায়তা করতে থাকেন।’
(বুখারী শরীফ)

উপরোক্ত হাদিস শরীফ দ্বারা সু-পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, আল্লাহর হাবিবের পদ-মর্যাদাসূচক শ্লোক বা কবিতা পাঠকালে দণ্ডায়মান হওয়া (কিয়াম করা) সুন্নাতে সাহাবা।

★২৫. সহীহ মুসলিম শরীফের ২য় জিলদের ৩০১ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে, হযরত হাসসান (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশে তাঁরই শানে আরবি কবিতা আবৃত্তি করেছেন। হযরত হাসসান বিন সাবিত (রাঃ) মিম্বরে দাঁড়িয়ে যে সমস্ত কবিতা আবৃত্তি করতেন সে কবিতাগুলোর মধ্য থেকে কয়েকটি শ্লোক বা কবিতা নিন্মে পেশ করা হল:
ﺍﻧﻚ ﻭﻟﺪﺕ ﻣﺒﺮﺍ ﻣﻦ ﻛﻞ ﻋﻴﺐ
ﻛﺎﻧﻚ ﺧﻠﻘﺖ ﻛﻤﺎ ﺗﺸﺎﺀ
ﻭﺿﻢ ﺍﻻ ﻟﻪ ﺍﺳﻢ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺑﺎﺳﻤﻪ
ﺍﺫﺍ ﻗﺎﻝ ﻓﻰ ﺍﻟﺨﻤﺲ ﺍﻟﻤﺆﺫﻥ ﺍﺷﻬﺪ
ﻭﺷﻖ ﻟﻪ ﻣﻦ ﺍﺳﻤﻪ ﻟﻴﺠﻠﻪ
ﻓﺬﻭ ﺍﻟﻌﺮﺵ ﻣﺤﻤﻮﺩ ﻭﻫﺬﺍ ﻣﺤﻤﺪ
‏(ﺩﻳﻮﺍﻥ ﺣﺴﺎﻥ ০ ﺣﻠﺒﻰ ﺷﺮﻳﻒ )

অর্থাৎ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আঁপনি সর্বপ্রকার দোষত্রুটি হতে মুক্ত হয়েই আগমন করেছেন।আঁপনার এই সুরত মনে হয় যেন আঁপনার ইচ্ছা অনুযায়ীই সৃষ্টি করা হয়েছে।আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীর নাম নিজের নামের সাথে সংযুক্ত করেছেন।এর প্রমাণ হল, যখন মুয়াজ্জিন পাঞ্জেগানা নামাজের জন্য আশহাদু আন্না মুহাম্মাাদার রাসূলুল্লাহ বলে আজান দেয়।আল্লাহ তা’য়ালা আঁপন নামের অংশ দিয়ে নবীজীর নাম রেখেছেন,তাঁকে অধিক মর্যাদাশীল করার লক্ষ্যে।এর প্রমাণ হচ্ছে আরশের অধিপতির নাম হলো মাহমুদ এবং তাঁর নাম হল মুহাম্মাদ।

[দিওয়ানে হাসসান দ্র: এবং শেষের দুটি শ্লোক সিরতে হলবী নামক কিতাবের ১ম খণ্ড ৭৯ পৃষ্ঠায় আছে]
উক্ত কবিতার আলোকে বুঝা গেল যে, জলিলুল কদর সাহাবী হযরত হাসসান (রাঃ) কিয়াম অবস্থায় নবীজীর মিলাদ শরীফের আলোচনা করেছেন। সুতরাং মিলাদ শরীফের কিয়াম সুন্নাতে সাহাবা বা সাহাবায়ে কেরামদের আমল প্রমাণিত হল।

★২৬. প্রকৃতপক্ষে:সামগ্রীক বিষয়াদি বিবেচনা করে ইসলামি শরীয়াতে স্থান, কাল ও পাত্রভেদে কিয়াম বিভিন্ন প্রকার হতে পারে।যেমন:
ফরজ কিয়াম
যেমন: ইবাদতের উদ্দেশ্যে আল্লাহ পাকের সম্মানে বিনয় সহকারে আবশ্যিকভাবে দাঁড়ানোকে ফরয কিয়াম বলা হয়। যেমন: দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযে প্রত্যেক সামর্থবান ব্যক্তিকে আল্লাহর সম্মানে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে হয়। নামাযে এ কিয়াম ফরয।রোগ ভোগের ওযর ব্যতিত এ কিয়াম তরক করা চলে না।

যেমন: আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন:
وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ

“ওয়াক্বূ-মূ লিল্লাহি কা-নিতীন” অর্থাৎ আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশের জন্য দন্ডায়মান হও।
[সূরা বাক্বারা,আয়াত নং ২৩৮]

কিয়াম হারাম
যেমন: আরব অনারব ক্ষমতাশীল রাজা বাদশাগণের সম্মানার্থে মূর্তির মত ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে কিয়াম করা।

কিয়াম সুন্নাত
যেমন: যমযমের পানি পান করার সময়,সিজদায়ে তিলাওয়াতের সময়, অযুর অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করা ও কবর যিয়ারতের সময়।

কিয়াম মাকরুহ
যেমন:পার্থিব লালসায় বিনা কারনে দুনিয়াদারী লোকের সম্মানে দাঁড়ানো মাকরুহ।

মুবাহ্‌ বা বৈধ কিয়াম
যেমন- দুনিয়াবী প্রয়োজনে দাঁড়ানো মুবাহ্‌।যেমন দাঁড়িয়ে দালান নির্মান করা।দাঁড়িয়ে অন্যান্য দুনিয়াবী কাজ কর্ম সম্পাদন করা
কিয়াম মুস্তাহাব
যেমন:শুভ সংবাদ শুনার পর দাঁড়িয়ে যাওয়া।
কিয়ামুল মুহাব্বাত
যেমন: অভ্যর্থনা ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের জন্য কোন সম্মানীত ব্যক্তি, ধর্মীয় নেতা, পীর মাশায়েখ ও কোন অতিথির অভ্যর্থনার জন্য দাঁড়ানো।কিয়ামে যিকির
যেমন:দাঁড়ানোর বিভিন্ন প্রকার হতে কিয়াম এক প্রকার যিকির।যেমন- শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষকের দাঁড়ানো, খুৎবার জন্য দাঁড়ানো।আর আল্লাহ পাকের হাবীব নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর স্মরণও আল্লাহর স্মরণের অন্তর্ভূক্ত । রাসূলের যিকিরই আল্লাহর যিকির।
কিয়ামে ফারহাত
যেমন- মক্কা বিজয়ের সময় ইকরামা ইবনে আবূ জাহেলের জন্য মহানবী ﷺ এর বসা থেকে আনন্দ চিত্তে দাঁড়িয়ে যাওয়া।হযরত জাফর বিন আবু তালেব(রা:) যখন হাবশা থেকে মদীনা শরীফে হুজুর ﷺ এঁর দরবারে হাজির হলেন।তাকে দেখে নবীজি ﷺ বললেন,জানিনা আজ আমি জাফরকে পেয়ে আনন্দিত নাকি খায়বর বিজয় করে আনন্দিত । অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে জাফর (রা:) এর সাথে মোয়ানাকা করলেন এবং তাঁর কপালে চুমু খেলেন।কিয়ামুল ইস্তিকবাল
যেমন: মানবতার সম্মানে দাঁড়ানো, জানাযার লাশ দেখে দাঁড়ানো শ্রদ্ধাবোধের কারণে হয়।এ সম্পর্কে নবীজী ﷺ থেকে অসংখ্য হাদীস বর্নিত আছে। রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন, যখন তোমরা কোন জানাযা দেখতে তাঁর সম্মানার্থে তোমরা দাঁড়িয়ে যাও।যতক্ষণ যা সে তোমাদের অতিক্রম করে।
[বুখারী শরীফ ৬৩০৬; নাসায়ী শরীফ ২১২৫, বায়হাকী শরীফ ৬৬৬০, ইবনে হিব্বান ৩০৫১]কিয়াম লিত্‌তাযীম
যেমন- সাহাবায়ে কেরাম নবীর সম্মানার্থে দাঁড়াতেন, নবী ﷺ তাঁর দুধ বাবার জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন।আমরা দেখলাম কিয়াম বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।মীলাদ শরীফের কিয়াম সে প্রকারেরই অন্তর্ভূক্ত ।

[জাযবুল কুলুব ইলা দিয়ারিল মাহবুব – ১৪ পৃঃ,আবূ দাউদ হাশিয়া ৬:৭০৮ পৃঃ, শরীয়ার কষ্টিপাথরে মীলাদ ও কিয়াম,লেখকঃ মুহাম্মদ ওসমান গনি সালেহী]
মিলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক আলোচনা- ৯ম পর্ব

★২৭. দোয়া ও মুনাজাত সম্পর্কিত: প্রচলিত মিলাদ মাহফিলে আমরা আর যে কাজটি দেখি তা হলো হাত তুলে দোয়া তথা সম্মিলিত মুনাজাত করা।

*(ক.) পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে।আল্লাহ তা’আলা বলেন “তোমরা আঁমাকে ডাক,আঁমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।যারা অহংকারে আঁমার উপাসনায় বিমুখ,ওরা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
[সূরা গাফির,আয়াত নং ৬০]

*(খ.) হযরত সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় আপনাদের সুমহান রব হচ্ছেন লজ্জাশীল ও মহান দাতা।বান্দা যখন তাঁর কাছে দু’হাত তোলে তখন তিনি সে হাতদ্বয় শূন্য ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।”

[সুনানে আবু দাউদ,হাদিস ১৪৮৮; সহিহ আবু দাউদ,হাদিস-১৩২০।নাসীর উদ্দীন আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলে আখ্যায়িত করেছেন]

*(গ.) হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে:

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ لَمْ يَسْأَلْ اللَّهَ يَغْضَبْ عَلَيْهِ

রাসূল (দরুদ)বলেন,যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার নিকট না চায় আল্লাহ তায়ালা তার উপর রাগান্বিত হন।
[জামে তিরমিযি-৩২৯৫[

*(ঘ.) দোয়ার সময়ে হাতের তালু থাকবে আকাশের দিকে; যেভাবে একজন নতজানু দরিদ্র সাহায্যপ্রার্থী কিছু পাওয়ার আশায় হাত পাতে।হযরত মালেক বিন ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যখন তোমরা আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাইবে তখন হাতের তালু দিয়ে চাইবে; হাতের পিঠ দিয়ে নয়”
[সুনানে আবু দাউদ,হাদিস-১৪৮৬, নাসীর উদ্দীন আলবানী সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে (১৩১৮) হাদিসটিকে সহিহ বলে আখ্যায়িত করেছেন]

*(ঙ.) আবার অপর হাদিস শরীফেও বর্নিত রয়েছে।আল্লাহ তায়ালার নিকট চাইতে হবে। আর চাওয়ার আদব হলো হাত তুলো দুয়া করা।যেমন বর্ণিত আছে।

عنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَعَوْتَ اللَّهَ فَادْعُ بِبُطُونِ كَفَّيْكَ وَلَا تَدْعُ بِظُهُورِهِمَا فَإِذَا فَرَغْتَ فَامْسَحْ بِهِمَا وَجْهَكَ
হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেন-যখন তুমি আল্লাহর নিকট দুয়া করবে তখন তোমার হাতের তালুর পেট দ্বারা দোয়া কর এবং হাতের পিঠ দ্বারা নয়। অত:পর যখন শেষ হয় দু’হাত মুখে মাসেহ কর।
[সুনানে ইবনে মাজাহ-৩৮৫৬]

*(চ.) অন্য হাদিস শরীফেও বর্নিত আছে:

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ الْمَسْأَلَةُ أَنْ تَرْفَعَ يَدَيْكَ حَذْوَ مَنْكِبَيْكَ

হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, চাওয়ার আদব হলো তোমার দু’হাত কাধ বরাবর উত্তোলন করবে।
[সুনানে আবি দাউদ-১২৭৪]

*(ছ.) আবার আরেক হাদিসে বর্নিত হয়েছে।

عن حبيب بن مسلمة الفهري وكان مستجابا أنه أمر على جيش فدرب الدروب ، فلما لقي العدو قال للناس : سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : ” لا يجتمع ملأ فيدعو بعضهم ويؤمن سائرهم إلا أجابهم الله

” হযরত হাবীব ইবনে মাসলামাহ আল ফিহরী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি ছিলেন মুস্তাজাবুদ দাওয়াত। তিনি এক যুদ্ধে যুদ্ধের দামামা বাজলে সৈন্যদেরকে নির্দেশ দিলেন। যখন শত্রুর সাথে সাক্ষাত হলো তিনি লোকদেরকে বললেন, আমি রাসূল ﷺ কে বলতে শুনেছি: ”যদি কোন একদল লোক একত্রিত হয় অত:পর একজন দোয়া করে এবং বাকিরা আমীন আমীন বলে তবে তা আল্লাহ তায়ালা তাড়াতাড়ি কবুল করেন।
[আল মুজামুল কাবীর লিততবারানী- ৩৪৫৩]

*(জ.) আল্লাহর নৈকট্যে লাভের আশায় যিকিরের মজলিসে গমন সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

«ما من قوم اجتمعوا يذكرون الله لا يريدون بذلك إلا وجهه ، إلا ناداهم مناد من السماء أن تولوا مغفرور لكم ، وقد بدلت سيئاتكم حسنات».
‘কোন সম্প্রদায় যখন আল্লাহকে রাজি-খুশী করার উদ্দেশ্যে যিকরের জন্য জমায়েত হয় তখন আকাশ থেকে জনৈক ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন যে, তোমরা সকলে (প্রভুর) ক্ষমা নিয়ে প্রত্যাবর্তন করো আর তোমাদের সকল গোনাহ নেকীতে পরিণত করে দেওয়া হয়েছে।’
[মুসনাদে আহমাদ,খন্ড: ৩,পৃ:১৪২]
সুতরাং মিলাদ মাহফিলের সম্মিলিত মুনাজাত অবশ্যই শরীয়াত সম্মত ও একটি উত্তম কাজ হিসেবে প্রমাণিত।

★২৭. তাবাররুক তথা খাদ্য দ্রব্য বিতরণ সম্পর্কিত ও কটুক্তির জবাব:

প্রচলিত মিলাদ মাহফিলে দেখা যায় যে, সর্বশেষ কাজ তথা মুনাজাতের পর যা করা হয় তা হলো,মিষ্টি জাতীয় বা কোন খাবার উপস্থিত লোকদের মাঝে বিতরণ করা।একদল ভণ্ড আছে, যারা তাবারুক নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক শব্দ উচ্ছারন করে সিন্নিখোর, জিলাপীখোর,মিষ্টিখোর, বিরিয়ানীখোর ইত্যাদি বলে।অথচ তারাই ঐ অনুষ্ঠানে গেলে পেট পুরে খাওয়া ছাড়া বের হয় না।তাবারুক শব্দের অর্থ বরকতময় খাদ্য। যে অনুষ্ঠানের তাবারুক, সে অনুষ্ঠানের শান-মানের সাথে তাবারুক মান মর্যাদা হবে।যেমন আপনি যদি নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য কোন মাহফিল করেন, তবে অবশ্যই সেই তাবারুককে সম্মান করা উচিত।বাস্তবে তাবারুককে অবজ্ঞা করা মানে কুফরী করা। কারণ অপরকে খাদ্য খাওয়ানো সুন্নত। আর কোন দ্বীনি মাহফিল উপলক্ষে খাদ্য খাওয়ানো অবশ্যই আরো বেশি ফজিলতের কারণ। কিন্তু সেটাকে অবজ্ঞা করা কোন মুসলমানদের কাজ হতে পারে না।এ কাজটি নি:সন্দেহে জায়েজ।কেননা,অন্ন দান করা বড়ই ছওয়াবের কাজ।
দলিল
(ক.) মহান আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন:

إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللهِ لاَ نُرِيْدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلاَ شُكُوْرًا

অর্থ‘: তারা বলে,কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদের আহার্য দান করি, তোমাদের নিকট এর কোন প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও কামনা করি না’
[সূরা দাহর,আয়াত নং ৯]

*(খ.) পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে “এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক স্মরণ করে উনার দেয়া চতুষ্পদ জন্তু যবেহ করো। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার করো এবং দুস্থ অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।”
[সূরা হজ্জ,আয়াত নং ২৮]

*(গ.)হাদিস শরীফের মধ্যে ইরশাদ হয়েছে।

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ الْإِسْلَامِ خَيْرٌ قَالَ تُطْعِمُ الطَّعَامَ

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) থেকে বর্ণিত,এক ব্যক্তি নবী ﷺ কে জিজ্ঞেস করলেন ইসলামের কোন আমল সর্বোত্তম? তিঁনি বললেন,(অন্যকে) খাবার খাওয়ানো। [সহীহ বুখারী-১১]

*(ঘ.) হাদীস শরীফে আরও বর্ণিত হয়েছে:

عن حضرت عبد الله بن سلام رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يايها الناس افشوا السلام واطعموا الطعام وصلوا الارحام وصلوا باليال والناس نيام تدخلوا الجنة بسلام
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রচলন কর, মানুষকে খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা কর এবং রাতের বেলায় মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড় তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।দলিল
*১. তিরমিযী,১৮৫৫
*২. ইবনে মাযাহ, ১৩৯৫
*৩. আদাবুল মুফাররাদ, ৯৮১
*৪. আবদ ইবনে হুমাইদ,৩৫৫
*৫. দারিমতাই বলা যায়, মিলাদ মাহফিলে যে খাবার খাওয়ানো হয় তা এই হাদীসের সাধারণ হুকুমের আওতাভূক্ত হয়ে যায়েজ হবে। এতে কোসন্দেহ নেই।

Want your school to be the top-listed School/college in Barishal?

Click here to claim your Sponsored Listing.

Videos (show all)

আমাদের নূন্যতম লজ্জাটুকুও কেড়ে নিতে চায়! বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে একজন মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষিকা এর প্রতিক্রিয়া!

Location

Category

Telephone

Address


২৫২ হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর সড়ক , ডাকঘর/বাসন্ডা, ঝালকাঠী/৮৪০০
Barishal
8400
Other Education in Barishal (show all)
Speaking English Magic Method Speaking English Magic Method
Barishal, 8333,LALMOHON

To distribute education, knowledge and pleasure is my mission.

Success Point Success Point
Barishal

Success Point একাডেমিতে আপনাকে স্বাগতম Success Point সম্পর্কে জানতে কল করুন 01710871078 এই নাম্বারে।

SOLVE  IT//Math class 9-10 SOLVE IT//Math class 9-10
Barguna Sadar , Barguna
Barishal, 7777

Brilliant Academy,Barishal Brilliant Academy,Barishal
College Row, Chowdhury Bari(2nd Floor)
Barishal

Get the best from the best

Kamrul's Math Academy Kamrul's Math Academy
Barishal, 8200

Studentslearningcampus Studentslearningcampus
Shewrapara, Mirpur
Barishal, 1216

This is a leading English learning center Happy Learning with me. Have a great day!

Nexus Education Family, Barishal Nexus Education Family, Barishal
Amtala, South Alekanda, Barishal & Rupatali Housing
Barishal, 8200

We are at your side with the challenge of 21st Century Education following the success of a decade of Nexus Education Family.

Alim Exams 2020 Alim Exams 2020
Jalakathi
Barishal, KARIMM

Infra Polytechnic Institute Rover Scout Group Infra Polytechnic Institute Rover Scout Group
ঢাকা বরিশাল হাইওয়ে
Barishal

https://www.facebook.com/IPIRSG/

Association Of Social Work- GBC Association Of Social Work- GBC
Barishal

সমাজকর্ম বিভাগ,বরিশাল সরকারি কলেজ।

Jalalpur kiratul Quraan kariyana & Kowmiya Madrasa Jalalpur kiratul Quraan kariyana & Kowmiya Madrasa
Jalalpur
Barishal

ক্বারী আব্দুল বারী (০১৭৮২৪১২৯২৭) ।।�। মুহতামীম অত্র মাদ্রাসা।�।।

Barishal University English Language Club-BUELC Barishal University English Language Club-BUELC
University Of Barishal, Kornokathi (Dhaka-Patuakhali Hwy)
Barishal, 8254

Welcome to Barishal University English Language Club. Learn English today for a better tomorrow!