
"মিম্বরের ধ্বনি হোক আদর্শ সমাজ গঠনের হাতিয়ার"
লেখক:মাওলানা আরিফ বিন হাবিব
শ্রদ্ধেয় খতীবসাহেবগন!
জনসমাবেশে দাওয়াতের চাইতে মসজিদ ভিত্তিক দাওয়াতের প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি অনুভব করছি।
আদর্শ সমাজ গঠনে সম্মানিত খতীব সাহেবগন সবচেয়ে বেশি ভুমিকা রাখতে পারেন ইন শা আল্লাহ।
করনীয়
এক.
প্রতি শনিবার থেকে(প্রতিদিন একটু একটু করে) পরবর্তী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গুরুত্বসহকারে বয়ান তৈরী করতে হবে।
এজন্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা সময় জুমার বয়ান সাজানোর জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে।
যেহেতু আল্লাহ আপনাকে মিম্বরে বসিয়েছেন সেহেতু আল্লাহ এটা সহজ করে দিবেন।
فَكُلٌّ مُيَسَّرٌ لِمَا خُلِقَ لَهُ
যাকে যে আমালের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সে ‘আমালকে সহজ করে দেয়া হবে।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪৯৪৯
দুই.
মুখস্থ বয়ান করাটা জরুরী নয়, বয়ান নোট করে মিম্বরে নিয়ে যেতে পারেন। (গোটা আরবে সাধারণত এভাবেই খুতবা দেওয়া হয়)
খাতা, আইপেড, ল্যাপটপ যে কোন মাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন।
(আমাদের দেশের অনেক আলোচকরাই এটা করে থাকেন মা শা আল্লাহ) ....নসিহত শোনানোটাই মুল উদ্দেশ্য, সেটা উপকারী হলেই হলো।
وَّ ذَکِّرۡ فَاِنَّ الذِّکۡرٰی تَنۡفَعُ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ
এবং উপদেশ দিতে থাক, কারণ উপদেশ মুমিনদের উপকারে আসে।
যারিয়াত-৫৫
তিন.
মুখস্থ বয়ান দেওয়ার ক্ষেত্রে আয়াত নাম্বার, হাদীস নাম্বার বলতে পারাটা জরুরি নয়,,,, বরং আয়াত ও হাদীস বলে অনুবাদ করে দেওয়াই যথেষ্ট। এটাই দলিলের জন্য যথেষ্ট,
আমি শুধুমাত্র আপনাদের চেতনা জাগ্রত করার জন্য এই সিস্টেমে আলোচনা করি,যাতে এটার প্রতি অন্যদের আগ্ৰহ বাড়ে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ،،،قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ وَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَلاَ تَعْجِزْ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,,,যাতে তোমার উপকার রয়েছে তা অর্জনে তুমি আগ্রহী হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা কর। তুমি অক্ষম হয়ে যেও না।
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৬৬৭
(২৬৬৪ দরসে নেজামী)
صحيح ابن حبان ٥٧٢١
চার.
চেষ্টা করবেন যেন অতিরিক্ত কোন কথা মুখ থেকে বের না হয়,,,,এখানেই ইসলামের সৌন্দর্য ফুটে উঠে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
" مِنْ حُسْنِ إِسْلاَمِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لاَ يَعْنِيهِ "
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অনর্থক আচরণ ত্যাগ করা।
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৩১৭
এজন্য মুতালাআর বিকল্প নাই।
মেধার বিকল্প মেহনত, মেহনতের বিকল্প নাই
(আল্লামা কাজী মু'তাসিম বিল্লাহ রহঃ)
পাচ.
কথা বলার সময় এটা ভাবতে হবে যে আআমি নবিজীর(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রেখে যাওয়া মিরাস বন্টন করছি, তাই এই বন্টনে খেয়ানতের কোন সুযোগ নাই,,,
وَإِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ وَإِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلاَ دِرْهَمًا وَرَّثُوا الْعِلْمَ فَمَنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ
আলেমগ হলেন নাবীদের উত্তরসূরি। নাবীগণ কোন দীনার বা দিরহাম মীরাসরূপে রেখে যান না; তারা উত্তরাধিকার সূত্রে রেখে যান শুধু ইল্ম। সুতরাং যে ইল্ম অর্জন করেছে সে পূর্ণ অংশ গ্রহণ করেছে।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৬৪১
ছয়.
এই দায়িত্ব আদায়ে অবহেলা করলে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে,
كُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ
তোমরা সবাই দায়িত্বশীল এবং সবাইকে তাদের অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৮৯৩
সাত.
রাষ্ট্রিয় ফতোয়া গত কোন কথা বলার আগে দেশের শীর্ষস্থানীয় মুফতী(অবশ্য বিশ্বস্তও বটে) , অভিজ্ঞ ওলামাদের পরামর্শ নেওয়া টা অত্যন্ত জরুরি,
এক্ষেত্রে মোটেই আবেগী হওয়া যাবেনা,,,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
" الْمُسْتَشَارُ مُؤْتَمَنٌ "
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পরামর্শদাতা একজন আমানতদার।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৫১২৮
আট.
কোন আল্লাহ ওয়ালা বুযুর্গ ব্যাক্তির কথা বললে সেক্ষেত্রেও কুরআন ও সুন্নাহ থেকে প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে,
এক্ষেত্রে থানবী রহিমাহুল্লহুর লেখা মুতালাআয় রাখা অত্যন্ত জরুরি, হযরতের কথায় কুরআন ও সুন্নাহর ভান্ডার পাওয়া যায়।
নয়.
যা বলব তা নিজে আমলে আনতে পারলে অন্যরাও আমল করবে ইন শা আল্লাহ।
উদাহরণ-১
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لِمَ تَقُوۡلُوۡنَ مَا لَا تَفۡعَلُوۡن
হে ঈমানদারগণ, তোমরা তা কেন বল, যা তোমরা কর না?
আস-সাফ -২
উদাহরণ-২
ইয়াহুদীদের আমলহীন আলেমদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন,
مَثَلُ الَّذِیۡنَ حُمِّلُوا التَّوۡرٰىۃَ ثُمَّ لَمۡ یَحۡمِلُوۡہَا کَمَثَلِ الۡحِمَارِ یَحۡمِلُ
যাদেরকে তাওরাতের দায়িত্বভার দেয়া হয়েছিল তারপর তারা তা বহন করেনি, তারা গাধার মত! যে বহু কিতাবের বোঝা বহন করে।
জুমুআ-৫
উদাহরণ-৩
عَنْ أَبِي بَرْزَةَ الأَسْلَمِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ تَزُولُ قَدَمَا عَبْدٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ عُمْرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ عِلْمِهِ فِيمَا فَعَلَ وَعَنْ مَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَا أَنْفَقَهُ وَعَنْ جِسْمِهِ فِيمَا أَبْلاَهُ "
আবূ বারযা আল-আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন বান্দার পদদ্বয় (কিয়ামাত দিবসে) এতটুকুও সরবে না, তাকে এ কয়টি বিষয় সম্পর্কে যে পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ না করা হবেঃ কিভাবে তার জীববনকালকে অতিবাহিত করেছে; তার অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী কি আমল করেছে ; কোথা হতে তার ধন-সম্পদ উপার্জন করেছে ও কোন কোন খাতে ব্যয় করেছে এবং কি কি কাজে তার শরীর বিনাশ করেছে।
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৪১৭
দশ.
সর্বোপরি আল্লাহর উপর ভরসা করে মিম্বরে বসে খুতবা দেওয়া,,,,তবে ভরসার অর্থ এই নয় যে আমি কোন চেষ্টা করলাম না আর বলললাম যে আল্লাহর উপর ভরসা রাখি,,, বরং প্রস্ততি নেওয়া হলো তাওয়াক্ক্বুলের প্রথম অংশ, যেমন,,,,
قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَعْقِلُهَا وَأَتَوَكَّلُ أَوْ أُطْلِقُهَا وَأَتَوَكَّلُ قَالَ " اعْقِلْهَا وَتَوَكَّلْ "
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বললেন কোন একজন লোক বললো, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি কি সেটা (উট) বেঁধে রেখে আল্লাহর তা’আলার উপর ভরসা করবো, না বাঁধন খুলে রেখে আল্লাহ্ তা'আলার উপর ভরসা করবো? তিনি বললেনঃ তুমি সেটা বেঁধে রেখে (আল্লাহ্ তা'আলার উপর) ভরসা করবে।
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৫১৭
মিম্বরের ধ্বনি হোক আদর্শ সমাজ গঠনের হাতিয়ার।
আরিফ বিন হাবিব
জামিয়া শারিফিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা লালবাগ।